আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আস্তিক্যবাদ এবং নাস্তিক্যবাদের সহাবস্থান (দুই কিস্তির প্রথমটি)



ব্লগে প্রায়শই ঈশ্বরের অনস্তিত্বে বিশ্বাসী ধারণার লেখা আসে। এই লেখকেরা মুসলিম প্রধান দেশে ইসলাম ধর্মীয় আবহে বেড়ে ওঠার ফলে ঈশ্বর এবং ধর্মের স্বরূপটা আকারে প্রকারে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ এবং ইসলাম এ এসে ঠেকে এবং স্বাভাবিকভাবেই তাদের যুক্তিগুলোও মোটের উপর আল্লাহ এবং ইসলাম ধর্মের অসারতা প্রমাণেই চালিত হয়। প্রতিক্রিয়াটাও শুরু হয় একদম নগদে। যুক্তি, পাল্টা যুক্তি, রেফরেন্স, তার সত্যতা- অসত্যতা প্রমাণ, ইত্যাদি ইত্যাদি... সব মিলে বেশ একটা উচ্চমার্গীয় ব্যাপার স্যাপার হয়ে দাড়ায়। এই উচ্চমার্গীয় আলোচনায়, আমার মত কমজান্তারা যারা অংশগ্রহণ করতে পারিনা, তাদের লাভ হয়।

বেশ খানিকটা জেনে ফেলি। কিন্তু সমস্যা হল, বিতার্কিক ব্যাঞ্জনা চলে গিয়ে এই ইন্টারএকটিভ আলোচনাগুলো একসময় পুরোদস্তুর খিস্তি খেউর চালাচালিতে পরিণত হয়। গদাম লাথি দেওয়া অথবা ওখানে ব্লকড হওয়ার সম্ভাবনা নিয়েই এইসব লেখায় ঢুকতে হয় তখন। আমার এই দুটোর কোনটারই অভ্যাস বা আগ্রহ নেই, আমি তাই অফ লাইনে থেকে দেখি লেখাগুলো। বা অনলাইনে গেলেও কোন মন্তব্যের রিস্ক নেইনা।

মাঝে মধ্যেই আমি ভাবি, কেন এমন হয়। জাতিগতভাবেই কি আমরা কিছুটা অসহনশীল? নাকি সবার মধ্যেই মিস্টার হাইডের চরিত্র নিয়ে দ্বিতীয় একটি সত্ত্বা রয়েছে, যেটি হিংসা পরায়ণ, পরমত অসহিঞ্চু? আর সামহোয়্যার ইন আমাদের পরিচয় লুকিয়ে ব্লগিংএর সুযোগ দিয়ে মিস্টার হাইডের চরিত্রকে অবগুন্ঠনমুক্ত করতে সাহায্য করছে। দেখা যাচ্ছে, যে ছেলেটি বা মেয়েটি বাস্তবে খুব চুপচাপ, কারো সাতে পাঁচে নেই, ব্লগের কোন আলোচনায় সেই আবার আঠারো দুগুনে ছত্রিশ প্লাস রেটিং এর গাল দিয়ে ফেলছে অবলীলায়। যুক্তিস্বল্পতার পাশাপাশি এক পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোর আর অন্য পক্ষে সমাজে অপ্রচলিত কিছু জ্ঞানের অহংবোধই সম্ভবত এই আক্রমণ শুরু করতে উৎসাহিত করে। স্বাভাবিকভাবে নাস্তিকতায় বিশ্বাসীদের ধর্মীয় পড়াশুনা একটু বেশী থাকে।

একটা ধর্মবিশ্বাসী পরিবারে জন্মগ্রহণ করে বাই ডিফল্ট ধর্মবিশ্বাসী আমার কোন প্রয়োজন পড়েনা পড়াশুনা করে আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণের। আমার চৌদ্দ পুরুষে ধারণ করা বিশ্বাসই আমার প্রমাণ এবং শক্তি। কিন্তু যে ব্যক্তি এই ধর্মীয় পরিবেশে থেকেও ধর্ম বিরোধিতার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে চায়, তার কাছে ধর্মের অসারতা প্রমাণ করাটা অতি জরুরী এবং সেটা করতে গিয়ে তাকে পড়াশুনা করতে হয় সাধারণের চেয়ে একটু বেশীই। তার যুক্তিগুলোও থাকে প্রাথমিকভাবে শাণিত, যেখানে গড়পড়তা ধর্ম বিশ্বাসীরা আটকে যায় এবং শুরু হয় খিস্তি খেউড়। কিন্তু এমন কেন হবে? কেউ যদি ধর্ম এবং স্রস্টা না মেনে ভাল থাকতে পারে, কারোর স্বার্থে আঘাত না দেয়, তাহলে কার কি সমস্যা।

আমার যুক্তিগুলো তাকে শোনাতে পারি, কিন্তু গেলাতেই হবে, এমন বাধ্যবাধকতাতো নেই কোন। নাস্তিক্যবাদের যুক্তিগুলোওতো নিতান্তই হালকা না এবং এর শুরুওতো সাম্প্রতিককালে হয়নি। গেল শতকের অনেক পন্ডিত নান্তিকতার চর্চা করেছেন। ডেভিড হিউম, কার্ল মাক্স, ফ্রয়েড, ফ্রেডরিখ নিটশে জ্যঁ পল সাত্রে, বাট্রান্ড রাসেল এরা সবাই ঈশ্বরের অনস্তিত্ব এবং ধর্মের উদ্ভব সম্পর্কে একেকটি মতবাদ দিয়ে গেছেন। তারাতো জ্ঞানী ছিলেন।

বিয়িং এন্ড নাথিংনেস'কে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন ও জটিল বই। যে এটা লিখেছে, তাঁর জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলার মত পন্ডিত নিশ্চয় আমরা হইনি এখনও। এঁরা ধর্ম দর্শনের পড়াশোনায় একেকজন প্রথিকৃৎ হয়ে আছেন। ধর্মের বিপক্ষে এঁদের তোলা যুক্তিগুলোর বিপরীতে খুব শক্ত যুক্তি কিন্তু এখনও দেখা যায়নি। এটা ভেবে কেউ যদি ধর্মহীনতায় শান্তি পায়, পাক না।

আমিতো জানিই, সত্যিকার মামলাগুলোর চেয়ে সাজানো মামলার নথিপত্র শক্তিশালী হয়। সমস্যা কি? (লেখা বড় হয়ে যাওয়ায় বিকেলের দিকে বাকিটুকু দিব) ছবি কৃতজ্ঞতা:: স্থপতি এম এম মাকসুদ বিপ্লব

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।