আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্যাটুলাস: প্রাচীন রোমের সেই অভিমানী কবি।

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ

ক্যাটুলাস: প্রাচীন রোমান কবি। মাত্র তিরিশ বছরের স্বল্পায়ূ জীবনে কবিতায় নিমজ্জিত ছিলেন। অভিজাত হওয়া সত্ত্বেও রোমান অভিজাতদের অবজ্ঞা করতেন।

এমন কী জুলিয়াস সিজারের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল ছিলেন না ক্যাটুলাস। আর্কাইক শব্দ এড়িয়ে চলতি ভাষায় কবিতা লিখতেন। তাঁর বেশির ভাগ কবিতায় ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতাই উঠে এসেছে, বৃহত্তর পাঠক সমাজের কথা বিবেচনা করেননি ক্যাটুলাস। বেশির ভাগ কবিতার বিষয়ই প্রেম - লেসবিয়া নামে রহস্যময়ী এক নারী কে কেন্দ্র করে রচিত। তাঁর আবেগের নগ্ন প্রকাশে প্রাচীন ও মধ্যযুগের অনেকেই শকড হয়েছেন; রোমান পন্ডিত ও রাজনীতিবিদ সিসেরো ক্যাটুলাসের কবিতাকে অনৈতিক আখ্যা দিয়েছেন।

আসলে সেই অনৈকিতা ছিল প্রেমের জন্য হাহাকারমাত্র। যদিও সে প্রেম -ব্যর্থ প্রেম। ওভিদ, হোরেস ও ভার্জিলকে প্রভাবিত করেছেন অভিমানী ক্যাটুলাস। মধ্যযুগে পুনরায় আবিস্কৃত হয়ে অনেক দুঃখী পাঠকই (সম্ভবত পাঠিকাও) তাঁর গুণমুগ্ধ ভক্তে পরিনত হয়েছেন। যে কারণে আজও বিরহী কবিদের প্রিয়কবি ক্যাটুলাস ।

এমন কী আমার এক স্পর্শকাতর বাঙালি কবিবন্ধুরও ক্যাটুলাসের এই উক্তিটি ভীষন প্রিয়-It is difficult to give up suddenly a long cherished love. প্রথমেই লেসবিয়া নামে সেই রহস্যময়ী নারীকে নিয়ে লেখা ক্যাটুলাসের একখানি কবিতা পাঠ করি: চল বাঁচি, আমার লেসবিয়া, এসো করি প্রেম সমীক্ষা করি বুড়োদের গুজব । একটি মুদ্রা বৈ তো নয়! আজও সূর্য সমর্থ উত্থান-পতনে সংক্ষিপ্ত আলো আমাদের উপড় এসে পড়ে অশেষ রাতে ঘুমাব আমরা আমাকে সহস্র চুম্বন কর তারপর আরও শতাধিক আরও আরও শতাধিক, আরও আরও শতাধিক আরও আরও সহস্র আর শতাধিক তারপর আরও আরও আরও আরও চুম্বনগুলো এমনভাবে মেশাব যেন কেউই চিনতে না পারি যেন কেউ ইর্ষা না করে কতচুম্বন আমরা করেছিলাম। লাতিন ভাষার লিখতেন ক্যাটুলাস। লাতিন ভাষার ধ্বনিমাধুর্য ঠিক কেমন - তা বোঝার জন্যই লাতিন ভাষায় লেখা ক্যাটুলাসের এই কবিতাটি পাঠ করা যাক- Vivamus mea Lesbia, atque amemus, rumoresque senum severiorum omnes unius aestimemus assis! soles occidere et redire possunt: nobis cum semel occidit brevis lux, nox est perpetua una dormienda. da mi basia mille, deinde centum, dein mille altera, dein secunda centum, deinde usque altera mille, deinde centum. dein, cum milia multa fecerimus, conturbabimus illa, ne sciamus, aut ne quis malus inuidere possit, cum tantum sciat esse basiorum. কবিতাটির ইংরেজি অনুবাদ Let us live, my Lesbia, and let us love, and let us judge all the rumors of the old men to be worth just one penny! The suns are able to fall and rise: When that brief light has fallen for us, we must sleep a never ending night. Give me a thousand kisses, then another hundred, then another thousand, then a second hundred, then yet another thousand more, then another hundred. Then, when we have made many thousands, we will mix them all up so that we don't know, and so that no one can be jealous of us when he finds out how many kisses we have shared. (বাংলা অনুবাদ হয়তো আরও যুতসই হত-এ ক্ষেত্রে আমি অপারগ। ) রোমান কবি ক্যাটুলাস-এর পুরো নাম গাইয়ুস ভ্যালেরিয়াস ক্যাটুলাস।

