আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার পরদাদার ডাবল মজা

জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই

উনার নাম মহি শেখ। জাতে আসামী। কাজেও আসামী। উনি ব্যবসায়ী ছিলেন। আসামের জঙ্গলে কাঠ কাটতেন।

প্রচুর কাঠ। তারপর বড় বড় কাঠের গুঁড়ি একত্রিত করে ভেলার মতো বানাতেন। ভাসিয়ে দিতেন বহ্মপুত্রের জলে। সেই ভেলায় চরে চলে আসতেন ভৈরব। যতদিন কাঠ বিক্রি না হত, তত দিন ভৈরবই থাকতেন।

কাঠ বিক্রি শেষ হলে ফিরে যেতেন আসামে। এভাবে দেখা যেত বছরের ৬ মাস ভৈরবে এবং ৬ মাস আসামে কাটাতেন। লোকটি যে বুদ্ধিমান ছিলেন, তার প্রমাণও পাওয়া যায়। তার ছিল দুটি পরিবার। একটি ভৈরবে, অন্যটি আসামে।

ছয় মাস এইখানে মজা মারতেন, ছয় মাস ওই খানে মজা মারতেন। আমার চাচার মুখে শুনেছি, আমার পরদাদার ভৈরবের স্ত্রী কখনই বিশ্বাস করেন নি, আসামে তার স্বামীর আরেকটি স্ত্রী আছে। বরং কেউ এ কথা বললে তিনি ভীষণ কান্নাকাটি করতেন। তবে আসাম থেকে কেউ এলে এ কথা রং চড়িয়ে বলে বেড়াত। আমার এক সহকর্মীর ঘটনা বলি।

তার বাবা মারা গেল। লোকটা ছিল রোড এন্ড হাইওয়েজের কন্ট্রাক্টর। বিভিন্ন জেলায় গিয়ে কাজ করতেন। মারা যাওয়ার পর সহকর্মীকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য গেলাম। গিয়ে দেখি আরেক নাটক।

কান্নাকাটি নয়, চলছে রাগারাগি। কারণ, খুলনা থেকে লোকটির আরেকটি পরিবার এসে হাজির। ওই পরিবারের লোকজন জানত না, তার আরেকটি পরিবার আছে। এই পরিবারও জানত না, তার আরেকটি পরিবার আছে। সামাজিকভাবে উভয় পরিবারের জন্য এটা ছিল ভীষণ লজ্জার।

ফলে কান্নার রোল থেমে গেল। বরং আমি তাদের চেহারায় ক্ষোভ আর লজ্জার চিহ্ন দেখতে পেলাম। তবে আমার সহকর্মীর পরিবারের সবার মনে সন্দেহ ছিল ওই মহিলা ও তার সন্তানরা ভুয়া এবং তারা সম্পত্তির লোভে প্রতারণা করতে এসেছে। কিন্তু পরবর্তীতে জানা গেল, ওই মহিলার কোন সম্পত্তির প্রয়োজন নাই। কেননা, তার নিজের নামে খুলনায় বাড়ি গাড়ি আছে।

তার স্বামী তাকে সব বন্দোবস্ত করে দিয়েই মরেছে। আমার জানা মতে, এখনকার সভ্য দুনিয়ায় একমাত্র মুসলমানরাই বহু বিবাহ করে থাকে। চারটি বিয়ে করা সুন্নত বলা হয়ে থাকে। আমাদের রসুল ১৩টি বিয়ে করেছিলেন। রসুলকে অনুসরণ করা সুন্নত।

সে হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের ১৩ টি বিয়ে করা উচিত। কিন্তু আমাদের জন্য সীমাবদ্ধ সেটি ৪ টিতে। কেন ৪ টি তার কোন উত্তর আমি কোন হুজুরের কাছে পাইনি। তবে এই জঘন্য প্রথাটি মুসলমানদের ভয়াবহ ক্ষতি করছে সেটা নিশ্চিত। সেই স্ত্রীটির কথা ভাবুন, যার স্বামী আরেকটি বিয়ে করেছে।

