আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে চারু শিল্পীদের মিলনমেলা



এত্তো এত্তো কর্মশালা আর ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা নেয়া আমাদের দেশের সেরা চারুশিল্পীদের মিলনমেলা। তাও আবার ঢাকা থেকে অনেক দূরে- প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে। ১০ জানুয়ারি থেকে ১৩ জানুয়ারি। তাঁরা সেখানে যেয়ে আকাশ আর সমুদ্র কে সামনে নিয়ে ছবি আঁকবেন ক্যানভাসে। কমপক্ষে চার প্রজন্মের শিল্পীদের সমন্বয় করা সহজ কাজ নয়।

আর এ সমন্বয়ক বা সূত্রধরের কাজটি করার দুরহ দায়িত্ব পড়েছে আমার উপর। গত দুমাস ধরে শিল্পী তালিকা করা, সবার সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছিল। এঁদের মধ্যে কাইয়ুম চৌধুরী, গোলাম কিবরিয়া, রফিকুন নবী, মুর্তজা বশীর, আবুল বারাক আলভী, মোঃ ইউনুস, সৈয়দ জাহাঙ্গীর, আমিনুল ইসলাম, শেখ আফজাল, নাঈমা হক, দীপন এম রহমান, নাসিম আহমেদ নাদভীসহ কয়েকজন তাঁদের ব্যক্তিগত এবং শারীরিক সমস্যার কারণে সেন্টমার্টিনের আর্ট ক্যাম্পে যাবার ব্যাপারে তাঁদের অপারগতার কথা আগেই জানিয়ে দেন। অবশেষে যাঁদের যাওয়া চুড়ান্ত হয়, তাঁদের মধ্যে- সমরজিৎ রায় চৌধুরী, বীরেণ সোম, আবু তাহের, রঞ্জিত দাস, অলকেশ ঘোষ, হামিদুজ্জামান খান, আব্দুস শাকুর শাহ, কালীদাস কর্মকার, বনিজুল হক, গোলাম ফারুক বেবুল, শিশির ভট্টাচার্য, ঢালী আল মামুন, দিলারা বেগম জলি, তরুন ঘোষ, বিদ্যুৎ জ্যোতি সেন শর্মা, বিপুল শাহ, রাশেদুল হুদা, সালেহ মাহমুদ, শহীদ আহমেদ মিঠু, শাহজাহান আহমেদ বিকাশ, প্রশান্ত কর্মকার, নগরবাসী বর্মন, মোহাম্মদ হাসানুর রহমান রিয়াজ, ইয়াসমিন জাহান নূপুর, নাজিয়া আন্দালীব প্রেমা, তাহমিনা হাফিজ লিসা এবং সুলেখা চৌধুরীসহ আমরা মোট ৩৫ জনের দল। ৯ জানুয়ারি শুক্রবার রাত আটটায় সবাই মিলে সেন্টমার্টিনের পথে রওয়ানা হই।

পরদিন শনিবার দুপুরে গিয়ে পৌঁছাই দ্বীপে। আমরা যে হোটেলে উঠেছি তার সামনেই সমুদ্র। দলের ৩৫ জনের মধ্যে ১০/১২জন মাত্র ইতোপুর্বে সেন্টমার্টিন গিয়েছে। বাকীরা কোনোদিন এ দ্বীপে আসেনি। কারোরই তর সইছিলো না।

হালকা বিশ্রাম সেরে সবাই সোজা সমুদ্রের পানিতে। গোসল সেরে সামুদ্রিক মাছ দিয়ে দুুপুরের খাবার খেলো সবাই। ঢাকা থেকে শিল্পীদের তালিকানুযায়ী প্রয়োজনীয় রং, তুলি, ক্যানভাস, কাগজসহ টুকিটাকি সব জিনিস আগেই কেনা ছিলো। সেগুলো ঠিকমত পৌঁছলো কিনা, সে এক টেনশন ! নির্ধারিত বাক্স পেটরা খুলে দেখা গেল, সব ঠিকই আছে। বিকেলে চা খেতে খেতে প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো সবাইকে চাহিদানুযায়ী দিয়ে দেয়া হলো।

এত লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে সবাই ছিলো ক্লান্ত। তাড়াতাড়িই রাতের খাবার সেরে যে যার বিছানায়। সকাল আটটার দিকে জেগে তো অবাক ! খুব ভোরেই প্রায় সব শিল্পী ঘুম থেকে উঠে পুরো দ্বীপ ঘুরে এসেছেন। এর মধ্যে অনেকে ছোট খাতায় বিভিন্ন স্কেচ করে নিয়েছেন। হোটেলে ফিরে এসে প্রায় সবাই তাঁদের ক্যানভাস নিয়ে বসে গেছেন ছবি আঁকতে।

