আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“পাটির নীচে পিজি ঘোষ, ভগবানের ইয়ের....দোষ” ।।



"পিজি ঘোষ ও ভগবান দাসের গল্প" ============================================ গল্পটা আমরা অনেকেই জানি । ভগবান দাস আর পিজি ঘোষের গল্প । পুরো গল্পটা এখানে না বলাই ভালো । ঘটনাটা হলো, ভগবান দাস অকাম করছিল অন্যের ঘরে । না জেনেই হঠাৎ করে সেখানে পিজি ঘোষ এসে পড়ে একই উদ্দেশ্য ।

দিশা না পেয়ে চাঙ এর উপর উঠে লুকানোর চেষ্টা করে ভগবান দাস । পিজি ঘোষ অকামটা টেক ওভার করে । এমন সময় গৃহকর্তার উপস্থিতি টের পেয়ে পাটির নীচে লুকিয়ে পড়ে পিজি ঘোষ । ঘরের সবকিছু এলোমেলো দেখে গৃহকর্তারতো ভিমরি খাবার মত অবস্হা । প্রশ্ন করলে স্ত্রীর ত্বরিত জবাব, সব ভগবানের লীলা ।

একথা শুনে উপর থেকে ভগবান দাস ভাবলো, হয়তো তাকেই দোষারোপ করা হচ্ছে । তিনি ধরা খেয়ে গেছেন । তো ধরা যদি খেতেই হয়, একা কেন । দোষ তো তার একার নয় । চিৎকার করে বলে উঠলেন, ভগবানের চ্যাটের দোষ, পাটির নীচে পিজি ঘোষ।

....পরবর্তীতে পিজি ঘোষ আর ভগবান দাসের ভাগ্যে ঠিক কি ঘটেছিল তা, "খেলারাম খেলে যা "র লেখক সৈয়দ শামসুল হক অথবা প্রয়াত ড. হুমায়ন আজাদ হয়তো ভালো বলতে পারবেন । যে কথা বলতে গিয়ে আজ বাংলা নববর্ষের এ আলোচনায় "ধান ভানতে শিবের গীত " শুরু করলাম সে প্রসংগে ফিরে আসি । ১লা বৈশাখ, ১৪১৬ বাংগালী জাতির শুভ নববর্ষ । সকল প্রকার জীর্ণতা, শীর্ণতা, দীর্ণতা ধুয়ে মুছে বৈশাখের রূদ্র দহনে পুড়িয়ে ছাই করে নতুন করে শপথ নেবার দিন । নতুন করে স্বপ্ন দেখার দিন ।

কিন্তু স্বপ্নতো আমরা পহেলা জানুয়ারীতেও দেখেছিলাম । স্বপ্ন দেখে আসছি, শপথ নিচ্ছি ২১শে ফেব্রুয়ারী, ২৬শে মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর । প্রতি বছর । দীর্ঘ ৩৮টি বছর । বাংলার অকুতোভয় মুক্তিসেনারা ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতার লাল সূর্যটা ছিনিয়ে আনার পর থেকেই ।

কিন্তু স্বপ্ন পূরন হতে আর কত দিন, মাস, বছর লাগবে ? স্বপ্নটাতো খুব বেশী কিছু ছিল না । বলা হয়েছিল, অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা-চিকিৎসার ব্যবস্হা করা হবে । খুবই মৌলিক ও সাধারন স্বপ্ন । স্বাধীনতার ৩৮ বছরেও কেন তা পুরন হয় না ? ভেবে দেখার সময় এসেছে বৈকি ! ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ । ফরিদপুর জিলা স্কুল ছাত্রাবাসে খুব খোশ মেজাজেই ঘুম থেকে উঠেছিলাম ।

হঠাৎ করেই সেই দুঃসংবাদটা এলো । ভয়ংকর দুঃসংবাদ ! চারিদিকে আতংক ছড়িয়ে পড়লো মুহুর্তেই । শুরু হলো ছুটোছুটি । বংগবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে । প্রায় সমবয়সী, ছোট্ট রাসেলকেও ছাড়েনি ঘাতকের নির্মম বুলেট ।

