আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বদি-মতিমিথ্যেবাদী

শিরদাঁড়া নেই, বহু শরীরেই নিজেদের মানাতে মানাতে.......

বদি আর মতি জগিংয়ে বেরিয়েছে। যদিও তারা জগিং ক্লাসের অর্থাৎ হাই সোসাইটির না। মেসে থাকে। কুঁড়ের বাদশা। কাজে ফাঁকি দেয়।

ধান্ধাবাজি, গুলগাপ্পাবাজি করেই খায়, দায়। মৌজ-মাস্তি করে। বাসে উঠে পয়সা ফাঁকি দিতে চেষ্টা করে। কোন রকমে পয়সা ফাঁকি দেয়ার একটা সুযোগ এলে তারা হাতছাড়া করে না। জগিং ফগিংএ মতির কোন ইন্টারেস্ট নেই।

বদিরও যে ছিল তা নয়। । স¤প্রতি বদি তার এক ডাক্তার বন্ধুর কাছ থেকে ফ্রি মেডিকেল জার্নাল আনে (বাঙালী ফ্রি আলকাতরা পেলে নাকি সাদা শার্ট পেতে নেয় এরকম কি যেন একটা প্রবাদ আছে-বদি তো আর বাঙালীর বা এই প্রবাদের অপমান করতে পারে না) এবং সেটা কোন এক কুক্ষণে পড়ে ফেলার পরই বিপত্তি শুরু হয়। তার কেন জানি ধারনা হয়েছে সে আর বেশী দিন বাঁচবে না। কারণ ঐ জার্নালে বর্ণিত সবগুলো রোগেরই কিছু না কিছু তার আছে।

কাজেই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিদিন সকালে জগিং করবে। শরীর ঠিক রাখার, বেচেঁ থাকার ওটাই একমাত্র উপায়। মতির মেজাজ খিঁচড়ে আছে। সকালের ঘুমটাই তার সবচেয়ে প্রিয়। বদি সকাল থেকেই কানের কাছে ভ্যাজর ভ্যাজর করছে।

‘মেন ইন সানা করপোরা ইন সানা’ না কি সব ছানা ছানা করছে। ওটা খাওয়ার ছানা সন্দেশ হলে মতির আপত্তি ছিল না। কিন্তু ওটাকে নাকি বলে সুস্থ্য দেহে সুস্থ্য মন। মতি যতই রাগঝাক করুক, বদি কোথায় গেলে গজগজ করতে করতে তার পিছু পিছু মতির যাওয়া চাই। বদিকে ছাড়া সে এক মুহুর্ত কোথাও থাকে পারে না।

মতি ‘এসবের কোন মানে হয়’ বলতে বলতে ট্রাউজার ও কেডস পরতে থাকে। মোজা পরার সময় সে হঠাৎ বলে ওঠে ‘দেখ বদি। আমার মোজা জোড়াটা কেমন আনকোরা। একটা কালো, একটা সাদা। ’ বদি একটুও অবাক না হয়ে বলে ‘সত্যি বলতে কি জানিস।

আমারও না ঠিক ওরকম এক জোড়া মোজা আছে। আমি তো সেটাই আজ পরেছি। এই দেখ। ’ বলে ট্রাইজার তুলে মোজা দেখায়। তো ওরা জগিং করতে করতে সংসদ ভবনের কাছে আসে।

হঠাৎ করে ঘুমঘুম চোখের মতি গাছতলায় একটা পাঁচশ টাকার চকচকা নোট পড়ে থাকতে দেখতে পায়। বদিই আগে ছুটে যেয়ে ওটা তুলে নেয়। নিয়েই বলে ‘দেখলি মতি, ভোরে জগিংয়ের কি উপকারীতা। আমরা আগে এদিকে এসেছি বলে টাকাটা আমরাই আগে পেলাম। ’ মতি বিরস গলায় বলে ‘তা তো বুঝলাম।

