আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেয়ার বাজারের মূল্য সিক্রেট এবং বিনিয়োগের মূলতত্ব

মানুষ মরেনা কখনো

পুজিবাজারের মূল্য কি কারনে উঠানামা করে? পুজিবাজারের মূল্য উঠানামার পিছনে মুল কারণ ‘মার্কেট ফোর্স’ বা বাজারের সমষ্টিগত শক্তিমত্তা। আরো সহজ ভাষায় বললে বাজারের সামষ্টিক চাহিদা এবং সরবরাহ। তারমানে দাড়ায়, যদি একটি নির্দিষ্ট পুজি বা স্টকের আগ্রোহি ক্রেতার পরিমান উক্ত স্টকের আগ্রোহি বিক্রেতার তুলনায় বেশি হয়, তাহলে উক্ত স্টকের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে যদি এর বিক্রেতার পরিমান আগ্রহি ক্রেতার তুলনায় বেশি হয়, তবে ঐ স্টকের সরবরাহ বাজারে বেড়ে যাবে এবং ফলশ্রুতিতে এর দামো কমে যাবে। বাজারের সরবরাহ এবং চাহিদা বুঝা অত্যন্ত সহজ একটি বিষয়; কিন্তু কঠিন বিষয় হলো বুঝতে পারা কিসের পরিপ্রেক্ষিতে একটি নির্দিষ্ট স্টক কিনতে মানুষ বেশি আগ্রহি হয় অথবা বিক্রি করতে চায়।

এ বিষয়টি জানতে পারলেই কোন স্টকের মূল্য বাড়বে এবং কোনটির মূল্য কমবে তা সহজেই অনুমান করা সম্ভব হবে। ক্রেতাসাধারণের পছন্দ-অপছন্দের কারণ জানতে হলে আগে জানতে হবে কোন খবরটি একটি নির্দিষ্ট কোম্পানীর জন্য পক্ষে যাবে এবং কোন খবরটি হবে বিয়োগাত্নক এবং কিভাবে অথবা কি আঙ্গিকে একটি কোম্পানী সম্পর্কিত যে কোন খবর মানুষ গ্রহণ করবে। একটি কোম্পানীর মূল্য যাচাইয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘোটক হচ্ছে উক্ত কোম্পানীর কামাই যা অর্থনীতির ভাষায় বলে ‘আর্নিঙ’। ‘আর্নিঙ’ হলো একটি কোম্পানীর অর্জিত লাভ এবং কোন কোম্পানীই ‘আর্নিঙ’ ছাড়া বেশিদিন টিকতে পারেনা। এ ব্যাপারে একটু চিন্তা করলেই বিষয়টি পুরোপুরি স্বচ্ছ হয়ে যাবে।

যদি একটা কোম্পানী লাভ করে টাকা বানাতে না পারে তবে অবশ্যই এ কোম্পানী ব্যাবসা করতে পারবেনা। তারমানেই এ কোম্পানী সম্বন্ধে ক্রেতাদের কোন আগ্রহই থাকবেনা। আর এ আর্নিঙ সম্পর্কে প্রতিটি পাবলিক প্রতিষ্ঠানকে বছরে চারবার (কোয়ার্টারলি) প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয়। আর এ সময়ের দিকেই পুজি বাজারের সকলে অত্যন্ত মনযোগ সহকারে তাকিয়ে থাকে। কেননা এ প্রতিবেদনগুলির উপর ভিত্তি করেই পুজিবাজারের বিশ্লেষকরা একটি নির্দিষ্ট পুজি বা স্টকের ভবিষ্যত মুল্য নির্নয় করে।

