আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাড়ী থেকে পালানোর ইতিহাস



আমার বয়স তখন চার বছর। একদিন আম্মা মেজআপাকে কোন কারণে খুব বকা দিলেন, সাথে বেশ পিট্টিও দিয়েছিলেন। দুপুরে যখন আম্মা আমাকে পাশে নিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন, মেজআপা আমাকে আস্তে করে ডেকে নিয়ে বলল, চল আমরা বাসা থেকে পালিয়ে যাই। আমি সে সময় মেজআপার প্রত্যেকটা কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে চেষ্টা করতাম। কোন চিন্তা না করেই বললাম, চল।

মেজআপা আস্তে করে দরজা খুলে আমার হাত ধরে বেরিয়ে পড়ল। আমরা হেঁটে হেঁটে আমাদের চাচার বাসায় চলে গেলাম। ওখানে চাচা চাচী আমাদের দেখেই বুঝলেন কোন ঝামেলা হয়েছে। তবে আমাদের কিছু বুঝতে দিলেন না। আমাদের তরমুজ খেতে দিলেন।

প্রথমে খোসাসহ ফালি করে কেটে খেতে দিলেন, মেজআপা সাথে সাথে খাওয়া শুরু করল। কিন্তু আমার কেন জানি খুব লজ্জা লাগল। বললাম, খাবনা। চাচী মনে করলেন আমি বোধহয় খোসাসহ ধরে খেতে পারিনা। আমার জন্য আলাদা করে ছোট ছোট টুকরো করে দিলেন।

আমার এবার খুবই খেতে ইচ্ছা করছিল। আমি একটু হাত বাড়াতে গেলাম আর সবাই বলে উঠল, হ্যাঁ খাও খাও। আর আমি লজ্জায় হাত সরিয়ে নিলাম। এরকম কয়েকবার হল। একটু পর দেখি আম্মা এসে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে।

মেজআপা ভয়ে এতটুকু হয়ে গেল, আমার কিন্তু আম্মাকে দেখে খুব ভালো লাগছিল। আম্মা আমাদের বাসায় নিয়ে গেলেন। আমাদের কোন বকা দেননি। তবে আমি তরমুজ খাইনি বলে একটু আফসোস হচ্ছিল। আর আম্মা কিভাবে জানল সেটা ভেবে আমি খুব অবাক হয়েছিলাম।

পরে জেনেছি, আমরা চাচার বাসায় যাবার সাথে সাথেই চাচা আমাদের এক চাচাত ভাইকে আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এটা ছিল আমার ২য় বারের মত বাসা থেকে পালানোর কাহিনী। আমি যখন ১ম বার বাড়ী থেকে পালাই তখন আমার বয়স দেড় বছর। অবশ্যই আমার কিছুই মনে নেই, আম্মার কাছ থেকে শুনেছি। আমরা তখন সৌদীআরবে থাকতাম।

একদিন দুপুরে আম্মা রান্না করছিলেন আর আমি উঠানে একা একা খেলছিলাম। হঠাৎ আম্মা খেয়াল করলেন আমি নেই। পাগলের মতো সারা বাড়ী খুঁজেও আমাকে পাওয়া গেলনা। আম্মা আর আমার বড় দুইবোন আমাকে খুঁজতে বের হলেন। শেষে দেখা গেল আমি কয়েকটা বাড়ীর পরে একটা বাসার সিঁড়িতে বসে আছি।

এই বাসায় কয়েকদিন আগে আমাদের দাওয়াত ছিল। আমি কিভাবে যে সেটা মনে রেখেছি আর কী মনে করে এখানে এসে বসে আছি সেটা কেউ বলতে পারেনা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।