আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিডিআর সদর দপ্তর, সেনানিবাস এবং কেন্দ্রীয় কারাগার : সরিয়ে নাও

"আকাশে নক্ষত্র দেখে নক্ষত্রের মতন না হয়ে পারিনি আমি / নদী তীরে বসে তার ঢেউয়ের কাঁপন, / বেজেছে আমার বুকে বেদনার মত / ঘাসের হরিৎ রসে ছেয়েছে হৃদয়"। _আহমদ ছফা

গতকাল ১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় সভানেত্রী খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি সেনাবাহিনীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। এটা নাকি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড আইনের পরিপন্থী। আর তিনি বা তার সরকার ওখানে বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পুনর্বাসন করবেন। তিনি আরো বলেছেন, বিরোধী দলীয় নেত্রী থাকা অবস্থায় তাকে নাকি ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।

তার বিরুদ্ধ মামলা পর্যন্ত করা হয়েছিল। ফলে এখন তার প্রশ্ন, বর্তমান বিরোধী দলীয় নেত্রী, একজন রাজনীতিবিদ, কি করে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে বসবাস করবেন? সেটা কি আইনের লঙ্ঘন নয়? এ আলোচনা চলার সময় খালেদা জিয়া সংসদে উপস্থিত ছিলেন না। রাতের বিবিসির সংবাদে শুনতে পেলাম, বিএনপির মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার বলেছেন, খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টে থাকা যদি বেআইনি হয় তাহলে সরকার বিচারালয় গেলেই পারেন, এ কথা সংসদে তোলা উদ্দেশ্যমূলক। তিনি আরো বলেছেন, বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের জন্য দেশে আরো অনেক জায়গা আছে। দেশে কি জায়গার অভাব পড়েছে? আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, এ নিয়ে এখন বেশ ভালই বাহাস চলবে।

আইন, ইতিহাস ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গ প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিকভাবে ভুল-শুদ্ধভাবে ওঠে আসবে দুই দলের কথায়। কিন্তু আমরা যারা জনসাধারণ, আমাদের কিছু কথা এখন তোলা দরকার। (এক). বিডিআর হেডকোয়ার্টার ঢাকা শহরে কেন? বিডিআরের কাজ সীমান্তে। সেই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তর ঢাকা শহরের বুকের ওপর চাপিয়ে বসিয়ে রাখার অর্থ কি? মাত্র কদিন আগে যে বিডিআর বিদ্রোহ হয়ে গেল এতে কয়েকজন সেনাঅফিসার মারা গেছে। এ নিয়ে অনেক শোক, প্রায় কারবালার মাতম হয়েছে।

কিন্তু ওই ঘটনায় তিনজন সাধারণ মানুষও মারা গেছে। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারত। সেনাবাহিনী আর বিডিআর জওয়ানরা যদি মুখোমুখী যুদ্ধে লিপ্ত হত, তাহলে মৃত্যুর সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াত বলা কঠিন। পিলখানার ভিতরে একটি স্কুলে সে সময় এসএসসি পরীক্ষা চলছিল। পরিস্থিতর অবনতি ঘটলে ওই ছোট ছেলেমেয়েদর কি ঘটত? চার-পাঁচ দিন ধরে আশেপাশের অধিবাসীদের যে আতঙ্ক আর নিরাপত্তাহনীতায় দিন কাটাতে হয়েছে তা শুধু নিরাপত্তাহীনা-অনিশ্চয়তাতেই সীমাবদ্ধ না-ও তো থাকতে পারত! অদূর ভবিষ্যতে এ ধরনের আর কোনো ঘটনা না ঘটুক এটাই আমরা চাই।

কিন্তু বাংলাদেশ সব সম্ভবের দেশ। ফলে পিলখানার আশেপাশের অধিবাসীসহ ঢাকা শহরের এক বিরাট অংশের মানুষের জীবন. সম্পদ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। এছাড়া ঢাকা শহরের বর্তমান দশা সম্পর্কে কিছু না বলে শুধু এটুকু বলাই যথেষ্ট যে দিন দিন এ শহর আর বাসযোগ্য থাকছে না। এর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। শহরকে একটু হাঁফ ছাড়ার জায়গা দেয়া দরকার।

