আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সার্ভিক্যাল ক্যান্সার



বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে ২০০৫ সালে সমগ্র পৃথিবীতে ৫,০০,০০০ মহিলা জরায়ু মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। এর শতকরা ৯০ ভাগ রোগীই হচ্ছেন উন্নয়নশীল দেশের বাসিন্দা। ধারণা করা হয় যে পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় ১০,০০,০০০ মহিলা জরায়ু মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন যাদের বেশীর ভাগই অজানা রয়ে গেছে বা রোগ নির্ণিত হলেও চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। ২০০৫ সালে ২,৬০,০০০ মহিলা জরায়ু মুখের ক্যান্সারে আক্রাšত হয়ে মারা গেছেন যার মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগই উন্নয়নশীল দেশের। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, পূর্ব আফ্রিকা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং মেলানেশিয়ায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশী।

ভারতীয় উপ মহাদেশে মহিলাদের ক্যান্সারের শতকরা ২০ ভাগই জরায়ু মুখের ক্যান্সার। জরায়ুর নীচের দিকের তিন ভাগের এক ভাগ অংশ কে জরায়ু মুখ বা সার্ভিক্স বলে আর এই অংশের ক্যান্সার কে সার্ভিক্যাল ক্যান্সার বা জরায়ু মুখের ক্যান্সার বলে। পৃথিবীতে জরায়ু মুখের ক্যান্সার হচ্ছে মারাত্মক ক্যান্সার গুলোর মধ্যে ৫ম। বছরে প্রতি ১২৩ জনে ১ জন মহিলা এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস নামের একটি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণ এই রোগের একটি অন্যতম প্রধাণ রিস্ক ফ্যাক্টর।

যেহেতু এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণ হতেই হবে তাই বর্তমানে জরায়ু মুখের ক্যান্সার কে যৌন বাহিত রোগ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। অল্প বয়সে বিশেষ করে ১৭ বৎসর বয়সের আগে যৌন জীবনে অভ্যস্ত হওয়া, যারা বহুগামী বা যাদের যৌন সঙ্গী বহুগামী; অল্প বয়সে বিয়ে, বহু সন্তান প্রসব, ধূমপান, রোগ প্রতিরোধ শক্তি কমে যাওয়া এবং এইডস রোগে আক্রান্ত, হারপেস সিমপ্লেক্স ভাইরাস সংক্রমণ, হরমোন চিকিৎসা, নিম্নবিত্ত সমাজের মহিলারা এবং যাদের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। অবিবাহিত বা যারা যৌন জীবন যাপন করে না তারা আক্রান্ত হন না বললেই চলে। নান দের মধ্যে এ রোগের দেখা পাওয়া যায় না বললেই চলে । সাধারণত ৩০ বৎসর বয়সের আগে মহিলারা এরোগে আক্রান্ত হন না।

৪০ বৎসর এবং এর আশেপাশের বয়সে বেশী আক্রন্ত হন। ৫০ থেকে ৬০ বৎসর বয়সে রোগীদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বেশী। প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগের কোন লণ দেখা যায় না। রোগ বৃদ্ধির সাথে সাথে লণ গুলো প্রকাশ পেতে থাকে। যোনীপথে অস্বাভাবিক রক্ত রণ বিশেষ করে যৌন ক্রিয়ার পরে বা মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্ত রণ, দুই মাসিকের মধ্যে রক্ত রণ, যাদের মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে তাদের হঠাৎ রক্ত রণ এবং সাদা স্রাব হওয়া এ রোগের লণ।

