আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুবকঃ প্রতারনার শেষ কোথায়!!



বাংলাদেশের ইতিহাসে বিভিন্ন সময় আর্বিভূত হয়েছে বেশ কিছু হায় হায় কোম্পানী। কিন্তু এক্ষেত্রে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে যুবক। গত একযুগে দেশের প্রতিটি জেলায় যুবক বিস্তার করেছে তার প্রতারনার জাল। সাধারন মানুষের কয়েক হাজার কোটি টাকা আতœসাৎ করেছে যুবক। আর নিঃস্ব হয়েছে কয়েক লক্ষ আমানতকারী আজ আর্থিক ও সামাজিক বিপর্যয়ে পর্যুদস্ত।

১৯৯৭ সালে নিবন্ধিত হবার পূর্বেই যুবক অবৈধভাবে আমানত সংগ্রহ শুরু করে। তারা সমবায় ভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনার কথা বললেও তাদের সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন ছিলোনা। সংগ্রহিত আমানতকে সুষ্ঠু বিনিয়োগ করা হয় নাই। নির্বাহী পরিচালক হোসাইন আল মাসুমের নেতৃত্বে কর্মী বৃন্দ ব্যস্ত ছিলেন নিজ নিজ কমিশন নিশ্চিত করতে। যুবকের বিরুদ্ধে য়েন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা না যায় এই লক্ষ্যে আমানতকারীদের দূর্বল ডকুমেন্টস প্রদান করা হয়।

বর্তমানেও যে সকল ডুকমেন্টস প্রদান করা হচ্ছে তার কোন আইনগত ভিত্তি নেই। এছাড়া সহজ সরল মানুষদের দেওয়া হচ্ছে ফটোকপি আর নিরাপত্তার কথা বলে অরজিন্যাল কপি তারা সংগ্রহ করছে। জোট সরকারের সাথে নিবিড় বন্ধন ঃ যুবকের জামাত লিংক ছিলো অত্যন্ত প্রগাঢ়। ফলে জোট সরকারের প্রচ্ছন সহযোগিতায় যুবক ফুলে ফেপে ওঠে। তখন যুবকের ছোট ছোট বাহুল্য অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থাকতেন জোট সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীগণ।

সংগ্রহিত আমানত বিনিয়োগ হচ্ছে এটা প্রমানের জন্য যুবক এই সকল অনুষ্ঠান আয়োজনের পাশাপাশি অতি অল্প সময়ে গড়ে তলে প্রায় ৩০টি ভূইফোড় প্রতিষ্ঠান। এই সকল প্রতিষ্ঠানকে আমানতকারীদের মনে আস্থা সৃস্টির কাজে ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এই সকল প্রতিষ্ঠান ছিলো সংশ্লিষ্ট পরিচালকদের অর্থ আতœসাৎ আর ভোগ বিলাসের অর্থ যোগানোর অলিখিত মাধ্যম। একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমেও স্বচ্ছতা ছিলোনা। একটি প্রতিষ্ঠানও লাভজনক হতে পারে নাই।

কিন্তু সংশ্লিষ্ট পরিচালকরা আজ বহাল তবিয়তে আছেন। ভাগ্য ফিরেছে কমিশনখোর আমানত সংগ্রহকারীদের আর যুবকের কর্মকর্তা ও পরিচালকদের। সাধারন আমানতকারীরা সব হারিয়ে আজ হত দরিদ্র। যুবক তাদের বর্তমান অবস্থার জন্য জোট সরকারকে দায়ী করে। তাদের সর্বশেষ আয়োজিত বাহুল্য অনুষ্ঠান চিল্ড্রেন ফেস্টিভ্যালে প্রধান অতিথি ছিলেন জোট সরকারের রাস্ট্রপতি জনাব ইয়েজউদ্দিন।