স্কুল ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষনা করা হলো । সমস্ত বাস, ট্রেন, গাড়ী চলাচল বন্ধ । রিকসায় করে দীর্ঘ ৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাড়ীতে ফিরলাম । খুবই খারাপ লেগেছে । যে বংগবন্ধুর নেতৃত্বে দেশটা স্বাধীন হলো, মাত্র তিন বছরের মধ্যেই তাকে হত্যা করা হলো ।

কিন্তু সে ভয়াবহ হত্যাকান্ডের নৃশংসতা, নির্মমতা যে কত গভীর ছিল তখন তা জানা সম্ভব হয়নি । তবে যে খুনিরা এটা করেছিল, তারা তখন জাতিকে স্বপ্নের কথা বলেছিল । মুক্তির স্বপ্নের কথা । এরপর ১৯৭৫ এর ৩রা নভেম্বর, জাতীয় চার নেতা, যারা বংগবন্ধুর অনুপস্হিতিতে মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, জেলখানায় বন্দি অবস্হায় গুলি করে, বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে তাদেরকে হত্যা করা হলো । সে নির্মম হত্যাকান্ডের কোন ছবি বা ভিডিও জাতি এখনো দেখতে পায় নি ।

মীরজাফরের আত্নার আত্নীয় মোশতাক তখনো আমাদেরকে মুক্তির স্বপ্ন দেখায় । ১৯৭৫ এর ৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের নামে শত শত সেনা অফিসারদের হত্যা করা হলো । পংগু মুক্তিযোদ্ধা, যিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে কয়েক হাজার মাইল পায়ে হেটে এসে, পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করে একটা মুল্যবান পা জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন, সেই কর্নেল তাহের বীর উত্তমকে বিচারের নামে প্রহসন করে ফাসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হলো, পথের কাঁটা দুর করা হলো । আর তখনো বলা হয়েছিল সেই মুক্তির কথা । স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার কথা ।

এরপর ১৯৭৬ থেকে ১৯৮০, আবারো শত শত মুক্তিযোদ্ধা সামরিক অফিসার হত্যা, ১৯৮১ তে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হলো । ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ অসংখ্য ছাত্র, শ্রমিক, জনতার রক্ত ঝড়ানো হলো, অনেক মায়ের বুক খালি করা হলো, একদিকে যেমন সামরিক স্বৈরাচারের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য, অন্যদিকে তথাকথিত গনতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে । রাতে চলতো মদ, নারী ও টাকার ভাগাভাগির খেলা, দিনের বেলায় আন্দোলনের নামে প্রিয় সহপাঠি সেলিম, দেলোয়ারকে পুলিশের ট্রাকের চাকার নীচে ঠেলে দিয়ে লাশ নিয়ে কু রাজনীতির ভয়ংকর খেলা । আর তখনও জাতিকে বলা হতো, দেখানো হতো মুক্তির স্বপ্নের কথা । ৬ই ডিসেম্বর ১৯৯০ ।

জাতি মুক্তি পেল সামরিক জান্তা এরশাদের হাত থেকে । ১৯৯১ সালের ১লা জানুয়ারী নতুন বছরে জাতিকে আবারো নতুন স্বপ্নে বিভোর করা হলো । গনতন্ত্রের স্বপ্ন, মুক্তির স্বপ্ন । ১৯৯১ থেকে ২০০৬ গনতান্রিক সরকারের যাত্রাপথে অন্তঃত ১৬টি পহেলা বৈশাখ বা বাংগালীর নববর্ষ পালনের সুযোগ এসেছে । এসেছে প্রতিবারই নতুন করে স্বপ্ন দেখার, নতুন করে শপথ নেবার সুযোগ ।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রতিবারই জাতির স্বপ্ন ভংগ হয়েছে । তবে ২০০৭ এ পহেলা বৈশাখ এসেছিল সম্পুর্নো নতুন স্বপ্ন নিয়ে । ১/১১ এর উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে । আমার প্রিয় কবি নজরুলের ভাষায়, "হেন দুর্দিনে বেদনা-শিখার বিজলী প্রদীপ জ্বেলে, কাহারে খুঁজিতে কে তুমি নিশীথ-গগন-আঙনে এলে?...কে তুমি সুনীল মেঘ-অবগুন্ঠিতা? তুমি কি গো সেই সবুজ শিখার কবির দীপান্বিতা"? প্রথমদিকে মনে হয়েছিল, এবার মনে হয় বাংগালীর হাজার বছরের স্বপ্ন পূরন হবে । স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম ভগবান দাস ও পিজি ঘোষদের মত চিহ্নিত দূর্নীতিবাজ, দূর্বৃত্ত রাজনীতিক, সামরিক বেসামরিক আমলাদের দলমত নির্বিশেষে গ্রেপ্তার করা হলো ।

