আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রভাকরণ: এক অপরাজেয় যোদ্ধা

www.runews.weebly.com

প্রভাকরণ মারা গেছেন। শ্রীলংকা সেনাবাহিনীর দাবি এর মেধ্য দিয়ে সেদেশের ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান হয়েছে। সেটা হয়তো হতেই পারে। কিন্তু বিশ্বের তামাম স্বাধীনতাকামীদের কাছে তিনি এক অপরাজেয় যোদ্ধা হিসেবেই থাকবেন। প্রভাকরণ ১৯৫৪ সালের ২৬ নভেম্বর জাফনা উপদ্বীপের উত্তরের উপকূলীয় শহর ভেলভেত্তিয়াথুরাই-তে জন্মগ্রহণ করেন।

বাবা-মা'র চার সন্তানের মধ্যে তিনি সবার ছোট। একটিই ছিল তার লক্ষ্য। একচুলও কেউ নড়াতে পারেনি তাকে সেই লক্ষ্য থেকে। যদি কখনো তামিল রাষ্ট্রের দাবি থেকে সরে যান তবে তাকে যেন গুলি করে হত্যা করা হয়-একবার এই আদেশ দিয়েছিলেন তিনি তার সহযোদ্ধাদের। বলা হয়ে থাকে ছোটবেলায় তিনি লাজুকপ্রকৃতির এবং বইয়ের পোকা ছিলেন।

তামিলদের প্রতি শ্রীলংকার সংখ্যাগুরু সিংহলি জনগোষ্ঠীর বৈষম্য দেখে দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং যোগ দেন প্রতিবাদ আন্দোলনে। দুর্লভ এক সাক্ষাৎকারে প্রভাকরণ জানিয়েছিলেন, ভারতের দ'ুজন নেতার জীবন তাকে প্রভাবিত করে। এরা হলেন সুভাষ চন্দ্র বসু ও ভগত সিং। দুজনই ব্রিটেন থেকে ভারতের স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিলেন। আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেট ও নেপোলিয়ানের জীবনও তাকে মুগ্ধ করেছিল।

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই দুুই যোদ্ধার ওপর লেখা অনেক বই তিনি পড়েছেন। ধারণা করা হয় ১৯৭৩ অথবা ১৯৭৪ সালে প্রভাকরণ 'তামিল নিউ টাইগারস' প্রতিষ্ঠা করেন। উপনিবেশ-পরবর্তী শ্রীলংকায় তামিলদের প্রান্তিক অবস্থার প্রতিবাদকারী আরও কয়েকটি সংগঠনের মতোই এটিও শুরুতে চাপসৃষ্টিকারী সংগঠনের মতোই ছিল। পরে এলটিটিই নামে গড়ে ওঠা এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠার সঠিক তারিখ অবশ্য জানা যায়নি। ১৯৭৫ সালে প্রভাকরণের বিরুদ্ধে জাফনার মেয়রকে হত্যার অভিযোগ ওঠে।

একটি হিন্দু মন্দিরে প্রবেশের মুহূর্তে খুব কাছ থেকে গুলি করে মেয়রকে হত্যা করা হয়। আগের বছর জাফনায় পুলিশের হামলায় ৭ ব্যক্তি নিহত হওয়ার প্রতিশোধ নিতেই মেয়রকে হত্যার ঘটনা ঘটে বলে মনে করা হয়। এক বছর পর প্রভাকরণের সংগঠনটির নাম হয় লিবারেশন টাইগারস অব তামিল ইলম (এলটিটিই)। তামিল টাইগার নামেই পরিচিত হয়ে এটি। টাইগাররা ১০ হাজারেরও বেশি সদস্যদের দুর্ধর্ষ এক বাহিনীতে পরিণত হয়।

