আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপদার্থের পিরিতি দিবস- শেষ খন্ড...

দ্যা ব্লগার অলসো.....

অপদার্থের পিরিতি দিবস- ১ম খন্ড যদিও মাস্টারমশাই আক্কাসের গুরু বিশেষ; তথাপি তিনি তাহার শিষ্যকে চিনিতে ভুল করিয়াছিলেন। জনসম্মখে ব্যাপক অপমানের পর আক্কাসের হৃদয়ে ভালোবাসার ফুল্গুধারা পূর্বের চাইতে আরো বেগবান হইলো। জিদ চাপিয়া গেলো তাহার। মাস্টারমশাইকে শায়েস্তা করার নিমিত্তে এবার আরো মারাত্বক পরিকল্পনা হাতে লইলো সে। উহার সোমত্ত কইন্যার দিকেই নেক নজর ঢালিলো আক্কাস।

মাস্টারমশাইয়ের কইন্যা আক্কাসের এক ক্লাস সিনিয়র। মানে দশম শ্রেনীর বিদ্যার্থী। উহাকে কি করিয়া পটানো যায়, ভাবিয়া ভাবিয়া গলদঘর্ম হইলো সে। আক্কাস হিন্দি সিনেমার পোকা বিশেষ। বালিকা পটানেরা অভিনব পদ্ধতি ওইখান হইতেই বাছিয়া লইলো সে।

একদিন বিদ্যালয় ক্যান্টিনে কইন্যাকে একাকী পাইয়া পথরোধ করিয়া দাঁড়াইলো আক্কাস। এক হাতে গোলাপ ফুল, অন্যহাত বুকে রাখিয়া কইন্যার সম্মুখে নতজানু হইয়া, আঁখিযুগল বন্ধ করিয়া, বিশেষ ভঙ্গিমায় বলিলো-‘’তোমারে আমার মনের রানী বানাইতে চাই, বলো; আমার বাচ্চাদের মা হবে কি????’’ দশম শ্রেনীতে অধ্যয়নরত বালিকার হৃদয়ে একটি কথাই ঘুরপাক খাইতে লাগিলো। এই বদমাশ, ইতর বালক, প্রেম, ভালোবাসা সবোপরি বিবাহের পূর্বেই তাহাকে জননী হইবার কুপ্রস্তাব করিতেছে!!!!!! আক্কাস যখন আঁখি খুলিলো, মাস্টারমশাইয়ের কইন্যা তখন প্রস্থান করিয়াছে, কিন্তু রাখিয়া গিয়াছে আক্কাসের কপোল জুড়ে চপেটাঘাতের চিহ্ন!!! এভাবেই আক্কাসের ভালোবাসার তরী দ্বারে দ্বারে ঠোকর খাইতেছিলো। এঘাট-ওঘাট ঘুরিয়া শেষতক জুলি নামের অপরুপার বন্দরে ভিড়িতে চলিতেছে। ওয়াটার পার্কের দ্বার সম্মখে জুলিকে দেখিয়া আক্কাসের চিত্ত প্রফুল্ল হইয়া উঠিলো।

প্রতিবার ডেটিং এর সময় জুলির দুই বগলে নূন্যতম দুইজন বান্ধবী আঠার মতো লেপটে থাকে। জুলির জন্য যতোখানি বাজেট, ঠিক ততোখানি ওই দুইটার জন্যও প্রতিবার বরাদ্দ করিতে হয় আক্কাসকে। আজ উহাকে একাকী দেখিয়া যাহারপরনাই প্রসাদ অনুভব করিলো সে। সত্যিই বালিকার বোধোদয় হইয়াছে। ক্ষনিক পরেই ভুলখানা ভাঙিয়া গেলো তাহার।

আক্কাসকে দেখিবা মাত্রই চঞ্চলা হরিনীর মতো ছুটিয়া আসিলো জুলি। বলিলো-‘এতো লেট করলা কেন তুমি? আমার ব্ন্ধুরা সব তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে কোথায় জানি চলে গেলো। ‘ মুঠোফোনে আঙ্গুলের ইশারায় দ্রুত সংকেত (মিসকল) দিতে শুরু করিলো বালিকা। ক্ষনিক পরেই ভেড়ার পালের মতো কোথা হইতে আসিয়া জড়ো হইলো সব। গুনিয়া দেখিলো আক্কাস।

সাকুল্যে সাতজন। পাঁচজনকে বালিকা বলিয়া সনাক্ত করিতে সমর্থ হইলো সে। বাকী দুইজনের কাঁধ পযন্ত লম্বা কেশরাজি এবং কর্নের দুল সমেত সাজগোজ দেখিয়া উহাদের লিঙ্গ সনাক্ত করা মোটামুটি দুঃসাধ্য হইয়া দাঁড়াইলো আক্কাসের জন্য। তবে জুলি পরিচয় পর্ব সারিয়া লইবার পর নিশ্চিত হইলো আক্কাস; বাকি দুইজন বালক। তবে অবশ্যই ডিজুস বালক!!!! পার্কের প্রবেশমূল্য জনপ্রতি দুইশত টাকা।

টিকেট লইয়া জুলি আক্কাসের পানে তাকাইলো। দেরি না করিয়া টাকা বাহির করিয়া দিলো সে। ভেতরে ভেতরে তখন দশ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এর আভাস পাইতেছিলো বেচারা। টিকেট খরিদ করার যা দেরি; হুড়মুড় করিয়া অন্দরে প্রবেশ করিলো ডিজুষ এর দল। পশ্চাতে উহাদের স্রেফ অনুসরন করিয়া যাইতে লাগিলো আক্কাস।

