আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৬৮ আর্মি অফিসারের পরিবার, বি ডি আরের পরিবার বনাম ১৫ কোটি বাংগালীর পরিবার

পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি

এই পোস্টটিকে স্টিকি করার অনুরোধ করছি নিচে আমার প্রতিক্রিয়া মন্তব্য , জরুরী অংশ গুলো আমাদের সবারই জানা উচিত বলে পোস্ট আকারে তুলে দিলাম । কয়েকটা পয়েন্ট তুলে ধরি। ১। প্রথম পয়েন্ট ঃ এই পোস্টটাকে অবশ্যই স্টিকি করা দরকার । কারন, ক) আর্মির ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার , মানুষজনের আবেগ ও অবস্থা বোঝা খ) সৎ অফিসার যারা নিজেরা সজ্ঞানে অন্যায় করেননি তারাও ঘটনার শিকার হয়েছেন, আমরা কিছু রত্ন অফিসারও হারালাম এইটা জানা গ) আর্মির সাধারন সৈনিকেরাও আসলে শেষ পর্যন্ত কি ভাবে দুর্নীতিবাজ ও বিদেশীদের টাকা খেয়ে ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদ , প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপরের দিকের অফিসার, সিভিলিয়ান বুদ্ধিজীবী ও বিশেষ করে " সরকারী আমলা"দের হাতে ব্যবহৃত হয় সেইটা একটু চক্ষু খুলে দেখা উল্লেখ্য , টিভিতে দেওয়া এক আর্মি জওয়ানের বক্তব্য মনে করিয়ে দিতে চাই যিনি বি ডি আরের বিরুদ্ধে এ্যাকশন সম্পর্কে বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন " আমি কাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো? আমরা নিজেরাও তো উপরের অফিসারদের অত্যাচারের শিকার" ।

২। দ্বিতীয় পয়েন্ট ঃ আপনার ঔপনিবেশিক মনোভাবের পরিবর্তন দরকার আর্মির কাজ শুধু লেফট রাইট করা , গুলি ছোড়া আর যুদ্ধ করা -- এই তথাকথিত আভিজাত্যবোধ কি ভাবে আর্মি এবং তাদের পরিবারকে ঘিরে রেখেছে সেইটার প্রমান এই পোস্ট । এই মনোভাবের জনক প্রথমে রাজতন্ত্রের রক্ষাকারী অত্যাচারী "যোদ্ধা" দলের যারা প্রজার রক্ত শোষন করা সম্পদ রাজাকে সাপ্লাই দিতো , তার একটা বড় অংশ বিলাসী জীবনে ভোগ করতো আর সাধারন প্রজাদের ইতর শ্রেনী ভাবতো । তারা ছিলো বেতনভূক "এলিট", প্রজাদের প্রভু। এই একই মনোভাব দেখিয়েছে বৃটিশ কোম্পানি ইস্ট ইন্ডিয়ার যোদ্ধা কর্মকর্তারা আর তারপর পশ্চিম পাকিস্তানী উর্ধ্বতন অফিসারেরা ।

আর এখন দেখাচ্ছে বাংলাদেশী অফিসারেরা । রাজার যোদ্ধাদলসহ অন্যান্যরা না হয় জন্মসূত্রেই, সিস্টেমেটিকালি (বাংলাদেশের) গণমানুষের বিরুদ্ধে প্রভুত্ব করা দল । কিন্তু আপনারা এই একই আচরন , একই মানসিকতা ধারন করেন কেন? জমিদার, বৃটিশ , পাকিস্তানীরা না হয় আমাদের চাকরই মনে করতো । তাই আমাদের উপকার করতে তাদের আঁতে লাগে , জাত যায় বলে গণ্য হত । কিন্তু আপনার জাত যাবে কেন? আর্মি ( বিদেশী প্রভুর হোক আর দেশী ) যাদের টাকা লুট করে , শোষন করে আর ৭১ এর পর বেতন ভাতা হিসেবে নিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রিভিলিজড লাইফ লিড করে এসেছে , সেই গণমানুষের জন্য কাজ করতে বললে নিজেকে চাকর মনে হয় ? আরে বাহ! আর্মি কি নিজেদের কি উর্দিপরা নবাব মনে করে? নবাবী সুবিধা আপনাদের দেওয়া হয় ঠিকই , সেইটা হয়ত নিচের লেভেলের জওয়ানেরা ভোগ করতে পারে না ততটা, কারন তারাও তো আবার বড় অফিসারদের চাকর ( এই সিস্টেমটাও বৃটিশের অবদান , কারন তখন নিচের জোয়ানরা হত এই দেশী, আর বস লোক জন বৃটিশ ) তাই বলে , এই নবাবী মন মানসিকতা দেখে কেন চোখের জল ফেলতে হবে ভাই বলেন তো ? যুদ্ধের সময়ে যুদ্ধ করা যদি সেনাবাহিনীর কাজ হয়ে থাকে, তাহলে , শান্তির সময়ে দেশ গঠনে ও দেশের যে কোন কাজে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব গ্রহনে প্রস্তুত থাকা উচিত - সেইটা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনই হোক আর দোকানদারিই হোক।

