আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আঁস্তাকুড়ে মরে পড়ে থাকা বেড়াল

.

সেই কখন থেকে ডাকছি! কোনো সাড়া নেই! রাস্তার পাশে আঁস্তাকুড়ে মরে পড়ে থাকা একটি বেড়াল। বাঁকানো শরীর। শক্ত হয়ে আছে। দেখলেই বোঝা যায়। মুখটা হা করা।

পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে ব্যস্ত হয়ে উঠছে সবার ডান হাত। আর আমি অবাক হয়ে ভাবছি দুনিয়ার সব বামহাতি গেল কই! ধন্য মৃত্যু তোমার, চোখ উল্টানো নিথর-ঘুমমগ্ন বেড়াল হে! আঁস্তাকুড়টা ঘনক হতে পারে নি। উপরে ছাদ নেই। তারউপর মেইনগেইটটা আজীবন খোলা। গেইটে দরজা নেই।

শেওলা ধরা কংক্রিটের দেয়ালটা ওখানে আর জোড়া লাগে নি। সেই গেইট দিয়ে ভুড়ির মতো বেড়িয়ে আছে সমস্ত আবর্জনা। একটা শিল্পিত ভঙ্গীতে। আহ! উপরে ছাদ নেই! দেয়ালগুলো কাকের আড্ডাখানা। শেওলাগুলো স্থায়ীবাসিন্দা।

কা কা, কা কা। দুএক কদম টুকরো টুকরো লাফ। ঠিক কাকের মতো করে ঘাড় বাঁকানো। ডানে। বায়ে।

কাকগুলো দেখতে সত্যিই কাকের মতো। ঠিক সাড়া না। তবে ভেতরে নড়াচড়ার শব্দ। খুব মৃদু! কড়া নেড়েই চলেছি। সম্ভাবনায় বেড়ে যাওয়া দ্রুততায়।

কাকটার মসৃণ ল্যান্ডিং ছাদহীন ঘনকের ভেতর। আরও কয়েক কদম টুকরো লাফ। ছোট্ট ছোট্ট। সামনে এগোনো। পেছনে ফেরা।

আলুর খোসায় কয়েকটা ঠোকর। কয়েক কদম টুকরো লাফ। সামনে-পেছনে। ছোট্ট ছোট্ট। মাছের আইশ, পাকস্থলী-নাড়িভুড়ি।

কিছুক্ষণ প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান। বেড়ালটা তখনও ঘুমে। শক্ত শরীরে। পাশ দিয়ে তখনও ব্যাস্ত ডানহাতিরা। মাঝে মাঝে দুএকটা মোটর সাইকেল।

একই লয়ে স্যান্ডেলের ঘষার আওয়াজ, আঁস্তাকুড়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বেড়ে যাওয়া লয়। অনেক বিরতী দিয়ে একটা দুটো রিক্সার বেল। খসে পড়া নারকেল গাছের খোসার আওয়াজ। মাথার উপর কয়েক ডাল পাতা। তার ফাঁকে স্কুল পালানো সূর্যদুপুর।

বেড়ালটা ঘুমে। শক্ত শরীরে। এক ঝাঁক মাছিদের নিয়ে। মাছিরা ব্যস্ত সিম্ফনি রচনায়। স্ট্রিং ছাড়া বুড়ো অর্কেস্ট্রায়।

বিছানা থেকে নামার শব্দ। চুড়ির মৃদু হাসি। কল্পনায় চুলের মধ্যে হাত চালানো। এলোচুলকে বশে আনা। মেঝেঘষা শাড়ির আঁচল।

ঘষাহাঁটার ক্রমশ ফেইডইন। কড়া নাড়ানোর থেমে যাওয়া। কড়া নাড়ানোর থেমে যাওয়া। বেড়ালটা তখনও ঘুমে। শক্ত শরীরে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।