যদি একটা প্রতিষ্ঠানের ফলাফল তার প্রত্যাশিত ফলাফলের চেয়ে ভাল হয়ে, তো এর মূল্য লাফিয়ে উঠে। অন্যদিকে যদি তা প্রত্যাশা পুরনে ব্যার্থ হয়ে তবে এর মূল্য নেমে যায়। তবে অবশ্যই শুধুমাত্র আর্নিঙই মানুষের চাহিদা নির্ণয়ের একমাত্র কারণ নয়। তাহলেতো পুজিবাজারের হিসাব-নিকাশ খুব সহজ হয়ে যেতো! উদাহরণ স্বরুপ ‘ডটকম বাবল’ সময়কার ঘটনাটি বলা যায়। সে সময় ডজন ডজন ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানগুলোর পুজির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছিল যখনো এমনকি বিন্দুপরিমান লাভও অর্জিত হয়নি।

যদিও আমরা জানি এ মূল্য বেশি সময়ের জন্য বলবৎ থাকেনি, এবং অচিরেই তা নেমে অত্যন্ত কমে গিয়েছিল; তবু এ ঘটনাটিই প্রদর্শন করে যে, কোন কোম্পানীর চলতি লাভের খতিয়ানই পুজি বাজারের মূল্য নির্ধারণে একমাত্র অনুঘোটক নয়। তাহলে কথা হলো আর কিকি অনুঘোটক বা ‘ফ্যাক্টর’ রয়েছে যা স্টক প্রাইস নির্ধারনে সুচক হিসেবে কাজ করে? এর সদুত্তর হলো আসলে কেউই তা সঠিকভাবে বলতে পারবেনা। কারে কারো বিশ্বাস স্টক প্রাইস পরিবর্তন অনুমান করা অসম্ভব কাজ। আবার অনেকের ধারণা চার্ট একে এবং পুর্বের মূল্য পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য করে অনুমান করা সম্ভব কখন শেয়ার কিনতে হবে বা কখন বিক্রয় করতে হবে। আমরা একটা বিষয় অত্যন্ত সঠিকভাবে জানি যে, পুজিবাজার অত্যন্ত অস্থিতিশীল এবং এর মূল্যসূচক পরিবর্তন হয় অত্যন্ত দ্রুততার সাথে।

শুধু এটুকু মৌলিক মনে রাখতে হবে যে, চাহিদা এবং সরবরাহর ভিত্তিতে শেয়ারের মূল্য নির্ধারিত হয়। পুজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা বিবিধ পদ্ধতির মাধ্যমে নির্ণয়ের চেষ্টা করেন কোন শেয়ারের দাম কমবে অথবা কোনটি বাড়বে! আমি আপনাদের এ পদ্ধতিগুলোর সম্বন্ধে একটি ধারনা দেয়ার চেষ্টা করবো। একজন নতুন বিনিয়োগকারীর জন্য তিনটি বিষয় জানা থাকা অতীব প্রয়োজনীয়। ১। পুজিবাজারের বিনিয়োগে ঢোকার আগে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে কিছু আনফরগেটেবল মূলতত্ব।

পুজিবাজার হলো অত্যন্ত বাস্তবগ্যান সম্পন্ন চৌকষ বিনিয়োগকারীদের স্থান যারা মার্কেটের ভিতর-বাহির সম্বন্ধে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল। যারা মার্কেটের ভিতরের লোক নন, তাদের জন্য পুজিবাজার অত্যন্ত বিপদসঙ্কুল স্থান। ২। কক্ষোনোই ‘হটস্টক’ সম্বন্ধিয় কোন গুজব গ্রহন করবেন না। সবসময়ই গ্রহন করবেন যুক্তিনির্ভর তথ্যাদি।

