আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আত্মিক আধ্যাত্মিক আত্মকথন অথবা আত্মপ্রতারণার গল্প

আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।

অসুস্থ অবস্থায় চারপাশ ঘোর লাগা মনে হয় । নিজের অস্তিত্ব বাস্তবতা নাকি ভ্রম এর উত্তর খুঁজতে পারিপার্শ্বিককে বেছে নিই । তাকে বেছে নিয়ে আরো বেশী দ্বিধান্বিত হয়ে যাই । এমন সময়ে ঘরে আর মন টেকেনা ।

অথচ ঘরে চুপচাপ শুয়ে থাকবার চেয়ে শক্ত কোন দাওয়াই এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই । তবুও আমি রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি । বোহেমিয়ান এক অবয়ব নিয়ে বের হবার জন্য নিজের বহির্মুখীতা মেঘলা বিকালের কৃষ্ণচূড়ার মতো জ্বলজ্বলে হলেও বাস্তবিক বাইরে বেরিয়েও অন্তর্মুখী স্বভাবটাকে ঝেড়ে ফেলতে পারিনা । রাস্তার ধারে কোন হাসতাপাল , ব্যাংক , কর্পোরেট অফিসের দিকে তাকাই কিন্তু দেখিনা । ইংরেজিতে যাকে বলে ' Glance but not look ' ।

মনের ভেতরে এক অস্থির সন্নাসীর বসবাস তবুও আমি বাস্তবকে এড়িয়ে যাইনা । এক কড়া সেনা অফিসারের মতো নিষ্ঠুর , হৃদয়হীন মন নিয়ে প্রায় আড়াই বছরের এক নির্মল সম্পর্কের অধ্যায়কে মাটি চাঁপা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বিকারভাবে ঘরে পায়চারি করি । আবার শুয়ে পড়ি । পরম স্বাভাবিকতায় বাইরে বেরিয়ে পড়ি । আমার মনে তার কোন রেখাপাত হয়না ।

একবার কিছু মনঃস্থির করে ফেললে সেই সময়ে পিছনে ফিরে তাকাতে ইচ্ছা করেনা তাই ফিরে তাকাইনা । যেই সময় তার স্মৃতি বিপর্যস্ত করে রাখবার কোন সম্ভাবনা রাখবেনা তখন কোন এক দিনে আয়েশীভাবে চিন্তা করতে বসে ভেবে নেওয়া যাবে সিদ্ধান্তটার ভালো - খারাপ কি ছিলো । প্রয়োজনবোধে নিষ্ঠুর হতে কখনো পিছপা হইনা । শেক্সপিয়ারের ' হ্যামলেটের ' স্মরণীয় এক উক্তি মনে মনে বারবার আওড়াতে থাকি " I have to be cruel for only to be kind " , আমার মাথার উপর দিয়ে এ ঝাঁক বক উড়ে বেরিয়ে যায় । তারা কি স্বাধীনতাকে ভালোবাসতে পারছে ? নাকি স্রেফ দৈনন্দিন অভ্যাস বশত আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে জিজ্ঞেস করবার প্রবল সাধ হয় কিন্তু সাধ্য নেই ।

দুঃসহ মাথার ভার , জ্বর , কাশি সব নিয়ে আমি নিস্পৃহভাবে হেঁটে যেতে থাকি চেনা পরিচিত থেকে পানসে হয়ে যাওয়া রাস্তায় । আগেই বলেছি নিজের বহির্মুখী স্বভাব আর অন্তর্মুখী স্বভাবের আবহমান , চিরন্তন দ্বন্দ্বের মীমাংসা করতে যাইনা । উভয় সত্তাই সমান্তরালভাবে চলতে থাকে । তাতে বাঁধ সাধতে মন সায় দেয়না । বোধে আসে এর মাঝে অনতিক্রম্য দূরত্ব থাকলেই ভালো ।