" মুদিগিরি করতে হলে " সেনাবাহিনীর মোরাল নষ্ট হওয়া উচিত না , বরং ভাবা উচিত " আমরা সবই পারি। দোকানদারিও করতে পারি , যুদ্ধও করতে পারি। " " হাল চাষ,গবাদি পালন, সবজি চাষ, ত্রাণ বিতরণ , দেশকে সঙ্ঘাত আর হাত থেকে রক্ষা করা, দোকানদারি করা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন, পানি বিতরণ, উদ্ধার অভিযান, বন্যা, খরা, সিডর আরও কত কি করতে হবে…" ---- এইটা নিয়া আপনার আক্ষেপ দেখে আর্মিরে করুনা করবো না ঘৃণা , বুঝছি না । কেন রে ভাই ? এইগুলা করা কি অস্ত্র চালানোর চেয়ে কম সম্মানজনক ? এই গুলা কি এলিট ফোর্সের কাজ না , ইতর লোকের দায় ও দায়িত্ব ? ব্লাডি সিভিলিয়ান্স যা করে , সেই গুলা আর্মি হইয়া কেমনে করবেন , তাই না? নিজের লেখার এই অংশটা পড়েন । ঠিক এই নাক উঁচু ভাবটার জন্যই আজকে আর্মি কোন সহানুভূতি পাচ্ছে না ।

অথচ , এই তীব্র অসন্তোষ , অবিশ্বাস, ঘৃণা অনেকটাই ঘটতো না যদি না ডিফেন্সের সব কিছু লোক চক্ষুর অন্তরালে ঘটতো । কে কত টাকা পায় , কে খায় কে খায় না , এইসব আমরা কি করে জানবো? আমরা সাধারন চোখে যা দেখি, স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে আর্মি খাবার, পোশাক, বাড়ি, গাড়ি, নিজস্ব স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল , নিরাপত্তা , সম্মান সবই পাচ্ছে ; যা পেতে আমরা রক্ত পানি করে ফেলছি আর আর্মিকে দিতে ট্যাক্স দিচ্ছি । ভালো কাজ যা হয় তা মনে থাকে না যখন আর্মি আমাদের সাথে প্রভুর আচরন করে। আমাদের নেতাদের হত্যা করে। আমাদের গনতন্ত্রকে বন্দী করে।

দুর্নীতিবাজ নেতাদের বন্দী করে নিজেরাই কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করে। স্বচ্ছতা নাই, জবাব্দিহিতা নাই বলেই আমরা জানতেও পারি না আর্মির ভিতরেও রাজা , প্রজা, চাকর এর শ্রেনীভেদ আছে , সবুজ রঙে সব একাকার হয়ে যায় । এখন সময় হয়েছে , দরজা, জানালা , পর্দা খুলে এই সবকিছুকে স্বচ্ছ, জবাব্দিহিতামূলক করার । ৩। তৃতীয় পয়েন্ট ঃ পোস্ট বনাম মন্তব্যের অনেক অংশ পড়ে বোঝা যাচ্ছে , আর্মি এবং সাধারন জনগণকে মুখোমুখি শত্রু বানানোর যে চেষ্টাটা গোলাম আজমের পোলা আর তার বন্ধুবান্ধবদের বহুদিনের ষড়যন্ত্র , সেইটা শেষ পর্যন্ত সফল হতে চলেছে ।

এই জনগণ বনাম আর্মি বড় ভয়াবহ ইঙ্গিত দেয় । এর আগেও মানুষ বিরোধিতা করেছে । মার্শাল ল এর , আর্মিকে ব্যবহার করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলকারী এরশাদ , জিয়া, মঈন ইত্যাদি ব্যক্তির বিরোধিতা করেছে । সরাসরি গোটা আর্মির বিরুদ্ধে দাঁড়ায়নি । দেশরক্ষা বাহিনীকে সম্মান করেই এসেছে , এই বাহিনী আমাদের ভীষন বড় একটা গর্বেরও জায়গা ।