শিল্পীর সামনে হরেক কিসিমের রং আর তুলির ছড়াছড়ি। এক মনে ভাবছেন, মাঝে মাঝে আলতো করে তুলি ছোঁয়াচ্ছেন ক্যানভ্যাসে। মুগ্ধ হবার মত দৃশ্য ! ইতি উতি উঁকি দিচ্ছি। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। পারার কথাও নয়।

সকাল গড়িয়ে দুপুর। খাবারের জন্য ডাকলেও কারো যেনো খাবারের তাগিদ নেই। একমনে ছবি এঁকেই যাচ্ছেন। এভাবে রাত এগারোটা নাগাদ চললো- ক্যানভ্যাসের বুকে তুলির খেলা। এগারোটার পরে জেনারেটর বন্ধ।

এবার বাধ্য হয়েই সবাইকে ছবি আঁকার কাজ গুটাতে হলো । এরপরের দৃশ্য অন্যরকম সুন্দর ! আকাশে ভরা পূর্ণিমার চাঁদ। সামনে বিশাল সমুদ্র। জোয়ারে ফুঁসছে পানি। সবাই সমুদ্রের পাড়ে।

গলা ছেড়ে গান ধরেছেন কেউ কেউ। অন্যরা গলা মেলাচ্ছেন। দু চার জন এদিক সেদিক হাঁটছেন। সবার মধ্যে একটা ঘোর লাগা অবস্থা ! এরমধ্যে সমুদ্রের পাড়ে দেখা মিললো ইয়া বড় এক কাছিমের। স্থানিয়দের কাছে জানলাম, কাছিম ডিম পাড়তে এসেছে।

এ সময় কোনো শব্দ করলে কাছিম ডিম না পেড়ে সমুদ্রে নেমে যাবে। সুতরাং সবাই একদম চুপ ! কাছিম পা দিয়ে বালি সরিয়ে বিরাট এক গর্ত বানালো। তারপর বসে পড়লো সে গর্তের ওপর। একটার পর একটা ডিম পাড়তে থাকলো। ৪২ টা ডিম পেড়ে পা দিয়ে সে ডিম ঢেকে আস্তে আস্তে নেমে গেলো সমুদ্রের পানিতে।

অদ্ভুদ ব্যাপার ! ক্যামেরা না থাকাতে কেউই সেই দুর্লভ ছবি তুলতে পারলো না। আফসুস !! মধ্যরাত পেরিয়েছে অনেকক্ষণ। সবাইকে অনুরোধ করে ফিরিয়ে আনা হলো হোটেলে। এবার ঘুমানোর পালা। রাত দুটোর দিকে সবাই বাধ্য হয়ে বিছানায় গেলেন।

কাল আবার সকালে উঠতে হবে যে...! পরদিন যথারীতি খুব সকালে সবাই ঘুম থেকে উঠে সবাই ক্যানভাস, রং, তুলি নিয়ে বসলেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ক্যানভাসের বুকে এক একটি করে ছবি পূর্ণতা পেতে শুরু করলো। বিস্ময় নিয়ে দেখলাম, ২৭ জন শিল্পী কাগজ আর ক্যানভাস মিলে ৭০/৭৫ টা ছবি এঁকে ফেললেন। সবাই মুগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে দেখছেন, যার যার সৃষ্টিকে। কেউ কেউ শেষ বারের মত এদিক সেদিক সামান্য তুলির ছোঁয়া দিয়ে নিচ্ছেন।

দুপুরের মধ্যেই ছবি আঁকার কাজ শেষ। এরপর সবাই ছুটলেন সমুদ্রের দিকে। অনেকক্ষণ ধরে তৃপ্তির গোসল সারলেন। দুপুরের খাবার সেরে সবাই যে যার ছবি নিয়ে সমুদ্রের পাড়ে। সবগুলো ছবি একসাথে সাজানো হলো।

সে এক অন্যরকম ছবির প্রদর্শনী ! একে অন্যের ছবি দেখছেন। আলোচনা / সমালোচনা করছেন। নিজের আঁকা ছবির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। প্রত্যেকের চোখে মুখে এক ধরণের প্রশান্তি। ধীরে ধীরে সূর্য ডুবছে।

আমরাও ফিরে এলাম হোটেলে। অনেক কাজ বাকী। ছবিগুলো খুব যতœ নিয়ে প্যাকেট করতে হবে। নিজেদের মাল-পত্র গোছাতে হবে। সকালে আবার রওয়ানা হবো ঢাকার পথে...।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।