কিছু কিছু লোক শেয়ার বাজারে থাকে, যাদের একমাত্র কাজ হলো নির্দিষ্ট কিছু স্টকের প্রমোট করা। তারা এটা চালিয়ে যায়, কেননা তারা নিজেরা ঐ নির্দিষ্ট স্টকটিতে বিনিয়োগ করেছে। তারা যদি ঐ স্টকটি কিনতে আগ্রহী পর্যাপ্ত পরিমান বিনিয়োগকারী যোগার করতে পারে এবং এর মূল্য তাদের আশানুরূপ লেভেলে নিয়ে যেতে পারে, তবে তারা অত্যন্ত চড়া দামে ঐ স্টকটির শেয়ার বিক্রি করতে পারে। এবং এর ফলশ্রুতিতে উক্ত স্টকটির মূল্য অত্যন্ত দ্রুততার সাথে নিচের দিকে নেমে যায়। কেননা এতদিন পর্যন্ত যে গোষ্ঠিটি ঐ স্টকটির প্রমোশনের পিছনে কাজ করেছে তারা ইতিমধ্যেই তাদের শেয়ার অত্যন্ত বেশি পরিমানে ছেড়ে দিয়েছে এবং তার ফলে বাজারে ক্রেতার চেয়ে স্টকের পরিমান বেশি হয়ে গিয়েছে।

এই অবস্থায় যে লোকজন এ স্টকের পিছনে কাজ করছিল, তাদের হয়তো দেখা যাবে অন্য কোন স্টকের জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছে। তার মানে এখানেও তথাকথিত সিন্ডিকেটরা সক্রিয়। এ গ্রুপটাকে সাধারনতঃ ‘গেম্বলারস’ নামে ডাকা হয়ে থাকে। সুতরাং এদের দৌরাত্য হতে সচেতন থাকতে হবে। সবসময় নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা ও গ্যান ব্যাবহার করতে হবে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যের পরামর্শের উপর নির্ভর করা, তা যতো ভালোই হোক না কেন, খুবই ঝুকিপূর্ণ। যেকোন বিনিয়োগ করার আগে অবশ্যই উক্ত কোম্পানীর সম্পর্কীয় সব তথ্যাদি সংগ্রহ এবং যাচাই-বাছাই অত্যাবশ্যকিয়। গুজব বা রিউমরে কান না দিয়ে কোম্পানীটির নিজস্ব প্রকাশিত বিবিধ স্টেটমেন্টগুলো গুরুত্ব সহকারে অধ্যয়ন বাঞ্চনিয়। ৩। এবং সর্বপোরি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিপস হলো: যে পরিমান টাকা আপনি হারাতে পারেন শুধুমাত্র সে পরিমান টাকাই আপনি বিনিয়োগ করবেন।

এটা একটা মৌলিক পয়েন্ট কিন্তু এটাই মানুষ ভুলে যায়। আপনাকে তা-ই বিনিয়োগে দিতে হবে যা আপনি সত্যিকার অর্থেই হারাতে পারবেন। সকলেই বিনিয়োগ শুরু করেন অনেক বেশি পরিমান লাভ করার জন্য, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা হয়ে উঠে না। বিশেষতঃ যদি আপনি একজন নতুন বিনিয়োগকারী হোন। দয়াকরে মনে রাখবেন উপরে আমি যা আলোচনা করেছি তা শুধুমাত্র যারা বিনিয়োগের দুনিয়ায় নতুন, তাদের জন্য।

আপনি যখোন পুজিবাজারের সম্পর্কে অভিঞ্জ হয়ে যাবেন তখন আর উপরোক্ত টিপস নিয়ে ভাবতে হবেনা। যদি আপনি নতুন হোন তবে অবশ্যই এগুলো মেনে সাবধানতার সাথে বিনিয়োগ শুরু করবেন; কেননা এগুলো আপনার কষ্টার্জিত অর্থের নিরাপদ বিনিয়োগের জন্যই। কিন্তু আবার এ ও সত্য যে কোন কিছুই এমনি এমনিতেই আসে না। আপনাকে কিছু না কিছু পরিমান অর্থ হারাতেই হবে, কিছু ক্ষতিকর ডিসিশন নিতেই হবে বেশ ভালো একটা দাও মারার আগ পর্যন্ত। আপনি দুরে বসে শেয়ার বাজার সম্বন্ধে কিছুই জানতে পারবেন না যতোক্ষন পর্যন্ত না আপনি এর ভেতরে পুরোপুরি ঢুকে যাবেন।

আর তখোনি উপরে বর্নিত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করলে আপনার হারানোর পরিমানটা একটু কম হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.