কিন্তু যে লোকটির টাকা হারিয়েছে সে বেচারা নিশ্চয় আরও আগে উঠেছিল। ’ চোখে ঘুম জড়ানো থাকলেও মতির মাথা পরিস্কার। বদি মতির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে টাকাটা ট্রাউজারের পকেটস্থ করার চেষ্টা করতেই মতি খেঁকিয়ে উঠে এবং স্বভাবতই টাকার মালিকানা নিয়ে ঝগড়া লেগে যায়। মতি বলে যে সে আগে দেখেছে কাজেই টাকাটা তার। বদি চেঁচায় যে সেই টাকাটা কুড়িয়ে নিয়েছে।

কাজেই তার পুর্ণ অধিকার। বদি বলে মতি একটা ডাহা মিথ্যেবাদী। মতিও বদিকে একই কথা বলে। এ বলে ও মিথ্যেবাদী, ও বলে এ মিথ্যেবাদী। বদির টার্ন আসতেই বদি বলল ‘ঠিক আছে।

তুই যখন বলছিস, তখন আমি ডাহা মিথ্যেবাদী। মিথ্যে কথা বলাটা কোন সোজা কর্ম নয়। ওটাও একটা আর্ট। ওতে কল্পনাশক্তির প্রয়োজন হয়। পাড় মাতালের মত আমি হচ্ছি পাড় মিথ্যেবাদী, আর তুই হ্িচ্ছস খেঁদিপেঁচি, টুনটুনি মিথ্যেবাদী।

মতির ঘুম ঘুম ভাব চটে গেছে। সে টিপ্পনী কাটল ‘গাঁজার আর জায়গা পাসনে। তুই হ্িচ্চস ফঁচকে মিথ্যেবাদী, শখের মিথ্যেবাদী। আর আমি প্রফেশনাল মিথ্যেবাদী। ’ শেষমেষ দুজনে মিলে মধ্যস্থতায় এল যে দুজনেই পাল্লা দিয়ে মিথ্যে কথা বলবে।

যে সবচেয়ে বেশি বেশরম, বেহুদা ,গাজাখুরি মিথ্যে বলতে পারবে টাকাটা সেই পাবে। বদি বিসমিল্লা বলে শুরু করল ‘সেদিন ঘরে মন ঠিকছিল না বলে বারান্দায় এসে চটি জোড়া পায়ে দিতেই সত্যজিৎ রায়ের গুপীগাইন বাঘা বাইনের মত এক লাফে চলে গেলাম আমেরিকায়। সোজা হোয়াইট হাউজে। বুশ তখন গাঁজার কালকেতে কষে টান দিচ্ছিল। চটি জুতোর খটাখট শব্দে আমার দিকে তাকিয়ে মুখভর্তি একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে কলকিটা আমার কাছে দিতেই আমি তার পিঠ চাপড়ে বললাম ‘কি মিঞা দ্যাশে দ্যাশে যুদ্ধ বাঁধাইয়া এইহানে বইসা তামুক টানতাছেন।

এইটা কি ঠিক?’ বুশ বলল ‘কি করুম কও। কিচ্ছু ভাল্লাগে না। যুদ্ধ ফুদ্ধ বাঁধাইয়া বইসা বইসা দেহি। এইটাই এট্টু ভাল্লাগে। আমি তখন কইলাম ‘এই যে পরপর দুই দুইবার চোট্রামি কইরা গোরে আর কেরিরে ঘোল খাওয়াই ক্ষমতায় বইলেন এইটা কি ঠিক হইল?’ বুশ মিয়া ক্যাবলার মতন হাইস্যা কয় ‘কি করুম কও।

যখনকার যে ভাও। সব দেশেই তো এইটা হইতাছে। তোমগো দেশেও কি এইটা হয় নাই। কও। আমি কইলাম ‘আমগো কতা বাদ দেন।

আমরা হইলাম চুনিপুটি। আপনারা হইলেন পৃথিম্মীর মাথা। আপনেরা যদি এই সব অকাম-কুকাম করেন তখন চুনিপুটিগোও এট্টু শরম লাগে। বুশ চেইতামেইতা কইল ‘ওই মিয়া ফালাইয়া থোও তোমার শরম। শরমের জমানা এখন আর আছেনি।