জন্ম ৮৪ খ্রিস্টপূর্ব ইটালির ভেরোনায়। তবে কবির সারাজীবন কেটেছে রোমেই । কিছুকালের জন্য অবশ্য তিনি এশিয়া মাইনর (বর্তমান তুরস্ক) গিয়েছিলেন। অভিজাত পরিবারে জন্ম হয়েছিল ক্যাটুলাসের- বাবা ছিলেন জুলিয়াস সিজারের বন্ধু। ৬১ খ্রিস্টপূর্ব: ভেরোনা থেকে রোমে যান ক্যাটুলাস ।

সম্রাট জুলিয়াস সিজার, রাজনীতিদিব সিসেরো ও দক্ষ সেনাপতি পমপেই দি গ্রেটের পদচারণায় রোম তখন জমজমাট হয়ে ছিল। তখনকার এক কুখ্যাত রাজনীতিক ছিলেন পাবলিয়াস ক্লোদিয়াস পালচের । রাজীতিবিদ-পন্ডিত সিসেরোর সঙ্গে দ্বন্ধের জন্যই পাবলিয়াস ক্লোদিয়াস পালচের বিখ্যাত। সুন্দরী ক্লোদিয়া মিতেল্লি ছিল পাবলিয়াস ক্লোদিয়াস পালচেরের বোন- অভিজাত মহলে ঘোরাফেরা করে ক্লোদিয়া মিতেল্লি, বড় সৌখিন, চড়ুই পাখির সঙ্গে খেলা করে। তরুণ ক্যাটুলাস রোমেরই কোনও অভিজাত বাড়িতে (সম্ভবত) কোনও পার্টিতে ক্লোদিয়া মিতেলিকে প্রথম দেখেই প্রেমে পড়ল।

মনে মনে ক্লোদিয়া মিতেল্লির নাম দিল- ‌'লেসবিয়া'। লেসবিয়া কেন? প্রাচীন গ্রিসের কবি শাপ্পো ইজিয়ান সমুদ্রের লেসবস দ্বীপে জন্মে ছিলেন বলে। Click This Link শাপ্পোকে ভারি শ্রদ্ধা করতেন ক্যাটুলাস। পার্টির ভিড়ে বিড়বিড় করে ভেরোনার কবিটি বলল- চল বাঁচি, আমার লেসবিয়া, এসো করি প্রেম সমীক্ষা করি বুড়োদের গুজব । একটি মুদ্রা বৈ তো নয়! তো, ক্লোদিয়া মিতেল্লি ওরফে লেসবিয়া ছিলেন ক্যাটুলাসের চেয়ে ১০ বছরের বড়।

তাতে কি? কবির ভিতর তখন শব্দে শব্দে অর্গলমুক্ত হচ্ছিল অনুভূতি - Lesbia, you ask how many kisses of yours would be enough and more to satisfy me. As many as the grains of Libyan sand that lie between hot Jupiter’s oracle, at Ammon, in resin-producing Cyrene, and old Battiades sacred tomb: or as many as the stars, when night is still, gazing down on secret human desires: as many of your kisses kissed are enough, and more, for mad Catullus, as can’t be counted by spies nor an evil tongue bewitch us. সেই সময়ই লেখা একটি কবিতার নাম: ‘লেসবিয়ার চড়ুই পাখির জন্য কান্না’ চড়ুই, আমার মিষ্টি প্রেয়সীর আনন্দ ওর সঙ্গে খেল বুকে জড়িয়ে নাও তুই লোভী, তোকে আঙুল দেয় তীক্ষ্ম ঠোকর দিতে প্রলুব্দ করে আমার সোনালি আকাঙ্খার ইচ্ছে ওর পছন্দের জিনিস নিয়ে খেলি মনে হয় আবেগ হ্রাস পেলে যন্ত্রণারও অবসান হবে একদিন আমিও তোর সঙ্গে খেলব ওর মতো করে খেলে খেলে বিষন্ন মনের কষ্ট কমাব। এই তো গেল কবির মনের অনুভূতি। ওদিকে ঘটনা ঘটল অন্যরকম। ক্লোদিয়া মিতেল্লি বিয়ের জন্য বেছে নিলেন অন্য একজনকে । মারকাস কেলিয়াস রুফুস।

