আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য: দরকার দ্রুত পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন

আদর্শটাকে আপাতত তালাবন্ধ করে রেখেছি

জনসংখ্যার তুলনায় আয়তন ছোট হলেও বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি বৈচিত্র্যময় এবং যথেষ্ট সমৃদ্ধ- বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকের হয়তো তথ্যটি বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। মানুষের হাতে ভূ-প্রকৃতির অনেক অংশ ধ্বংস এবং গাছপালা-জীবজন্তু উচ্ছেদের পরও এখন দেশে জীববৈচিত্র্য যতোটুকু রয়েছে, সেটুকুও কিন্তু অনেক দেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আজ থেকে কয়েক দশক আগেও জীববৈচিত্র্যে বাংলাদেশের যে অবস্থা ছিলো, এখন তার অর্ধেকও অবশিষ্ট নেই। প্রকৃতির অফুরন্ত দানকে মানুষ নিজের বাঁচার তাগিদে এবং অপ্রয়োজনে উন্মত্তের মতো ধ্বংস করেছে। অবস্থা এখন এমন দিকে যাচ্ছে যে, এই ধ্বংসের প্রতি এখনই মনোযোগ না দিলে প্রকৃতির পাশাপাশি মানুষের দুর্দশাও ঘনিয়ে আসবে শিগগরিই।

ইতোমধ্যেই যার আলামত স্পষ্ট। তবে বিষয়টি আমরা এখনো গুরুত্ব দিয়ে উপলব্ধি না করতে পারলেও সারা বিশ্বে পরিবেশ সচেতন মানুষেরা সভা-সেমিনার করে সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। ঐতিহ্যমণ্ডিত এলাকাকে জাতিসংঘ ঘোষণা করছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। যেখানকার কোনো অংশকে মানুষ ধ্বংস বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিবর্তিত করতে পারবে না। বাংলাদেশের সুন্দরবনও ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অংশ।

সামগ্রিক পরিবেশ রক্ষার লক্ষে জাতিসংঘ কাজ করলেও নিজেদের পরিবেশকে রার কোনো চেষ্টা আমাদের নেই। নেই পরিকল্পনা, পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যের প্রধান উদাহরণ এদেশের ধানের প্রজাতি। গত শতকের পঞ্চাশের দশকে দেশে ৫ হাজারেরও বেশি প্রজাতির ধান ছিলো। এগুলো লুপ্ত হতে হতে এখন মাত্র কয়েক শত প্রজাতি অবশিষ্ট রয়েছে।

জিনপ্রযুক্তির প্রচারণার প্রভাবে জিএম ফুডের চাহিদা বাড়ায় হাজার হাজার প্রজাতির ধান যেমন বিলুপ্ত হয়ে গেছে, তেমনি বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার চাপে অল্প জমিতে বেশি ধানের আশায় কৃষককেও সুমিষ্ট বিভিন্ন প্রজাতির ধানের চাষ বাদ দিয়ে অধিক ফলনশীল ইরি ধানের দিকে ঝুঁকতে হয়েছে। ফলে এখন সারা বাংলাদেশে দ্রুত বর্ধিষ্ণু ধানের কদর যতো বেশি, কম ফলনশীল কিন্তু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ও গুণসম্পন্ন ধানের কদর ততোই কম। কদর ও চাহিদা না থাকার কারণে কৃষকরা এ সমস্ত ধান ফলাতে আগ্রহী হচ্ছে না। যদিও ওইসব ধানের স্বাদের কাছে ইরি বা ইরিজাতীয় ধান হার মানতে বাধ্য। বর্তমানে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া কিছু প্রজাতির ধানের নমুনা বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা বিআরআরআই-এ রক্ষিত আছে।

উবিনীগও এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে। ধানের মতোই অবস্থা পাটেরও। পাটের অবস্থা বরং আরো খারাপ। এককালে শুধু বাংলাদেশেই প্রায় ১৫০০-র কাছাকাছি পাটের প্রজাতি ছিলো। সোনালী আঁশ বলে খ্যাত এই উদ্ভিদটির বিভিন্ন প্রজাতির ধ্বংসের পেছনে একমাত্র দায়ী বাংলাদেশের কিছু মানুষ।