পুনর্গঠিত হলো সৎ ও সাহসী মানুষ, জেনারেল হাসান মাশহুদের নেতৃত্বে দুর্নীতি দমন কমিশন, শক্তিশালী করা হলো নির্বাচন কমিশনকে, পৃথক ও স্বাধীন করা হলো দেশের বিচার বিভাগকে । উল্লেখ্য যে, ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিটি সরকার বিভিন্ন দিবসে, জনগনকে অন্যতম যে স্বপ্নটা দেখিয়ে আসছিলেন, তা হলো সম্পুর্নো স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যাবস্হা । বলাই বাহুল্য, অন্যসব ওয়াদাগুলোর মতো এটা নিয়েও করা হয়েছে প্রচুর ভন্ডামি আর তামাশা । পরবর্তীতে, ১/১১ এর সরকার বাংগালীর সকল বৈশাখী স্বপ্নকে ধুলিস্যাত করে, শুধুমাত্র নিজেদের চামড়া বাঁচাতে, চিহ্নিত ও স্বীকৃত দূর্নীতিবাজদের সাথে আপোষ করলো । যারা নিজেদেরকে সকল প্রকার ধরা ছোঁয়ার বাইরে মনে করতো, দেশের কোন আইন তাদের টিকিটিও ছুতে পারবে না বলে দম্ভ করতো, দূর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সমস্ত কালো টাকা ও সম্পদ নিজেদের বউ ছেলেমেয়ের নামে ভাগ করে দিয়ে আইনের হাত থেকে বাঁচতে পারবে বলে মনে করতো, ১/১১ এর ঝড় তাদের সে দম্ভকে চুর্ন-বিচুর্নো করে দিয়ে একের পর এক রাঘব বোয়ালদেরকে কারাগারে পাঠিয়ে জাতির অন্ধকার টানেলে ক্ষীণ আশার আলো জ্বালিয়েছিল ।

স্ত্রী, সন্তান সন্ততি সহ এসব দাগী অপরাধীরা যখন আদালতের রায়ে ১৫/২০ বছরের সাজা ভোগ করতে শুরু করেছে, সে মু্‌হুর্তে ১/১১ এর সরকার ও তার পৃষ্ঠপোষকেরা আপোষের মাধ্যমে একের পর এক জাতীয় বেঈমান, দেশ ও জনগনের সম্পদ লুন্ঠনকারী, ভুমি দস্যু, খাদ্যে ভেজাল মেশানোর মতো অপরাধী যার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড, তাদেরকে জেল থেকে মুক্ত করে জাতির হাজার বছরের বৈশাখী স্বপ্ন, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের স্বপ্নকে চুর্ন, বিচুর্ন করে দিল । নাম মাত্র জাতীয় ও উপজেলা নির্বাচন দিয়ে তড়িঘড়ি করে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাষ ফেললো । ছিন্নমূল হকারদের স্বর্বশান্ত করে, গরীব ও মেহনতী মানুষদের হাটবাজার ভেংগে দিয়ে, দুটি বছর জনগনকে মৌলিক অধিকার থেকে বন্চিত করে, ব্যাংকের কেরাণী সাহেব সাবেক প্রধান উপদেষ্টার খেতাব নিয়ে বিদায় নিলেন । জাতীয় নির্বাচনের পর মানুষ আবার আশায় বুক বেঁধেছে । দিন বদলের স্বপ্ন দেখানো হয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশের ভীশন উপস্হাপন করা হয়েছে ।

