আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাববাদীদের সভায় এক রাত

.

বুধবার, ৮ এপ্রিল ২০০৯ হাঁটছিলাম। চিন্তিত। একা হয়ে পড়ছি দিনকে দিন। নাগরিক আলোহীন ফেনী শহর ডুবে গিয়েছে প্রকৃত অন্ধকারে। কালপুরুষ এতক্ষণে পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে; এখন সিংহের দোর্দন্ডপ্রতাপ রাজত্ব চন্দ্রালোকিত রাত্রির মধ্যাকাশে।

চৈত্রের পরিপূর্ণ চন্দ্রের দখল পূষ্যা নক্ষত্রের। এখান থেকেই এসেছে পৌষ মাস নামটি। অদ্ভূত সম্মোহনী নেশাগ্রস্থ পৃথিবী, এক অপার্থিব পারলৌকিক স্বর্ণাভা ঝিকিয়ে উঠছে ওর রহস্যময়তার 'পরে। নারকেল-আম-জাম-সুপুরির বসন্তের ধুলোমাখা পাতায় পাতায় কোমল বাতাস মৃদু বুলিয়ে যাচ্ছে...সর্ সর্ সর্ - বৈকুন্ঠের রহস্যময়ীর লাস্যময়ী সুরও নয়, নরকের গহীন থেকে উঠে-আসা পিশাচের গোপন ফিসফিসানিও নয়; এ ব্যাখ্যাতীত ভাষাতীত শ্রাব্যতার সীমার ওপারের লোকোত্তর এক আহবান। হাঁটছি, দূরে বহুদূরে- ফার ফ্রম দা ম্যাডিং ক্রাউড।

নির্জন পুকুরের স্তব্ধতার 'পরে হঠাত্ টুপ্ শব্দ। ঝিঁ ঝিঁ পোকার অবিশ্রান্ত ডাক কিংবা সহসা নিশাচর কোন একটি পাখির ডানা-ঝাপটানোর পত্ পত্ শব্দ- এসব নিয়েই প্রকৃত অন্ধকার নেমেছে বৃক্ষচ্ছায়াঘন রামপুরের নির্জন এদিকটায়। নেপথ্যে অস্পষ্ট ডাক ভেসে আসে। আলো-আঁধারে বুঝছিলাম না কে হতে পারে। একটু পরেই আসিফ দৌড়ে এসে ধরল আমাকে।

মাথায় টুপি, গায়ে পাঞ্জাবী, দাঁড়ি সুন্নাত অনুযায়ী একমুঠির মতন হবে। শঙ্কিত হলাম যে তা নয়; ব্লগে ঢুকেছি এই সময় লোডশেডিং- ক্যাফে থেকে বেরিয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটছিলাম...সে কারণেই ভাবলাম: যাক, অন্তত ভাববাদীদের সাথে অলস সময়টা ভালো কাটবে! এমনিতে ইদানিং আমার চতুর্দিকে তাবলীগপন্থীরা মনে হচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পিছনে লেগেছে; বন্ধুমহলে আমার ইসলামকেন্দ্রিক বিভ্রান্তিসৃষ্টিকারী সাম্প্রতিক ছোট ছোট বক্তৃতাগুচ্ছের প্রভাব আছে বোধ করি এর পেছনে। স্কুলের ফার্স্টবয় এক্স-নটরডেমিয়ান আবেগের মতন একজন ভালো বন্ধু হারিয়েছি, মেডিক্যালে পড়ে এখন। প্রতিরাতেই বারোটার পর কল করে "সেই পরিচিত" রেফারেন্সমুক্ত, ফ্যালাসিযুক্ত চটুল ইসলামিক বয়ান শুরু করে...ফযরের আযানের সময় আমাকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করার জন্য কল দিতে থাকে (প্রাজ্ঞজনের মাত্রই জানা আছে ইবলিশ এ সময় মুমিনের অন্তরে গিট্টু দিতে থাকে)- নিরূপায় হয়েই ওর নাম্বারটা স্ক্রীনলিস্টে অ্যাড করেছি। বুয়েটের বহু ছাত্রও ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে থাকে তাবলীগের সম্মোহনী বক্তাদের সভায়- কাকে কি বলবো; বুয়েটে চান্স না পেয়ে আমি নিজেই অতীতের পুরনো প্রতিভাবানদের বন্ধুসভায় অনাহূত- কবরের গহীন থেকে স্পেন্সার সাহেব...আপনি হাসছেন? কারণ সারভাইবাল অব দ্যা ফিটেস্ট থিয়োরি মেনে এই আমিওতো কত প্রিয় বন্ধুকে তথাকথিত শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিভা ও মেধার শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতায় অচ্ছুতদের আস্তাকুঁড়ে ফেলে এসেছি স্কুল ও কলেজজীবনে, কারণ লালনের "সহজ মানুষ" যে কেউ আজকাল খোঁজে না।