রোমের ওই ঝকঝকে তরুণটি ক্যাটুলাসের পরিচিত। সিসেরোরও কেমন যেন ঘনিষ্ট। সে যাক। গভীর দুঃখ পেলেন ক্যাটুলাস। অভিমানী তো- যে কারণে মনের দুঃখে স্বেচ্ছা নির্বাসনে বিথিনিয়া চলে যান।

বিথিনিয়া জায়গাটা বর্তমান তুরস্ক। স্বেচ্ছা নির্বাসনে যেতে যেতে কি লিখলেন ‘লেসবিয়ার চড়ুইয়ের মৃত্যু’ কবিতাটি? শোক, হে প্রেম, হে কিউপিড প্রেমের সৌন্দর্য ব্যাপক আমার প্রেয়সীর চড়ুইটি মৃত চড়ুইটি ছিল আমার প্রেয়সীর আনন্দ ওকে ভালোবাসত ওর চোখের চেয়েও। মধুর মতন মিষ্টি মায়ের মতন আশ্রয়ী কোলেই থাকত লাফাত একা একা ছায়াময় পথে পাখিটি চলে গেছে যেখান থেকে ফেরে না কেউই এখন অশুভ তোমার হোক তোমার সৌন্দর্যকে খাক ওহ, অশুভ! ছোট্ট চড়ুই তোমার জন্য আমার প্রেয়সীর চোখ কান্নায় লাল। তখন বলেছি, অভিজাত পরিবারের ছেলে ছিলেন ক্যাটুলাস। বিথনিয়ায় রাজকীয় রোমান সরকারের দপ্তরে কাজ পেলেন।

ওখানে অবশ্য বেশি দিন ভালো লাগল না। মাথার ভিতরে সারাক্ষণ লেসবিয়া। It is difficult to give up suddenly a long cherished love. যা হোক রোমে ফিরলেন ক্যাটুলাস। বাকী জীবন রোমেই কাটান। বাকি জীবন মানে- মাত্র তিরিশ বছর বেঁচে ছিলেন অভিমানী কবি।

রোমে ফেরার পর লেসবিয়ার সঙ্গে কি দেখা হয়েছিল ক্যাটুলাসের? বলতে পারি না। তবে তাঁর একটি কবিতা এ রকম- বিদায় প্রিয়তমা, ক্যাটুলাস এখন অবিচল থাকবে সে আর তোমাকে তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কামনা করবে না কিন্তু, তোমারি কষ্ট হবে আমায় পাশে না পেয়ে তোমার জন্য আমার কষ্ট হয়- জীবন তোমার জন্য কি রেখেছে? কে এখন তোমার কাছে আসবে? কে তোমাবে বলবে সুন্দরী? কাকে তুমি ভালোবাসবে? লোকে তোমায় কি বলবে? কাকে চুমু খাবে? কার ঠোঁট কামড়াবে? কিন্তু, তুমি ক্যাটুলাস-তুমি নত হয়ো না। ৫৪ খ্রিস্টপূর্বের পর ক্যাটুলাসের কবিতা আর পাওয়া যায়নি। যে কারণে, ওই সালই তাঁর মৃত্যুর বছর বলে পন্ডিতেরা স্থির করেছেন। তাঁর জীবদ্দশায় লেখা একটি কবিতা এইরকম- বেচারা কাটুলাস, তুমি কত আর নত হবে? যা দেখছ - সবই ফুরায়ে যাবে একদা তোমার পাশে ছিল উজ্জ্বল সূর্য প্রেয়সীর পথে যেতে অনায়াস ছিল পথ কত যে তাকে ভালোবাসতাম কত যে আনন্দজনক দৃশ্য ছিল তখন তোমার পছন্দ ছিল তার পছন্দ সত্যিই একদা উজ্জ্বল সূর্য ছিল তোমার পাশে সে আর তোমাকে চায় না -তোমারও আকাঙ্খা নয় ক্ষীণ যে চলে যায়- তার পিছু ছুটে কষ্ট পেয়ো না বরং, শক্ত হও, হৃদয় শক্ত কর তাই বলছিলাম, ক্যাটুলাস ছিলেন প্রাচীন রোমের অভিমানী কবি।

যিনি লিখেছিলেন- মনে হয় আবেগ হ্রাস পেলে, যন্ত্রণারও অবসান হবে একদিন। সম্ভবত তা হয়নি। কেননা, It is difficult to give up suddenly a long cherished love.

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.