১৪১৬ এর পহেলা বৈশাখে আবার মানুষ ভাবছে, এইতো বুঝি শেষ হলো অমানিশার অন্ধকার । এসেছে নতুন বৈশাখের তপ্ত দহণ, জ্বলে পুঁড়ে খাক হয়ে যাবে সব ভগবান দাস আর পিজি ঘোষেরা । কিন্তু পুরোপুরি আস্হা রাখতে পারছে না, ভরসা করতে পারছে না নিজের ভোর রাতে দেখা বৈশাখী স্বপ্নের উপর । বাংলাদেশকে জংগী রাষ্ট্র বানানোর ইন্দো-আমেরিকান সুগভীর চক্রান্ত শুরু হয়েছে । সাম্রাজ্যবাদের মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পদলেহন করতে শায়খ রহমান, বাংলা ভাই সৃষ্টি করা হয়েছে, ১লা বৈশাখ, ২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমান সহ অসংখ্য নারী পুরুষের প্রাণ হরন করা হয়েছে ।

সর্বশেষ, সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী, অকুতোভয় বিডিআর সেনাদের মধ্যে বিদ্রোহ ঘটিয়ে একদিকে যেমন মেধাবী সেনা অফিসারদের হত্যা করা হয়েছে, অন্যদিকে সীমান্ত অরক্ষিত করে এক ঢিলে দুই পাখী মারা হয়েছে । আর এসবেই, পিজি ঘোষ ও ভগবান দাসেরা একে অপরের উপর দোষ চাপিয়ে অতি ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে । কারন একটাই, এরাতো আসলে একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ । এসব সাম্রাজ্যবাদী দালালেরা, দেশকে মৌলবাদের খপ্পর থেকে মুক্ত করার নামে, তাদের প্রভু দেশের সৈন্যদেরকে কোন এক কাকডাকা ভোরে বাংলার রাস্তায় টহল দেওয়া দেখতে পাবে সেই অপেক্ষায় রয়েছে । অপেক্ষায় রয়েছে, ফুল-চন্দন আর মালা নিয়ে, জয় ধ্বনি দিয়ে বাবাদের স্বাগত জানাতে ।

তবে একথা আমাদের বুঝতে হবে যে, ক্রীড়নক মৌলবাদী গোষ্ঠী, পিজি ঘোষ ও ভগবান দাসদের লক্ষ্য এক ও অভিন্ন । রাতের আঁধারে তাদের প্রভুদের বাসায় এরা প্রতিনিয়ত বৈঠকে মিলিত হয় । গভীর ষড়যন্ত্রের বৈঠক । বাঙালী জাতির কাধে ২০০ বছরের গোলামীর ব্রিটিশ শাষণের চেয়েও ভয়ংকর এ ষড়যন্ত্র । বাংলাদেশকে ইরাক ও আফগানিস্হান বানানোর ষড়যন্ত্র ।

না হলে, আজ পর্যন্ত কেন পিজি দাস বললো না যে, ভগবান দাস যা কিছুই করেছে তার ভালো দিকগুলো আমরা কন্টিনিউ করবো, কিংবা, আমরা চেষ্টা করবো তাদের থেকেও ভালো করার । এরা ভাগাভাগি করে যখনই ক্ষমতায় আসে, শুরু করে সেই পুরোনো গান । ভগবান দাস বলে, পিজি ঘোষরা কিছুই করেনি, দেশকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে, সব কিছু আমাদের নতুন করে শুরু করতে হবে; আর পিজি ঘোষ এসে বলে, ভগবান দাসরা দেশকে জাহান্নামে পৌঁছে দিয়েছিল, এখন আমরা এটাকে জান্নাতুল ফেরদাউসে নিয়ে যাব । এরা দেশ ও জাতির বিশেষ সংকটে একসাথে বসে না । জাতীয় ঐক্যমতের মাধ্যমে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার বদলে জাতীয়তাবাদ, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়ের নামে জাতিকে বিভক্ত করার প্রচেষ্টা চালায় হীন স্বার্থের জন্য ।