সহজ মানুষের এ পৃথিবীতে কোন মূল্য নেই, আমাদের প্রত্যেককেই হতে হবে প্রচন্ড প্রতিভা মেধা সৃজনশীলতার জটিল এক পাঁচমিশালী সংমিশ্রণ। সরল মানুষের বাজারমূল্য সভ্যতার ক্রান্তিলগ্নে আর নেই। উন্নত-অনুন্নত-উন্নয়নশীল সকল দেশের মিডিয়াগুলো এখন শুধু প্রতিভার খোঁজে পাগলপ্রায়, টেলিভিশন-রেডিও-পত্র-পত্রিকা হতে শুরু করে হাটে-ঘাটে-মাঠে, নির্জন গলির চিপা-চাপায়, খালে-বিলে-বন্দরে- চতুর্দিকে প্রভিতার জোয়ার; গানের প্রতিভা, নাচের প্রতিভা, অভিনয়ের প্রতিভা- প্রতিভা বিস্ফোরণের জায়গা পাচ্ছে না আর কোথাও দিয়ে। প্রতিভার ইঁদুরদৌড়ে লালনের সহজ মানুষ আজ দিশেহারা, একটু নিভৃত স্থান খুঁজছে সে বিশ্রামের জন্য। ফয়েরবাখের হেগেলখন্ডনের মতন যে মানুষগুলো ধর্মকে সুবিধাবাদী প্রগতিশীলতার তত্ত্বে বর্জন করেছিল, তারাই আজ আবার সভ্যতার ইঁদুরদৌড়ে অতিষ্ঠ হয়ে বিশ্রামাগার বানাচ্ছে মসজিদ-মন্দির-চার্চ-প‌্যাগোডাকে; "ধর্ম ধীরে ধীরে এমনিতেই উঠে যাবে।

"- মার্কা ভুল তত্ত্বের গঠন ও গড়ন আশঙ্কাজনক হারে ভেজালমিশ্রিত দেখেই ধর্মের অস্ত্র ব্যাকফায়ার করছে ফের "ওদের" জীবনে। সমাজের অচল স্থবির ধ্যান-ধারণাবিরোধী বিদ্রোহের আগুনকে ধর্মের সেফটি বাল্ব দিয়ে কি সুকৌশলেই না ভিন্নদিকে চালিত করে নিস্তেজ করা হচ্ছে! ধর্ম মূলত একটি মানসিক অভিযোজন কৌশলমাত্র হোমো স্যাপিয়েনসের শারীরিক অস্তিত্ব রক্ষার জন্য (কখনও কখনও মানসিকও)। একটা সময় মূর্খ আমি ভাববাদীদের প্রতি প্রচন্ড বিদ্বেষসহকারে আমার বহুদিনের উপলব্ধিলব্ধ যুক্তির বাণ নিক্ষেপ করতাম কথায় কথায়, কিন্তু আজ আমার হাতে আছে বিপুল তথ্যের সম্ভার যা দ্বারা ভাববাদীদের নিমেষে তলিয়ে দিতে তেমন বেগ পেতে হবে না আগের মতন। কিন্তু এখন বুঝি, ম্লেচ্ছদের সুরাপাত্রে নাস্তিকতার আরক সহসা ঢেলে দিলে তা ধর্মের অহিফেনের চেয়েও বড্ড ভয়ঙ্কর হবে। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা আর প্রজ্ঞার মিশেলে ওদের স্ব স্ব আত্নতত্ত্ব তাদেরকেই ধীরে ধীরে প্রস্তুত করতে হবে।

