আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিডিআর বিদ্রোহ কিংবা আমার ভেতরে ফোঁপানো কান্নার শব্দ

রিজওয়ানুল ইসলাম রুদ্র

মানুষ অস্ত্রের কাছে এত অসহায়? বিডিআর কিংবা সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত নিহত কর্মকর্তারা সেদিন দরবার হলে নিরস্ত্র ছিলেন। অস্ত্রাগার দখল করে নিয়েছিলো বিদ্রোহী জওয়ানরা। তাদের হাতে অস্ত্র ছিলো...কিন্তু সেই দুর্ভাগা কর্মকর্তাদের হাত-পা খালি... তারা নিজেরাই অস্ত্রের মুখে বড় অসহায়...শিশুর মতো...একজন পত্রিকা অফিসে ফোন করে উন্মাদের মতো আকুতি করতে লাগলেন..."আমাকে বাঁচান, এরা আমাকে মেরে ফেলবে। " নিহত হলো অসহায় পথচারী, রিক্সাচালক, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ভাই-বোনরা। নিহত হলো বিডিআর জওয়ানদের বড় কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর সদস্যরা...অজস্র বুলেটে প্রকম্পিত রাজধানী পিলখানা এলাকা... ঢাকার রাস্তায় কাঁপছে ট্যাংক...সশস্ত্র বাহিনীর সে কি ভীষণ ভয়ার্ত প্রহরা... এস.এস.সি. পরীক্ষা চলছে।

হাজারো শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। কাঁদছে। শব্দহীন কান্না। পিলখানা বিডিআর ক্যাম্পের ভেতরে আটকে পড়া মানুষগুলো না-খেয়ে, কেউ বাথরুমে দুই মাসের শিশু সন্তানকে পাখির মতো আগলে...আবার কেউবা মৃত্যুভয়ে নিজের ব্যাজ খুলে বুদ্ধিমত্তার আশ্রয় নিয়ে দেয়াল টপকে পালিয়েছে... মানুষ কখন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে? যখন তার পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়। যখন লাশ হয়ে ফেরে তার আপন ভাই, ধর্ষিতা হয় বোন।

এ কেমন বিদ্রোহ যার জন্য প্রাণ দিতে হলো নিরীহ মানুষদের? আহত হলো ফুটপাতে বিক্রেতা শিশু... এ কেমন বিদ্রোহ... নিজেদের হাতেই খুন হলো তাদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা... এটা কেমন বিদ্রোহ ? আমরা জানলাম, বিডিআর ভাইয়েরা বহু কষ্টে অতন্দ্র প্রহরীর কাজ করে যাচ্ছেন। মাত্র ৬০ গ্রাম আটায় একটা রুটি খেয়ে নাশতা করে সীমান্ত প্রহরার মতো কঠিন কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের ছাড়া দেশ অচল। তারা আর্মিদের দ্বারা নিষ্পেষিত, নির্যাতিত হয়েছেন। আমরা তো জানতাম না এতকিছু, জানলাম, সব জানলাম।

জানলো নিহত লাশগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে কুকুরের মতো চিৎকার করে কেঁদে ওঠা মা, বোন, স্ত্রী, ভাই... জানলো স্যুয়ারেজ পাইপ, দুর্গন্ধ পানি, লাশ...জানলো অপেক্ষমাণ কাক, মর্টার, গ্রেনেড... গুলি... অস্ত্রের কাছে মানুষ অসহায়। কেননা অস্ত্র ছিদ্র আঁকতে পারে হৃৎপিন্ডে। এ কেমন অভিশাপ দেশের ওপর? পপি নামের মরণনাশী ফুলের গাছটার চাষ হচ্ছে সীমান্তবর্তী নাম না জানা বহু গ্রাম-গ্রামান্তরে। মনে করতে পারি, এই দৃশ্য আমি বহুদিন আগে দেখেছি পত্রিকায়। শিরোনাম : আফিমের কারখানা আফগানিস্তান।

