আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলার ইতিহাসে সাম্প্রদায়িকতার অবস্থান - ১ (প্রাচীন যুগ)

h
সাম্প্রদায়িকতা বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচিত ও বিবাদের বিষয়। ঐতিহাসিক ভাবেই বাংলার সাম্প্রদায়িক বিভেদের মানদন্ড হিসেবে ধর্মকে প্রাধান্য দেয়া হয়। ভারতের অন্যান্য আংশের তুলনায় প্রাচীন বাংলায় তুলানামুলক দেরিতে আর্যদের অনুপ্রবেশ ঘটে (খৃঃপূর্ব ২য় সহস্রাব্দে)। সেই ইউরোপ থেকে আগত দুর্দমনীয় আর্যদের এই বাংলায় এসে মাথা নোয়াতে হয়, তারা বিজয়ী রূপে বাংলায় বসতি স্থাপন করতে পারে নাই। বিহার ছিল আর্য বসতির শেষ সীমানা।

এসময় জাতিত্ব দ্বারা সাম্প্রদায়িক বিভেদ করা হত। আর্যরা ছিল তুলনামুলক সভ্য জাতিগোষ্ঠি। পুরো বাংলাকে আর্যায়িত করতে প্রায় এক হাজার বৎসর লেগে যায়। কিন্তু ততদিনে আর্যদের প্রভাব স্থিমিত হয়ে আসে এবং অনার্য জীবনধারার প্রচুর পরিমানে বৈশিষ্ট বাংলার অধিবাসীদের থেকে যায়। তাই বলা যায়, বাংলার সংস্কৃতিতে বৈদেশিক প্রভাব পুরোপুরি প্রবেশ করতে অসমর্থ হয়।

আর্যরা স্থানীয়দের রাক্ষস ও বর্বর বলে বর্ণনা করেছে । কিন্তু বর্তমানে উয়ারি বটেশ্বর ও পশ্চিমবঙ্গে আর্য পূর্ব উন্নত সভ্যতার যে নিদর্শন পাওয়া গেছে তা আর্যদের ধারনা ভ্রান্ত বলে প্রমান করে। খৃষ্টপূর্ব ২য় শতাব্দীতে মৌর্য শাসনের অবসানের পর গুপ্ত শাসন শুরু হয়। সে সময় বাংলা বিভিন্ন ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত ছিল। সে সময় বাংলা গ্রীক ঐতিহাসিকদের কাছে গঙ্গারিডাই নামে পরিচিত ছিল ও তাদের শক্তিশালী ও কল্যানকর শাসন ব্যবস্থা রাজ্যের শান্তি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বজায় রাখে।

পাঞ্জাব দখলের পর আলেকজান্ডার যখন গঙ্গারিডাই দখল করতে এলেন তখন তার বিপক্ষ বাহিনীর ছিল প্রায় দু’লক্ষ পদাতিক, বিশ হাজার অশ্বারোহী ও তিন থেকে চার হাজার যুদ্ধ হাতি । কুইন্টাস কর্টিয়াস ও আলেকজান্ডারের ইতিহাসবিদ ডায়াডোরাসের এ তথ্য অনুসারে সহজেই অনুমেয় তখন বাংলা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত ও শক্তিশালী ডিফেন্সিভ জাতি, যে জাতির সাথে যুদ্ধ করতে এসে মহামতি আলেকজান্ডারও পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছেন। গুপ্ত রাজ বংশ ব্রাক্ষ্মন্য ধর্মের অনুসারী হলেও বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের প্রতিও ছিল তাদের আগাধ পৃষ্ঠপোশকতা। পরবর্তিতে গুপ্তবংশের পতন ও শশাঙ্কের মৃত্যুর পর অরাজকতার সৃষ্টি হয় যা মৎসান্যায় নামে পরিচিত। এসময় দেশকে তিব্বতি,কামরূপ,কনৌজ ও কাশ্মিরী সৈন্যদের লুটপাটের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য ৭৫০ খৃষ্টাব্দে বাংলার সব রাজাদের এক এসেম্বলি করা হয় এবং সেখানে বরেন্দ্রর রাজা গোপালকে গণতান্ত্রিক ভাবে সম্রাট নির্বাচিত করা হয়।

বাংলায় যখন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের রাজা গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত করছে, ঠিক তখন ইংল্যান্ড স্যাক্সনদের উপনিবেশ হিসেবে ধুঁকছে আর ম্যাডিটেরিয়ান পার হয়ে জিব্রাল্টার থেকে দক্ষিন ফ্রান্স পর্যন্ত মুরদের অগ্রগতি ইউরোপিয়ানদের দিশেহারা করে দিয়েছে। সে সম্পর্কে আরেকটি ব্লগ পরে লেখা যাবে। রাজা গোপাল ঐসময় মৎসান্যায়ের অবসান ঘটিয়ে পাল বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। বৌদ্ধ ধর্মীয় মতবাদের বিশ্বাসী পাল রাজাদের সুদীর্ঘ শাসনামলে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের সম্প্রতি ও সহমর্মিতা ছিল প্রবল। তারা একটি উদার ধর্মীয় পরিবেশের সৃষ্টি করেন এবং বহু ব্রাক্ষ্মন রাজকার্যে নিয়োজিত ছিল।

এসময় হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের কঠোর বিধিনিষেধ অমান্য করে বেদ বিরোধী এক সাধক শ্রেনীর জন্ম হয় যাদের বলা হয় তান্ত্রিক। সে সময় পাল রাজ্য ছাড়াও সমসাময়িক কালে বাংলায় চন্দ্র, বর্মন ও দেব রাজবংশ ছিল। ভারতের দক্ষিনাত্যের বাসিন্দা বিজয়সেন বাংলায় পাল বংশের অবক্ষয়কালে সেন বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। বিজয়সেন বর্মন ও পালদের ক্ষমতাচ্যুত করে বাংলার সীমানা বিস্তৃত করেন। সেন রাজারা ছিলেন হিন্দু ধর্মের বিশ্বাসী।

প্রাথমিক দিকে তারা ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বজায় রাখলেও রাজা বল্লাল সেন এদেশে কঠোর বর্ণপ্রথা ও হিন্দু গোঁড়ামি চালু করেন। হাজার বছর ধরে চলে আসা সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতির ক্ষেত্রে ছিল এটা বড় একটি আঘাত। এটা বাংলার বৌদ্ধ ধর্মকে প্রায় পঙ্গু করে ফেলে এবং এই ঘটনা বাংলায় ইসলাম ধর্ম প্রসারে পরোক্ষভাবে সহায়তা করে। (তথ্যসূত্রঃ বাংলাপিডিয়া, উইকিপিডিয়া,ভল্গা থেকে গঙ্গা- রাহুল সংস্কৃতানন,বিদ্রোহী বঙ্গ-এফ.মোল্লা, পিতৃভূমি ও স্বরূপ অন্বেষণ-কামরূল হাসান)
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.