শিক্ষাগত এবং আর্থিক মুক্তি যতক্ষণ না ওরা পাচ্ছে ততক্ষণ আমার কিছুই করার নেই, কারণ "ধর্ম জনগণের আফিম", আফিমের রেশ কাটিয়ে "ওদের"-কে কি দেবো আমি? ওরা অশিক্ষিত, হতাশ, বিষণ্ণ, অবসাদগ্রস্থ; জীবনের বহু অন্ধগলিতে হাতড়ে হাতড়ে ক্লান্ত। দোষ ধর্মের নয়, আমার মতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপরও নয় আপাতত। দোষ প্রথমেই এবং প্রধানত শিক্ষাব্যবস্থার। বাংলাদেশের মফস্বল শহর ও গ্রামের নিম্নস্তরের শিক্ষাব্যবস্থার আবর্তে ঘুরপাঁক খেতে খেতে তলিয়ে যাওয়া হতাশাবাদীর দল ভারি এদেরকে দিয়েই হচ্ছে, আর ধর্মের তাবেদারদের মূল টার্গেট এরাই। বাংলাদেশে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, চারিত্রিকভাবেই বাংলার মানুষ সহনশীল।

তাই সোনার বাংলাকে আল-বাংলায় পরিণত করার জন্য জামাতী-শিবিরী-তাবলীগি কর্মকান্ড হতে শুরু করে হরকাতুল জিহাদ-জেএমবি-গ্রীনক্রিসেন্ট-হিজবুত তাহিরির ব্যাপক, বহুমূখী, বৈচিত্রময় গুপ্ত-সুপ্ত প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কর্মকান্ডের মহড়া দেখছি চতুর্পার্শ্বে। আমার সোনালী অতীতের বিশাল একটা স্থানজুড়ে আছে শান্তিকোম্পানী- পুরোটাই শিবিরের ইসলামী আলোয় আলোকিত, ইসলামের তাবলীগি-আলো এখন রামপুরের এদিকটায়ও ব্যাপ্ত হচ্ছে দ্রুতগতিতেই। ব্লগে ইসলাম নিয়ে প্রশ্ন তুললে বা ধর্মীয় স্যাটায়ার লিখলেই ডেইস্ট, সুশীল, মধ্যপন্থী, সহনশীলতার তকমা-আঁটা হতে শুরু করে প্রজ্ঞার দুরাতিক্রম্য স্তরে উঠে-যাওয়া কোন বামপন্থীও বিরক্ত হন হয়তো। অধিকাংশ জ্ঞানী-গুনী ব্লগার থাকেন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, কানাডা, আমেরিকা, কুয়েত, জাপান, জার্মানসহ বিশ্বের উন্নত অনুন্নত দেশে- অনেকেই ধর্মতত্ত্বের গাণিতিক ধাঁধাঁর সমাধান বহু আগে করে ফেলেছেন, বাংলার মাটিতে হয়তো এদের অনেকেরই পাঁ পড়ে না তেমন, কিংবা তাদের জানা নেই বাংলাদেশের বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে কিভাবে চেতনার আঁধার বিস্তার হচ্ছে সূক্ষ্ণভাবে কিন্তু অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। এলাকায় ইদানিং দেখছি কী অবস্থা...আজ রাতে ভাববাদীদের সভায় পরাজয়ের শেষ পর্যায়ে বিরোধীপক্ষ বাক্যবাণ হানলো, "যে পৃথিবীর জনসংখ্যা একশো জন এবং নিরানব্বুই জন লোক গাঁজা খায় সে পৃথিবীতে তুমি একটি অসুস্থ লোক- এটি তোমারই যুক্তি।