যদিও এ সব লণ অন্যান্য ক্ষেত্রেও দেখা যেতে পারে তবে রোগীর ইতিহাস এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এ রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। এছাড়া যৌন মিলনের সময় ব্যাথা এবং পরবর্তীতে রোগ ছড়িয়ে গেলে অন্যান্য লণ গুলো দেখা যায় যেমন অরুচি, ওজন কমে যাওয়া, কান্তি , তলপেটে ব্যাথা, কোমড়ের পেছনে ব্যাথা, পায়ে ব্যাথা, যে কোন একটি পা ফুলে যাওয়া, যোনী পথে মল বা মূত্র বের হওয়া; এমন কি কাশি, জন্ডিস, পেটে পানি জমা, এবং হঠাৎ কোন হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে। রোগ নির্ণয় করার জন্য রোগীর ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষা করতে হবে এর পর বায়োপসী করে চুড়ান্ত ভাবে রোগ নির্ণয় করতে হবে। এছাড়া কতগুলো নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে যেমন রক্ত পরীক্ষা , লিভার ফাংশন টেষ্ট, কিডনি ফাংশন টেষ্ট, আলট্রসনোগ্রাম, সিটি স্ক্যাণ ইত্যাদি । একটি কথা লক্ষনীয় যে জরায়ু মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী রা সাধারণত কিডনি নষ্ট হয়েই মৃত্যু বরণ করেন।

পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় এবং রোগের ষ্টেজ বা অবস্থা নির্ণয় করার পরে চিকিৎসা নিতে হবে। একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে লেজার রশ্মি দিয়ে চিকিৎসা করা যায় এছাড়া ক্রায়োসার্জারী নামের একটি পদ্ধতি রয়েছে। তার পরের পর্যায়ে অপারেশনের মাধ্যমে জরায়ু সম্পূর্ণ অপসারণ করতে হবে এবং তার পর রেডিওথেরাপী নিতে হবে। এর পরের পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে রেডিওথেরাপী নিতে হবে; আরও পরের পর্যায়ে অর্থাৎ রোগ যখন সাড়া শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে তখন কেমোথেরাপী দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করলে ৫ বৎসর বেঁচে থাকার হার শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ।

রোগ প্রতিরোধ -- রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে প্রথমে প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি। দেখা গেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশে মাত্র ৪০ ভাগ মহিলা এই হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস সম্পর্কে জানেন এবং মাত্র ২০ ভাগ মহিলা জানেন যে এটা জরায়ু মুখের ক্যান্সারের জন্য দায়ী। সবাইকে জানতে হবে ক্যান্সারের কারণ, ব্যাপকতা, এর চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে। মহিলা দের পাশাপাশি পুরুষদের ও জানতে হবে এর সম্পর্কে। কিছু নিয়ম মেনে চলা সবার জন্যই প্রয়োজন যেমন যৌন জীবন দেরী করে শুরু করুন, দেরীতে বিয়ে এবং প্রথম সন্তান নিন, কম সন্তান নিন, যৌন সঙ্গীর সংখ্যা কম রাখুন, যাদের যৌন সঙ্গী বেশী তাদের কে নিজের যৌন সঙ্গী করবেন না, স্ত্রী বা স্বামীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকুন, কনডম ব্যবহার করুন, ধূমপান বর্জন করুন, যে কোন অসুখে দ্রুত চিকিৎসা নিন এবং ২৫ বৎসর বয়স হলেই স্ক্রীনিং বা বাছাই করন পরীক্ষা করুন।

ভায়া এবং প্যাপ টেষ্ট নামের সহজ লভ্য পরীক্ষার মাধ্যমে সহজেই প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ সম্পর্কে জানা যায় এবং প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ থাকা যায়। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির সুপারিশ মতে ২১ বৎসর বয়স হলেই বা যৌন জীবন শুরুর ৩ বৎসরের মধ্যেই স্ক্রীনিং করা উচিৎ। প্রতি ৩ থেকে ৫ বৎসরে একবার করে স্ক্রীনিং করা উচিৎ। বর্তমানে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস প্রতিরোধে একটি ভ্যাকসিন আবিস্কৃত এবং ব্যবহার শুরু হয়েছে। গার্ডাসিল নামের এই ভ্যাকসিন এফ ডি এ অনুমোদন দিয়েছে এবং এটি ৯ থেকে ২৬ বৎসর বয়সী মেয়েদের দেয়া হচ্ছে যারা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় নি।

সচেতন হোন এবং সুস্থ থাকুন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.