পাটের কলগুলোতে বিভিন্ন ধরনের পাটের যথেষ্ট চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এবং বিশ্বব্যাপী পাটের বাজার থাকা সত্ত্বেও পলিথিনজাতীয় পণ্যের ব্যাপক প্রসার এবং বহুজাতিক কোম্পানির ষড়যন্ত্রের ফলে পাটের চাষই এখন বাংলাদেশে অস্তিত্বের সম্মুখীন। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা দেশে মোট কতো প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে, এ সম্পর্কে সঠিক কোনো জরিপ বা হিসাব না চালালেও ধারণা করা হয় বাংলাদেশে প্রায় ৫ হাজার প্রজাতির গাছ (ভাসকুলার প্লান্ট) রয়েছে। বনভূমি কেটে আবাসস্থল গড়ে তোলা, নির্বিচারে পাহাড় কাটা এবং গাছ কাটার পর নতুন করে গাছ না লাগানোর কারণে কয়েক শত প্রজাতির গাছ এখন ধ্বংসের মুখে। এছাড়া ঘাসের মধ্যে বিদেশী ঘাসের চাহিদা ও আমদানি বাড়ায় কিছু প্রজাতির ঘাস এখন লুপ্ত হয়ে গেছে ধারণা করা হয়। উদ্ভিদ ছেড়ে আসা যাক প্রাণীতে।

নদনদীর দেশে একসময় বিজ্ঞানসম্মত মাছের চাষের ধারণা না থাকলেও বর্তমানে সারা দেশের পুকুরগুলিতে মাছ চাষ হচ্ছে। কিন্তু চাষ যতোই হচ্ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাছের ঘাটতি। নদনদীতে আশঙ্কাজনকহারে কমে যাচ্ছে মাছের পরিমাণ। চাষাবাদের উদ্দেশ্যে কাটা পুকুর ছাড়া অধিকাংশ পুকুরেই এখন আর মাছ পাওয়া যায় না। খাল-বিল সব শুকিয়ে যাচ্ছে ক্রমেই।

হাওরে মাছের পরিমাণ শূন্যের কোটায়। মৎস্যবিজ্ঞানীদের হিসেব অনুযায়ী, একসময় বাংলাদেশে মিঠা পানির মাছ ছিলো প্রায় দুই হাজারের মতো। বর্তমানে এই সংখ্যা ২৬৬-তে এসে ঠেকেছে। সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে অবশ্য মাছের প্রজাতির সংখ্যা কমেনি। বর্তমানে সমুদ্র উপকূলে ৪৪২ প্রজাতির মাছ রয়েছে।

এদিকে নির্বিচারে গাছপালা ধ্বংসের কারণে পাখির সংখ্যাও কমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। বিজ্ঞানীরা ৩৮৮টি দেশীয় পাখির সংখ্যা রেকর্ড করেছেন। একসময় দেশে শীতকালে ৮০০-র বেশি প্রজাতির অতিথি পাখি আসলে এখন এই সংখ্যা কমতে কমতে এসে ২৪০-এ দাঁড়িয়েছে। অতিথি পাখি নিধন বন্ধ না করা হলে এ সংখ্যা আরো দ্রুত কমবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। দেশীয় পাখিও কমে যাচ্ছে।

সব মিলিয়ে পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত এই বাংলাদেশ পাখিশূন্য হয়ে যাচ্ছে। পাখিদের মতো অবস্থা বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীদেরও। বর্তমানে দেশে ১৪ প্রজাতির উভচর প্রাণী পাওয়া যায়। সরীসৃপের প্রজাতির সংখ্যা ১১২। চামড়া ও অন্যান্য প্রয়োজনে কিছু প্রজাতির সরীসৃপের চাষ করা হলেও আকারে ছোট সরীসৃপগুলো ধ্বংস হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

স্তন্যপায়ী জীবের প্রজাতি সংখ্যা ১১০। উপরের দেয়া সংখ্যাগুলো একটি দেশের জন্য কোনোমতেই উৎসাহব্যঞ্জক হতে পারে না। দেখাতে পারে না কোনো আশার আলো। ইকোলজিক্যাল সিস্টেমের কারণে একটি দেশে যতো বেশি সম্ভব প্রজাতির বাসস্থানের ব্যবস্থা করা উচিত। মানুষ, বেশি গাছ ও অধিক প্রজাতির প্রাণীর সহাবস্থানের ফলে পরিবেশ যতোটা উপকৃত হয়, ততোটা অন্য কোনোভাবে হয় না।

ইকোসিস্টেম ইকোসিস্টেম নিয়ে বর্তমান সময়ে বেশ কথাবার্তা চলছে। শব্দটি বিভিন্ন মহলে পরিচিত হয়ে উঠছে ক্রমাগত। যদিও ইকোসিস্টেম সম্পর্কে অনেকেরই কোনো সুস্পষ্ট আইডিয়া বা ধারণা নেই। সাধারণত ধরে নেয়া হয়, ইকোসিস্টেমের উন্নত ঘটালেই পরিবেশের উন্নতি ঘটবে। কিন্তু সঠিকভাবে ইকোসিস্টেমের উন্নতি না ঘটাতে পারলে তা পরিবেশের উন্নতির চাইতে অবনতিই ঘটায়।

