আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিডিআর ট্র্যাজেডিতে প্রত্যক্ষ জড়িত জেএমবি



বলপ্রয়োগ না করার সিদ্ধান্ত সঠিক, কোনো হত্যাকাণ্ডে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত নয়, হাইটেক তদন্ত চলছে, বিদ্রোহীদের হাতে নিহত জওয়ানদের পুরস্কৃত করা হবে, একান্ত সাক্ষাৎকারে ফারুক খান পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ ও নৃশংসভাবে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার সঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’য়াতুল মুজাহীদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। গ্রেফতারকৃত জওয়ানদের জিজ্ঞাসাবাদে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। আমাদের সময়’র সঙ্গে একান্ত আলাপকালে একথা জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী ও পিলখানার ঘটনায় তদন্তে গঠিত কমিটিগুলোর সমন্বয়কারী কর্নেল অব. ফারুক খান। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রীর দফতরে আলাপকালে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তে দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়ে ফারুক খান বলেন, তদন্ত ভালভাবে এগুচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে ভাল তথ্য বেরিয়ে আসছে।

কে কিভাবে জড়িত ছিলো স্বীকারোক্তি দিয়েছে। পিলখানার ঘটনা কিংবা পলাতক বিডিআর জওয়ানদের সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকলে নিকটবর্তী থানায় কিংবা সেনা ক্যাম্পে জানাতে তিনি সকল মহলকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, অনেক ক্লু পাওয়া গেছে। তবে তদন্তে বিঘœ ঘটবে এই আশঙ্কায় এই মুহূর্তে সবকিছু প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এরফলে তারা অধিক সতর্ক হয়ে যেতে পারে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যতদূর জানতে পেরেছি, বেশ কয়েকজন জওয়ান বিভিন্ন সময়ে জেএমবির সঙ্গে যুক্ত ছিলো। তাদের সরাসরি কানেকশন পাওয়া গেছে।

নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে যারা প্রকৃত দোষী, আমরা তাদের বের করতে চাই। যাতে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি ভিকটিম না হয়। দ্রুততম সময়ে তদন্ত শেষ করার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আসলে তদন্তে দেরি হচ্ছে না। এতবড় ঘটনা এত কম সময়ে তদন্ত শেষ হয় না। উপযুক্ত সময় দিতে হবে।

এখনো পিলখানা জুড়ে আলামত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অপরাধীদের বিচার সম্পর্কে ফারুক খান বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য দ্রুততম সময়ে সঠিক বিচার করা। প্রচলিত আইনেই কোর্ট মার্শাল হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সংবিধানের বাইরে কিছু করবে না সরকার। হত্যাকাণ্ড ও বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত জওয়ানদের পালিয়ে যাওয়া এবং পিলখানার চারদিকে নিরাপদ দূরত্বে পুলিশ র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর র‌্যাবেল কর্ডন না করা প্রসঙ্গে তদন্ত সমন্বয়কারী ফারুক খান বলেন, পিলখানা কোনোভাবেই র‌্যাবেল কর্ডন করে সাকসেসফুল হওয়া যেতো না। চারপাশে এতো ঘনবসতি।

বেসামরিক স্থাপনা। একেবারে বিডিআর সদর দফতরের দেয়াল ঘেষেই চার-পাঁচতলা ভবন রয়েছে। যার অনেকগুলো আবার দেয়ালের উপরে চলে এসেছে। রাতে বিদ্যুৎ ছিলো না। ফলে অনেকটা সহজেই তারা পালানোর রাস্তা খুঁজে পায়।

বঙ্গবন্ধুসহ বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ফারুক খান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে সেনাবাহিনীর ভেতর ও বাইরের কিছু ষড়যন্ত্রকারী ও বিপথগামী সদস্য। দেশের কোনো রাষ্ট্রপতি কিংবা কোনো সেক্টর কমান্ডার হত্যাকাণ্ডে বা কোনো ক্যু পাল্টা ক্যুতে কোনো বাহিনীর পুরোটাই সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল না। বিডিআরের নাম পরিবর্তন আবেগতাড়িত কি না এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সবাই নাম পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এধরনের ঘটনার পর নাম পরিবর্তনের বহু প্রমাণ রয়েছে।

সরকার প্রাথমিকভাবে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তদন্ত শেষ হলে সরকার সার্বিক বিষয় বুঝবে। নতুন নামের চিন্তা-ভাবনা চলছে। এই ঘটনার পর যে বদনাম হয়েছে তাতে কেউ স্বাচ্ছন্দে এই নামে কাজ করতে পারবে না। আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পারবে না।

