আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভালো থেকো মা, আনন্দে থেকো.................. শুভ জন্মদিন!


আজ থেকে দশ বছর আগে যে দেবদূতীটি আমাদের ঘরে এসেছিল তার নাম রেখেছি ’সূশ্রী’। আমাদের প্রথম সন্তান। যদিও তার গালভরা একটা ধর্মীয় নাম আছে কিন্তু তা স্কুল এবং অফিসিয়াল কাজ ছাড়া আপাতত আর কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছেনা। বড়ই আলাভোলা, ভীষণ অভিমানী, একটুতেই রেগে যায়, আর রেগে গেলেই ধুপ ধুপ পা ফেলে এক রুম থেকে অন্য রুমে। যখনই সে রাগ করে আমরা বলি, ঐ শুরু হলো ধুপ ধাপ।

মেয়ে হাসে। আবার ভাল হতেও একমিনিট। একমাথা ঘন কোঁকড়া চুল, বন্ধুরা বলে ’ম্যাগী নুডলস’। তাতে আমার মেয়ে ভীষণ তিতিবিরক্ত, ক্ষতবিক্ষত। আমরা হাসি, পরামর্শ দেই তাদেরকেও কি কি নামে ডাকতে হবে।

মেয়ে আরো ক্ষেপে বলে, ’আমি কেন ওদেরকে এসব কথা বলতে যাবো!’। এই আমাদের বড় মেয়ে। দিন কেটে যাচ্ছে, মাস, বছরগুলো। ১০টা বছর কেটে গেছে। আমাদের শিশু মেয়েটি আস্তে আস্তে কিশোরী হয়ে যাচ্ছে।

মনে পড়ে, যেদিন সে জন্ম নিলো, সেদিন আমাদের কি টেনশন। তারিখ ঠিক আছে কিন্তু ওর মায়ের কোন ব্যথা নেই। হাসপাতালে দুপুর বেলা ডাক্তার একটা কি যেন ইঞ্জেকশন দিলেন ব্যথা ওঠার জন্য কিন্তু সব হজম। আমার বৌ হাসে আমার দিকে তাকিয়ে, এদিকে আমি ঘেমে যাচ্ছি। আমার উদ্বিগ্নতা বোধহয় ডাক্তার বুঝলেন।

নার্সকে বললেন সাউন্ড মেশিন আনতে। নার্স সেই সাউন্ড মেশিন দিয়ে আমাকে শুনিয়ে দিলো বাচ্চার হার্টবিট। রাত প্রায় সাড়ে আটটায় তিনি এলেন মায়ের পেট চিরে (আক্ষরিক অর্থেই)। ওর বয়স যখন দু'বছর তখন একবার আমরা গেলাম সুন্দরবনে। লঞ্চে করে আরও অনেক পর্যটকের সঙ্গে।

যে ক'জন বাচ্চা ছিল সে তাদের মধ্যে সবার ছোট, এজন্য তার আদর রাখার জায়গা নেই। ফেরার পথে এক রাতে সবাই লঞ্চের ডাইনিং রুমে গল্প করছি হঠাৎ দেখি সুশ্রী নেই। তার মার কাছে নেই, নানু-নানার কাছে নেই, সারেং ছাড়া লঞ্চের সবাই দিগবিদিক খোঁজাখুজি করছে, লঞ্চ থামানোর চিন্তা চলছে। মায়ে কান্দে, বাপে কান্দে, কান্দে দেশের লোক টাইপ অবস্থা। হঠাৎ দেখি মেয়ে খেলছে লঞ্চের ডাইনিং রুমেই প্লেট বাসনের তাকের কাছে আধো আলো আঁধারিতে।

এতক্ষণে সবার জানে পানি আসলো। কাউকে কাউকে চোখের পানিও মুছতে দেখেছি আমি। আমরা এখনো এ গল্পটা করি আমাদের বাসায় আর খুবই কৃতজ্ঞভাবে মনে করি সেই সব সহযাত্রীদের যারা আমার মেয়েকে অনেক ভালবেসেছিলেন। যখন ওর প্রায় আড়াই বছর বয়স, তখন আড়াই মাসের জন্য তার কাছ থেকে আমি দুরে চলে গিয়েছিলাম। এই বিচ্ছিন্নতার সময়ে তার সাথে আমার কথাবার্তাও তেমন হতোনা।

যেদিন ফিরে আসি সেদিন এয়ারপোর্টে সে এসেছিল তার মা ও মামার সাথে বাবাকে রিসিভ করতে। আমি কাঁচের ওপাশে, আর এপাশে যতই ওর মা আমাকে দেখায় কিন্তু ওতো আর আমাকে চেনেনা। অনেক দিনের অদর্শনে একটু লজ্জাও পাচ্ছিল কিনা কে জানে। আমাদের মেয়েগুলো বড় হয়ে যাচ্ছে। আমি অবাক হয়ে ভাবি পরিবর্তনের সময়গুলো।

ওরা দু'বোন, পাঁচ বছরের বড় ছোট। মা ওদের সবচেয়ে বড় বন্ধু। বাবা রাগী হলেও আপন মানুষ। কিন্তু মাঝে মাঝেই মা বাবার সাথে না ঘুমুলে যে তার চলেনা। এখনো যে টিভি দেখতে হলে বাবার হাতটা জড়িয়ে রাখতে হয়।

রাখ জড়িয়ে ধরে রাখ। শক্ত করে ধরে রাখ, ছাড়িস না। বড় হয়ে ওঠ তবে নিজের আপনদের জড়িয়ে। নিজের পায়ের নিচে শক্ত জমি তৈরী করে নে। আজ যাদের ভালবেসে জড়িয়ে ধরেছিস, কাল হয়ে ওঠ তাদের জন্য শক্ত অবলম্বন।

তোর জন্ম দিনে তোর বাবার কাছ থেকে এটুকু দোয়াই উপহার। আজ ২৩ মে সুশ্রী-র জন্মদিন। ভালো থাকো মা। আনন্দে থাকো। শুভ জন্মদিন।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.