আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গনতন্ত্র ও আমাদের প্রত্যাশা (পর্ব-২)

ইচ্ছে করে হারিয়ে যাই তোমার সীমানায়

১. বাঙ্গালী জাতি মহান জাতি। প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে কখনোই পিছপা হয়না। স্যালুট বাংলাদেশ ও তার জনগণকে। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ও গোষ্ঠী ছাড়া আমাদের চাওয়া-পাওয়া খুবই সামান্য। পেট ভরে দু’বেলা দু’টো ডাল-ভাত খেয়ে আর গল্প-গুজব করে শান্তিতে ঘুমোনোই ছিলো আমাদের চিরন্তন এবং আদি অভ্যাস।

কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে আমরা উন্নতির শিখরে উঠতে চাই। ২. গত ২০০৮ নির্বাচনে বিএনপি ডুবেছে প্রধানত দূর্নীতি আর জামাতে ইসলামের সঙ্গে গাঁটছড়া বাধার জন্য। তাছাড়া কম দামে চাল খাবে, ফ্রি সার পাবে আর প্রত্যেক পরিবারে একটা চাকরির ব্যবস্থা হবে-এমনতর কর্মসুচীর আশ্বাস পেয়ে দেশের কোটি কোটি মানুষ নৌকা ভরে ভোট দিয়েছিল। যদিও এসব ইশ্তেহারে ছিলনা। বি.এন.পি-র এমন ভরাডুবি হয়ে এই বিজয় হবে আওয়ামী লীগ হয়তো এতটা কল্পনাও করেনি।

আর এটা সংসদীয় গনতন্ত্রের জন্যেও বোধহয় খুব একটা সুসংবাদ নয়। একটি শক্তিশালী বিরোধী দলই সংসদীয় গনতন্ত্রের মূলশক্তি। তাই আজ এই গনতন্ত্রের চাবিকাঠি আওয়ামী লীগের হাতে। তাকে গতিশীল ও অর্থময় করার কঠিন ও গুরুদ্বায়িত্ব তাদেরকেই নিতে হবে। এটা কখনোই মনে করা ঠিক হবে না সারা দেশটা রাতারাতি পুরো দেশটা আওয়ামী বনে গেছে।

আসলে দেশে তৈরী হয়ে গেছে বিরাট সংখ্যক কয়েকটি নির্ধারক গ্রুপ। যারা শিক্ষিত, মার্জিত, রুচিবান ও বস্তুবাদী। তাদের অধিকাংশই আবার তরুন সমাজ। আর আছে নারী ও খেটে খাওয়া মানুষের আরেকটি বড় অংশ। যারা কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখী হয়ে জীবন-ধারন করে।

মূলত এই দুই গ্রুপই পরিবর্তনের নিয়ামক শক্তি। অনেকেই অন্যান্য দলের (এমনকি বি.এন.পি-র) সমর্থক, কিছুটা আবেগী ও অনুরাগের অধিকারী। কিন্ত এদের অধিকাংশই হলো পরিবর্তশীল ও বাস্তববাদী। যাদের চাওয়া পাওয়া বা প্রত্যাশাগুলো বি.এন.পি কখনোই অনুধাবন করতে পারেনি। আর তাইতো হয়েছে এই ভরাডুবি।

বি.এন.পি কখনোই নিজেদেরকে সংশোধনের উদ্যোগ নেইনি। সন্ত্রাসী ও গডফাদারদের নিরবচ্ছিন্ন প্রশয় দিয়ে গেছে এবং সর্বশেষে তাদেরকে নির্বাচনে মনোনয়নও দিয়েছে। রাজাকারদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও নির্ভরতা আরো বাড়িয়েছে। এটা জনগণ কখনোই ভালোভাবে নেইনি। ত্বত্তাবধায়ক সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য এই দেশের মানুষের মাঝে একটা মানসিক পরিবর্তন মনে হয় তারা করতে পেরেছেন।

৩. দু’দলই ইশতেহারে অনেক কিছু বলেছেন। আওয়ামী লীগের ইশতেহারে আশ্বাসের কোন কমতি ছিলনা। এগুলোর একটা অংশও যদি পূরন করা সম্ভব হয়, তবে বিশ্বের দরবারে আমরা একটা অনুকরণীয় রাষ্ট্রে পরিণত হবো। এই পরিবর্তনের সময় সাংসদকে ভাবতে হবে তাঁরা মহামান্য নন। তাঁরা জনগণের সেবক মাত্র।

মানসিকতার পরিবর্তন না হলে সবকিছু ভন্ডুল হয়ে যাবে। সবকিছু ফিরে যাবে আগের অবস্থায় নিশ্চিতভাবে। যে কাজটি করে গেছে পূর্বের বি.এন.পি। গত পাঁচ বছরে তাদের দলীয় নেতা ও সাংসদরা দূর্নীতির পাহাড় গড়েছে আর সন্ত্রাসকে লালন করেছে রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ায়। অবশ্য তার শুরুটা হয়েছিলো সেই এরশাদের সময়ে।