আফগানিস্তান! তালেবান, মার্কিন বাহিনী আর অস্ত্র কেড়ে নিয়েছে যে দেশের প্রাণ, আফিম, স্পিরিট চাষ করতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ...এ বীভৎস দৃশ্যও দেখেছি টিভি চ্যানেলগুলোতে... আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাবাহিনী যেদিন চূর্ণ-বিচূর্ণ ধ্বংসলীলা চালাচ্ছিলো...কী উৎকণ্ঠা, কী আবেগ... খাদ্য নেই, কেড়ে নেয়া হচ্ছে শিশুদের শৈশব... ঘাস-মাটি সব খাচ্ছে ক্ষুর্ধাত উন্মাদ মানুষ! কী বীভৎস! লজ্জার বিষয়, এই সোনার বাংলাদেশেও চাষ হচ্ছে পপি! আফিম...হেরোইন... মার্কিন ট্যাংকগুলো হেঁটে বেড়িয়েছে শ্বাপদের মতো আফগানিস্তানে... আজ আমি টিভির পর্দায় সেনাবাহিনীর ট্যাংক দেখে শিহরিত হয়েছে... এটাই কী আমার পরিচিত চির সুন্দর ঢাকা শহর? এটাই সেই পিলখানা বিডিআর ক্যাম্প...যেখানে আমি হিমুগিরি করতে গিয়ে বিপদে পড়ে গিয়েছিলাম প্রায়...এই সেই ধানমন্ডি এরিয়া...যেখানে বোনের হাত ধরে বেড়িয়েছি সারা দিন-রাত? বড় অদ্ভুত! সত্যিই অবিশ্বাস্য সেই যুদ্ধ... তাহলে বিডিআর এতটা নির্যাতিত সেটা এতদিন, এত বছর সরকারদের নজরে পড়েনি কেন? ওদের ভুলের দণ্ড দিতে হচ্ছে নিরীহ মানুষদের... দিতে হচ্ছে পিলখানা বিডিআর ঘাঁটি থেকে তিন কি.মি. দূরত্বে বসবাসকারী মানুষদের...ঐ জায়গায় যে ডাকাতি হবে না এমন নিশ্চয়তা কে দেবে? ঘরে ঘরে ঝুলছে তালা... সব ঢেকে আছে আশ্চর্য শূন্যতায়... প্রথমে শুনলো সবাই ২ জন নিহত...পরে ১০-১৫ জন...পরে ৫০ জন... দুপুরে উদ্ধার হলো ৬টি লাশ... সন্ধ্যায় খবরে শুনলো সবাই ক্যাম্পের ভেতরে ৯ টি লাশ... আর কত রক্তে শাণিত হবে অস্ত্র ? স্যমুয়েল কোল্ট! আপনি কেন রিভলবার আবিষ্কার করলেন? কেন তৈরী হলো মারণাস্ত্র, মাইন, ট্যাংক... ওহ্ ঢাল তরবারি তো ভয়ানক...মানুষ স্বজাতির রক্ত পান করতে এত আগ্রহী কেন? ধৈর্য কেন নেই কারো মধ্যে? অতন্দ্র প্রহরীদের দেখেও আমার কষ্ট লাগছে... ছদ্মবেশে পালাতে গিয়ে ৬০ জন ধরা পড়লো RAB এর হাতে... কেমন কচি চেহারা... কারা উদ্বুদ্ধ করলো এই সব তরুণদের মরণসংগ্রামে অংশ নিতে? কারা? তাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে। বের করতে হবে ফাঁক গুলো। জটিল অংকের সহজ সূত্রটা সবাইকে খুঁজে বের করতে হবে। ঢাকার বাইরে সারাদিন বন্ধ ছিলো সকল মোবাইলের নেটওয়ার্ক... কেন? এটা কী কোন গভীর ষড়যন্ত্র? নাকি আমাদের অশ্রুসজল চোখগুলোকে আবারো ভিজিয়ে দিতে স্রষ্টাপ্রদত্ত মরণ ছোবল? এলটিটিই (লিবারেশন ফর তামিল টাইগার্স) একটি ভয়ংকর মিলিটারি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গি উগ্র সংগঠন। উৎপত্তিস্থল শ্রীলংকা।

এক্স আর্মি পারসনদের দ্বারা পরিচালিত এই জঙ্গি সংগঠন বিমান ছিনতাই থেকে শুরু করে রাষ্ট্রবিরোধী প্রায় সকল কার্যকলাপে অংশ নিয়েছে। সরকার পর্যন্ত দমাতে পারছে না। এদের রয়েছে মরণঘাতী সুইসাইড স্কোয়াড যা আল কায়েদার চেয়ে কোন অংশে কম না... আমাদের দেশও কী সেরকম একটি মৃত্যুময় পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে না? কোথায় ১৯৭১...কোথায় স্বাধীনতা... কোথায়? এইসব প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? নিউ ইয়র্ক টাইমসে পড়ুন Guard Mutiny in Bangladesh Ends Click This Link প্রথম আলোতে লেখা হয়েছে : ক্ষুব্ধ জওয়ানদের নানা দাবী ও অনুযোগ Click This Link


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.