ইকোসিস্টেমের সর্বজনীন সংজ্ঞা না থাকলেও একটি নির্দিষ্ট এলাকায় একদল উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রাকৃতিক সহাবস্থানকে সাধারণভাবে ইকোসিস্টেমের প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। এই সহাবস্থানে কৃত্রিম কোনো ব্যবস্থা থাকবে না। কোনো প্রজাতির প্রাণী বা উদ্ভিদকে ধ্বংস করা যাবে না, এবং সেই এলাকায় অভিযোজিত হতে সক্ষম নয় এমন কোনো প্রজাতির প্রাণী বা উদ্ভিদকে নতুনভাবে অভিযোজিত করা যাবে না। অর্থাৎ কোনোভাবেই সেখানকার প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক অবস্থাকে ক্ষুণ্ন করা যাবে না। যেখানে পর্যায়ক্রমিক খাদ্যপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিটি প্রাণীর খাদ্য যোগান হয়ে থাকে।

১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ পরিবেশবিদ স্যার আর্থার জর্জ টেনসলি প্রথম ইকোসিস্টেম শব্দটি ব্যবহার করেন। তিনি একটি দ্বীপের উদাহরণের মাধ্যমে দেখান যে, সেখানকার ভূ-বৈচিত্র্য, মাটির অবস্থা এবং আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে কমপক্ষে দুই হাজার প্রজাতির গাছ এবং সাড়ে সাতশ প্রজাতির প্রাণীর সহাবস্থান বাধ্যতামূলক না হলে দ্বীপটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে। পাশাপাশি দ্বীপে অবস্থিত মানুষের অস্তিত্ব সংশয়ে পড়তে বাধ্য হয়। উদ্ভিদ ও প্রাণীর এই সহাবস্থানের সিস্টেমকে তিনি ইকোসিস্টেম হিসেবে অভিহিত করেন। ইকোসিস্টেম কীভাবে কাজ করে একটি প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থানকারী বিভিন্ন ধরনের প্রাণী ও উদ্ভিদ থাকে।

প্রাণীদের মধ্যে স্থলচর, জলচর ও উভচর- উভয় প্রজাতির প্রাণীই থাকে। অন্যদিকে ব্যাঙের ছাতা থেকে বিশালকায় বৃক্ষতো আছেই। প্রতিটি প্রাণীই তার জীবনধারণের জন্য কোনো না কোনোভাবে অন্য প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল। এ প্রাণীগুলোর যে কোনো একটি প্রাণীর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হলে আস্তে আস্তে সবকটি প্রাণীর অস্তিত্বই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সারা পৃথিবীতে উদ্ভিদ ও প্রাণীর সহাবস্থানের শর্ত এই ইকোসিস্টেম।

ইকোসিস্টেম না থাকলে আস্তে আস্তে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যেতে বাধ্য। বর্তমানে আফ্রিকায় যেখানে সাহারা মরুভূমি অবস্থিত, সেখানে একসময় বনভূমি ছিলো। ছিলো হাজারো প্রজাতির প্রাণী। বিজ্ঞানীদের মতে, সাহারার তখনকার ইকোসিস্টেম নষ্ট হওয়ার কারণে আস্তে আস্তে সেখানকার সব প্রাণী ও উদ্ভিদ ধ্বংস হয়ে যায়, যার পরিণতি এই মরুভূমি। ইকোসিস্টেম ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কোনো পরিকল্পনা নেই আগেই বলা হয়েছে, বাংলাদেশে একসময় জীববৈচিত্র্যে পূর্ণ একটি দেশ ছিলো।

কিন্তু বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের ফলে সেই পরিবেশ এখন আর নেই। ফলে আস্তে আস্তে পার্বত্য এলাকার পাহাড়ের পরিবেশ যেমন ধ্বংস হচ্ছে, তেমনি ধ্বংস হচ্ছে ময়মনসিংহের গারো পাহাড়ের পরিবেশ। নষ্ট হচ্ছে ভাওয়াল ও মধুপুরের বনভূমির ঘনত্ব। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এই পরিবেশ ধ্বংসের কথা বলা হলেও মূলত পরিকল্পনা ও সচেতনতার অভাবই বাংলাদেশের ইকোসিস্টেম ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের জন্য দায়ী। পরিবেশের এই অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষে সরকার কিছু কিছু কাজ করছে।

বৃক্ষনিধনকে অনুৎসাহিত করা হচ্ছে, একটি গাছ কাটলে বিপরীতে দুটি গাছ লাগানোর কথা বলা হচ্ছে। ব্যাপক বনায়ন করা হচ্ছে। বিভিন্ন ঐতিহ্যমণ্ডিত অংশকে সংরক্ষিত করা হচ্ছে। ইকোপার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। নির্দিষ্ট আকারের নিচে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।