তবে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে তার শুরু হয়েছে ১৯৯৬ সালে। এই পুরো দশ বছরই হলো বাংলার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় লুটপাটের কালো অধ্যায়। ৪. এখন থেকে আওয়ামী লীগ ও বি.এন.পি কে শুরু করতে হবে সেই গোঁড়া থেকে। একদলকে শুরু করতে হবে সৎ ও পরিকল্পিত শাসনের অধ্যায়। আর অন্য দলকে পাপের প্রায়শ্চিত্ত, অনুধাবন, নতুন করে দল গুছানো ও ছোট দল হিসেবে সংসদে অবস্থানের অভ্যাস।

দ্রব্যমূল্যের দাম হয়তো এমনিতে অনেকটা কমে যাবে। কেননা সারাবিশ্বের মুদ্রাস্ফীতির হার কমা অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হয়। যে সকল দেশি-বিদেশী অর্থনীতিবিদ বিশ্বের বড় বড় সংস্থার এদেশীয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন আর মুক্তবাজার নীতির তত্ত কপচাচ্ছেন, তাদেরকে থামাতে হবে। বাজারে থাকতে হবে সরাসরি সরকারি নিয়ন্ত্রন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারন মূলতঃ দু’টি।

এক. তা বিশ্ব বাজার দাম তথা তেলের দামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এখানে হয়তো সরকারের খুব একটা কিছু করণীয় নেই। দুই. আমাদের স্বদেশী শক্তিশালী সিন্ডিকেটেড প্রতিষ্ঠানগুলোর অবিশ্বাস্য মুনাফাখোরী মনোবৃত্তি। এব্যাপারে এখন হার্ডলাইনে যাওয়ার সময় এসেছে। মুক্তবাজার নীতির যদি অনুসরণ করতেই হয়, তবে সমস্ত ব্যবসায়ী ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে হবে।

দেখবেন, সুফল এমনিতেই ঘরে চলে আসবে। এটি করতে হবে অতিদ্রুত ও সুচতুরতার সঙ্গে। আমাদের দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি অবশ্যই অচল। কেননা, বাজার অর্থনীতির মূলমন্ত্র যে “চাহিদা-যোগান” সেটি কখনোই এখানে সমান্তরাল নয় এবং তাড়াতাড়ি হওয়ারও কোন আশা নেই। জনগন অতিঅধিক হওয়ার কারনে এবং বাজার বিরাট হওয়ায় এখানে “চাহিদা” সবসময়ই উঁচু স্থান দখল করে থাকবে।

“যোগান” কখনোই তার সাথে কুলিয়ে উঠতে পারবেনা। অবশ্যই ব্যবসায়ীদের সম্মান করতে হবে। মনে রাখতে হবে আজকের ব্যবসায়ী আর ষাট-সত্তর-আশি দশকের ব্যবসায়ীদের মাঝে অনেক তফাৎ। এখনকার ব্যবসায়ীরা শিক্ষিত, রুচিবান ও সর্বোপরি উচ্চাকাংখী। আসলেই দরকার বাজার নিয়ন্ত্রণের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া।

বাজার উর্দ্ধমুখী মূলতঃ যোগান ও চাহিদার অসামঞ্জস্যতার কারনে। আমাদের দেশে এদের মধ্যে ব্যালান্স আনা দূরহ ব্যাপার। তবে এছাড়াও আরো ৫ টি কারনে নির্ভর করে বাজারদর। ১. আন্তর্জাতিক মূল্য। ২. অসাধু ধনী ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র।

৩. পাইকার বা খুচরা বিক্রেতাদের অত্যাধিক মুনাফাখোরী মনোভাব। ৪. মজুতদার ও কালোবাজারীর মাধ্যমে দাম বাড়ানো। ৫. মধ্যস্বত্বভোগী ও ফঁড়িয়া গোষ্ঠী। সরকারের হাতে ১ নং কারনটি ছাড়া অন্য সবগুলো নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা আছে এবং পারে। পূর্বের মত মুক্তবাজারের দোহাই দিলে সবাই আবারো ভুগবে।

তাই বাজার শক্তহাতে নিয়ন্ত্রন করতে হবে। ইতিমধ্যেই ব্যবসায়ীরা জোটবদ্ধ হতে শুরু করেছে। তাই সরকারের উচিৎ হবে পুরো বাজার ব্যবস্থা এখনই ঢেলে সাজানো, যাতে মানুষের বিশ্বাস ফিরে আসে ও স্বস্তি ফিরে পায়। কঠোরভাবে লক্ষ্য রাখা যাতে আইন শৃংখলার অবনতি না হয়-যা ইতিমধ্যেই ঘটতে শুরু করেছে। মানুষের প্রত্যাশা একটু শান্তি আর তা দিতে নিশ্চয় এ সরকার সক্ষম হবে।

আমদের সে চাওয়া যেন পূরন হয়। গনতন্ত্র ও আমাদের প্রত্যাশা (পর্ব-১)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।