অনেক নারী ও শিশুকেও এর সদস্য করা হয়। প্রবাসী তামিলদের অর্থসহায়তায় আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রও জোগাড় করতে সক্ষম হয় টাইগাররা। কয়েকটি প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী টাইগারদের প্রতি সহানুভূতিশীল ভারতের তামিলরাও অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহে সাহায্য করেছিল। শ্রীলংকার সেনাবাহিনীর তুলানায় সংখ্যায় কম হওয়ায় প্রভাকরণ তার বাহিনীকে গেরিলাকায়দায় পরিচালনা করে বেশ কয়েকটি লক্ষ্যস্থলে হামলা চালায়। তিনি অনুসারীদের মধ্যে শহীদী-স্পৃহা জাগিয়ে আত্মঘাতী হামলাকারী দল গড়ে তোলেন।

এরপর বিশ্বের কোনো দেশে প্রথমবারের মতো বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে নিয়মিত আত্মঘাতী হামলার ঘটনা শুরু হয়। ১৯৯১ সালে চেন্নাইয়ের কাছে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে হত্যার জন্য প্রভাকরণকে দায়ী করা হয়। বলা হয়, ১৯৮০ দশকের মাঝামাঝিতে শ্রীলংকায় ভারতীয় শান্তিরক্ষী মোতায়েনের প্রতিশোধ নিতে রাজীবকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রভাকরণ। ভারতের একটি আদালত তার ওপর মৃত্যুপরোয়ানা জারি করে এবং সন্ত্রাসবাদ, খুন ও সুসংগঠিত-অপরাধের অভিযোগে ইন্টারপোলের 'ওয়ান্টেড' তালিকায় তার নাম উঠে। অনেক দেশ এলটিটিই-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করে।

প্রভাকরণ মাত্র কয়েকবার সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন। ২০০২ সালে সাংবাদিকদের সামনে এরকম একটি উপস্থিতিতে তিনি রাজিব গান্ধীর হত্যা নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি শুধু বলেন, ওটি একটি 'মর্মান্তিক দুর্ঘটনা'। প্রভাকরণ বারাবারই তামিলদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের কথা তুলে ধরে বলেন, এই অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে তিনি জীবন দিতে প্রস্তুত। টাইগারদের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি সংগঠিত হয় ১৯৯৬ সালে কলম্বোয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।

এক আত্মঘাতী হামলাকারী ট্রাকভর্তি বিস্ফোরক নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটায়। নিহত হয় ৯০ জন। আহত হয় ১৪ শয়েরও বেশি। হতাহতদের বেশিরভাগই ছিল বেসামরিক মানুষ। কয়েকজন বিদেশিও নিহত হয়।

এই হামলার ঘটনায় ২০০২ সালে শ্রীলংকার একটি আদালত প্রভাকরণের অনুপস্থিতিতে বিচার করে তাকে ২০০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। ২০০৬ সালে সর্বশেষ শান্তি আলোচনার উদ্যোগ ব্যর্থ হলে শ্রীলংকার সেনাবাহিনী টাইগারদের অবস্থানের ওপর সাঁড়াশি আক্রমণ শুরু করে এবং একটি পর একটি টাইগারঘাঁটির পতন ঘটতে থাকে। এ বছরের গোড়ার দিকে টাইগারদের প্রশাসনিক রাজধানী কিলিনোচ্ছি হাতছাড়া হলে শোচনীয় অবস্থায় পড়েন প্রভাকরণ। গুজব ছড়িয়ে পড়ে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। প্রভাকরণের জীবনের প্রায় পুরোটা কেটেছে গোপনে, জঙ্গলের আস্তানায়।

১৯৯০ দশকের শেষের দিকে, তার শক্তিমত্তার সবচেয়ে ভালো সময়ে শ্রীলংকার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলটিটিই'র দখলে চলে গিয়েছিল। তবে শেষপর্যন্ত তিনি তার ক্ষমতাকে স্বপ্নপূরণের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি। স্বশাসিত তামিল আবাসভূমির স্বপ্ন তার অধরাই থেকে গেল। কৃতজ্ঞতা: বিডিনিউজ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।