যেই সময়ে যেই সত্তাটা ডমিন্যান্ট অংশ হবে তখনই নতুন কিছু শিখতে পারবো । আমি বরাবরই শিখতে চেয়েছি । সুখী মানুষের নির্মল হাসির আনন্দে যোগ দেওয়ার আন্তরিকতা , অসুখী মানুষের চারপাশের প্রতি তীব্র বিষোদগারের সময়ে তার প্রতি সহানুভূতি দেখানোর সহানুভূতিশীলতার চাইতেও আমি সেই সময়ে তাদের প্রত্যেকের কাছেই শিখতে আগ্রহবোধ করি । তারাশংকরের ' কবি ' উপন্যাসের নায়ক প্রশ্ন করেছিলো " জ়ীবন এতো ছোট কেন ? " । আমাকে বছরের পর বছর , দিনের পর দিন কত তীব্রভাবে প্রশ্নটা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তারাশংকরকে তা জানাতে পারলে স্বস্তিবোধ করতাম ।

কিন্তু এর কিছুই হয়না । প্রবল রিক্ততার ভার নিয়ে সংযোগ থাকা মানুষগুলোর সাথে সম্পর্ক বিজায় রাখি । কারো সাথে প্রতারণা করেছি এমন অভিযোগ কেউ করবেনা কিন্তু এও সত্য তাদের কাছে শিখতে চাওয়ার বাসনাতেই তাদের সঙ্গ লাভ করতে যাই । মানুষগুলোর থেকেও সেই শিখবার ইচ্ছাটা নিজেকে বেশী তাড়িত করে । আচ্ছা আমি কি ক্যামুর ' আউটসাইডারের ' উদাসীন , নির্মম মারসোল ? নাকি শীর্ষেন্দুর উপন্যাস ' দূরবীনের ' নষ্ট , হিপোক্রেট দ্রুব ? এর কোনটাই যদি না হয়ে থাকি তবে বড্ড স্বস্তিবোধ করবো ।

এদের কাউকেই ডিফেন্ড করবার অপরিপক্কতা আর দেখাতে পারিনা । মহৎ কিছু অথবা নিকৃষ্ট কোন অপরাধ করবার সময় ক্রমশ শেষ হয়ে আসছে । পা জোড়া আরো দ্রুত ফেলতে হবে । সময় নষ্ট করবার সময়টাও একসময় ছিনতাই হয়ে যাবে । এই অন্তঃর্বর্তীকালীন সময়কে টেনে পেছনে নেওয়া যাবেনা , টেনে পেছনে নেওয়া যায়না ।

একসময় ঘরে ফিরে আসবার রাস্তায় পা বাড়াই । কে যেন জামায়াতে ইসলামের লিফলেট হাতে ধরিয়ে নিমেষে উধাও হয়ে যায় । লিফলেটের একগাদা মিথ্যাচার পড়ে বমির স্বাদ অনুভব করতে পারলে সন্তুষ্ট হতাম । তার পরিবর্তে দুই টুকরা করে ছিঁড়ে ফেলে দেই আর উপলব্ধি হয় ছেঁড়া কাগজগুলো টয়লেট পেপার হিসাবেও মানাতোনা কিংবা মানাতোনা ঝালমুড়ির ঠোঙ্গা হিসাবে । বাসায় ঢুকেই টেলিভিশনে দেঁতো হাসির আন্তর্জাতিক মানের মহাজন ডঃ ঈউনূসের আনন্দিত চেহারা চোখে পড়ে ।

উপলব্ধি আসে এতোক্ষণ যাবত নিজস্ব যেসব অনুভূতি ব্যক্ত করলাম এর সবকেই আসলে নিজের ভেতরে রাখতে হবে । বাস্তবে এসকল অনুভূতির উপর ডঃ ঈউনূসরাই প্রভাব বিস্তার করে । বাস্তব মানেই জিডিপি ৬% এর মাদকতার মাঝে নিজেকে বিচ্ছিন্নভাবে হাতড়িয়ে খুঁজ়তে থাকার আত্মিক আধ্যাত্মিক মাস্টারবেশন ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।