আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের জয় কেড়ে নিলেন শ্রীলঙ্কান রেফারি

হিমালয়ের কোল ঘেঁষে আর্মড ফোর্সেস নেপাল আর্ম ফোর্স মাঠ। পাহাড় যেন গায়ের ওপর এসে পড়বে! এত কাছে। সেই পাহাড়ের পাদদেশেই বাংলাদেশের হূদয় ভেঙে টুকরা টুকরা করে দিলেন এক শ্রীলঙ্কান রেফারি। লাল-সবুজের নিশ্চিত জয় ছিনতাই করা বিতর্কিত এই রেফারির কাছ থেকে ভারত অলৌকিকভাবে উপহার পেল একটা পয়েন্ট!
তিন মিনিট অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিট চলছিল তখন। মিনিট বারো আগে ডিফেন্ডার আতিকুর রহমানের (মিশু) দারুণ এক গোল যখন জয়ের সুবাস ছড়িয়ে দিচ্ছিল বাংলাদেশ শিবিরে, রেফারি ডি পেরেরা তখনই গায়ে পড়ে বাংলাদেশের বক্সের ঠিক ওপর ঘেঁষে ভারতের পক্ষে বাজালেন ফ্রি-কিকের বাঁশি।

ভারতীয় অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর নিরীহ সেই ফ্রি-কিক বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে এবং ক্ষোভের আগুনে পুড়িয়ে চলে গেল জালে (১-১)!
বাংলাদেশ গোলরক্ষক মামুন খান ছিলেন দ্বিতীয় বারে। তিনি মাঝখানে থাকলে হয়তো বলটা পেতেন। সেই সুযোগে প্রথম বার দিয়ে তৈরি হওয়া মানবদেয়ালের ওপর দিয়েই বল জালে পাঠিয়ে ভারতীয় দলে সুনীল এনে দিলেন স্বস্তির আভা। সবচেয়ে বেশি স্বস্তি কি পেলেন রেফারি পেরেরা? তাঁর হাবভাব দেখে তো তা-ই মনে হচ্ছিল। ভারতকে হারানো যাবে না, নইলে চাকরি যাবে, এমন শঙ্কা নিয়েই পেরেরা বাঁশি হাতে নেমেছিলেন কি না, সেই প্রশ্ন ওঠা অবান্তর নয় অবশ্যই।


নইলে শেষ ১০ মিনিট আগে বদলি হিসেবে মাঠে নেমেই কর্নার থেকে গোল করানো প্লে-মেকার মামুনুল ইসলামের বিপক্ষে ওই ফাউলটা কেন দেবেন পেরেরা? শেষ কয়েক সেকেন্ড বাংলাদেশ জান লড়িয়ে রক্ষণকাজে ব্যস্ত থাকার একপর্যায়ে মামুনুলের সঙ্গে ধাক্কা লাগে সুনীল ছেত্রীর। সেটি ছিল পরিষ্কার বক্সের ভেতরে। ফাউল হলে তো পেনাল্টি হবে। পেনাল্টি তো রেফারি দিলেন না। তার মানে, ওটা ফাউল নয়! আদতে মামুনুলকেই উল্টো ধাক্কা দিয়েছিলেন সুনীল ছেত্রী।

এমন নির্লজ্জ রেফারিং ‘দক্ষিণ এশিয়ার এই বিশ্বকাপ’কে শুধু কলঙ্কিতই করেনি, এটি হয়ে উঠেছে ভারতের পক্ষে বাঁশি বাজানোরও মঞ্চ!
সুযোগের অপেক্ষাতেই বোধ হয় ছিলেন শ্রীলঙ্কান রেফারি, আগের ম্যাচেও যিনি পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতকে জেতাতে রেখেছিলেন অগ্রণী ভূমিকা। সেই রেফারিকে আবার কেন ভারত ম্যাচ দেওয়া হলো, সেটিও ধাঁধা। ম্যাচের শেষ দিকে তো বাংলাদেশ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফকে ডাগআউট থেকে বের করে দেন রেফারি! সব মিলিয়ে পেরেরা নিজের কাজটা সফল করেই মাঠ ছেড়েছেন। অন্যায় ফ্রি-কিক দিয়ে বাংলাদেশের নিশ্চিত জয়টাকে ড্রয়ে পরিণত করে এই লোকটি বোধ হয় তৃপ্তি নিয়েই রাতে ঘুমাতে গেছেন!
অন্যদিকে বাংলাদেশ দলের কালও নির্ঘুম রাতই কাটানোর কথা। নেপালের বিপক্ষে খুব বাজে খেলে ২-০ হারের পর না ঘুমিয়ে ছিল গোটা দল।