পাঁচ বছর পর পর এরা ক্ষমতার পালাবদল করে, লুটপাট করে নিজেরা রাতারাতি আংগুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায় কিন্তু জাতির ভাগ্য বদলায় না । ভাংগাচুড়া রাস্তাঘাট, চিরাচরিত ট্রাফিক জ্যাম, ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সের বদৌলতে নিত্য সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের বিকৃত লাশ, প্রতিবছর ঈদ, পূজায় পরিবারের সাথে জীবিত মিলিত হবার আনন্দের বদলে, চাঁদপুর, মুন্সিগন্জ, বরিশালের নদীর পারে হাজারো নারী পূরুষের বুকফাটা আর্তনাদ স্বজনের লাশের খোজে, এ যেন বাংগালির জীবনের এক অলিখিত বিধান, তবে বিঁধির নয়, ঘুষখোর পিজি ঘোষের, ভগবান দাসের বিঁধান, কেননা তারাইতো ফিটনেসবিহীন লন্চকে নদীতে চালানোর অনুমতি দেয় অদক্ষ চালকের হাতে । মনে পড়ে সেই গানটি "চলে না, চলে না"... ফাইল চলে না রে..., ঘুষ ছাড়া... । পরিবেশের মারাত্নক দুষণ, নদী দখল, ঘাট দখল, গরীব মানুষের জমি দখল ইত্যাদির যুগের পর যুগ কোন পরিবর্তন হয় না । জাল যার জলা তার, ভুমিহীনদের জন্য খাস জমির নীতি লাল ফিতার ফাইলেই আটকে থাকে বছরের পর বছর ।

২১ শে আগষ্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার সিডি দেখছিলাম সেদিন । এই প্রথমবারের মত দুর্লভ সে সব ভয়াবহ নৃশংস দৃশ্য দেখার সুযোগ হলো । আইভি রহমান রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছেন, একটা পা সম্পু্র্নো উড়ে গেছে, তখনো জীবিত । শত, শত নারী পুরুষ রাস্তায় ছিন্ন ভিন্ন খন্ডিত দেহ নিয়ে কেউ ঢলে পড়েছে মৃত্যুর হিমশীতল গহবরে, কেউবা নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও বাঁচার শেষ আকুতি জানাছ্ছে । বিচার হয়নি, তদন্তের নামে প্রহসন হয়েছে ।

মাথায় জেল্ লাগানো চোরাকারবারী স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কুৎসিত মুখখানি ভেসে উঠছিল । কি নির্লজ্জ মিথ্যাচার হয়েছিল সেদিন, জনগনকে বোকা বানানোর চেষ্টা হয়েছিল । সেই ঘটনা যাকে কেন্দ্র করে ঘটানো হয়েছিল, যাকে টার্গেট করা হয়েছিল, তৎকালীন বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনা আজ ক্ষমতায় । জনগনের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছেন । দিন বদলের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছেন ।

এসেই সংকটের মধ্যে পড়েছেন, ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়েছেন । কিন্তু সময় দ্রুত পার হয়ে যাছ্ছে । দিন বদলের কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না । অন্তঃত কোন "শুরু" দৃশ্যমান হচ্ছে না । যে কাজের কোন শুরু নেই, তার কোন শেষও নেই ।

এখনই সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে শুরুটা না করতে পারলে, পাঁচ বছর দ্রুতই পার হয়ে যাবে, কাজের কাজ কিছুই হবে না । তাই বলছি, বিরোধী দলকে আস্হায় নিন, ডায়লগ শুরু করুন । মন্ত্রীসভায় যেভাবে নিজ দলীয় দুর্ণীতিবাজদেরকে স্হান দেন নি, সেভাবে বিরোধী নেত্রীর সাথে ডায়লগ করে বলুন, তাদের চিহ্নিত দুর্ণীতিবাজদেরকেও যেন অন্তঃত কোন দৃশ্যমান পদে না দেখা যায় । যাদের সাজা হয়েছে, তাদেরকে দ্রুত জেলে ফেরত পাঠানোর ব্যাবস্হা করুন । ম, খা সাহেবরা যত পন্ডিতই হোক তাদের সাজা ভোগ করার জন্য, স্হায়ী কমিটির সভাপতি পদ নয়, জেলখানায় বড়জোর ডিভিশনের ব্যবস্হা করা যেতে পারে ।