তার কাছে তার স্বামীর আরেকটি বিয়ের কি মানে দাঁড়ায় ? তার কাছে এর অর্থ হয় এ রকম ----- ০১) তার স্বামী তাকে ভালোবাসে না। তাকে ভালোবাসলে তাকে ছেড়ে অন্য নারীর পেছনে পড়ত না। ০২) তার স্বামীকে সে বিছানায় মজা দিতে পারে না। যদি পারত, তবে তার স্বামী তাকে ছেড়ে অন্য নারীর কাছে যেত না। ০৩) তার নিজের প্রতি একটা ঘৃণা জন্মায়।

নিজেকে ছোবড়ার মতো ফেলে দেয়া জিনিস মনে হয়। ০৪) যেই নারীটিকে তার স্বামী বিয়ে করে সেই নারীর প্রতি তার সুতীব্র ঈর্ষা জন্মে। তার স্বামীর ভণ্ডামির ফলে এক সময় ধারণা হয়, তার স্বামী ভাল, ওই ছিনাল মাগী তার স্বামীর মাথাটা খেয়েছে। সতীনের সাথে সতীনে সম্পর্ক ভালো এক রকম কখনও দেখিনি। বরং তাদের মধ্যে চিরস্থায়ী শত্রুতা ।

এই শত্রুতার জন্য দায়ী একটি পুরুষের মজা মারার নোংরা লোভ। কিন্তু তার ফল ভোগ করতে হয় নারীকে। তাদের চিরন্তন এই শত্রুতা তাদের সন্তানদের মধ্যে গড়ায়। সৎ ভাই বোন মানে জন্ম থেকেই শত্রু । তারা জন্ম নেয়ার আগেই তাদের চিরশত্রু জন্ম নিয়ে বসে আছে।

যখন তাদের বাবা মারা যায়, সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে শুরু হয় খাবলাখাবলি। কে কাকে ঠকাবে, সেই প্রতিযোগিতা শুরু। এই খাবলাখাবলিতে তাদের মায়েরা ইন্ধন দেয়। মারামারি, ঝগড়া, খুনাখুনি, মামলা মোকদ্দমা ইত্যাদিতে সেই পরিবারের যা কিছু সম্পত্তি থাকে, তা শেষ হয়ে যায়। লাভ হয় কিছু টাউট বাটপারের।

তারা পেছন থেকে ইন্ধন দিয়ে ইচ্ছামতো লুটেপুটে খায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন আদালতে যত মামলা আছে, তার বেশির ভাগই জমিজমা বাটোয়ারা ও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত । বহু বিবাহ আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। অশিক্ষা, কুশিক্ষা, দারিদ্র ও জনসংখ্যার ভয়াবহ বিস্ফোরণের অন্যতম কারণ এই বহু বিবাহ। বহু বিবাহ পরিবারের শান্তি নষ্ট করে, চিরস্থায়ী শত্রুতা তৈরি করে, সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে মামলা মোকদ্দমার সংখ্যা বাড়ায়।

এবং সম্পত্তি যদি সহি বণ্টনও হয়, সেই সম্পত্তি সব ভাই বোনদের মধ্যে ভাগাভাগি করে এত কম হয় যে, সেটা আর কোন কাজে লাগানো যায় না। ফলে বাবার অগাধ সম্পত্তি থাকলেও পরবর্তী প্রজন্ম তার থেকে সুফল পায় না। সোজা কথা, ইসলামের নাম দিয়ে এই ডাবল মজা, ট্রিপল মজা বন্ধ হোক। আইন করে চিরতরে নিষিদ্ধ করে দেয়া হোক। যারা এই কাজ করবে, তাদের জন্য ভয়াবহ শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।

কোন সভ্য মানুষ একই সাথে একের অধিক স্ত্রী রাখতে পারে না। এটি একটি জঘন্য বর্বর প্রথা। আমাদের মতো দরিদ্র দেশে যেখানে অর্থের অভাবে লাখ লাখ মানুষ জীবনে কোন সাধ আহলাদ পূরণ করতে পারে না, শিক্ষার আলো পৌঁছে না লক্ষ কোটি মানুষের ঘরে, লক্ষ কোটি বেকার দুর্বিষহ জীবন কাটায়, সেখানে বহু বিবাহ শুধু অমানবিক নয়, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং জাতির প্রতি চরম দায়িত্বহীনতা। একজন খাঁটি মুসলমান যদি এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারে, তবে কেন এক স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারবে না ?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।