আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুসলমানের হাসি

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর শিক্ষামূলক হাসির গল্প ,মুসলমানের হাসি, সকল খন্ড একত্রে বইটা দেখলাম ইউনিভার্সিটির পাশের ফুটপাতে, বইটির অনুবাদ করেছেন হযরত মাওলানা মুফতী আবদুল-আল-মুমিন তিনি এম এম এ ফাস্ট ক্লাশ ফাস্ট। যদিও এম.এম ডিগ্রীর ব্যপারে আমার তেমন জানাশোনা নেই, এমন কি রাস্তায় স্বর্ণপদক প্রাপ্ত বিখ্যাত জোতিষদের বিজ্ঞাপনেও দেখি অনেক সময় লেখা থাকে এম এ ডি-লিট করা জোতিষ আছে বাজারে। সেখানে মুফতী আবদুল আল মুমিনের ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট হওয়াটা অবশ্যই গর্বের বিষয়। আরও গর্বের হতে পারতো যদি তিনি ফার্স্ট ক্লাশ ফার্স্ট হতে পারতেন, সেটা হতে না পারায় অবশ্য লেখক কিংবা প্রকাশকের তেমন সমস্যা হয় নি। অনেক বই ছিলো সেখানে, এমন কি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি কিংবা ক্লিনিক্যাল কেমিস্ট্রি এইসব ভারি ভারি বইয়ের সস্তা বাজার থেকে থানবীর বই কেনার আগ্রহ জন্মালো কেনো? উত্তরটা নেহায়েত সাধারণ, হাসির গল্প কিংবা চটুল গল্প আমার তেমন খারাপ লাগে নি কখনই, এমন কি একটা সময় নিয়মিত কৌতুক পড়ে অনুবাদের চেষ্টা করেছি, সফল এবং ব্যর্থ অনুবাদও করেছি কিছু দিন, কিন্তু কখনই এমন ধর্মীয় চিহ্নসহ হাসির গল্পের সন্ধান পাই নি, মুসলমানের হাসি গল্পটাতেই একটা চমক ছিলো বলা যায়।

সুতরাং আমিও আগ্রহী হলাম, মুসলমানের হাসি কি কারণে অন্য সবার চেয়ে আলাদা গণ্য হতে পারে, এখন পর্যন্ত যতটুকু পড়েছি তাতে তেমন হাসতে পারি নি, কিংবা আমার স্থুল রসবোধ হয়তো অনেক বড় একটা বাধা, সুক্ষ্ণ, শালীন এবং মুসলমান হাসির গল্প আমার মুখে হাসি আনতে পারছে না এটাতে আমি কিছুটা লজ্জিত তবে অনেকাংশেই আহত। আমার ধারণা ছিলো এত দিন আমার সেন্স ওফ হিউমার আছে, কিন্তু এখন বুঝলাম আমার ধারণা বিলকুল গলদ। আমি শিক্ষামূলক হাসির গল্প পড়ে কিছু শিখতেও পারছি না এমন কি হাসতেও পারছি না। গল্প যদি সম্পূর্ণ তুলে দিতে পারতাম তবে সেটা একটা কাজ হতে পারতো, কিন্তু সেটা মোটেও উচিত হবে না। একটা গল্প তুলে ধরি, শিয়া সাহেবের চুমা-চাটা- জালালাবাদ একবার হুজুর পাক এর কথিত জুব্বা মুবারাক এর প্রদর্শনী হচ্ছিল।

সেখানে কোরআন শরীফের এমন একটি কপিও প্রদর্শিত হচ্ছিল যা হযরত আলী এর স্বহস্তে লিখা বলে কথিত ছিল। দর্শনপ্রার্থীদের অনেক ভীড় ছিলো সেখানে। সবাই বড় আগ্রহ এবং মহব্বতের সাথে জুব্বা মুবারাক দেখছিলো কারণ সেটা রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সংগে সম্পর্কিত ছিলো। [ আমি এক সাথে এতবার ল্ল লিখি নি আগে মনে হচ্ছে এরপরে ল্লিখা লিখতে হবে] কিন্তু একজন শিয়া ভদ্রলোককে ব্যতিক্রম দেখা গেলো, তিনি জুব্বা মুবারাকের প্রতি আগ্রহী না হয়ে সেই কোরআন শরীফের দিকে এত আগ্রহী হয়ে উঠলেন যে চুমা-চাটা শুরু করে দিলেন। জুব্বার প্রতি ভ্রুক্ষেপও করলেন না।