" নিশ্চুপ রইলাম, কারণ সভায় আমি একা...পরবর্তী আক্রমণের রেশ টের পাচ্ছি। "সুতরাং, বিপ্লব...", ক্রুর অতাবলীগি একটি হাসি উপহার দিল আসিফ, "তোমার জানা আছে মোরতাদদের জন্য বিধান কি?" শঙ্কিত হলাম এই প্রথম আমি, এদিক-ওদিক পলকে চোখ ঘুরিয়ে পরিস্থিতি বুঝে নিচ্ছি! পাশে পোলার- স্কুলজীবন অসমাপ্ত-থাকা স্কুলবন্ধু; মাথায় টুপি, চোখে-মুখে বিনীতভাব- প্রথমে আমাকে ইসলামী জ্ঞানে জ্ঞানান্বিত করতে চাইলেও বার্কলে-ধোঁয়াশায় পাঁচ মিনিটেই "বাস্তবতার বাস্তবতাজাত" শয়তানী কুমন্ত্রণা ঢুকিয়ে দিলাম। সামনে শরীফ দাঁড়িয়ে, আশৈশব আমার প্রিয় বন্ধু; তত্ত্ব ও তথ্যভারাক্রান্ত হতাশাগ্রস্থ এক তরুণ, নির্বাণ খুঁজে পেয়েছে শেষপর্যন্ত মরমীবাদী মদে- কাল রাতে সদ্য জানলাম পানপাত্র পূর্ণ করে সেও খেয়েছে তিনদিন-তিনরাত তাবলীগের নব্য-ইসলামী অহিফেন...শারীরিকভাবে একফুট দূরত্ব হলেও সে এখন হারিয়ে গিয়েছে দূরে। সে আমার বিরুদ্ধে ইসলামের ঈমানী জোশবাহী তরবারি তুলবে না। অন্যরা একটু দূরে।

আপাতত সভায় বাকি আছে আরিফ, ওর সাথে আমার তেমন ঘনিষ্ঠতা নেই। রাত্রির আকাশে যৌবনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানো চাঁদ, নিচে পরিত্যক্ত পুকুরের ধারে "পরিত্যক্ত" কয়েকজন তরুণ; কিন্তু হুমায়ুন আহমেদের যুবকদের চেয়ে এদের মানসিক অবস্থা ভালো কারণ সামাজিক-রাস্ট্রীক-বৈশ্বিক বৈষম্যবিরোধী কর্মকান্ড, বিজ্ঞানমনস্ক ধ্যান-ধারণা, প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনাকে বর্জন করে এরা এখন পারলৌকিক প্রশান্তিতে দিন কাটাচ্ছে। আত্নঘাতীদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে সমর্থনযোগ্য, কিন্তু এ কি ফল বয়ে আনবে ভাবিকালে? এরাও তো আরেক অর্থে আত্নঘাতী। আসিফের দিকে দৃষ্টি ফেরালাম ফের, তাবলীগের অহিংস নীতির সাথে ওর এই ধরনের মনোভাব খাপ খায় না। প্রত্যেকটি মানুষেরই চারিত্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে বংশগত, জিনগত, পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাবগত এবং বর্তমান সময় পর্যন্ত লব্ধ জ্ঞান-অভিজ্ঞতা-উপলব্ধিগত প্রভাব থাকে...আসিফের চরিত্রে উগ্রতা, হিংস্রতা, ঔদ্ধত্য এবং বিরোধীমতের প্রতি অসহিষ্ণুতা ও সেটিকে দমনের মনোভাব জিনগতভাবেই প্রোত্থিত।

আর ইসলামের আরক সুরাপাত্রের আকৃতি অনুযায়ী রূপ পাল্টায়। ব্যক্তির চরিত্রের গড়ন ও কাঠামো অনুযায়ী তাই কেউ হয় জামায়াতের কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলার অনুসারী নিবেদিতপ্রাণ কর্মী, কেউ তাবলীগের শিথিল নীতিতে-চলা বিনয়ী ধর্মপরায়ণ, কেউ হরকাতুল জিহাদ কিংবা জেএমবির একনিষ্ঠ কর্মপরায়ণ সদস্য- হবে প্রয়োজনে আত্নঘাতী । কারণ কোরান-হাদিসকে "চেতন" তার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারে। নবী দিয়ে যাননি কোন পরম ভেদ, কোন ব্যাখ্যা সঠিক বা কারা সেই তেয়াত্তর ফেরকার মধ্যে সঠিক দল সেটি নির্ধারণ করবে কে? যুথচারী সমচেতনার ধারকদের মাঝে অনিবার্য নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করছে এখানে আসিফ। সাথে সাথেই টের পেলাম, আরিফ, শরীফ, পোলার, আনোয়ার, পিনু এবং অন্যান্যরা না চাইলেও আসিফের কঠোর নেতৃত্বে সম্ভব বিপ্লবের ইসলামিক শরিয়ত অনুযায়ী বিচারের আয়োজনকার্য সম্পন্ন করা।