উন্নয়নের লক্ষ্য স্হির করতে হবে । কোনভাবেই উপজেলা পরিষদে এমপি কে উপদেষ্টা বানিয়ে উন্নয়নের অংশীদার করার নামে লুটপাটের অংশীদার, ঘুষ ভাগ করার অংশীদার করা যাবে না । বরং কিভাবে উপজেলায় সঠিক অডিটিং ব্যবস্হা চালুর মাধ্যমে চেয়ারম্যান, ইউএনও সহ সকলকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা যায় তার ব্যবস্হা করতে হবে । মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতার পর সংস্কার বা উন্নয়ন যা কিছুই হয়েছে তার অন্যতম উত্তম ব্যবস্হা হলো উপজেলা পদ্ধতি, যার মাধ্যমে সাধারন খেটে খাওয়া মানুষকে গনতন্ত্রের সত্যিকার অংশীদার করা হয়েছে । এ পদ্ধতি চালু করে আমাদের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ও দুর্ণীতিপরায়ন আমলাতান্ত্রিক সমাজে কঠোর চাবুকাঘাত করা হয়েছে, সহজভাবে বলতে গেলে চাকু চালিয়ে সার্জারী করা হয়েছে ।

বাংলাদেশে যে সার্জারীর প্রয়োজন ছিল অনেক আগে, যা করার কথা ছিল গনতান্রিক সরকারগুলোর, করা হয়নি । তাই একথা অবিশ্বাষ্য হলেও সত্যি যে, এ কাজটা করেছে একজন সামরিক জান্তা, তথাকথিত স্বৈরাচার । তবে এটা মানতে কষ্ট হলেও, এ পদ্ধতি চালুর জন্য এরশাদকে মানুষ চিরকাল মনে রাখবে । আপনারা "খাও-দাও-স্ফুর্তি করো...পাচঁটি বছর পার করো " নীতির বদলে, সরকারের রুটিন কাজের বাইরে এরশাদের বিকেন্দ্রীকরন, ঔষধনীতিসহ ভালো কাজগুলোর মত এমন কিছু করুন যাতে জনগন চিরকাল আপনাদেরকেও মনে রাখতে পারে । আর তা করতে হলে এ ঘুনেধরা সমাজে চাকু চালিয়ে সার্জারী করতে হবে, সস্তা জনপ্রিয়তার লোভ পরিত্যাগ করতেই হবে ।

তা না হলে, নজরুলের ভাষায়, "কথার ফানুস ফাঁপাইয়া যারা যত করে বাহাদুরী, তারা তত পাবে মালা যশের কস্তুরী"! হাততালি, ফুলের মালা ঠিকই জুটবে, জনতার স্বপ্ন পূরন হবে না । বৈশাখী স্বপ্ন পূরন করতে হলে নিজেদের ত্যাগ করতে হবে । নিজ নিজ হীন স্বার্থ পরিত্যাগ করে জেনারেল (অব হাসান মাশহুদকে নির্ভয়ে কাজ করার সূযোগ দিতে হবে । বুঝতে হবে, হাসান মাশহুদ, ড. আকবর আলী খানরা বার বার জন্ম নেয় না । তাদেরকে কাজে লাগাতে পারলেই দিন সত্যিকার ভাবেই বদলে যেতে পারে ।

নিজেরাই সর্বশ্রেষ্ঠ, অন্যরা খারাপ এ ধারনা থেকে যত দ্রুত বের হয়ে আসা যায়, ততই মংগল । কেননা আমরা সবাই জানি-"উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে, তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে "। কবি নজরুলের সেই আহবান মানুষের মনে আজো বাজে "কে দিবে আঘাত? কে জাগাবে দেশ? কই সে সত্যপ্রাণ"? কই সে সত্যপ্রাণ"? কই সে সত্যপ্রাণ"? ============================================= লেখক: আব্দুল হালিম মিয়া সাধারন সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফোরাম, টরন্টো, কানাডা রবিবার, ২৯ মার্চ ২০০৯ টরন্টো, কানাডা । । ।

Email: ----------------------------------------------------------------------------------পাদটিকা: এ লেখাটি ১লা বৈশাখ, ১৪১৬ উপলক্ষ্যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফোরাম, টরন্টো কর্তৃক প্রকাশিত সংকলনের জন্য রচিত । উপরের ছবিটি ইত্তেফাক থেকে নেয়া হয়েছে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।