আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মনে আছে সবকিছু

ভুল করেও যদি মনে পড়ে...ভুলে যাওয়া কোন স্মৃতি.. ঘুমহারা রাতে..নীরবে তুমি কেঁদে নিও কিছুক্ষণ...একদিন মুছে যাবে সব আয়োজন...

'সাপ্তাহিক' 'ভ্যালেন্টাইনস ডে' সংখ্যায় প্রকাশিত চিঠি। .. ........... নী, আমি লিখতে শুরু করেছি। এক সময় যে কাহিনীটা লিখতে তুমি খুব করে বলতে, এতদিন পর সেটা আমি লিখতে শুরু করেছি। প্রশ্ন জাগছে মনে, কোন কাহিনী? জানি, তুমি আজ আর মনে করতে পারবে না। একবার একটি সাপ্তাহিকে আমার লেখা ছোট একটা গল্প পড়ে তুমি খুব আহ্লাদের সুরে বলেছিলে, তোমার-আমার কাহিনীটাও লিখতে।

তুমি চাইতে, তোমার-আমার জীবনের টুকরো টুকরো ঘটনাগুলো নিয়ে একটা উপন্যাস হবে, আমাদের ভালবাসার দিন-রাত্রির কথা জানবে সবাই। আমি মৃদু হাসতাম, বলতাম, আমাদের ভালবাসা আবার লেখার মতো এমন কি-ই বা? ভালবাসার বৃষ্টিতে ভেজা আর দশটা যুগলের মতোই তো- বিশিষ্ট অথবা অবিশিষ্ট পরিচয়-পর্ব, একসাথে পথচলার ফাঁকে প্রথম সূর্যের অনুভব, ভালবাসার নীরব-বাঙময় প্রকাশ, হাসি-কান্না-আনন্দ-বেদনার চির-পরিচিত প্রাত্যহিকতা - এই তো। তুমি ঠোঁট বাঁকিয়ে বলতে, লিখতে পারলে আমাদের জীবনের টুকরো টুকরো ঘটনাগুলোই দেখবে হয়ে উঠবে এক একটি চমকপ্রদ রোমান্টিক গল্প। হ্যাঁ, এতদিন পর আমার সত্যিই মনে হয়, ঠিকই বলেছিলে তুমি। আমাদের প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি সংলাপই হতে পারে রোমান্টিক গল্প বা উপন্যাসের অংশ।

কিন্তু আমি গল্প বা উপন্যাস লিখতে বসিনি। লিখছি ডায়েরীর মতো করে। ঐ ডায়েরীটাতেই, যেটা তুমি আমাকে উপহার দিয়েছিলে, যেটার প্রথম পাতায় তোমার-আমার আঙুলের ছাপ পাশাপাশি বসানো। কেন লিখছি, তার পরিষ্কার কোন উত্তর আমার কাছে নেই। ও লেখা তুমি কখনো পড়বে কিনা তা-ও জানিনা।

আমিও কাউকে পড়তে দেব কি না তা-ও সময়ই ঠিক করে দেবে। একসময় চাইতে, আমাদের গল্প সবার মুখে মুখে ফিরবে। এখন নিশ্চয়ই তুমি তা চাওনা। ফেলে আসা, ভুলে যাওয়া অতীতের কোন আঁচই তুমি তোমার বর্তমানে পড়তে দিতে চাইবে না, তা জানি। তবু লিখছি।

একদম প্রথম দিন থেকে শুরু করেছি আমি। সে-ই প্রথম যেদিন তুমি অ্যানাটমী ডিসেকশন ক্লাসে হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞেস করলে - ‘তুমি মারুফ?’- সেদিন থেকে। এর পরে, একদিন সন্ধানীর সামনে তাড়াহুড়ো করে চলতে গিয়ে তোমার সাথে জোর ধাক্কা খাওয়া, মেডিক্যাল কলেজের চত্বরে তোমার জন্মদিনের কেক কাটা, ক্যান্টিনে আমার অ্যাপ্রোনের উপর ছলকে তোমার কাপের চা পড়ে যাওয়া, গজনীতে পিকনিকে গিয়ে তোমার পা মচকানো, ফার্ষ্ট ইয়ার ফাইনালে ফিজিওলজি পরীক্ষা খারাপ দেয়ায় তোমার অঝোর কান্না, সব-ই লিখছি। তবে হ্যাঁ, সব ঘটনার তারিখ ঠিক-ঠাক মনে নেই। ঐ ১২ সেপ্টেম্বরের আগেরগুলোর।

