আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুখ দুখের অনুভূতি :: হৃদরোগ ইনস্টিটিউট

হরবর করে কথা বলি, মনে যা আসে, পরে ভাবি কেন বললাম . . .

১ প্রত্যুৎপন্নমতিত্বে'র Click This Link এই পোষ্টটা পড়ে মনে পড়ল বেশ ক'বছর আগের হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের একটা ঘটনার। আমার হসপিটাল ভীতি আছে অতিমাত্রায়, সেখানে যাওয়া যতটা পারি এড়িয়ে যাই আর থাকাতো দূরের কথা। কিন্তু সেবার যখন রাতদুপুরে হার্টএ্যাটাকের জন্য মাকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউট নেয়া হলো, দিনের বেশির ভাগ সময় কাটতে লাগল ওখানে। প্রথমরাত আর দিন কিভাবে গেলো বুঝেই উঠিনি আতংকে। পরে এন্জিওগ্রাম করানো হবে বলে অবজার্ভেশনে রাখা হলো সি.সি.ইউ'তে।

কি কি সব ইন্জেকশন চলছে একের পর এক, নানান ঔষধের ঘোরে বেশির ভাগ সময় মা থাকেন আধোঘুমের ঘোরে। এসময় পালা করে একজন দিনে অন্যজন্য রাতে এভাবে থাকতে লাগলাম আমরা দু'বোন, যদিও রাতে সি.সি.ইউ'তে এ্যটেন্ডেন্ট এ্যালাও না। সি. সি. ইউ রোগী আটজনের বেড, টানা বারান্দা, সাথের ওয়াশরুমে - বাথরুম, চার টয়লেট, ওযুর স্হান, সরকারী হসপিটাল হিসেবে ভালোই ব্যবস্হা। মা'র পাশে বসে থেকে আস্তে আস্তে খেয়াল করতে লাগলাম রোগী আর তাদের কাছে আসা লোকজন আর আশপাশের কর্মকান্ড। নানা জনের নানান সুখ-দু:খের আলাপন শুনি।

ভিড়ভাট্টা লেগেই থাকে সারাক্ষন. যদিও এটা সি.সি.ইউ! তবে দুপুরবেলাটা নিস্তব্ধ থাকে তুলানামূলক ভাবে। রোগীরা ঘুমায়, আত্নীয়স্বজনরা থাকে না তেমন। ২ এমনি একদুপুরবেলার ঘটনা, নার্সদের আনাগোনা নেই বললেই চলে, ওয়ার্ডে রোগীর এ্যটেন্ডেন্ট বলতে আমি আর অন্যএকজন। মা'র কাছে বসে গল্পের বই পড়ছি। হুট করে একটা মেশিন ঠেলতে ঠেলতে ঢুকলো একলোক।

ওয়ার্ডের সামনের দিকের রোগীর কাছে গিয়ে কি যেন করছে, মেশিনের তার টার টানাটানি। তার কাজ সে করুক, মাথা নামিয়ে আমার বইয়ে মনোযোগ দেই। কিছু পরে কানে এলো, "সরেন এখান থেকে ইসিজি করা হবে"। তাকাতেই দেখি ঘুমের ঘোরে থাকা দুই বয়স্ক মহিলার কাছ থেকে ঘুরে এসে আমাদের তিনবেড পরের ২৩/২৪ বছরের মেয়েটার শ্বাশুড়িকে বলছে লোকটা। মেয়েটার হার্টের ভাল্ব লাগানো হয়েছিলো বেশ আগে, সেটা এখন কাজ করছে না, আবার অপরেশন করা হবে।

