আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের রাইয়ান এর শুভজন্মদিন আজ............


(আজকে তোলা) আজ আমাদের ছোটছেলে রাইয়ানের জন্মদিন। সন্ধ্যা থেকে বলছে কাল স্কুলে যাবেনা। অথচ ওর স্কুলে দেবার জন্য ওর বাবা আর আমি কেক কিনে নিয়ে আসলাম। ওর চাওয়া হলো wii গেইম। গত শনিবার ToysRus গিয়ে নিজেই পছন্দ করে এসেছে।

কি অদ্ভুত এক সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। ভালোলাগাগুলো কেমন পালটে যাচ্ছে ছোট্ট রাইয়ানের। এই তো গেলো বছর শুধু গাড়ী হাতে নিয়ে ঘুরতো.........কত নাম তাদের। তার আগে ট্রেন। Thomas and friends থমাস থেকে শুরু করে কত অজস্র নাম।

যখন ঠিক করে কথা বলতে শেখেনি........সব ট্রেন এর নাম কিন্তু বলতো ঠিকমতই। যেখানে যাচ্ছে হাতে নিয়ে যাচ্ছে ট্রেন। আমার খুব অবাক লাগতো। নিজের সাথে কেমন এক মিল টের পেতাম। আমার ছোটবেলায় রেলষ্টেশনের পাশে বাসা ছিলো বলে ট্রেন বিশাল এক অংশ জুড়ে আছে নিজের ভাবনালোকে।

২০০৭ এ আমার ভাইজান যখন এলো বেড়াতে। রাইয়ানের এই ট্রেন প্রীতি দেখে অবাক হয়েছিলো। দেশে গিয়ে আমাকে একটা ইমেইল পাঠিয়েছিলো যাতে লিখেছিলো.........."দেশ এ ফিরেছি সেই কবে। তোদের কথা মনে করলে খুব মন খারাপ লাগে। এখনো চুপ বসে থাকলে অথবা ঘুমের ঘোরে রাইয়ানের ট্রেনের শব্দ শুনি।

যা আমাকে মনে করিয়ে দেয় আমার ছেলেবেলার কথা। ট্রেনে করে ঘুরে বেড়ানো সময়। ষ্টেশনে কাটানো কত স্মৃতিময় সময়। রাইয়ানের ট্রেনের সেই হুইসেল যা এমনভাবে বাজতো জেনো অন্য কারো অসুবিধা না হয়। " রাশীক আমাদের বড় ছেলে এত শান্ত ছোটবেলা থেকে যে রাইয়ানের দষ্টুমি আর যন্ত্রনা আমাকে পাগল করে দিতো।

অথচ সেই রাইয়ান বাইরে গেলে এত চুপচাপ থাকে। সব কথা শোনে। কেউ বিশ্বাস করতে চায় না ও অনেক দুষ্টু। (এখন পার্কে গেলে বালি দিয়ে খেলে কিন্তু আর খায় না) রাইয়ানের বয়স যখন দেড় বছর তখন থেকে শুরু হয় ওর মাটি খাওয়া। চুন খাওয়া।

বালি খাওয়া। পার্ক এ নিয়ে গেলে এমন মুঠায় মুঠায় বালি খেতো যে পার্ক এ যাওয়া বন্ধ করতে হয়েছিলো। বাসার সব ফুলের টব বেলকনিতে সরাতে হয়েছিলো। অনেক গাছ ফেলে দিয়েছি। একটু চোখের আড়াল হলেই আস্তে করে মাটি মুখে পুরে দিতো।

আর জানালার পাশের প্লাষ্টার সব কামড়ে খাওয়া শেষ কদিনেই। উপায় না দেখে ডাক্তার এর শরণআপন্ন। ডাক্তার হাসছিলেন। অনেক ছেলেমেয়েরা নাকি এ দেশেও এমন মাটি বালি খায়। আমার উৎকন্ঠা একটু দুর হয়েছিলো তাতে।

আর একটা ব্যাপার ছিলো। যেখানেই যেতো পাথর কুড়াতো। আমাদের বন্ধু হেলাল(ব্লগার লালদরজা) ওর নাম দিয়েছিলো পাথর বাবা। ৪ বছর বয়সে এখানে স্কুলে যাওয়া শুরু হয়। রাইয়ান ও তাই যাচ্ছে।

স্কুল বাস এ করে । প্রথম দুই বছর অর্ধেক দিন। খেলাধুলা করে সময় কাটানো। গ্রেড ওয়ান থেকে পড়ালেখা শুরু। আর এই বছরে শুরু হলো রাইয়ানের কমিউনিকাশন বুকের অত্যাচার।

স্কুল থেকে ফিরলেই উৎকন্ঠায় থাকি আজ আবার কি করলো কে জানে। একদিন লেখা কার্পেটে পানি ফেলেছে। অন্যদিন বৃষ্টির পানিতে লাফিয়ে কাপড় ভিজিয়েছে। বেশীর ভাগ দিন লান্চ খাচ্ছে না.............এইরকম কত যে রিপোর্ট। ওর বাবা একদিন টিচার্স মিটিং এ যেয়ে বললো আমিও ছোটবেলায় অনেক দুষ্টু ছিলাম।

