আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপ-পত্রিকা

ক্লিন'স অল্টারনেটিভ ওয়ার্ল্ড

হুজুগে হিসেবে আমাদের সুখ্যাতি আদিকালের। ১. আমাদের বর্তমান হুজুগটা বোধহয় অনলাইন পত্রিকার। অনলাইন পত্রিকার জন্য কোন রকম অনুমোদন লাগে কি-না কে জানে? সম্ভবত লাগে না। তবে সরকার কাউকে বন্ধ করতে চাইলে তাকে অনুমোদনের খাড়ায় ফেলে বন্ধ করতে পারে। শীর্ষনিউজকে বোধহয় এধরনের কোন খড়গেই নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।

যাই হোক, দেশে দেধারছে বাড়ছে অনলাইন পত্রিকা। বিদেশেরও বাঙালি কমিউনিটি পিছিয়ে নেই। সারা পৃথিবীতেই যেহেতু বাঙালি ছড়ানো- সুতরাং সবখানেই অনলাইন পত্রিকা আছে। একসময় সংবাদপত্রের নীতি বলতে কিছু একটা ছিলো- এখন সেটার মূলধারার অনেকেই আর ধার ধারে না। সুতরাং রীতি নীতির এই বালাই অনলাইন সংবাদপত্রে আরো থাকবে না, সেটা বলাই বাহুল্য।

বেশিরভাগ অনলাইন পত্রিকা পরিচালিত হয় দুই তিনজন মানুষ দ্বারা- যাদের অনেকেরই হয়তো সংবাদপত্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধেও ধারণা নেই। ঘটনাক্রমে দেশ বিদেশের যে কয়টি অনলাইন পত্রিকায় চোখ পড়েছে তাদের হোমপেজগুলো বেশিরভাগ সময় চটুল অথবা সেনসুয়াল নিউজে ভরা। যেমন- কোন অভিনেত্রি খোলাকাপড়ে কার সাথে অভিনয় করছেন, কার নগ্ন ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে ইত্যাদি কিংবা কোন ধর্ষণের খবর বেশ গাঢ় ভাষায় বর্ণনা করা। একটি সংবাদপত্রের মৌলিক কাঠামোর কিছুই এদের নেই। কিন্তু এরা চলছে।

কেন চলছে? কারণ এর সাথে ব্যবসা জড়িয়ে আছে। একটা ওয়েবসাইট থাকলে সেখান থেকে অনলাইন বিজ্ঞাপন দিয়ে (সেটা কোন কোম্পানী থেকে আসতে হবে এমন নয়, গুগলের এ্যাডসেন্স বা এরকম অন্য বিজ্ঞাপন ব্যবস্থাপনা টুলস বসিয়েই সেটা করা যায়) একটা রোজগারের ব্যবস্থা করা যায়। যত বেশি মানুষ ওয়েবসাইটটি দেখবে, ততবেশি পেন্স জমা হবে এসব ওয়েবসাইটের মালিকের একাউন্টে। সুতরাং অনলাইনে আয়ের হাজার উপায়ের একটা হিসেবে অনেকেই এখন অনলাইন পত্রিকা খুলে বসছেন- এবং সেখানে খবরের নামে এসব চটুল বিষয় দিয়ে ওয়েবসাইটটির হিট বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। ২. আমাদের দ্বিতীয় হুজুগটা বিজ্ঞানের খবর কেন্দ্রিক।

জুট জেনোম নিয়ে প্রথম আলোর মাতমের কারণে এখন অনেকেরই হুশ হয়েছে যে বিজ্ঞান বিষয়ক কিছু একটা পত্রিকায় আনা দরকার। নানান পত্রিকার অনলাইন ডেস্ক এখন পৃথিবীর তাবৎ বিজ্ঞানের খবরাখবরও রাখে। আজ বোধহয় প্রথম আলোতে একটা খবর আসলো- হাইব্রিড মানুষের গবেষণা নিয়ে। বিজ্ঞানের খবর বিজ্ঞান হিসেবে না দেখে পাঠককে আকৃষ্ট করার বাধভাঙা চেষ্টা থেকে ওরকম একটা নিউজ লেখা যায়। অনেক সময় অনেক কাজের কথা পত্রিকায় লিখে ছাপানো যায় না, অথচ এসব গার্বেজ ঠিকই পত্রিকায় জায়গা করে নেয়।