এখন বেশরমের জমানা। দেখবার পাও না?’ বুশ ব্যাটার সাথে বনিবনা না হওয়ায় চলে এলাম মিয়ামি সী বীচে। দেখি হাজার হাজার মেয়ে মদ্দ সেখানে চান করছে ,সাতার কাটছে। আর ছুড়িগুলো সে কী বেহায়া! আমার একটা রুমাল দিয়ে ওদের তিনটে মেয়ের সুইমিং কস্টিউম হয়ে যায়। আমাদের মোল্লারা দেখলে নাউজুবিল্লাহ নাউজুবিল্লাহ বলে সাগরে ঝাপিয়ে ডুবে মরে শহীদী দরজা পেয়ে সোজা বেহেশতী হুরের কাছে চলে যেত।

আমি রুমাল বের করে ওর থেকে তিনটে ছুড়িকে রুমালে পেঁচিয়ে চলে এলাম লাস ভেসাগে। জুয়ার স্বর্গরাজ্যে। ওখানকার সেরা ক্যাসিনোতে জুয়া খেলে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার জিতে আধপাগলা ( আধপাগলা না হলে কি কেউ আবার ফুলপাগলা বুশ মিঞারে নির্বাচিত হতে দেয়) আমেরিকানদের ফতুর করে দিলাম। মদটদ খেয়ে, মৌজফুর্তি করে ঘুরেটুরে সে ডলারও খরচ করে ফেললাম এক রাতেই। তারপর ওখান থেকে ইংল্যান্ডে,টনি ব্লেয়ারের ওয়াইফ চেরির... মতি কথার মাঝখানে বাঁধা দিয়ে বলল ‘এতে আর মিথ্যে কোনখানটায় দেখলি? আমি তো বরাবরের মতই সারাটিক্ষণ তোর সংগে সংগেই ছিলাম।

বেশ ú®টই দেখলাম, তুই এই সব করেছিলি? এবার মতির পালা। কিন্তু তার আগেই ওরা দেখে সাদা চুলের, বুকে ‘আই অ্যাম নোবডি’ লেখা যে বয়স্ক রাজনীতিবিদটি (এমপি অথবা মন্ত্রীও হতে পারে। বদি-মতি দুজনের কেউ শিওর না-তবে টি শার্টের লেখাটি দেখে তারা নিশ্চিত হয়েছে ঐ গোত্রীয় কেউ। কারণ আমাদের নেতারা সবাই নোবডি। কেউ না।

ইনভিজিবল ম্যান। ভোটের আগে অবশ্য তাদেরকে ঘন ঘন গ্রামদেশে নিজ নির্বাচনী এলাকায় দেখা যায় কিন্তু ভোটে জেতার পর থেকে তারা নোবডি হতে শুরু করে। এবং দেশের চরম দুঃসময়ে তারা নোবডি হয়ে সব দায়দায়িত্ব আল্লার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। বলে ‘আল্লার হুকুম হয়েছে তাই ঝড়ে লঞ্চ ডুবেছে। আল্লার মাল আল্লায় নিছে ইত্যাদি ইত্যাদি।

) এতক্ষণে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওদের মিথ্যের বহর গিলছিলেন। তিনি আর থাকতে না পেরে একেবারে কাছে এগিয়ে এসে বললেন ‘ছি ছি ইয়াংম্যানরা ,কি লজ্জার কথা। এরকম ডাহা মিথ্যে কথা তোমরা মুখ দিয়ে বের করছো কি করে? জানো না মিথ্যে বলা মহাপাপ। আমি জীবনে কখনো মিথ্যে বলিনি। ’ মতি রাজনীতিবিদের কথা শুনে প্রথমটায় হকচকিয়ে গেল।

তারপর থ মেরে দাড়িয়ে রইল। সম্বিত ফিরে পেয়ে শেষটায় ক্ষীণকন্ঠে, বাজি হারার দীর্ঘশ্বাস ফেলে কোনরকমে বদিকে বলল ‘ভাই বদি, পাচঁশো টাকার নোটটা ওনাকেই দিয়ে দে। টাকাটা ওনারই পাওনা। তুই এরকম পাঁড় মিথ্যে বলতে পারবি নে, আমিও পারব না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।