বড় হয়ে ঠিক হয়ে গেছি। রাশীকটা এত চুপচাপ ছিলো যে টিচার রা ওর নিয়ে এত ভালো বলতো.......শুধু একটাই অভিযোগ ছিলো কথা কম বলে। আর রাইয়ান পুরা উল্টা। সারাক্ষন কথা বলে। সারাক্ষন দুষ্টুমী করে।

সকালে উঠে প্রথম বলবে আজ স্কুলে যাবো না..........। ভালো কথা যেয়ো না। বাস আসার ২০ মিনিট আগে বলবে স্কুলে যাবো......এমনি আমাদের রাইয়ান। স্কুল থেকে আসা পর টিভি দেখা ,গেইম খেলা শেষ হলে যদি বলি চলো অংক করি। ওর হাত ব্যথা শুরু হয়, না হলে পা ব্যথা।

না হলো কিছু একটা তো হয় ই। আর যদি মুড থাকে বলবে ঠিকাছে ২০ টা যোগ ২০ টা বিয়োগ। এর একটা বেশী হলেও করবে না। লেখার বেলায় কি যে আলসেমী। পেনসিলটা একবার ডান হাত ধরবে ।

একবার বা হাতে ধরবে। সুযোগ পেলেই রাশীকের চুল টান দেবে। রাশীক ছোটবেলা থেকে ওর সাথে রেস্টলিং করে বলে নাকি কে জানে ওর অনেক শক্তি। আজকাল মাঝে মাঝেই হাতের মাসেল দেখায় আর বলে ,"I am a man" জানুয়ারীতে যখন দেশে গেলাম। রাইয়ানকে নিয়ে যাবার ইচ্ছা থাকলও সাহস হলো না একা।

ও আর রাশীক ওদের বাবার সাথে থাকলো। রাইয়ান খুব এক্সাইটেড ছিলো মা ছাড়া থাকবে........আমার গুছানো দেখে আর জানতে চায় কবে যাবো। ও বোঝেও নি গেলে আসতে বেশ কদিন লেগে যাবে। এয়ারপোর্ট এ যাচ্ছি যেদিন ও খুব কাঁদলো.....আমার মনে হচ্ছিল জীবনে খুব ভুল একটা ডিসিশান এটা। এই যে একা যাওয়া।

ঘরের দরজা থেকে বের হচ্ছি যখন রাইয়ান তখন কম্পিউটার এর সামনে বসা। "The final count down" গানটা শুনছে। দেশে ওর কথা যখনি মনে হতো ঐ দৃশ্যটা চোখে ভাসতো। আমার ছোট্ট রাইয়ান গান শুনছে আর কাঁদছে। সময়ের আগেই ফিরে আসতে হলো........... ওর বাবা বললো ও নাকি প্রতিদিন ঐ গানটা শুনতো।

দিনে অন্ততঃ ২ থেকে ৩ বার। আমি আসার পর ও আর গানটা শোনে না......... কে জানে ঐ গানটা শুনলে আমার মত ওর ও হয়তো আমাকে খুব কাছে মনে হতো। আমি আসার পর প্রায়ই জানতে চাইতো কেনো এতদিন থাকলাম । মাকে দেখেই চলে আসলাম না কেনো?এ কথা বলার সময় ওর চোখ ছলছলে হয়ে যেতো। কতবার রাইয়ান এর আজ ৭ হলো।

একদিন ও কত বড় হয়ে যাবে। কেনো যেনো মনে হলো ওকে নিয়ে কিছু লিখি। আমার লেখালেখি আমার ভাবনারা আমার যাপিত জীবন থেকেই নেয়া.... রাইয়ানকে ওর বাবাকে যদিবলে আই লাভ ইউ। ওর বাবা বলে আই লাভ ইউ টু..এরপর রাইয়ান আই লাভ ইউ ৩..৪ করে বিলিয়ন ,ট্রিলিয়ন বলে। এত মজা লাগে।

আমার খুব সুন্দর একটা ছেলেবেলা ছিলো। কৈশোর ছিলো। আমার বাবা মা ভাইবোন থেকে পাওয়া। আমি চাই আমার ছেলেরা ও অনুভূতিশীল মানুষ হোক। আমি কারো উপর কোন কিছু চাপিয়ে দিতে চাইনা।

ওরা বড় হোক ওদের মত। আমরা তো রইলাম। আমরা তো থাকতে চাই ওদের এই বেড়ে উঠা দেখতে । সুস্হ থেকে। ভালো থেকে।

আল্লাহ জেনো সহায় হন। শুভজন্মদিন আমাদের ছোট্ট ছেলেটা। গুন গুন করে গান গেয়ে ঘুরে বেড়ানো এই ছেলেটার জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।