এটা অবশ্য আমাদের দেশেই ঘটে এমন নয়। বিবিসি, সিএনএন-এর মতো বড় মিডিয়াও এটা করে। আরেকটি খবর মাথা নষ্ট করেছিলো অনেকের- সেটাও প্রথম আলোর। শিরোনাম ছিলো- মুত্র থেকে দাঁত। খববের শিরোনাম দেখে সবার আক্কেল দাঁত শিরশিরিয়ে উঠেছিলো নিশ্চয়ই।

ব্যাপারটা ছিলো স্টেম সেল রিসার্চ নিয়ে। একদল চাইনিজ বিজ্ঞানি (চাইনিজ ছাড়া এমন উদ্ভট চিন্তা কারো মাথায় আসে?) মানুষের ইউরিন থেকে কোষ সংগ্রহ করে তাকে স্টেমসেলে রূপান্তর করেছিলো। সেই স্টেম সেল থেকে তারা দাঁতের মতো দেখতে একটা কিছুর আকৃতি বানিয়েছে। মানুষ এখন যেকোন কোষকেই মাত্র চারটি জিনের পুনঃপ্রকাশ ঘটিয়ে তাকে স্টেমসেলে রূপান্তরিত করতে পারে। মূলত এ আবিষ্কারের কারণেই জাপানের বিজ্ঞানী শিনয়্যা ইয়ামানাকা বৃটেনের জন গার্ডনের সাথে ২০১২ সালের ফিজিওলজি এন্ড মেডিসিন বিভাগের নোবেল পুরষ্কার পেলেন।

যাইহোক সেই কোষ মুত্র থেকে নেয়ার উদ্ভট চিন্তা চাইনিজ বিজ্ঞানীদের মাথায় আসতেই পারে। এসব গবেষণা এখন বড় কোন জার্নালে ছাপাও হয় না। সেটাকে এভাবে খবরের বিষয় না করে অন্য কোন গুরুত্বপর্ণূ ইস্যুকে সামনে আনতে পারলে সত্যিকার বিজ্ঞানসেবা হতো। আরো অনেক পত্রিকার দৃষ্টান্ত দেয়া যায়। সম্প্রতি এক পত্রিকা রাজশাহীর এক গবেষণাগারের বিষয়ে রিপোর্ট করতে গিয়ে শুরুই করেছে এক তরুণ মাস্টার্স শিক্ষার্থীর কেমিকেল খাওয়া দিয়ে।

শিক্ষার্থী গবেষণায় এতই উত্তেজিত ছিলো যে ঘোরের মধ্যে পানির বোতল ভেবে কেমিক্যালের বোতল মুখে দিয়ে ফেলেছে। সেখানেই ক্ষান্ত হয় নি। সে বেশ খানিক্ষণ খাওয়ার পর ইহধামে ফিরে এসে বুঝতে পেরেছে- পানি নয়, অন্য কিছু খাচ্ছে। সরকারের চোখে ভীষণ অপয়া আমার দেশের বিজ্ঞান পাতা দেখেছিলাম কিছুদিন। সেখানে বিজ্ঞানের খবর মানে হচ্ছে- ফেসবুক ব্যবহারের ১২ টি টিপস, কীভাবে আয় করবেন অনলাইনে, বাড়িয়ে নিন কম্পিউটারের গতি ইত্যাদি।

কোনটা বিজ্ঞান আর কোনটা খেড়োখাতার তথ্য তারও ধারণা নেই ওই পাতার সম্পাদকের। যাই হোক, মাঝে মাঝেই পত্রিকার উপর চড়াও হওয়া আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। কিন্তু কী করা- পত্রিকা এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপ-পত্রিকা।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।