আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সত্যজিৎ রায়: প্রকৃত মেধাবী এক প্রতিভার জন্মদিন আজ

ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
চলচ্চিত্রকার, সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী- সব পরিচয়ে অন্যতম স্মরণীয় বাঙালি সত্যজিৎ রায়। বাবা শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায়, দাদা শিশু সাহিত্যের আরেক দিকপাল উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী। ১৯২১ সালের ২ মে সত্যজিৎ রায় কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু বাংলাদেশের সাথে তার পূর্ব পুরুষের ছিল রক্তের সম্পর্ক। কারণ তার পূর্ব পুরুষরা বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার বড় মাসুয়া গ্রামের অধিবাসী ছিলেন।

ছোটবেলা থেকেই সত্যজিৎ রায় পরিবারে সাহিত্যচর্চ্চার ভালো পরিবেশ পেয়েছিলেন। তার দাদা-বাবা সাহিত্যিক ছিলেন, তেমনি তাদের বাড়ি থেকেই বের হতো খ্যাতনামা পত্রিকা সন্দেশ। বাড়ির মধ্যেই ছিল প্রেস। তাই বইয়ের অক্ষরের সাথে পরিচয়ের আগেই তার প্রেসের ধাতব অক্ষরের সাথে পরিচয় ঘটেছিল। ১৯৩০ সালে সত্যজিৎ বালিগঞ্জ স্কুলে ক্লাস সিক্সে ভর্তি হন।

তবে স্কুলে ভর্তি হবার আগেই বায়োস্কোপ দেখেন তিনি। ১৯২৯ সালে তিনি প্রথম সবাক ছবি হিসাবে দেখেন টার্জান দি এপম্যান মুভিটি। তবে তার আগেই দেখে ফেলেন বেনহুর, কাউন্ট অফ মন্টিক্রেস্টো, থিফস অব বাগদাদ, আঙ্কল টমস কেবিন-এর মতো বিখ্যাত মুভি গুলো। দেশী-বিদেশী গানের প্রতি সত্যজিৎ দারুণ ভাবে আকৃষ্ট ছিলেন । রাতে ঘুমাতে যাবার সময় কিশোর সত্যজিৎ-এর সঙ্গী ছিল সঙ্গীত।

দেশী সঙ্গীতের পাশাপাশি বিটোফেন, মোৎসার্ট, বাখ তার খুব প্রিয় ছিল। স্কুলে পড়ার সময়ই ক্যামেরায় সত্যজিৎ-এর প্রথম হাতে খড়ি। ১৯৩৬ সালে মাত্র চৌদ্দ বছর দশমাস বয়সে তার তোলা ছবি যে বছর বিদেশি পত্রিকা বয়েজ ওন পেপার-এ প্রথম পুরস্কার পায়। সে বছরই ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন সত্যজিৎ। ১৯৪০ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তি নিকেতনের কলা ভবনে ভর্তি হন সত্যজিৎ।

বলা যায় এখানেই প্রখ্যাত চিত্রকর নন্দলাল বসুর হাতে শিল্পী সত্যজিৎ-এর জন্ম ঘটে। তবে এখানে পড়াশোনা শেষ না করেই চাকরিতে যোগ দেন তিনি। কিন্তু চলচ্চিত্র বানাবেন- এটা ছিল সত্যজিৎ-এর বহু দিনের স্বপ্ন। বিভূতি ভূষণের পথের পাঁচালী ছিল তার প্রথম পছন্দ। কিছু টাকা যোগাড় করে ১৯৫২ সালে পথের পাঁচালীর কাজে নামেন তিনি।

তবে টাকার অভাবে সেটা কিছুদিন পরই বন্ধ হয়ে যায়। পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করলে পথের পাঁচালীর কাজ শেষ হয়। আর এর মাধ্যমেই আজকের সত্যজিৎ রায় হয়ে ওঠেন তিনি। একের পর এক চলচ্চিত্র তৈরি করেন আর পুরস্কার জিততে থাকেন তিনি। তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো অপরাজিত, পরশপাথর, জলসাঘর, অপুর সংসার, দেবী, তিনকন্যা, কাঞ্চনজঙ্ঘা, অভিযান, মহানগর, চারুলতা, গুপী গাইন বাঘা বাইন, হীরক রাজার দেশে, অরণ্যের দিনরাত্রি, অশনি সংকেত, সোনার কেল্লা, ঘরে-বাইরে, গণশত্রু, শাখা-প্রশাখা, আগন্তুক।

তার পরিচালিত অশনি সংকেত-এ বাংলাদেশের অভিনেত্রী ববিতা অভিনয় করেন এবং প্রশংসিত হন। চলচ্চিত্রের জন্য বহু পুরস্কার জিতেছেন সত্যজিৎ রায়। উপমহাদেশের একমাত্র চলচ্চত্রি ব্যক্তিত্ব হিসাবে চলচ্চিত্রে সারা জীবনের অবদানের জন্য পেয়েছেন অস্কার পুরস্কার। সাহিত্যিক হিসাবে সত্যজিৎ রায় একটা বড় স্থান দখল করে থাকবেন বাংলা সাহিত্যে। বিশেষ করে শিশুতোষ গোয়েন্দা কাহিনী ফেলুনাথ সিরিজ ছেলে-বুড়ো সবার প্রিয়।

তিনি ছিলেন একজন খুব ভালো চিত্রশিল্পী। কোনো সিনেমা বানানোর আগে তার সেট ও দৃশ্য কেমন হবে তা নিজের খাতায় একে রাখতনে তিনি। হাসপাতালে বসে আঁকা সত্যজিৎ রায়ের র্সবশেষ ছবি। এতে ১১ জন বিখ্যাত মানুষের মুখ আছে। সত্যজিৎ রায় মারা যান ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল।

আজ ২ মে সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। [দুরন্তের পুরনো লেখা]
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।