আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোট বোনের বড়মি



আমার ছোট বোন আমার চেয়ে ২ বছরের ছোট, কিন্তু ছোটবেলা থেকেই সে আমার উপর বড়বোনের মত খবরদারি করে। অনেক সময় এই খবরদারি আমার উপকারেও আসে। ওর জন্মের পর আম্মার পক্ষে চাকরি করার পাশাপাশি আমাদের চারবোনের একসাথে দেখাশুনা করা কষ্টকর হয়ে গিয়েছিল। তাই আমাকে আর আমার বড়বোনকে কিছুদিনের জন্য আমার খালার কাছে রেখে এসেছিলেন। এক বছর পর যখন আম্মা আমাদের নিতে আসলেন আমার ছোট বোন কিছুতেই আমাকে সহ্য করতে পারছিলনা।

আম্মা পড়েছিলেন মুশকিলে, একদিকে এতদিন আমার কাছ থেকে দূরে ছিলেন বলে বেশী আদর করতে ইচ্ছা করত, অন্যদিকে ছোটবোনের জেদের কাছেও হার মানতেন। আমাকে একটু আদর করতে দেখলেই ছোটবোনের দুইচোখ বাঘিনীর মত জ্বলতে থাকত। সেটা দেখে আমি ভয়ে আম্মার কোল থেকে নেমে দৌড় দিতাম। একবার আব্বা বাইরে থেকে এসে দুহাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কোলে নেবার জন্য, ছোটবোন দূর থেকে দৌড়ে আসছিল কোলে উঠবার জন্য, কিন্তু অর্ধেক পথ এসেই দেখল আব্বা আসলে আমাকে কোলে নেবার জন্য হাত বাড়িয়েছেন, এটা দেখে সে ব্যালে ড্যান্সারদের মত একটা ঘুরুন্টি মেরে উপুর হয়ে পড়ে গেল আর চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করল। পরে অবশ্য আমাদের জানি দুস্তি হয়ে গিয়েছিল।

আমরা সারাক্ষণ একসাথে খেলতাম। অবশ্যই খেলায় সে আমার উপর খবরদারি করত, আর আমি বিনাবাক্যে মেনেও নিতাম। আমি কিন্ডার গার্টেনে থাকতে স্কুলভ্যানে ছেলেমেয়েদের কাছে খুব অপদস্থ হতাম। বোকার মত কখনই প্রতিবাদ করিনি। একবছর এভাবেই কেটেছে।

পরের বছর যখন ছোটবোন ভর্তি হল, প্রথম দিন আমার সাথে ভ্যানে যাবার সময়ই সে বিড়াল মেরে দিল। একটা ছেলে আমার স্কুল ড্রেসের উপর একটা গরু এঁকে সেটা স্কেল দিয়ে কুরবানি দিচ্ছিল। সেটা দেখে ছোটবোন য়্যাত্তবড় চোখ করে বলল, "চোওওওপ"। ছেলেটা হতভম্ব হয়ে সরে গেল। আর কোনদিন আমাকে কেউ ঘাটানোর সাহস পায়নি।

ও শুরুতে শুরুতে আমাকে নাম ধরে ডাকত। আম্মা তাকে শিখিয়ে দিল আমাকে সেজআপা ডাকতে। আমি ব্যাপারটায় বেশ গর্বিত বোধ করলাম। একবার আমরা বড় খালার বাসায় বেড়াতে গেছি, বড় খালার বড় জামাই আমাকে আদর করে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার নাম কী বাবু? আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, সেজআপা। সবাই সেদিন কী যে হাসাহাসি করেছিল এটা নিয়ে, এখনও লজ্জা লাগে মনে পড়লে।

সেই দুলাভাই আমাকে এখন পর্যন্ত সেজআপা বলে ডাকে। যদিও আমার ছোট বোন আমাকে এখন আপুনি ডাকে। আমার ছোটবোনটা এত দুরন্ত ছিল যে সারাক্ষণই ব্যথা পেত। ওর কপালে সবসময় কোন না কোন পাশে একটা আব গজে থাকতই। তার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আব্বা জরুরি জিনিসপত্র আলমারির উপর উঠিয়ে রাখতেন।

ছোটবোন দেড় বছর বয়সেই আলমারির উপর ওঠা শিখে গেছিল। আলমারির পাশে রাখা ওয়াড্রোব বেয়ে ওঠানামা করত। একবার সে লুকিয়ে লুকিয়ে আলমারির উপর উঠে আব্বার জিনিসপত্র ঘাটাঘাটি করছিল। হঠাৎ আব্বা ঐ ঘরে আসলেন। এসেই আলমারির উপর চোখ গেল।

ছোটবোন দেখল ওয়াড্রোব বেয়ে নামার সময় নেই। সে সরাসরি আলমারির উপর থেকে নীচে লাফ দিল। আব্বার মাথা ঘুরে উঠল, চোখের সামনে পুরো অন্ধকার হয়ে গেল। কিছুক্ষণ আব্বা কিছু দেখতে পারলেননা। একটু পর সামলে নিয়ে যখন ভাল করে তাকালেন দেখলেন মেঝেতে কেউ নেই।

কারণ ছোটবোন লাফ দিয়ে নীচে পড়েই সাথে সাথে খাটের নীচে লুকিয়ে গেছে। এই ঘটনা এখনও আব্বা কাউকে বলতে গেলে ঘেমে ওঠেন। এত কথা মনে পড়ছে ওর দুরন্তপনার যে লিখতে লিখতে হাত ব্যথা হয়ে যাচ্ছে। পরে আরও লিখব।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।