আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবারো পিকনিক ....

www.cameraman-blog.com/

আবারো পিকনিকে যাব সা.ইনের ব্লগারদের সাথে, গত পিকনিকের পর থেকে আশায় ছিলাম। এ বছর প্রথম কথাটা তুললো ব্লগ বন্ধু নেমেসিস। আর আমি শুরু করলাম ফোনাফুনি। গতবারের উদ্যোক্তা ছিল সারিয়া। আয়োজক হিসেবে যথেষ্ট গোছানো স্বভাবের, আর তাই শুরুতেই তাকে ফোন করলাম।

সে শুধূ বললো ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি পর্যন্ত সে ব্যস্ত থাকবে, তাই ডেট টা ফোব্রুয়ারীর শেষের দিকে বা মার্চের শুরুতে করলে ভাল হয়। তখন তো আর বুঝি নাই যে নিজের বিবাহ নিয়াই সে ব্যস্ত। দিন যায়, সারিয়া আর সময় বের করতে পারে না। শেষে জানলাম তার আকদ হয়েছে। এরমধ্যে একদিন দেখি অরণ্য আনাম নামে এক ছেলে পিকনিক নিয়ে একটা পোষ্ট দিয়েছে।

তার প্ল্যান দেখে প্রথমে খূব হাসলাম মনিটরের সামনে বসে। কালপুরুষ'দাকে ফোন দিলাম। দাদা জানালো তিনি সেটা দেখেছেন। অরণ্যের প্ল্যানটা ছিল এরকমের যে তার ডাক শুনে গোটা পঞ্চাশেক ব্লগার পকেটে টাকা পয়সা নিয়ে নন্দনের গেটে গিয়ে হাজির হবে আর সে বীরদর্পে সবাইকে নিয়ে পার্কে প্রবেশ করবে। আমি একটা কমেন্ট করলাম।

ফোনে কথা হলো সারিয়াকেও লিংক পাঠালাম। সেও কমেন্ট করলো। কালপুরুষ'দা, সারিয়া আর আমি মিলে ঠিক করলাম এবারের আয়োজক অরণ্যই হোক, আমরা সবাই তাকে পিছনে থেকে সাহায্য করবো। একটা ছোট মিটিং করার কথা ছিল সারিয়া বা কালপুরুষ'দার বাসায়, সেটা আর হয়ে উঠেনি বিডিআর এ হত্যাযজ্ঞের ঘটনায়। এর বদলে কথা হলো ছবির হাটে আর ব্লগের পাতায়।

আর ফোনাফুনি তো চলছিলোই। ভেন্যু নিয়ে কিছুটা সমস্যা ছিলো, কেউ পছন্দ করছিলো, কেউবা করছিলো না। আরেকটা সমস্যা হয়েছিল কনফার্মেশন আর চাঁদা কালেকশন নিয়ে। আমরা ঠিক গোছানো ভাবে এবারের আয়োজনটা করতে পারি নাই, বেশ কিছু হচপচ ছিল। এবার কোন স্পন্সরও পাওয়া যায় নাই বলা চলে।

শেষ পর্যন্ত রুবেল বিভিন্ন গিফট স্পন্সর করে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাজ্জাক কেমিক্যাল আর ভাই ভাই ফুড প্রোডাক্টস এর নামে। আর ক্যাশ যেটা বেশী খরচ হয়েছিল সেটার দায়িত্ব নেন কালপুরুষ'দা। তিনি অবশ্য খাবার আর বাসের দায়িত্বও নিয়েছিলেন। পিকনিকের আগের দিন রুবেল আর অরণ্য মিলে সব ঘিফট আইটেম ঠিকঠাক করেছিলো। আমি আর কালপুরুষ'দা কাওরানবাজার থেকে পানি, প্লেট, গ্লাস, জগ ইত্যাদি কিনে ফেলি আগের দিন সন্ধ্যায়।

সকালের নাশতাও অর্ডার দেয়া হয় ষ্টার কাবাবে সেসময়। ঠিক হয় আমি দাদার বাসায় সকালে হাজির হবো আর দু'জনে মিলে ষ্টার থেকে নাশতা নিয়ে একবারে খামার বাড়ীর সামনে। পরদিন সকাল ৭:২০ এ কালপুরুষ'দার বাসায় গিয়ে শুনি দাদা ভাবীকে নিয়ে আগেই বের হয়ে গেছেন। কি আর করা। ছুটলাম খামার বাড়ীর দিকে।

পৌছে দেখি বেশীর ভাগ ব্লগারই হাজির। কয়েকজন তখনও আসেনি। আমি অরণ্যকে নিয়ে য়খন লিষ্ট চেক করছি আশে-পাশে ছোট একটা ভীড় জমে গেল। কারণ আমি আর আমার ম্যগনিফাইং গ্লাস। চোখে দেখি না বলে এইটার সাহায্য নিতে হয় মাঝে মধ্যে।

