আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অমর একুশে

manikmonzur@gmail.com

একুশে তুমি এলেই এক আকাশ আঁধার সরিয়ে অজস্র পাখিদের কলকাকলিতে অজুত শিউলি ফোটা নতুন সূর্য উঠা স্বপ্নরাঙা মনের মুকুরে আঁকা সোনালি প্রভাত হয় অথচ সজীব কোমল দূর্বাগুলো ঘন কুয়াশার আবিরে যেনো বেদনা-বিদূর চিত্তে অশ্রুসিক্ত হয়। এতো বেদনা, এতো রিক্ততা এতো শূন্যতা, এতো তিক্ততা এতো হাহাকার এতো অশ্রু বিসর্জন কেন? এ প্রশ্ন আমাকে করো না যদি উত্তর পেতে চাও তবে ফিরে যাও ফিরে যাও সেই চিরদিনের চেনা শিল্পীর বিমূর্ত তুলিতে আঁকা সবুজ শস্য শ্যামলীমায় ঘেরা শ্যাম বনানী সরসতা শ্যামকুন্তলা ছায়া ঢাকা মেঘের আঁচলে আঁকা টিপ টিপ বৃষ্টির মমতায় মাখা পায়রা ডাকা দিঘির ঐ নীল নীল জলে শাপলা শালুক আর হলুদ পদ্মের মাঝে হংস-মিথুনের নিত্যনতুন ক্রীড়া উত্তাল উন্মাতাল মাতামুহুরিনদীর বাঁকে বাঁকে সুমধুর সুরেলা ও দরাজ গলায় মনমাঝির বৈঠা নাড়া বটের ছায়ায় রাখালবালকের বিনম্রবীণা উদার গৈরিক প্রান্তরে বৈরাগীবাউলের দোতারা মৃত্তিকার মোলায়েম ধূলিকাদায় কৃষাণীর অপরাজেয় লাঙল জোয়াল মই। আর কামনামদির জোছনার জোয়ারে জোয়ারে ধানফুলের বিচিত্র মণিহার পরিহিতা আলতারাঙা লাজুক পায়ে রূপার নূপুর পরে কোনো রূপসী লক্ষ্মীবধু যখন সহস্র গ›ধরাজ পূজা দিয়ে প্রিয়তম স্বামীর অধরে মধুচুম্বন এঁকে দিতো ... ফিরে যাও সেই মধুসুদনের দেশ দুখুমিয়ার পূণ্যভূমি তোমার আমার মাতৃভূমি রবিঠাকুরের সোনার বাঙলায়। যদি প্রশ্নের উত্তর না মেলে তবে বৈশাখীমেলা থেকে আনা দিনপঞ্জির দিকে একটু নজর দাও একটু হাত বাড়িয়ে পৃষ্ঠা উল্টালেই দেখতে পাবে বাহান্নের রক্তঝরা অগ্নিঝরা টিয়ারসেল-লাঠি-গুলি ও ১৪৪ ধারা ভক্সেগর সেই স্মরণীয় দিনটি ৮ই ফাগুনের সেই বরণীয় দিনটি যখন তোমার আমার মুখের ভাষা খোকা-খুকির চলার ভাষা মায়ের মুখের মধুর ভাষা বাবার বুকে শান্তির আশা বোনের মুখের বেগুনিভাষা ভাইয়ের মুখের নীলভাষা অবুঝশিশুর সবুজভাষা আ-মরি বাঙলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে পিচঢালা কালোরাজপথ বুকের তরতাজারক্তে লালে লাল করেছে অজস্র সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বার। তখন সহস্র কৃষ্ণচূড়া আর লালপলাশগুলো ঝরে পড়ে বীর শহিদের পবিত্র দেহের উপর আর সেই লাল লাল ফুলগুলো নিমিষে একাকার হয়ে রাজপথ থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে সবুজে সবুজে ঢাকা মাটিতে মিশে লালসবুজের পালায় পালায় মেতে উঠে। তখন আমার এ মাটি মা তথা শত শহিদের দুঃখিনি মা বুকফাটা আর্তনাদে সকালের শিশিরের ন্যায় অশ্র“ বিসর্জন করে যে অশ্র“তে শবদেহগুলো ধুয়ে মুছে এই একটা কফিনে পরিণত হয় আর সেই কফিনগুলো ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হয় তিন অরের একটি নাম মিনার শহিদ মিনার। যে মিনারের পাদদেশে দাড়িয়ে গভীর শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্বজন হারানোর ব্যথা নিয়ে ভাই হারানোর ব্যথা নিয়ে সন্তান হারানোর ব্যথা নিয়ে সহযোদ্ধা হারানোর ব্যথা নিয়ে একটি গান করি, “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ... ... আমি ভুলিতে পারে?” এখনো ভোর হয় শিশির ছড়ায় ঘাসে ঘাসে আর প্রভাত ফেরিতে ফুলে ফুলে সাজিয়ে দিই মিনারের পাদদেশ। তাইতো একুশ তুমি এলেই ঘন কুয়াশার আবিরে যেন বেদনাবিদূর চিত্তে আমার মা-মণি তাঁর হারানো বুকের ধনের জন্য অশ্রু বিসর্জন করে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।