সুতরাং আর না এগুনোই ভালো। এদের কাছে পৃথিবীর আর কোনকিছুর কোন অর্থ নেই, এক ইসলামই সত্য...ইসলামই পরম- সকল মতবাদ, নীতি, আদর্শ, তত্ত্ব সবই ভুল। এই অহিফেনের সবচেয়ে বড় গুন হল এটি সংক্রামক; এর কার্য ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও পৃথিবীর যেকোন ধর্মৌষধগুলোর চেয়ে উন্নত । এইতো চোখের সামনেই দেখছি বাস্তবতা... "এদের" প্রত্যেকের মাঝেই এক ধরনের অলৌকিক ব্যক্তিত্ব চলে আসে, এদের মুখে ইসলামের গুনগানের এক্সপ্রেস, চোখে সম্মোহনী ঘোর, চলা-ফেরায় অভূতপূর্ব বিনয়- সবমিলিয়ে এক অপার্থিব পারলৌকিক প্রশান্তি। ইসলাম! এক আশ্চর্য ধর্ম।

দিন যতই যাচ্ছে আমি ততই অবাক আছি। মারাত্নক...ভয়ঙ্কর মারাত্নক এক সুধা, এই অহিফেনে যে মজেছে সেই জেনেছে...তথাকথিত "দিব্যজ্ঞানী" সেই হয়েছে । এই যে আমার চারপাশের বালক-তরুণ-যুবক-বৃদ্ধ (নারীবাদীদেরকে পরে ডিল করবো) যাদেরকে দেখছি- এরা সকলে বড্ড হতাশ, ক্লান্ত, বিষণ্ণ, অবসাদগ্রস্থ। মফস্বলের সংখ্যাগরিষ্ঠ অশিক্ষিত তরুণ ও যুবসমাজ উদভ্রান্ত, দিশাহারা, লক্ষহীন। সংসদ ভবন, রমনা পার্ক কিংবা কমলাপুর স্টেশনের বিশ-ত্রিশ টাকার বেশ্যার দেহে ক্ষণিকের জন্য নির্বাণপ্রাপ্ত ভ্রষ্ট মুর্খ অশিক্ষিত যুবকের সাথেই বা আধুনিক শিক্ষিত রুচিসম্পন্ন "আমার/আমাদের" পার্থক্য কি তাও চিন্তা করি মাঝে মাঝে- এক অমোঘ বায়রনীয় হতাশাবোধ।

আমারও মনে হয় এসব নিয়ে আর ব্লগে জলঘোলা না করাই ভালো। ব্লগে এসব লিখেও কোন কাজ নেই, ধর্মগ্রন্থ বিস্তারিতভাবে গভীরভাবে না পড়ে গুগল সার্চ দিয়ে কোন পন্ডিত কি বলেছেন, তার জবাবে বিরোধী পন্ডিত কি বলেছেন এসব পড়ে পড়ে সংশয়বাদী হওয়াটাই ভালো ছিল। ধর্মগ্রন্থের বাণী না পড়ে, সেটি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা না করে বরং নদী-নালা-নর্দমা, খালে-বিলে, সমুদ্রে-মহাসমুদ্রে, আকাশে-বাতাসে-মহাকাশে সদা এক প্রেমময়ী ঈশ্বরের আমদানি করতাম- সেই ভালো হত। আর লিখলেও বঙ্গানুবাদের বাদানুবাদ কিংবা কপি-পেস্টের অপবাদ শুরু হয়, প্রতি-বঙ্গানুবাদে যদিও আগ্রহটা ঈশ্বরবাদীদের মাত্রাতিরিক্তভাবেই কম। কিন্তু মন খারাপ হয়ে পড়ে মাঝে মাঝে নিজের বন্ধু-বান্ধবদের অবস্থা দেখে।