সেই দলের মনোবল চাঙা করে কোচ ডি ক্রুইফ ভারত ম্যাচটা জিতে টিকে থাকতে চেয়েছিলেন অষ্টম সাফ ফুটবলের মহারণে। কাল তিন পয়েন্ট পাওয়া থাকলে শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় তুললে সেমিতে যাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকত বাংলাদেশের।
এখন সেটি অনেক ‘যদি’র ওপর ঝুলে পড়ল। তাই ম্যাচের পর কান্নার রোল বাংলাদেশ দলে। এভাবে ম্যাচ শেষ হওয়ার ১০ সেকেন্ড আগে রেফারির হাতে জয়ের স্বপ্ন চুরমার হওয়া খুবই দুঃখজনক।

শোকগ্রস্ত বাংলাদেশ কোনো সান্ত্বনাই পাচ্ছিল না। ২০০৩ সালের পর এই প্রথম ভারতকে হারানোর শেষ ক্ষণে পৌঁছেও ড্রটা হারের মতোই তিরবিদ্ধ করেছে ডি ক্রুইফের দলকে।
সান্ত্বনা একটাই, ভারত ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে ভুল করেনি বাংলাদেশ। রক্ষণ ছিল জমাট। কোনো সুযোগই দেওয়া হয়নি ভারতীয় ফরোয়ার্ডদের।

বাংলাদেশের মাঝমাঠও ভালো খেলছিল। প্রথম একাদশে তিনটি পরিবর্তন আনেন কোচ। ডিফেন্ডার আরিফকে বাদ দিয়ে স্টপারে নিয়ে আসেন নেপাল ম্যাচে মাঝমাঠে খেলা মিশুকে। মাঝমাঠে মিশুর জায়গা নেন অভিষিক্ত ওমর ফারুক। উইংয়ে জাহিদের বদলে মোবারক, যিনি খেলেছেনও দারুণ।


দুই দলের কোচই ডাচ। খেলাটাও হলো প্রায় একই রকম। ছোট ছোট পাসে খেলাটা তৈরি করতে চাইছিল দুই দলই। তবে ভারতকে যতটা ‘বাঘ’ মনে হয়েছিল, তার কিছুই আসলে দলটার খেলায় পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশই তুলনামূলক ভালো ফুটবল খেলেছে।


নিয়মিত অধিনায়ক মামুনুল ৮০ মিনিটে নেমেই বদলে দেন ম্যাচের ছবি। হাঁটুতে তিনটি ইনজেকশন নিয়ে খেললেন, করতালির মধ্যে মাঠে পৌঁছেই নিতে গেলেন কর্নার। পরপর দ্বিতীয় কর্নারে ভারতীয় এক ডিফেন্ডারের হেড পড়ল মিশুর পায়ে। তাঁর ডান পায়ের গড়ানো শট ডিফেন্ডারদের জটলার মধ্যেই জালে। বাংলাদেশ তখন উজ্জীবিত, সাফে টিকে থাকার স্বপ্ন হয়ে উঠল জীবন্ত।


রেফারি সেটিকে খুন করায় এখন তাকিয়ে থাকতে হবে পাকিস্তানের বিপক্ষে আগামীকালের ম্যাচের দিকে। এ ম্যাচে জিতলে বাংলাদেশের পয়েন্ট হবে চার। সে ক্ষেত্রে নেপাল, ভারতই সেমিফাইনালে যাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকবে। ভারত তো চার পয়েন্ট নিয়ে এক পা এগিয়েই আছে। কাল এ প্রতিবেদন লেখার সময় নেপালের বিপক্ষে পাকিস্তানের ম্যাচ চলছিল দশরথ স্টেডিয়ামে।

পাকিস্তানের জয় চাইছিল বাংলাদেশ। সেই জয় পাকিস্তান পেয়ে থাকলে ভালো, নইলে বোধ হয় পাকিস্তানকে হারালেও সেমিতে ওঠা হবে না। এর জন্য দায়ী থাকবেন একজনই—শ্রীলঙ্কান রেফারি ডি পেরেরা!
বাংলাদেশ দল: মামুন খান, ওয়ালি (রায়হান), নাসির (আরিফ), মিশু, লিংকন, ওমর ফারুক (মামুনুল), জামাল, তকলিচ, মোবারক, সোহেল রানা, এমিলি। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.