মূলত এ তিনটি কারণে আমরা বিডিআর হেডকোয়ার্টার বা পিলখানা ঢাকা শহর থেকে সরিয়ে নেয়ার দাবি করতে পারি। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে যেমন রাজনীতিকের বসবাস করা ঠিক নয়. তেমনি সাধারণ নাগরিকদের বুকের ওপর সীমান্ত পাহারাদানকারী অস্ত্রধারীদেরও বসে থাকা আইনগতভাবে না হলেও নৈতিক ও সামগ্রিক প্রয়োজনবোধ কোনোদিক থেকেই ঠিক নয়। পিলখানা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক, দেশে জায়গার অভাব তো নেই। (দুই). সেনানিবাস সম্পর্কেও একই কথা খাটে। ঢাকা শহরের ভেতরে ক্যান্টনমেন্ট থাকার অর্থ কি? পৃথিবরী কোন দেশের রাজধানী শহরের বুকের ওপর ক্যান্টনমেন্ট আছে? সেনাবাহিনী কি রাজধানীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে? না ঢাকা শহরের এমন পর্যাপ্ত জায়গা আছে যে এখানে ক্যান্টনমেন্ট থাকলে নাগরিকদের কোনো অসুবিধা হয় না? এর সাথে আরেকটু বলা দরকার।

মাত্র একবার বিডিআর জওয়ানরা বিদ্রোহ করেছে, ৫৭ জন আর্মি অফিসার মারা গেছে। এর আগে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে কতবার বিদ্রোহ, ক্যু-পাল্টা ক্যু হয়েছে? তাতে কতজন মারা গেছে? দুই জন রাষ্ট্রপতি খুনের দায় কাদের ঘাড়ে? বিচারের নামে কতজনকে খুন করা হয়েছে? যাক, আমার কথা হল, ওনাদের ভেতরে আর বিদ্রোহ-ক্যু ঘটবে না তা কি হলফ করে বলা যায়? আর কোনো রাষ্ট্রপতি বা রাজনীতিবিদ যে বন্দুক-কামানের খোরাকি হবেন না তারই নিশ্চয়তা কি? মাত্র একবার বিডিআর জওয়ানরা বিদ্রোহ করেছে, ৫৭ জন আর্মি অফিসার মারা গেছে। এর আগে সেনাবাহিনী অভ্যন্তরে কতবার বিদ্রোহ, ক্যু-পাল্টা ক্যু হয়েছে? তাতে কতজন মারা গেছে? দুই জন রাষ্ট্রপতি খুনের দায় কাদের ঘাড়ে? বিচারের নামে কতজনকে খুন করা হয়েছে? সাধারণ মানুষই কি ওনাদের কাছ থেকে নিরাপত্তা পাবে? অপরাশেন ক্লিনহার্ট (সম্ভবত ২০০২ সালে) চালানোর সময় শুধু আর্মির বুট আর বেয়নেটের আঘাতে ৫৮ জন মানুষ মারা গিয়েছিল। যাক, আমার কথা হল, ঢাকা শহরের এমন সুযোগ আজ আর নেই যে এখানে পিলখানা বা ক্যান্টনমেন্ট থাকতে পারে। হতবাক হয়ে যাই যখন দেখি নৌবাহিনীর সদর দপ্তরও কোনো নদীর পাড়ে না হয়ে ঢাকা শহরে রাখা হয়।

অনেক আগে শুনেছিলাম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার নাকি ঢাকা শহর থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু ইদানিং আর সে কথাটা শোনা যাচ্ছে না। হাসিনা-খালেদা এবং তাদের অনুসারীরা ক্যান্টনমেন্টে রাজনীতিবিদের থাকা ঠিক না বেঠিক, খালেদার থাকা উচিত না উচিত নয়, এসব নিয়ে বাহাস করতে থাকুন। আমরা যেন তাতে ফেঁসে না যাই। আমাদের দাবি আমাদেরই তোলা উচিত।

ঢাকা শহর থেকে পিলখানা, ক্যান্টনমেন্ট, কারাগার সরাও।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.