এক সুন্নী ভদ্রলোক তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি এই কোরআন শরীফের দিকে খুব মনোযোগী হয়ে পড়েছেন দেখছি। শিয়া সাহেব বললেন, এই কোরআন শরীফ আমীরুল মুমেনীন হযরত আলী আলাইহিস সালামের পবিত্র হাতের লিখা যে তাই। যাই হোক ঘটনা সম্পূর্ন লিখতে ইচ্ছা করছে না, মূল বক্তব্য যা সংক্ষেপে লিখি, সুতরাং সুন্নী ভদ্রলোক শিয়া ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কি এটা বিশ্বাস করেন, শিয়া ভদ্রলোক বললেন তিনি এটা বিশ্বাস করেন যে এই কোরআন শরীর আলীর নিজের হাতে লেখা। শিয়াদের দাবি সুন্নীরা কোরআনের কাট ছাট করে ৪০ পারার বদলে৩০ পারা করেছে, বাকী ১০ পারা কোরআন শিয়াদের সংরক্ষণে আছে। সুতরাং সুন্নী ভদ্রলোক প্রস্তাব দিলেন যাচাই করে দেখা যাক এই কোরআন শিয়াদের কোরআনের মতো না কি সুন্নী কোরআনের মতো।

কিন্তু এই কথা শুনে দুই কোরআনকে মিলিয়ে দেখবার আগেই শিয়া ভদ্রলোকের মুখ শুকিয়ে গেলো, তার খাঁচার পাখী উঢ়ে গেলো, বুক দুরু দুরু কাঁপতে লাগিলো, কারণ আলীর নিজ হাতে লিখা কোরআনেও তারা ৪০ পারা দেখাতে পারবে না, অতিরিক্ত অংশ তারা নিজেরাই রচনা করে নিয়েছে। পবিত্র কোরআনকে না মানার একটা বাহানা মাত্র এটা বিষয়টা তৃতীয় বারের মতো পড়েও আমি এটার ভেতরের হাস্যরস উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হলাম। হতে পারে এটা হয়তো হাসির গল্পই, কিন্তু আমার কাছে অনেক বেশী উস্কানীমূলক এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর অপচেষ্টা মনে হয়েছে। যেমনটা মনে হয়েছে এই বইয়ের তৃতীয় হাসির গল্পটা পড়ে, সেই গল্পের সারমর্ম হলো, ইংরেজরা এই উপমহাদেশের একটি অকৃতজ্ঞ জাতিকে অগ্রসর ঃইবার সুযোগ করিয়া দিয়াছিলো, এবং অপর একটি কৃতজ্ঞ জাতিকে পশ্চাৎপদ করে রেখেছিলো, কিন্তু পরবর্তী কালে এর ফলাফল দেখে ইংরেজরা শত আফসোস আর দুঃখ করেছে। এর সাথে সংযুক্ত গল্পটি পুরোনো, এক ইঁদুরকে সাধু দয়া করে বিড়াল, কুকুর, বাঘ থেকে পুনরায় ইঁদুরের রূপান্তরিত করেন, এবং এই গল্পের পরিসমাপ্তি হলো, এটা আমাদেরই দোষ যে আমরা এই অকৃতজ্ঞ জাতিকে অগ্রসর করিতে করিতে এমন একটা অবস্থানে পৌঁছায়া দিয়াছি যেখানে দাঁড়িয়ে তারা আমাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলছে, এই জাতিটি বাস্তবিকই অকৃতজ্ঞ।

সুতরাং এই ঘটনা থেকে মুসলমানদের শিক্ষা গ্রহন করা উচিৎ। থানভী ১৯৪৩ সনে মৃত্যু বরণ করেন, তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ১০০০ টিরও বেশী, এই গল্পটিতেও মুলত সাম্প্রদায়িতাকেই পূঁজি করা হয়েছে। আমি একটু শংকিত হয়ে বিবেচনা করবার চেষ্টা করছি মুসলমানের হাসি আসলে কেনো আসে। তবে বইটি পড়ে একটাই উপকার হলো, মুসলিমদের হাসি কি রকম হওয়া উচিত সেটা সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া গেলো, এবং সেটা দেখে আরও একটা বিষয় বুঝলাম, আমার হাসিটা অনেক বেশী পৌত্তলিক। " পৃথিবী সামান্য কয়েক দিনের অবস্থান স্থল, এতে যত ইচ্ছা হেসে নাও।