এই অনুষ্ঠানে মাধ্যমে অপচয় করা হয় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। যুবক-এর নিবিড় সংগী এবং ব্যবসায়িক সহযোগি ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন ফালু। অনেক মন্ত্রীর অপ্রদর্শিত আয় যুবক-এ আমানত হিসেবে গচ্ছিত রাখা হয়। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক জোট সরকারের অনুরোধ উপেক্ষা করে যুবকের আমানত সংগ্রহ কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করলে তৎকালীন একজন মন্ত্রী ও সাবেক মেয়রকে বিষয়টি ম্যানেজ করার জন্য নির্বাচনী ব্যয় বহনের অশ্বাস প্রদান করা হয়। যুবকওে নির্বাহী পরিচালক এই বিষয়টি যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির জরুরী সভায় উপস্থিতদের সদম্ভে অবহিত করেছিলেন।

জোট সরকারের মাঝমাঝি সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুবকের জামাত লিংক নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা শুরু হয়। তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে যুবক বাম রাজনীতির সাথে জড়িত কয়েকজন মধ্যম সারির নেতা ও বাম ছাত্রনেতাকে যুক্ত করে। কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের একজন বাম ছাত্রনেতা জানান, তাদের মূল কাজ ছিলো যুবক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে আড্ডা দেওয়া এবং মাস শেষে বেতন গ্রহন করা। এছাড়া অবস্থান ভেদে বিভিন্ন সুবিধাও তারা পেতেন। এই বাম নেতাদের কর্ম তৎপরতায়ই সাপ্তাহিক ২০০০ এর সাথে যুবক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান উইমেন ডেভেলোপমেন্ট ফাউন্ডেশন যৌথ উদ্যোগে গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করতে পেরেছিল।

জাতীয়তাবাদী জামায়াতপন্থী যুবক আজ ভোল পাল্টে আওয়ামী পন্থী হওয়ার চেষ্টায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। হেদায়েত প্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক এবং বেইল আউট কমিটির নাটক স¤প্রতি বিভিন্ন সভায় যুবকওে নির্বাহী পরিচালক হোসাইন আল মাসুম অনুগত কর্মীদের বলছেন তিনি হেদায়েত প্রাপ্ত ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের ক্ষমতা কারো নেই। যুবক যা করেছে তা সঠিক কাজ করেছে। যুবক আমানতকারীদের আমানত ফিরত নাটকে নতুন যুক্ত করেছে বেইল আউট পর্ব।

বেইল আউট কমিটির মার্চ ’০৯ মাসের কার্যক্রম ছিলো পয়ত্রিশ হাজার স্বাক্ষরসহ একটি আবেদন পত্র প্রধানমন্ত্রী সমীপে প্রেরন করা। মে মাস পর্যন্ত নিজেরাই একাধিকবার স্বাক্ষর প্রদান করে সংখ্যা আট হাজারের বেশীতে উন্নীত করতে পারেন নাই। যে সকল কর্মকর্তা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের আইনী সহায়তা দেওয়ার বিষয়টিও ছিলো। কিন্তু আইনী সহায়তার বদলে যুবক হাউজিং এর চেয়ারম্যান গ্রেফতার হয়ে ৩৫০ কোটি টাকার দূণীতির কথা স্বীকার করেছেন। মার্চ’০৯ মাসের কর্মসূচীগুলো মেয় মাস পর্যন্ত সম্পাদন করা যায় নাই।

এভাবেই চলছে যুবক-এর আমানতকারীদেও আমানত ফেরত প্রদানের আন্তরিক চেষ্টা। প্রতারক যুবক, হেদায়েত প্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক হোসাইন আল মাসুম আর তার ছত্রছায়ার বেড়ে ওঠা প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের কোন ক্ষমতা কি রাষ্ট্র যন্ত্রের নেই। জোট সরকারের সময় তারা ছিলো উন্নয়নের সংগী। আগামীতে ভোল পাল্টে হয়ে যাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কারিগর। শুধূ সাধারন আমানতকারীরা নিঃস্ব হবে, প্রতারিত হবে।

আমরা পরিবর্তন চাই। বর্তমান সরকারের কাছে দেশের সবচাইতে বড় প্রতারক প্রতিষ্ঠান যুবক বিষয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত চাই। আর সিদ্ধান্ত গ্রহনে অপারগ হলে জানতে চাই এই প্রতারক চক্রের খুঁটির জোড় কোথায়!! দেশের ৬৪ টি জেলার কয়েক লাখ পরিবারকে আর্থিক ও সামাজিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাড় করানোর পরেও কেন এই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়না!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।