উহার মনে হইলো; যেন টিকেটের জন্যই বান্ধা ছিলো ভেড়াগুলো!! ওয়াটার পার্কের বিশেষ আকর্ষন হইলো, বিজাতীয় গানের সহিত ফ্রী স্টাইলে কোমর দুলানো এবং জলকেলি। ইহার জন্য জনপ্রতি ফি একশত টাকা। যথারীতি জুলির তির্যক চাহনি এবং অসহায় আক্কাসের মানিব্যাগের স্বাস্থ্যহানি!!! স্বভাবতই জলকেলির প্রতি বিন্দুমাত্র আকর্ষন বোধ করিলোনা আক্কাস। তাহার আঁখি কোনে যে পরিমান জল জমা হইয়াছে উহা ওয়াটার পার্কের অগভীর লেকের চাইতে ঢের বেশি গভীর। পুরুষমানুষের কাঁদিতে নাই; এ অমর বানী মনে করিয়া কান্না হইতে নিজেকে বিরত রাখিয়াছে সে।

তথাপি ডিজুষের দল তাহাকে বিজাতীয় ভাষায় আহ্বান জানাইতে লাগিলো- ‘’হেই ডুড, কাম অন!! উইদআউট হ্যাভিং ইট, ইউ কান্ট ইমেজিন , হাউ নাইস ইট ইজ!!’’ জলকেলির পর ভেড়াগুলার ক্ষুধা মাথাচাড়া দিয়া উঠিলো। পার্কের চাইনিজ রেস্টুরেন্টে রাক্ষসের মতো চাটাচাটির পর তৃতীয়বারের মতো জুলির মদির কটাক্ষ এবং.........! সবেশেষে ডিজুষ এর দল ওয়াটার পার্কের এক কোনে সবুজ ঘাসের উপর গোল হইয়া বসিলো। মৃতপ্রায় আক্কাস তখন এই রাক্ষসের দল হইতে পরিত্রানের উপায় খুঁজিতে ছিলো। কিন্তু জুলির গলার স্বর কানে যাইতেই নড়িয়া-চড়িয়া বসিলো সে। ‘গাইজ; আজকের এই পার্টি কিন্তু আক্কাস ভাইয়ের জন্যই ছিলো।

বিশেষ একটা কারনে আজকে তাকে এখানে ডেকেছি আমি। তারে অনেক ঘুরাইছি। আর না; এবার সময় এসছে মনের কথা বলার’ কথাগুলো কর্নকুহরে প্রবেশ করিতেই মৃতপ্রায় আক্কাসের দেহ যেন নতুন করিয়া প্রান ফিরিয়া পাইলো। এতোক্ষন তাহার উপর যে স্টীমরোলার চালানো হইয়াছিলো, বেমালুম তাহা ভুলিয়া যাইয়া জুলির পানে জ্বলজ্বলে চোখে তাকাইয়া রহিলো সে। সবকিছুর পরও জুলির ভালোবাসা তাহার কপালে নসিব হইতে চলিতেছে; ইহা অনুভব করিয়া যাহারপরনাই প্রফুল্ল বোধ করিতে লাগিলো সে।

বালক-বালিকাদের হষধ্বনির তীব্রতা কমিয়া আসিতে শুরু করিলো জুলি, ‘আজ ভালোবাসা দিবস। আর আজকের দিনটাকেই আমি বেছে নিয়েছি ভালোবাসার কথা বলার। হ্যাঁ, আমার ভালোবাসার মানুষ আর কেউ নয়..আমাদেরই একজন....সেজান!!!!!!!!’ ধাক্কাটা হজম করিবার পূর্বেই আক্কাস ফ্যাকাসে নেত্রে অবলোকন করিলো- তাহার ভালোবাসার পাত্রীকে জনসম্মুখেই জড়াইয়া ধরিয়া চুম্বন করিতেছে সেজান নামের ভাগ্যবান বালক!!! পরিশিষ্ট: সেই দিন ওয়াটার পার্ক হইতে হাঁটিয়া আসিয়াছিলো আক্কাস। তাহার পকেটে গাড়ীভাড়াও অবশিষ্ট ছিলোনা। এই ঘটনার পর বালিকাদিগ হইতে মুখ ফিরিয়া লইয়াছিলো সে।

পিতা-মাতার বাধ্য সন্তানে পরিনত হইয়াছিলো। আর প্রত্যেক ভালোবাসা দিবসে কক্ষের দরোজা-জানালা বন্ধ করিয়া বসিয়া থাকিতো। বিদ্যালয়ে মাস্টারমশাই তাহাকে অপদার্থ বিশেষনে বিশেষিত করিতেন। মাস্টারমশাইয়ের উপর দারুন রাগ হইতো তার। যাহার ভর, আকার ও আয়তন আছে তাহাকেই পদার্থ বলা হয়।

আক্কাস বুঝিতে পারিতোনা, এ সকলি তাহার মাঝে বিদ্যমান থাকিবার পরও কেন তাহাকে অপদার্থ বলা হইতো। এখন উপলব্ধি করে, আসলেই সে একটা অপদার্থ। আর অপদার্থের পিরিতি দিবস উদযাপন করিতে নাই!!!!!!!!!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।