ছেলের বৌয়ের জন্য দিনমান একঠায় অনেক কষ্ট করছিলেন ওই শ্বাশুড়ি। অপগন্ড আমি জানতামও না ইসিজি মেশিন কেমন দেখতে কিবা কেমন করে ইসিজি করা হয়, তাই আগ্রহ নিয়ে দেখতে লাগলাম । কিছু বুঝে উঠার আগেই এক জঘন্য ব্যাপার দেখলাম। মেয়েটার গায়ে ইসিজি মেশিনের যন্ত্রপাতির চেয়ে ওই লোকটার হাত চলতে লাগল কি নিপুনতায়! কিংকর্তব্যবিমুঢ় আমি কি করছি বুঝে উঠার আগেই দৌড়ে ওয়ার্ডের বাইরে বেরিয়ে চিৎকার দিতে লাগলাম - "সিস্টার, সিস্টার এটা কি হচ্ছে? হচ্ছেটা কি এখানে?" আমার মাথায় তখন ছিলো. এই লোক আর ক'টা বেড ঘুরেই আসবে আমার মা'র কাছে। এরপর ঘুরে লোকটার দিকে তাকিয়ে চিৎকার শুরু করলাম আবার।

এবার ২/৪ জন নার্সের দেখা মিলল, তাদের জিজ্ঞেস করতেই তারা আমতা আমতা করে ওই লোককে বলতে লাগল "কি মিয়া, তোমারে তো শুধু মেশিনই আনতে বলছিলাম, কাজ শুরু করতে কে বলছে? বের হও জলদি। " এরপর আমার কাছে এসে বলে, "কই থেকে যে এই সব উটকো বদলোক আসে, বাদ দেন, ঝামেলা করলেই ঝামেলা আরো বাড়বে"। যেন প্রচ্ছন্ন শাসানি। ভাই ভাবী আসার পর বিকেলেই শুরু করলাম আম্মাকে কেবিনে নেবার তোড়জোর, তাও কতো তদবিরের একদিন পর পেয়েছিলাম তা। ৩ এই ছয়দিন সি.সি.ইউ তে থাকাকালীন ওই জানোয়ারের জঘন্য আচরন যেমন দেখেছি তেমনি অভিজ্ঞতা হয়েছে মায়ের সেবায় রত আন্তরিকতা দেখার।

আমাদের সামনাসামনি বেডে থাকত ওই মা-ছেলে। ঢাকায় আত্নীয়স্বজন নেই, বাবা আসতে পারেন নি, কোন বোন নেই, তাই ফাষ্ট ইয়ারে পড়া ছেলেটিই মায়ের দেখভাল করছে। ঢাকায় ওর থাকার জায়গা যেমন নাই তেমনি নাই হোটেল ভাড়া করার সঙ্গতিও। রাতে মহিলা ওয়ার্ডে ছেলেরা এ্যালাউড না, তবুও জনে জনের কাছে বলে তাদের আপত্তি নাই এটা নার্সদের জানিয়ে রাতে ওর মায়ের বেডের পাশের ফুট দু'য়েক জায়গায় ঘুমানোর ব্যবস্হা করে নিয়েছে। যদিও ডাক্তার আসলে সে লাপাত্তা হয়ে থাকে।

এমনিতেই অস্বস্হিকর পরিবেশ তার উপর হসপিটাল, আধো অন্ধকারে মায়ের পাশে শুয়ে জেগে অপেক্ষায় থাকতাম কখন ভোর হবে আপু এলে বাড়ি যাবো। তো সেই ছেলে দেখতাম ভোরে আযানের আগে উঠে বাথরুম, ওযুর জায়গা ধুয়ে (সারাদিন ওয়ার্ডের লোকজন ছাড়াও কতজন যে আসতো, এমন কি মহিলা টয়লেট জেনেও ছেলেরাও ঢুকে পড়ত!!!), মায়ের কাপড় কেচেঁ বারান্দায় মেলে সব বেডের বালতি ভরে এনে রাখত(নির্দিষ্ট সময় ছাড়া পানি থাকত না বাথরুমে, যদিও ওটা সি.সি.ইউ!!)। সারাদিনের মায়ের ঔষধ আনা, নানান কাজের পরও মা-ছেলের টুকটুক কথা চলতো হাসি মুখে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।