অতঃপর পৃথিবী যখন মেষ[শেষ ] হয়ে যাবে এবং আল্লাহর সান্নিধ্যে উপস্থিত হবে, তখনই কান্নার পালা উপস্থিত হবে যা আর নিবৃত হবে না। " হজরত রসুলে পাক এর পবিত্র হাসি আমাদের শিক্ষা দিয়েছে কিভাবে হাসতে হয় এবং কতটুকু হাসতে হয়। আর কিভাবে হাসি বিনিময় করিয়া বন্ধু বান্ধবের হক আদায় করতে হয়। রসুলুল্লাহ যেভাবে হাসিতেন তাকে মুচকি হাসিই বলা যায়। তার হাসিতে জীবনে কখনই দাঁত দেখা যায় নি।

যে হাসিতে দাঁত দেখা যায় না, সে হাসি কখনই উচ্চস্বরে হয় না। আর এই মুচকি হাসিই মুসলমানদের হাসি। তবে হাসির গল্পে হাসি খুঁজে পাই নি এটা ভুল, একটা গল্প পড়ে বেশ কিছুক্ষণ হাসলাম, সেই গল্পটা দিয়েই শেষ করি। কোনো কোনো গায়র মুকাল্লেদ[ তথাকথিত আহলে হাদিস] এক আশ্চর্য বস্তু বটে। এবাদাতের মধ্যেও তারা হিংসা প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করে না।

নামাজের মধ্যে সশব্দে আমিন বলা নিঃসন্দেহে একটি সুন্নত আমাল, কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের উদ্দেশ্য থাকে যারা আমীল নিশব্দে বলে তাদের প্রতি বিদ্বেষ ছুড়ে মারা। আসলে শরীয়ত শুধু এই হিংসামূলক ফ্যাসাদকেই নিষেধ করে। এক এলাকায় এই মতভেদের তদন্তে এক ইংরেজ বিচারক নিযুক্ত হলো। বিচারক তদন্ত শেষে এক অবাক করে দেওয়া নিরপেক্ষ ফয়সালা লিপিবদ্ধ করলেন। লিখলেন - আমীন তিন প্রকার, একটি হলো সশব্দে আমীন, এটা শাফেয়ীর মাজহাব।

এর সমর্থনে অনেক হাদিস পাওয়া যায়। দ্বীতিয় প্রকার হলো নিঃশব্দে আমীন। এটা হানাফী মাজহাব। এর সমর্থনেও অনেক হাদিস আছে। তৃতীয় প্রকার হলো যারা নিঃশব্দে আমীন বলে তাদের প্রতি বিদ্বেষমূলক ভাবে এত উচ্চস্বরে আমীন বলা হয় যেনো শ্লোগান ছুড়ে মারছে, এটা কোনো ইমামের মাজহাব নয়, এবং এর সমর্থনে কোনো হাদিসও নাই, সুতরাং এটাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে যেতে পারে।

গল্পটার হাস্যরসাত্মক কয়েকটা দিক আছে। প্রথমত নামাজের মতো একটি বিষয়ের যাচাই বাছাই করবার জন্য ইংরেজ বিচারকের নিযুক্তি। একজন ইংরেজ বিচারক থানবীর মতে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত কিংবা রায় দিতে পারে, ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে থানবীর লক্ষ্য আসলে আহলে হাদিসের নামাজ পড়বার ধরণটাকে কোনো ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার, কিন্তু নিজে ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ হয়েও আহলে হাদিসের এই নামাজের প্রথাটাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করবার মতো কোনো যৌক্তিক ভিত্তি খুঁজে না পেয়ে ইংরেজ বিচারকের বরাতে সেটাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করবার চেষ্টাটা। এবং তৃতীয় তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো ইংরেজ বিচারকের সিদ্ধান্ত- সশব্দে আমীন বলাও সুন্নত, নিঃশব্দে আমীন বলাও জায়েজ, কিন্তু সশব্দে বললে, ঠিক কোন ভাবে বললে সেটা বিদ্বেষমূলক হয়ে যায় সেটা সম্পর্কে কোনো বক্তব্য না থাকা। এমন কি ইংরেজ বিচারক একটা সীমা নির্ধারণ করে দিলেও ভালো হতো।

তবে ডুবন্ত মানুষ খড়কুটো আঁকড়ে ধরতে চায় না, এমন কি অনেক সময় মরা শ্যাওলা ধরেও ভাসতে চায়। আজকের হাসির কারণ এটাই। অবশ্য এই হাসিটা দিয়েছি ইসলামী শরিয়ত মেনেই, মুচকি হেসেছি, কোনো দাঁত দেখা যায় নি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.