স্বল্পচিন্তার হতাশাবাদীদের জন্য তাবলীগ মোক্ষম নিদান, কিন্তু রুচিশীল বিত্তবান যেমন সংসদ ভবনের বেশ্যায় নাক কুঁচকায় তেমনি স্কুললাইফে বস্তুবাদের পাঠ শেষ করে-আসা আমার জন্য প্রয়োজন ছিল নিরীশ্বরবাদবিরোধী আরো দুর্ভেদ্য প্রতিরক্ষাবলয়াবৃত নিভৃত আলয়। তাই সাময়িক মুক্তি দিয়েছিল "তরিকত"; কিন্তু যখন সুফিবাদের থিয়োরেম সমাধান করলাম তখন আরো আশ্চর্যজনকভাবে হতাশাবোধের পরিবর্তে বরং উত্ফুল্ল, আত্নবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলাম। স্কুলজীবন থেকে কলেজ জীবন পেরিয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠে পাঁ রেখে যখন দেখি আমার মতন একই গল্পের মধ্য দিয়ে চেনা চরিত্রগুলির মেটামরফোসিস ঘটছে- কিন্তু ভুল ও ভ্রান্ত পথের দিকে তখন আতঙ্কিত না হয়ে পারি না। ওরা মার্কস্-হেগেল-এঙ্গেলস্- এর নাম শুনেনি; মুখে সেই পরিচিত চটুল ইসলামী বয়ান করতে করতে ফেনা তুলে ফেললেও এরা কোরান-বাইবেল-রামায়ণ-মহাভারত পড়েনি, বোখারি-মুসলিম-মেশকাত শেষ করেনি, তাবারি-ইবনে হিশামের সীরাত পড়েনি, বুকাইলি-মুর-ইয়াহিয়াদের ব্যাপক অবদান সম্বন্ধে ভাসাভাসাভাবে শুনেছে, ড. জাকির নায়িক এদের নিকট এক দুর্বোধ্য মহাপুরুষ কিন্তু এরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের মফস্বল শহর ও গ্রামগুলিতে। শুধুমাত্র পশ্চাদপদ গ্রাম ও শহরের কথা বলে লাভ কি? বুয়েট-মেডিক্যালের কয়জন ছেলে-মেয়ে জানে সমাজ-সভ্যতা বিকাশের, ন্যূনতম নিজস্ব ধর্মের উত্পত্তির বিস্তারিত ইতিহাস? বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থানুযায়ী স্কুললাইফে পড়ে আসছি নিজস্ব ধর্মের নবী-রাসূল-অবতার-প‌্রফেটদের গুনগান আর ঈশ্বর কর্তৃক নির্দেশিত সনাতন শ্বাসত নীতি, আদর্শ, বিধি-বিধানের বিস্তারিত বয়ান, তারপরও ব্যতিক্রম দু'একজন হয়তো মোক্ষলাভ করবে...কিন্তু ব্যতিক্রম ব্যতিক্রমই, সে কখনো স্ট্যান্ডার্ড হতে পারে না; সংখ্যাগরিষ্ঠ "আমরা" বিজ্ঞানের যে শাখায়ই পিএইচডি নেই না কেন, আফিমের আমৃত্যু আমেজ চোখে-মুখে-নাকে-কানে লেগে থাকবে তথাকথিত প্রগতিশীলতার ভেক ধরে কিংবা সংশয়াচ্ছন্ন ধর্মীয় বাতাসের দোলাচলে; পঞ্চইন্দ্রিয় থেকে গভীর চিন্তাধারার অধিকারীদের আমদানি হবে ষষ্ঠইন্দ্রিয়ের, পৃথিবীর সমস্ত "ইভেন্ট" এক সুমহান সুন্দর ঐশ্বরিক তাত্পর্য ধারণ করবে "চেতনে।

" চেতনের সর্বশেষ স্তরে গিয়ে আধ্যাত্নবাদী বুঝবে, এই বিভ্রান্তিকর লেখাটি স্বয়ং শয়তান হতে আগত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.