আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জালছেঁড়া নদী- শহীদুল ইসলাম মুকুল

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

কবিতা বিষয়ে কোনো মন্তব্য চলে না, এটা আমার নিজস্ব বক্তব্য হতে পারে বড়জোর। কোনো কবিতা কখন কিভাবে পাঠকের অন্দরমহলে ঢুকে পড়বে, কেনো তার প্রিয় হয়ে উঠবে এই গোপন সংবাদ আসলে কখনই জানা হয় না মানুষের। প্রত্যেকে নিজস্ব অভিজ্ঞতার মাপে কবিতা যাচাই করে, যারা কবিতা লিখে এবং যারা পাঠক, উভয়েই আসলে অভিজ্ঞতার আলোক ফেলে তন্নতন্ন করে খুঁজেও কবিতার ব্যকরণ পায় না। আমি নিতান্ত সাধারণ পাঠক, হয়তো কবিতা পড়ি না তেমন করে, কিংবা আমার তেমন কবিতা বিলাস নেই। সুতরাং গায়ের উপরে মহাদেব সাহা এসে পড়লে দুঃখিত বলে সরে যেতে কুণ্ঠিত হই না।

অন্য কেউ হলে হয়তো মুখের রেখা কুঁচকে যেতো সামান্য, হয়তো ভেতরে একটা গালি উঠে আসতো, কিন্তু মহাদেব সাহা গায়ের উপরে হঠাৎ এসে পড়লে এই গালি উঠে আসে না, বরং মাথার ভেতরে গুণগুণ করে করুণা করে হলেও চিঠি দিও- কবিতা পাঠক যখন কবিতা লিখতে শুরু করে তখন কবিতার শব্দাবলী বলে নির্দিষ্ট এক ঝাঁক শব্দের সহবাস করতে চায়, যদিও কবিতা লিখবার নিজস্ব ব্যকরণ নেই, কবিতা কি প্রকারে কবিতা হয়ে উঠতে পারে এমন কোনো নির্দিষ্ট প্রকরণ নেই, সুতরাং স্টাইল কিংবা ফ্যাশনের মতো কবিতার পালাবদল ঘটে না, আধুনিক উত্তরাধুনিক এইসব চলতি কথার ফ্যাশনে কবিতা আসে না। আমরা উত্তরাধুনিক কবি, আমরা আধুনিক বলে হেঁদিয়ে মরা মানুষেরা শুধুমাত্র চালিয়াতি করে যায় কবিতার বাজারে। আমার কবিতার প্রতি মোহ কাটে, অবশ্য কবিতার ভুত চলে গেলে ভালোই লাগে, নিজেকে নির্ভার মনে হয়। মুকুলের কবিতার বই কিনেছিলাম, এবারের বই মেলার প্রথম কেনা বই, কবিতা পড়ে সমালোচনা লিখতে চাই না, বিশেষত কবিতার সমালোচনা করবার চেষ্টা করাটাও ঠিক হবে কি না বুঝতে পারি না, গল্প বলবার ধাঁচ, বাক্য বিন্যাস সব মিলিয়ে কথা সাহিত্যের বিষয়ে নিজস্ব পাঠের অভিজ্ঞতা থেকে ঘাটতি বলে দেওয়া যায়, কিন্তু কবিতার সূত্র নেই কোনো, তাই মুকুলের কবিতা বিষয়ে আমার অভিমত বলা যেতে পারে, সেটা পাঠকের অভিমত, কোনো ভাবেই কাব্যসমালোচনা নয়। শব্দের অলংকরণের ঝোঁক এড়ানো কঠিন, খুব একটা সহজ নয় এই প্রবণতা থেকে নিজেকে বিযুক্ত রাখা, এমন কি আমার নিজের মনে হয়, কবিতা আদতে মুহূর্তের একটা অনুভব।

কবিতার অবয়ব ফুটে উঠবার আগেই একটা পংক্তি কিংবা এক জোড়া পংক্তি অলৌকিক ভাবে চলে আসে স্মৃতির ভেতরে, এরপর সেই একজোড়া পঙক্তিকে সম্বল করে হাতড়ে বেড়ানো সম্পূর্ণ অবয়ব আদতে কি হতে পারতো। দীর্ঘ দিনের অভ্যাসে সেই সীমিত আঁচড় থেকে একটা মোটামুটি দৃশ্য তৈরির পারদর্শীতা পেয়ে যায় পোশাকি কবি, কিন্তু কবিতার কবিতত্ব সেখানেই, একটা দুটো বিচ্ছিন্ন দাগ কেটে যাওয়া পঙক্তিতে। মুকুলের সবগুলো কবিতা ভালো এমনটা বলা যাবে না, অন্তত আমার নিজের কাছে সবগুলো কবিতা ভালো লাগে নি। অবশ্য একেবারে আনকোরা কবিতা লেখা সম্ভব নয়, বহুল চর্চিত অনুভুতির নানাবিধ প্রকাশ হয়েছে পৃথিবীতে, আমাদের সবগুলো কথাই হয়তো বলা হয়ে গেছে, এরপরও আমরা নতুন করে কিছু কথা বলতে চাই, এই নতুন বলতে চাওয়া কথাগুলো কখনও পুরোনো কথার অনুভব নিয়ে আসে মনে, একটা কবিতা পড়তে গিয়ে অনাবশ্যক অন্য একজনের কবিতা মাথায় আসে, এবং এই মাথায় আসাটাই মূল বিপদ, তখনই কবিতাকে অনন্য মনে না হয়ে মনে হতে থাকে অন্য কারো কবিতার সম্প্রসারণ। তবে এরপরও পড়বার মতো কবিতা আছে কয়েকটা, যেগুলো হয়তো কবিতা হয়ে উঠতে পারতো, অন্তত আরও সচেতন হলে ভালো কবিতাও হয়ে যেতে পারতো সেসব।

এইসব কেনো আমার ভালো লাগলো এটা আমি নিজেও বলতে পারবো না। তবে ভালো লেগেছে, এই অনুভবের সংবেদ পাই- যখন তোমার শহরে যাই- অবশেষে আঠারোতেই স্থির তুমি গন্তব্য অন্য সবগুলো কেমন কেমন বলতেই হবে। তবে এটাও কম নয়, অভিজ্ঞতায় চেনা দৃশ্যেও অভিনবত্ব আনা যায়, শব্দের দক্ষ মোচড়ে যেকোনো সাধারণ দৃশ্যও অলৌকিক হয়ে উঠতে পারে, এবং এইসব শব্দের ভাড়ার থেকে উপযুক্ত শব্দ খুঁজে আনবার সক্ষমতাই কবিত্ব। অন্তত আমার এমনটাই মনে হয়। আশা করবো মুকুল যদি পরবর্তীতে কোনো দিন কবিতার কারাবাসে যায়, অলিখিত শব্দের ভাঁড়ার থেকে যোগ্য শব্দ জুড়ে জুড়ে এমন কবিতার বই ছাপাবে যেখানে প্রতিটা কবিতাই নিজস্ব পরিচিতি নিয়ে আসবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।