প্রতিরক্ষা বাহিনীর মানুষেরা কি কি ত্যাগ স্বীকার করে এসেছে, এখনো করে , দরকার হলে জীবন দেয় , দেবে বলেই কিছু কিছু ব্যাপার নিয়ে ক্ষোভ ছিলো , শত্রুতা ছিলো না । এইবার , সরাসরি শত্রুতা তৈরী করা হলো । যার ফলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা একদিকে চরম ভাবে বিপন্ন । আরেক দিকে দেশে একটা গৃহ যুদ্ধ বাধানোর অপচেষ্টা প্রায় সফল হয় হয় অবস্থা চলে এসেছে । বাংলাদেশের মানুষ আসলেই শান্তিকামী এবং অনেক বেশি রাজনীতি ও ষড়যন্ত্র সচেতন বলেই বার বার এই অপচেষ্টা ঠেকিয়ে দিচ্ছে --- কিন্তু কতবার ? ভয় লাগে , একবার না একবার রিভোল্ট করতেই পারে ।

তখন হুটু আর টুটসিদের মত অবস্থা হবে । ৪। চতুর্থ পয়েন্ট ঃ আর্মি বনাম সিভিল পিপল এর রেষারেষি , অবিশ্বাস , মারামারি কাটাকাটিতে আসলে শেষ পর্যন্ত কারা লাভবান হয় ? কখনোই বাংলাদেশের সাধারন জনগন না। এই সিভিল ওয়ারের চরম ক্ষতিগ্রস্ত বরং আমরা । নিজেরা নিজেরা খুন হবো ।

এই চরম টাল মাটাল অবস্থার সুযোগ নিয়ে সত্যিকারের দেশ প্রেমিক অফিসারদের হত্যা করা হবে । ( উদাহরন - জিয়া হত্যা বিচারের নামে ১৩০০ মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের ফ্রেম করে ফাসিতে ঝোলানো) । কিছু দেশপ্রেমিক সিভিলিয়ান হত্যা হবে । ( চার নেতা , কিবরিয়া , বুদ্ধিজীবী হত্যার মত) । সব শেষে আমরা একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দুর্বল বাংলাদেশ পাব যেই দেশ বিদেশী শক্তির জন্য একটু নতজানু চাকর হবে ।

ফাকতালে , যত সাধারন মানুষ মরে লোক জনে কমে যাবে , প্রভুদের জন্য ততই লাভ। ( ফ্রেঞ্চ রেভুলেশনের মত আমরা একটা অভিজাতবিহীন সাধারনের কল্যানী, গণমুখী রাষ্ট্রও যে পেতে পারি , সেই সম্ভাবনাটার উপরে এখনো ভরসা করতে পারছি না , যেহেতু ওইটা পাওয়ার জন্য যেই পরিমান একতা দরকার সেই একতা ৭১ এর পরে আর পাওয়া যায়নি। একতাবদ্ধ যাতে না হই, সেই ঠেলাঠেলিগুলাই বরং এখনো প্রবল আছে । তার উপর এখন আমরা নেতৃত্বশূন্য। ) মানে , বাংলাদেশে আজকে যাই ঘটুক , কিছু মহলের কোনই ক্ষতি নাই ।

আমরা যুদ্ধ না করলে তাদের ব্যবসা ও পুঁজি রক্ষা হয় । যুদ্ধ করে মরলেও তাদের স্বার্থ রক্ষা হয় । ( মূলত চায়না ঠেকাও, ভারতরে বেশি বেশি বাড়তে দিও না, পাকিস্তান আর বাংলাদেশরে দৌড়ের উপর রাখো --- এই প্ল্যানের অংশ আমরা। আর রিজনাল পলিটিক্সে ভারতের দাদাগিরি, পাকিস্তানীদের পুরান শত্রুতা এই সব তো আছেই। ভারত অবশ্য নিজের স্বার্থেই এখানে গৃহযুদ্ধ চাইবে না।

) এই নির্মম সত্য গুলো কি বুঝবেন আপনি ? আপনার চোখের জল কি দৃষ্টিকে এতটাই ঝাপ্সা করে দিয়েছে যে আপনি দেখতেই পাচ্ছেন না , কি করে আমরা সবাই দিন কে দিন কিছু মহলের স্বার্থ স্বার্থ খেলার পুতুল হয়ে উঠেছি ? আর সুতোয় বাঁধা পুতুলের মতই গুলি ছুড়ছি , কিন্তু নিজেদের দিকে । বার বার , নিজেদের দিকে । আর অট্টহাসি হেসে খেলারাম রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়ে তামাশা দেখছে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।