আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিন-বদলের স্বাক্ষী হলাম

:)

পেপারে খবর পড়ছি প্রতিদিন,দেশ নাকি সম্পূর্ণ বদলে যাচ্ছে। প্রতিদিন অনেক অনেক বদলানোর খবর। নিজের চোখে দিন বদল দেখছিনা তাই আফসোস ছিল ! আজকে দেখা হয়ে গেল। ভাষার মাসে আমি ভাষাহীন হয়ে গেলাম। ডিপার্টমেন্ট এর অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম একটা কাজে।

ফার্স্ট ইয়ারের ছেলে মেয়েরা ভর্তির কাজ করছে। অনেক গার্জিয়ান ও আছেন। একটা কি দেড়টা বাজে। এপ্লাইড ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট থেকে ক্লাস করে বের হয়ে আসা একটা বাচ্চা টাইপ ছেলের ঊপর কোথা থেকে যেন ঝাঁপিয়ে পড়লো দশ বার জন ছেলে !নাহ , শুধু ছেলে বললে ভুল হবে, তারা গুন্ডা। নাহ..তারা আমারই ইউনির স্টুডেন্ট ! ছাত্র এরা !! পড়তে এসেছে !হ্যাঁ..ছাত্ররা তো পড়তেই আসে !! শুকনা মত ভিকটিম ছেলেটা স্যারদের ডাকছে চিৎকার করে।

মুহুর্তে জায়গা খালি করে সব স্টুডেন্টসরা, গার্জিয়ানরা , স্টাফরা সরে গেল, দূরে গিয়ে দেখছে ,কিন্তু কারো এতোটুকু সাহস নেই বাচায় ছেলেটাকে। কোন "মানুষ" আসলে ছিলনা। কিছু ছেলে সবাইকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার মহান (!) দায়ীত্ব পালন করছিল। যাতে ঝামেলাহীন ভাবে ছেলেটাকে শেষ করে ফেলা যায়। এরি মধ্যে চিৎকার "রড আন্, রড"! আমি তাজ্জব হয়ে দেখলাম ,ইন্সট্যান্ট জিওলজী ডিপার্টমেন্টের পেছন থেকে কমলা শার্ট পরা একজন বের হয়ে আসলো ,হাতে দুইটা মাঝারী সাইজের রড।

একটা স্টিলের,পরিষ্কার দেখেছি। দশ বারো জন একটু সরে জায়গা করে দিল,তারপর শুরু হলো সমানে রড দিয়ে পেটানো। উফফ... অসহায় ছেলেটা .... কেউ নেই হাতটা ধরে!! আমি আমাদের অফিসের একজন স্টাফকে বল্লাম,আপনি কিছু একটা করেন। উনি নিরুপায় দৃষ্টিতে তাকালেন। রড দিয়ে পেটানোর দৃশ্য দেখার মত সহ্যশক্তি সবার হয়না, এর জন্যই হয়তো একটা মেয়ে এগিয়ে গেলো চিৎকার করে ,সাহায্য করতে।

কিন্তু দশ জনের বিরুদ্ধে সেকি আর পারে!! মেয়েটাকে এভাবে এগিয়ে যেতে দেখেও ওদের ভাবান্তর হলোনা । এ সময় এপ্লাইড ফিজিক্সের চেয়ারম্যান স্যার বেড়িয়ে এলেন, দৌড়ে গিয়ে রড হাতে পেটাচ্ছিল যে, সেই ছেলেটাকে চেপে ধরলেন , কিন্তু স্যারকে সহ-ই সন্ত্রাসী ছেলেটা দৌড়ে ডীন অফিসের রাস্তা ধরে পালাতে লাগলো , স্যারকে দেখে বাকিরা ছত্রভংগ হয়ে গিয়েছিল খানিক্ষনের জন্য, মেয়েটা এসময় রক্তাক্ত ছেলেটাকে সরিয়ে আনলো,ধরে ধরে ডিপার্টমেন্টের ভেতরে নিয়ে গেল। ওদের একজন ম্যাডাম আসলেন এসময়ে। বলছিলেন ,দেশটা কি মগের মুল্লুক নাকি?এভাবে ছাত্রদেরকে মেরে যাবে ? ছেলেটার দাড়ানোর অবস্থাও ছিলনা দেখেছি। এতদিনের বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে হলের মারামারির খবর শুনলেও ডিপার্টমেন্টের মধ্যে , এভাবে কোন ছাত্রকে মারতে এই প্রথম দেখলাম।

শুকনা ,বাচ্চাটাইপ নিরীহ একটা ছেলে। শিক্ষকরা তাকে বাঁচাতে বের হয়ে এসেছেন , তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। একজন স্যার বলছিলেন , "এই ছেলেটা মাত্র আমার ক্লাস করে বের হয়েছে"। সামান্য নিরাপত্তা নেই আজকে এসব অমানুষদের হাত থেকে। কোন আদর্শ নেই,কোন মনুষত্য নেই!! ভিন্নমত হলেই পেটাতে হবে ? যারা আজকে ভর্তী হতে আসছিল ,সাথে বাবা-মা ,কি দেখে গেল তারা ? বাবা-মায়েরা কি বুঝে গেল? পরিবর্তন ? এ কোন ধরনের পরিবর্তন ? আমি বুঝিনা !!! আমাদের কি কিছুই বলার নেই ?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.