আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দোহাই আপনাদের এসব ছেলেমানুষী বন্ধ করুন

জ্বলে উঠার অপেক্ষায় নিভু নিভু প্রদীপ।

আমার দু বন্ধু আর্মিতে আছে। একজনের বড় ভাই বিডিআর এর উর্দ্ধতন অফিসার। সকালে আর্মি বন্ধুকে ফোন করেছি ঘটনার বিস্তারিত জানার জন্য। অন্যান্যদের মত বন্ধুর বড় ভাই(যিনি বিডিআর অফিসার) ও দরবার হলে উপস্থিত ছিলেন।

কিছু একটা আনতে হল থেকে তিনি বাইরে গিয়েছিলেন। এর ঠিক দশমিনিট পরে গুলাগুলি শুরু হয়ে যায়। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন। বন্ধুর সাথে কথা বলে যেটা বুঝতে পেরেছি দরবার হলের অলমোষ্ট সবাই স্পট ডেড। যারা পালাতে পেরেছেন তারা বেঁচে গেছেন।

বুঝলাম উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অনেকেই জওয়ানদের কোন কথার পাত্তা দিতেন না কিংবা খবরদারী করতেন। তাই বলে জওয়ানদের এ ধরণের অপরাধ কেন করতে হবে। কেন এর উত্তর খুজে পাচ্ছি না। এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। বিদ্রোহ কোনভাবেই কাম্য নয়।

আর্মি কিংবা জওয়ানদের কাছে আমরা সাধারণ মানুষ এটা আশা করি না। পূর্বপরিকল্পনা না থাকলে এটা এত বড় ঘটনা হত না। আমি কোন পক্ষের কিংবা বিপক্ষের হয়ে কথা বলছি না। কেউ কেউ দেখলাম জওয়ানদের এ ধরণের বিদ্রোহকে হাততালি দিচ্ছেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, এসব ছেলেমানুষী বন্ধ করুন।

নিজে বুঝতে চেষ্টা করুন। পরিচিত যারা আর্মি কিংবা বিডিআর এ কর্মরত আছেন তাদের বুঝান, শান্ত করুন। এটার পরিণতি খারাপ হবে কখনোই ভালো হতে পারেনা। বিডিআরদের দাবীগুলো নৈতিক। কিন্তু এ ধরণের মানসিকতা কোনভাবেই কাম্য নয়।

বিদ্রোহ কখনোই শান্তি বয়ে আনবে না। শান্তিপূর্ণভাবে সরকারের সাথে বৈঠক করেই দাবী মেটানো সম্ভব। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটা সেটলড করা উচিত। যারা যুদ্ধ যুদ্ধ বলে লাফাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যে দুটা কথা বলব। আর্মি কিংবা বিডিআর সবাই আমাদেরই আত্বীয়স্বজন।

আমাদের দেশের মানুষ। এই দুই বাহিনীর গৃহযুদ্ধ/বিদ্রোহ হলে কিন্তু দেশের অনেক বড় ক্ষতি। দেশের ক্ষতি মানে আপনারই ক্ষতি। আপনারা হয়ত অনেকেই বড় বড় ফুটবল দলের খেলা দেখেন। আপনি কি জানেন এসব দলের প্লেয়াররা দলের সম্পত্তি।

বছরশেষে যখন লাভ-ক্ষতি হিসেব করার জন্য পাবলিশড এ্যকাউন্টস করা হয়। তখন এসব প্লেয়াররাই এ্যকাউন্টস এ লংটার্ম এসেট হিসেবে স্থান পায়। এটা বলার কারণটা বলি। ধরুন, বাংলাদেশ একটা কোম্পানী। আর্মি কিংবা বিডিআরের অফিসাররা সবাই এই কোম্পানীর লংটার্ম এসেট।

