আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একুশের প্রভাতফেরীতে ঢাকাবাসী মনিপুরি

এখানে আমার বাংলা ও মনিপুরি লেখা পত্রস্থ করা হবে

"আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান একুশে ফেব্রুয়ারী অমর হোক" মাতৃভাষার স্বীকৃতি ও তাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবীতে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী মাতৃসন্তানদের রক্তদান ও আত্মাহুতির চূড়ান্ত স্বীকৃতি আজকের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কেবল 'বাংলা'ভাষাকে নয়, পৃথিবীর সমস্ত ভাষার অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে। একুশের চেতনা তাই মানুষের অস্তিত্ব ও অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণের মূলমন্ত্র। একুশের এই সংগ্রামে যারা রক্ত ও আত্মাহুতি দিয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করছি। ইউনেস্কো কর্তৃক নভেম্বর ১৭, ১৯৯৯ তারিখ ২১শে ফেব্রুয়ারীকে "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর ২১শে ফেব্রুয়ারী ২০০০ সাল হতে অদ্যাবধি প্রতিবছর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমার গভীর গভীর শ্রদ্ধার সাথে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে এদিনটিকে পালন করে আসছি।

পৃথিবীর অপরাপর ভাষার ন্যায় মনিপুরি ভাষাও এক প্রাচীন ভাষা। যার প্রাচীন নাম 'মীতেইলোন' বা 'মেইতেই লোন' । এই ভাষার রয়েছে এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও সাহিত্য। উৎস বিচারে এই ভাষা মঙ্গোলীয় মহাপরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং এর উৎপত্তি আজ থেকে প্রায় ৩৪০০ বছর আগে। প্রাচীনতার দিক থেকে মনিপুরি সাহিত্যের স্থান ভারতীয় প্রাচীন সাহিত্য কর্ম কৃষ্ণ যজুর্বেদের পরেই।

মনিপুরি ভাষা সাহিত্যের সৃষ্টি সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ যেমন: ওগ্রী, খম্বাথোইবী ইত্যাদি। মনিপুরি জনগোষ্ঠী পৃথিবীর অন্যান্যস্থানে বসতিস্থাপন ছাড়াও ঢাকা শহরের তেজগাও অঞ্চলে বসতি স্থাপন শুরু করে সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দশকে। কিন্তু কালের ক্ষয়িঞ্চু ধারায় এই জনগোষ্ঠী ক্রমে ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে আজ কেবল স্মৃতি হয়েই ইতিহাসের নীরব স্বাক্ষী হিসেবে রয়ে গেছে স্থানটুকু। মনিপুরি ভাষার নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে মনিপুরি লিপি প্রবর্তিত হয় মহারাজ পাখংবার শাসনামলে (৩৩-৩১৫ খৃ।

তখন বর্ণ সংখ্যা ছিল ১৮টি। পরবর্তীতে মহারাজ খাগেম্বার শাসনামলে আরো ৯টি নতুন বর্ণ সংযোজিত হয়। বর্তমানে মোট বর্ণমালার সংখ্যা হচ্ছে ২৭টি। কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দীতে রাজা পামহৈবার শাসনামলে (১৭০৯-১৭৪৮ খৃ শ্রী শ্রী চৈতন্য প্রবর্তিত 'বৈষ্ণব' ধর্ম তৎকালীন মনিপুর রাজ্যের রাষ্ট্রীয় ধর্মরুপে গৃহীত হওয়ার পর বাংলালিপি দখল করে নেয় মনিপুরি লিপির স্থান। সেই থেকে মনিপুরি ভাষা বাংলা হরফেই লিখিত হয়ে আসছে।

সম্প্রতি বিলুপ্ত মনিপুরি লিপির পুন:ব্যবহার ও প্রচলন শুরু হয়েছে। প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহন: ঘড়ির কাটা যখন ঠিক ৭:০০ ছুই ছুই তখন পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী পলাশীর মোড়-এ জড়ো হতে থাকে ঢাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মনিপুরিরা। হালকা হালকা শীত করছিল। জনলোকারণ্যে একে একে ছেয়ে যায় পলাশী মোড়। শিশু কিশোরদের কপালে, গালে বিভিন্ন লেখা শোভা পাচ্ছিল।

কেউবা মাথায় অমর একুশের শহীদ মিনার সম্বলিত বেল্ট কেউবা জাতীয় পতাকা কেউবা স্টিকার লাগিয়ে দাড়িয়ে আছে। অন্যরকম অনুভূতি, অন্যরকম এক আনন্দ ছেয়ে যায় মন ও মননে। তারপর একে একে যখন আমাদের পরিচিত সবাই এসে গেলো তখন আমরা মহান একুশে ফেব্রুয়ারীর সারিবদ্ধ প্রভাতফেরীর লাইনে। আমাদের উঁচু ঝান্ডায় লেখা বড় বড় করে লেখা 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান একুশে ফেব্রুয়ারী অমর হোক', সৌজন্যে 'ঢাকাবাসী মনিপুরি'। আর এই উঁচু ঝান্ডা বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল আমারই দুই সহপাঠী বন্ধু।

আমরা যখন শহীদ মিনারের খুব কাছে চলে এলাম তখন সত্যি অন্যরকম এক শীতলতা বিরাজ করছিল মনে। সামনেই স্তুপাকারে (নিবেদিত/অর্পিত)বিশাল ফুলের সমাহার। তারপর আমাদের দুই বন্ধু পুষ্পস্তবক অর্পন করল, আমাদের প্রত্যেকের হাতে এক একটি করে ফুলের তোড়া ছিল, কারো কারো দুটো.. একে একে আমরা সবাই শ্রদ্ধা নিবেদন করলাম.. তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে আমরা সোহরাওর্য়াদি উদ্যানে মিলিত হয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বের আয়োজন করি। সেখানে অনেক অজানা তথ্যও বেরিয়ে আসে, জানা হয় সবার.. আমার পেনড্রাই ভাইরাসাক্রান্ত হওয়ায় প্রভাতফেরীর ছবিগুলো লেখাটির (এই লেখাটি লেখার সময় পর্যন্ত) সাথো পোস্ট করতে পারলাম না। সমস্যার সমাধান হওয়ামাত্র লেখাটির সাথে ছবিগুলো পোস্ট করে আপডেট করা হবে।

আশা করি খুব শীঘ্রই সমাধান হয়ে যাবে..

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।