তিনি বলেন, বিডিআরের সেনা কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে কাজে যোগ দিয়েছেন। কেউ ব্যাটেলিয়নের হেডকোয়ার্টারে কিংবা কেউ তাদের সুবিধাজনক নিরাপদ স্থানে বসে অফিস করছেন। সারাদেশে বর্ডার এলাকায় বিডিআর যথারিতি কাজ করছে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি প্রায় ৬০ ভাগ স্বাভাবিক হয়ে গেছে। পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগবে।

তবে হেডকোয়ার্টারের অফিস কার্যক্রম শুরু হতে আরো কিছুটা সময় লাগবে বলে তিনি জানান। বিদ্রোহ দমনে দ্রুততম সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সঠিক সিদ্ধান্ত দেশে বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে জানিয়ে ফারুক খান বলেন, আমরা হাইটেক তদন্ত করছি। বিদেশিদের সাহায্যে স্ক্রিনিং এবং আলামত পরিক্ষা-নীরিক্ষা করা হচ্ছে। তদন্তে আন্তর্জাতিক কোনো মহলের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার কোনো কিছু গোপন করবে না। তদন্ত শেষ হলে সার্বিক অবস্থা জাতির সামনে তুলে ধরা হবে।

পিলখানায় থাকা বিডিআর জওয়ানদের সম্পর্কে বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, তারা ভাল আছে। আত্মীয় স্বজনরা দেখা ও ফোনে কথা বলতে পারছে। আমরা শুধু তাদের ব্যাপারে দু’টি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তা হচ্ছে, বাইরে থেকে স্বজনদের দেয়া কোনো খাবার তাদের দেয়া হবে না এবং ১৫ দিন অন্তর স্বজনরা দেখা করতে পারবে। বিদ্রোহের প্রথম দিনে তাৎক্ষণিক সেনা অভিযান সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বল প্রয়োগ করলে শুধু বিডিআর জওয়ান নয়, ৫০ থেকে ১০০ সেনা বাহিনীর সদস্যও মারা যেতে পারতো। যে ৩২ জন কর্মকর্তাকে উদ্ধার করা হয়েছে তাদেরকে জীবিত উদ্ধার করা হয়তো সম্ভব হতো না। তাছাড়া কর্মকর্তাদের স্ত্রী সন্তানদের বিদ্রোহীরা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতো। চারপাশে ঘনবসতির কারণে ১০/১৫ হাজার সিভিলিয়ান মারা যেতো। হামলা শুরু হলেই সারা দেশের বিডিআর জওয়ানরা সেক্টর ব্যাটালিয়ন থেকে বাইরে বেরিয়ে গোলাগুলি শুরু করতো।

জওয়ানরা বেপরোয়া হয়ে মর্টার সেল কিংবা রকেট লঞ্চার ছুড়লে সারা ঢাকা শহরে হতাহত হতো অসংখ্য লোকজন। কোনো এক পর্যায়ে তা সিভিল ওয়্যারের দিকে মোড় নিত। পিলখানার ঘটনায় বিরোধী দলের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। স্থায়ী কমিটির গুটি কয়েক লোক কথা বলে একটা বিবৃতি দিয়েছে। বিএনপি কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল নয় দাবি করে তিনি বলেন, আন্তরিক হলে ওয়ার্কিং কমিটির সভা ডেকে কিংবা সারাদেশের সকল জেলার সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের ডেকে নির্দেশনা দিতে পারতো।

জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের মোটিভ স্পষ্ট। প্রথমেই তারা বলেছে, এ ঘটনায় পাশ্ববর্তী দেশ জড়িত। একই কথা তারা বলেছিলো ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরে। তদন্তের সমন্বয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই ঘটনা তদন্তে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তদন্ত সুষ্ঠুভাবে করার জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।

বিডিআরের নতুন ডিজি ইতোমধ্যে ১৫টি সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। প্রধানমন্ত্রী এসব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। সবকিছু পর্যায়ক্রমে স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আওয়ামী লীগের একজন ওয়ার্ড কমিশনার গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে দলমত কিছু নেই। তদন্তে যে দোষী প্রমাণ হবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিহত বিডিআর জওয়ানদের সম্পর্কে তিনি বলেন, জীবিত উদ্ধার হওয়া কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য জানা গেছে। অনেক জওয়ান বিদ্রোহীদের বাধা দিতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছে। তদন্ত শেষে সরকার তাদেরকেও পুরস্কৃত করবে। আমাদের সিনিয়র রিপোর্টার শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, গতকাল সকালে রাজধানীর শেরাটন হোটেলে আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি)’র বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফারুক খান বিডিআর বিদ্রোহে জঙ্গি সম্পৃক্তার কথা জানিয়ে বলেন, বিডিআর একটি বড় অর্গানাইজেশন। এ বিদ্রোহের সঙ্গে সকল বিডিআর জড়িত নয়।

বাছাই করে বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত বিডিআর জওয়ানদের আলাদা করা হয়েছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.