একজন মেজর জেনারেল হতে আনুমানিক বিশ বছর সময় লাগে। ঠিক একইভাবে কর্ণেল, লেঃ কর্ণেল পনেরো কিংবা দশ বছর সময় লাগে। এতোদিন যাবৎ এদের ট্রেনিংয়ের পেছনে দেশের কত টাকা খরচ হয়েছে বলতে পারেন? কোটি টাকা কিংবা তারও অনেক বেশি। সে টাকা আমার, আপনার কৃষক থেকে শুরু করে যারা রিকসা চালান তাদের ও। এবার চিন্তা করুন একজন ট্রেইন্‌ড আর্মি কিংবা বিডিআর অফিসার যারা বিদ্রোহে মারা গেলেন, দেশের কত লস ইতিমধ্যে হয়েছে।

তাছাড়া আরেকজন মেজর জেনারেল তৈরীতে দেশের আরো বিশটা বছর সময় লাগবে। যারা হাততালি দিচ্ছেন তাদের বলছি উস্কানীমূলক কথা না বলে প্লিজ বুঝতে চেষ্টা করুন। আপনার পরিচিতজন যারা আর্মি বিডিআর এ কর্মরত আছেন তারা স্বাভাবিকভাবেই এখন অস্থির কিংবা ভীত। তাদের বোঝানোর দায়িত্ব কিন্তু আপনার। আপনারা যারা আওয়ামী লীগ সরকার পছন্দ করেন না কিংবা বিএনপি করেন তাদের বলছি এটা ভাববেন না যে এটা আওয়ামীলীগের ব্যর্থতা।

এটা আপনার আমার সবার ব্যর্থতা। আওয়ামীলীগ পছন্দ করুন কিংবা না করুন তারাই কিন্তু দেশের নির্বাচিত সরকার। তার মানে এখন সেটা আপনারই সরকার, আপনিই সরকার। এ ধরণের পরিস্থিতিতে সবার সাধ্যমত সহযোগিতা একটা দেশের সরকার অবশ্যই আশা করবে। সরকারের ব্যর্থতা হইল কি না সেটা না দেখে পরিস্থিতি শান্ত করতে সাহায্য করুন।

ঘটনা বুঝার চেষ্টা করুন। দেশের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। সামনে আরো বড় ক্ষতি হয়ে যাবার হাত থেকে দেশকে রক্ষা করুন প্লিজ। মন্তব্যের সবগুলোর একসাথে রিপ্লায় দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে সবার প্রতি দেয়া মন্তব্য পোষ্টে এ্যড করে দিলাম। সবার উদ্দেশে বলছি।

আমি সশস্ত্রবাহিনী সম্পর্কে খুব বেশি জানিনা। অনেকের মত জানতে ইচ্ছেও হয়না। এক্ষেত্রে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লার 'সশস্ত্রবাহিনীর প্রতি' কবিতাটি দ্রষ্টব্য। যাইহোক, আমি জানি আপনারা এসব ব্যাপারে আমার কাছ থেকে বেশি বুঝেন। আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে সেটা বলি।

আর্মিকে আমার কোনদিন পছন্দ ছিল না। এটার কারণ দেশের দখলদারিত্ব নিয়ে নেওয়া। আর্মি যখন পলিটিশিয়ান হয়ে যায় সেটা মেনে নেওয়া যায় না। কারণ আর্মিরা বুঝে 'ব্লাডি সিভিলিয়ান'দের দুচারটে ডান্ডার বাড়ি দিলে সব ঠিক। ওরাই দেশ চালাবে।

কিন্তু ইতিহাস বলে আর্মিরা সরকারের আসনে বসে কখনোই সুফল বয়ে আনেনি। উল্টো দেশের বারোটা বাজিয়েছে। জওয়ানদের দাবীগুলো অবশ্যই নৈতিক। কিন্তু দাবী আদায় করে নিতে গৃহযুদ্ধ কখনো কাম্য নয়। এখনকার পরিস্তিতিতে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ ক্রিয়েট হইছে।

এটাতে দেশের লাভ যে হচ্ছে না এটা তো যে কেউ বুঝতে পারছেন? এসব জওয়ানদের উপরে অনেক অত্যাচার করা হবে সেটা বুঝাই যাচ্ছে। এটা যাতে নাহয় সেটার জন্য সরকারের এখুনি পদক্ষেপ নেয়া উচিত। আর্মিদের এখুনি শান্ত করা উচিত। এটার পরিণাম কখনোই ভালো হবে না। অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, যাবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.