অতিথি পাখি নিধন বন্ধ করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। প্রাণী হত্যার ব্যাপারে কঠোর আইন করার কথা ভাবা হচ্ছে। একটা বিষয় এখানে লক্ষণীয়, আমাদের দেশে যারা ইকোসিস্টেমের কথা বলে পরিবেশ ও বনাঞ্চল রক্ষার কথা বলছেন, তারা সচেতন বা অবচেতনভাবেই হোক, ইকোসিস্টেমের বিরুদ্ধেই বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছেন। ইকোসিস্টেম শব্দের অর্থ ও কাজ এবং বাংলাদেশে তার বাস্তবায়নে ব্যাপক ফারাক। এই সিস্টেমে কিন্তু কোথাও বলা নেই, বনের পশুপাখিকে রার জন্য মানুষ উচ্ছেদ করতে হবে, কাঠ-ইটের শক্ত কাঠামো বানাতেই হবে; কিন্তু আমরা ইকোসিস্টেমের নাম করে প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজ প্রতিনিয়ত করেই যাচ্ছি।

ফলে ধারণা হিসেবে ইকোসিস্টেমের আবেদন দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। এখন ইকোপার্ক বা ইকোসিস্টেম শব্দগুলো শুনলে আতঙ্ক জাগে মনে। তাই বলা যায়, মূল কাঠামো ঠিক নেই। ছাড়াছাড়াভাবে এই কাজগুলো করে দেশের পরিবেশ রক্ষা করা যাবে না। একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর অধীনে নির্দিষ্ট কর্মসূচি ঠিক না করে এবং সেখানে সঠিক পরিকল্পনা না থাকলে আলাদাভাবে যতো কর্মসূচি নেওয়া হোক না কেনো, তা একসময় ব্যর্থ হতে বাধ্য।

১৯৯২ সালে বিশ্ব ধরিত্রী সম্মেলনের সময় জীববৈচিত্র্য সংক্রান্ত যে চূড়ান্ত কনভেনশন করা হয় তা ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বরে কার্যকর করা হয়। সেই কনভেনশনে যে বিষয়গুলোর ওপর জোর দেয়া হয়, সেগুলো হচ্ছে- জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জীববৈচিত্র্যের বিভিন্ন উপাদানসমূহের টেকসই ব্যবহার ও জেনেটিক সম্পদের ব্যবহার থেকে প্রাপ্য লাভের সুষ্ঠু ও সমবিভাজন নিশ্চিত করা। কনভেনশনের স্বাক্ষর করা প্রতিটি দেশই তাদের নিজ দেশে দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগী ভূমিকা পালন করার কথা থাকলেও বাংলাদেশ এখনো এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো কর্মকৌশল বা পরিকল্পনা তৈরি করেনি। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইইউসিএন এ ব্যাপারে কর্মকৌশল তৈরি করছে বলে জানা গেছে। কিন্তু যার এই মূল কাজটি করা উচিত, সেই পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এ ব্যাপারে কোনো পরিকল্পনা চোখে পড়ছে না।

যেখানে জীববৈচিত্র্যের কারণে বাংলাদেশের পরিবেশের অস্তিত্বই হুমকির সম্মুখীন, সেখানে এ ব্যাপারে পরিকল্পনাহীনতা যতো তাড়াতাড়ি কাটিয়ে ওঠা যায়, ততোই মঙ্গল। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগ এর আগে সারা দেশে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল অ্যারিয়া বা সংকটাপন্ন প্রতিবেশ হিসেবে আটটি এলাকা চিহ্নিত করলেও সেগুলো রক্ষার ক্ষেত্রে নতুন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বন বিভাগ তাদের নিজস্ব জরিপ অনুযায়ী সারা দেশের ১৬টি এলাকাকে সংরক্ষিত করার প্রস্তাব করেছে। তার কয়েকটিকে অবশ্য সংরক্ষিত বলে ঘোষণাও করা হয়েছে। কিন্তু তারপর আর তাদের কোনো কাজ নেই।

১৯৭৩ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের বলে বলীয়ান হলেও পরিবেশ মন্ত্রণালয় নতুন কোনো ব্যবস্থা গত দুই দশকে নেয়নি। যদিও এ কাজটি মূলত তাদেরই। ইরানের রামসার কনভেনশনে আন্তর্জাতিকভাবে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অঙ্গীকার করলেও দায়িত্ব নিয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয় এ কাজটি করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। পরিবেশের এ সংকটাপন্ন অবস্থায় এখন দরকার জরুরিভিত্তিতে একটি বড় পরিকল্পনা গ্রহণ করে সেটিকে যতো দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করা। শুধু সরকারিভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করলেই হবে না, সেটিকে বাস্তবায়নে দেশের সবস্তরের জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণে একদিকে জনগণের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা সম্পর্কে ধারণা জন্মাবে, তেমনি পরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। তা না হলে সব কাজ স্বাক্ষর প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।