আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাতেন মিয়ার একদিন... (১৮+ রম্য)

আমার লেখা সরাসরি প্রথম পাতায় সকল পোস্ট অংশে প্রকাশিত হবে। আর সম্পাদকের বিবেচনা সাপেক্ষে তা নির্বাচিত পাতায়ও প্রকাশ হতে পারে।

ভালোই দিন কাল কাটছিলো বাতেন মিয়ার। একদিন দোস্তদের কথায় সে নেট কানেকশন নিলো। এই সাইট সেই ঘাটতে ঘাটতে সে একদিন বাংলা ব্লগ এ ঢুকলো।

ঢুকে তো তার মাথা খারাপ হয়ে যাবার মতো অবস্থা! আরে! এক সাইটে এতো কিছু! ১৮+ জোক্‌স গুলো দেখে তার তো হার্ট ঢিব ঢিব করা শুরু হলো! রাজনীতি নিয়ে লেখা ব্লগ গুলো তে সে ঢুকে কয়েকটা কমেন্ট দিয়ে দিলো। আরে! আশ্চর্য ব্যাপার! হটাৎ তার মনে হলো সে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে কতোটা ভাবে। তার মিজাজ খারাপ হলো তার দোস্ত দের উপর। এরা এই সাইটের কোনো কথা এতোদিন তাকে বলেনি কেন? তার দোস্তরা ইন্টারনেট নিয়ে আড্ডা দেয়া মানে শুধু ফেসবুক। যেন এই সাইট ছাড়া আর কোনো সাইট নাই।

বাতেন তো মহা খাপ্পা! সে দেশের রাজনীতি নিয়ে এতো ভাবে (কমেন্ট দেয়া শুরু করার পর থেকে) আর তার দোস্তদের আলোচনার বিষয় শুধু একটাঃ মাইয়া! তো মিজাজ খারাপ করে সে তার দোস্তদের আড্ডা থেকে উঠে আসলো। তো বাংলা ব্লগে ঢুকার পর সে বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে লেখা কয়েকটি ব্লগে ঢুকলো। ফিলিস্তিনিদের নিয়ে লেখা কয়েকটি ব্লগ পড়ে তার তো মাথা গরম! কয়েকটি গরম গরম কমেন্ট ও দিয়ে ফেললো। হঠাৎ করে তার মনে হলো, আরে! ফিলিস্তিনিবাসীদের জন্য তার এতো মমতা সে তো তা আগে জানত না! পত্রিকায় তো নিউজ পরেছে, বিবিসি তে ও দেখেছে, তখনো তার মনে হয়নি যে ফিলিস্তিনিদের প্রতি, তাদের স্বাধীনতা অর্জনের প্রতি তার এতোটা সমর্থন আছে। কমেন্ট দেয়া নিয়ে ওর সাথে বেশ কয়েকজনের পাল্টাপাল্টি কমেন্টযুদ্ধ হয়ে গেলো।

ঘটনা হলো, একজন ব্লগার তার কমেন্টের পালটা কমেন্ট এ তাকে দাড়ি ছাড়া ছাগল বলেছে। তার তো মেজাজ হয়ে গেলো চরম খারাপ! কিছু অমূদ্রণযোগ্য গালি দিয়ে সেও পালটা জবাব দিলো। নাহ! এভাবে শুধু কমেন্ট দিয়ে হবেনা। তার ব্লগ লিখতে হবে। সে ব্লগ লিখায় বসলো।

কি নাম দেয়া যায়? এমন কোনো নাম দেয়া উচিত, যাতে সবাই তার ব্লগে ঢুকে। আচ্ছা, ব্লগের নাম না হয় পরেই দেবে, ব্লগ লিখে নিক আগে। এখন সে আসলেই আরো বেশি ঝামেলায় পড়লো। কি নিয়ে ব্লগ লিখা যায়! প্রথমেই তার মনে হলো তার দোস্তদের কথা। সে ভাবলো, "ফেসবুকে মাইয়া ফ্রেন্ড এবং তরুন সমাজের মূল্যবোধের অবক্ষয়" এই শিরোনামে ভাবগম্ভীর একটি ব্লগ লিখবে কিনা।

পরমুহূর্তে সে চিন্তা বাতিল। সেও তো ১৮+ জোক্‌স দেখেছে। নাহ্‌! অন্য কিছু নিয়ে লিখতে হবে। ইসরাইলের আগ্রাসন নিয়ে গরম কিছু লিখবে নাকি? নাহ্‌! এটাও বাতিল। এ নিয়ে অনেক ব্লগ ইতোমধ্যে লিখা হয়ে গেছে।

আরেকটা সমস্যাও আছে। সে যাদের ব্লগে গরম কথা লিখেছে, এখন সে এই ব্যাপারে কিছু লিখলেই ওরাও পেয়ে বসবে। যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে লিখলেও সমস্যা। কারণ ক্রিকেট খেলা নিয়ে পাকিস্তানকে সমর্থন করা নিয়ে কমেন্ট লিখায় একজন ব্লগার ওকে যুদ্ধাপরাধী বলেছে। একবার ভাবলো ১৮+ জোক্‌স লিখবে কি না।

কোন বিষয় নিয়া ১৮+ জোক্‌স লিখবে সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে ওর নিজেরই অবস্থা খারাপ, দু'বার তাকে বাথরুম থেকে ঘুরে আসতে হলো। নাহ্‌! ১৮+ জোক্‌স তাকে নিয়ে হবেনা। একবার ভাবলো কবিতা লিখবে। তো কয়েকটি বাংলা ব্যবহারিক অভিধান নিয়ে সে বসলো। কিন্তু হায়! কোনো কবিতাই তার মাথায় আসছেনা যে! অনেক চেষ্টা করে সে কবিতার দুটো লাইন বানালো।

কিন্ত কবিতা লিখার আগে সে ১৮+ জোক্‌স লিখার চেষ্টা করেছিলো, তাই কবিতাটি হয়ে গেলো এরকমঃ "জীবনে যারে তুমি দিতে দাওনি *** মরণের আগে কেন দিলে ওই *** " লাইন দুটো লিখা মাত্র তার বুক ছ্যাৎ করে উঠলো। ছি ছি! সে এসব কি লিখছে! এই কবিতা টি পোষ্ট করা মাত্র তাকে নিশ্চয়ই ব্যান করা হবে! ঝোকের বশে সে এসব কি লিখছে! নাহ্‌! এখন আর ব্লগ লিখা যাবেনা। এভাবে রাত সাড়ে ৩টা বেঁজে গেলো। সে বাইরে গেলো সিগারেট খাওয়ার জন্য। সিগারেট খাওয়ার পর সে অবশ্যই আবার ব্লগ লিখতে বসবে।

ব্লগ আজ তার লিখতেই হবে! সে দেশের জন্য এতো ভাবে, ফিলিস্তিনিদের জন্য এতো ভাবে, আর সে ব্লগ লিখবেনা, এটা কোনো কথা হলো! সিগারেট শেষ! এখন বাতেন আবার নেট এ বসলো। আজ তাকে ব্লগ লিখতেই হবে!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।