১২ সেপ্টেম্বরের সন্ধ্যার পরের সব ঘটনা দিন-তারিখ-সময় সহ এখনও মনে আছে আমার। ‘বসুন্ধরা সিটি’তে প্রথম ছবি দেখা, হুট করে রাতে বাসে চড়ে চট্টগ্রামে ফারাহদের বাসায় চলে যাওয়া, পহেলা ফাল্গুনের শাড়ি কেনার জন্য তিনদিন মার্কেট চষে বেড়ানো, পহেলা বৈশাখের সেই ভোর, চত্বরে বসে কাটিয়ে দেয়া সারারাত, ধানমন্ডি লেকের ধারে বৃষ্টি-ভেজা ঐ বিকেলটা, আমার উপর রাগ করে তোমার ৫টা রিলাক্সেন খাওয়া.... আরও কত ছোট-বড় ঘটনা, সব লিখছি। তুমি কি আশ্চর্য হচ্ছ? আমাকে ভুলে না গিয়ে থাকলে তোমার আশ্চর্য হওয়ার কথা না। এক সময় তুমি খুব আশ্চর্য হতে আমার মনে রাখার ক্ষমতায়। ১৪ সেপ্টেম্বর আমরা রিক্সায় করে কাঁটাবনের ‘অষ্টব্যঞ্জন’-এ যাওয়ার সময় তুমি উচ্ছ্বসিত স্বরে বলেছিলে, ‘আজ আমরা প্রথম একসাথে রিক্সায় চড়লাম।

’ আমি তোমাকে শুধরে দিয়েছিলাম- ‘উহু, আমরা একসাথে রিক্সায় চড়েছি আরও একবার, দেড় বছর আগে। ফার্ষ্ট ইয়ার এন্ডিং-এর প্রোগ্রাম শেষ হতে রাত নয়টা বেজে যাওয়ায় আমি তোমাকে তোমাদের বেইলী রোডের বাসায় পৌঁছে দিয়েছিলাম। ’ তুমি খুবই অবাক হয়েছিলে, আমার কিভাবে এতো আগের ঐ ঘটনা মনে আছে ভেবে। তুমি মাঝে মাঝেই আমাকে ক্ষেপাতে চেষ্টা করতে, আমি নিশ্চয়ই একদম প্রথম দেখা থেকেই তোমার প্রেমে পাগল হয়ে আছি, সেজন্যই তোমার সাথে ঘটা প্রতিটি ঘটনাই আমি মনে রেখেছি নিখুঁতভাবে। আমি প্রতিবাদ করিনি।

হয়তো, হয়তো একদম প্রথম দিন থেকেই, প্রথম দেখা থেকেই আমি ভালবেসেছি, অথচ দুজনেরই তা বুঝতে সময় লেগেছে আড়াই বছরেরও বেশী। তোমার ব্যাপারে আমার মনে রাখার ক্ষমতা এখনও একই রকম আছে, নী। পরের আড়াই বছরের প্রতিটা দিন, প্রতিটা ক্ষণ এখনও আমার মনে আছে। তোমার গায়ে-হলুদের আগের দিন ক্যাম্পাসে দেখা হওয়ার সময় পর্যন্ত, সবকিছু। আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ঐ দিনগুলো, আমার বাকী জীবনের জন্য সবচেয়ে বড় হাহাকারও যে।

এই কাহিনী না লিখলে আমি কয়েক বছর পর ভুলে যাবো, তা কিন্তু নয়। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তোমার স্মৃতিগুলো তেমন-ই সজীব থেকে যাবে। তবু লিখছি। তোমাকে লেখা কিন্তু পোস্ট না করা অসংখ্য চিঠির মতো এটিও একটি। তুমি চিঠিগুলো কখনো পড়বে, সে প্রত্যাশা করার মতো ধৃষ্টতা আমার নেই।

আবার কে জানে, খুব অবচেতনে হয়তো ক্ষীণ আশা থেকে যায়, কোনো একদিন, সে আজ থেকে ২০-৩০-৪০ বছর পরেই হোক, কিংবা হোক না আমার মৃত্যুর পর.. হয়তো কোন দিন তুমি এই চিঠিগুলো পড়বে। হয়তো তোমার মনে কোনও দাগই কাটবে না চিঠিগুলো। হয়তো চিঠিগুলো বা ডায়েরীটা তোমার স্মৃতি থেকে আমার ছবিটা ভাসিয়ে তুলতেও ব্যর্থ হবে। কিংবা হয়তো....

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।