কয়েকজন ব্লগার ছবিও তুলে ফেললো। এরমধ্যে আরিল-জানা আর পিচকি কিন্নরী এসে হাজির। অরণ্য বইমেলাতেই জানাকে দাওয়াত দিয়েছিলো পিকনিকের। আমি আর কালপুরুষ'দাও পরে দাওয়াত দেই ব্লগার সাথে একটা দিন কাটানোর। তারা দাওয়াতটা রক্ষা করায় পিকনিকের সবাই খূব খূশী হয়েছিলো।

সবশেষে হাজির হলো সারিয়া-আশরাফ জুটি। নবদম্পতিদের তো ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরী হয়ই। কি আর করা। শামিমকে গুনে গুনে ৩৫ পিস চকলেট দেয়া হলো বাসে ব্লগারদের দেয়ার জন্য। নিজের ভাগে মাত্র একটা পড়ে দেখে শুরু হলো তার উশখূশ করা।

থাকতে না পেরে দাদার চোখ এড়িয়ে আমাকে সাক্ষী মেনে মূল প্যাকেট থেকে আরো কয় পিস হাপিস করলো, অথচ দেয়ার সময় আমাকে দিল মাত্র ১ পিস। মনের দূঃখ মনে চেপে রেখে চিন্তা করা শুরু করলাম পোলাটা এই চিকনা শরীরে এতো খাবার ধারণ করে কেমনে। অবশেষে ৮:৩০ এর দিকে আমরা রওনা হলাম। আমরা সবাই একটা বাসে, কালপুরুষ'দা একটা পিকআপে আর জানা আরিল তাদের মাইক্রোতে। শনির আখড়া থেকে উঠলো পথিক।

যাত্রাবাড়ী থেকেই জ্যাম শুরু হয়েছিলো। কথা ছিলো কাঁচপুরের আশে-পাশে গিয়েই নাশতা দেয়া হবে। জ্যাম পার করে সেখানে পৌছাতেই লেগে গেল ১০টা। শেষে নাশতা দেয়া হলো দু'পিস পরোটা আর ভাজি। পূর্বাচলে রাজউকের অফিসে গিয়ে দেখা গেলো আমেপাশের চরম রুক্ষ পরিবেশ।

কোন গাছপালা নাই, বিশাল প্রান্তরের মাঝখানে কেবল বিল্ডিংটা দাড়িয়ে। লোকজন পরামর্শ দিলো ইকো পার্কে যেতে, যেটা অগ্রপথিক পল্লী সমিতি পরিচালনা করে। আরো ৩ কিমি পথ পেরিয়ে আমরা হাজির হলাম সেখানে। এরপর যথারীতি পরিচয় পর্ব আর খেলাধূলা। এরমাঝে একবার রুবেলের কসমস ব্র্যান্ডের জেলী সহযোগে টোষ্ট খাওয়া হলো।

আর এসব পরিচালনা করছিলো "মহা পৈতাল" অরণ্য। নামটা আমার দেয়া না, ওর বন্ধুদের দেয়া। আশা করা যায় শব্দটা অচিরেই নিক হিসেবে সা. ইনে আসবে। এরপর জানা-আরিলের সাথে ব্লগ বিষয়ে মতবিনিময়। সবশেষে আবারও খাবারের জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা।

খাবার এলো ৩টার দিকে। লাইন ধরে খাবার নিয়ে গোগ্রাসে খাওয়া শুরু হলো। আইটেম ছিল কাচ্চি বিরিয়ানি আর রোষ্ট। সাথে সালাদ আর বোরহানি। বোরহানিটা মনে হয় কম হয়েছিল।

যাই হোক। রুবেল আবার আমাদের আচার দিয়ে পরিতুপ্ত করেছিল। সবশেষে ছিল জানার সৌজন্যে কোল্ড ড্রিংক্স। সবশেষে লটারী আর পুরস্কার বিতরণ। সারিয়া আর তার পরিবারই কি এক আশ্চর্য যাদুমন্ত্রে বেশীরভাগ পুরস্কার জিতে নিয়েছিল।

আমরা ৬টার দিকে রওনা হলাম ঢাকার দিকে। বাসে উঠার আগে জানা বিদায় নেয়ার সময় হাতে ধরিয়ে দিল কমলার প্যাকেট। সবাই কমলা খেতে খেতে রওনা দিলাম ফিরতি পথে। দেখা হবে আবারও পরবর্তী পিকনিকে। শুভ ব্লগিং।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।