আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান কোথায়?



ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান কোথায়? ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও রাজউকের যোগশাজসে চলছে ঢাকার নিম্নাঞ্চল ভরাটের অশুভ পরিকল্পনা বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টিতে ঢাকা শহরে যে জলাবদ্ধতা সমস্যার তৈরী হয় সে কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। বর্ষার মৌসুমে ঢাকাবাসীর দুর্ভোগ বলে শেষ করার মতো নয়। সংকট নিত্য- নতুন করে বাড়ছে । নতুন করে শোনা যাচ্ছে জলাবদ্ধতায় এবার পুরো ঢাকা শহর ডুবে যাবে । পত্রিকায় প্রকাশিত এসব সংবাদের কোন গুরুত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট কত্তর্ৃপক্ষের কারো কানে গেছে এবং তারপর এই দুর্যোগকে সামাল দেবার মতো কোন প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়নি ।

তাহলে মানুষ ধরেই নিচ্ছে আষাঢ়ের নিয়মিত বৃষ্টিতেই ঢাকার যে অবস্থা হয়, তাতে অতিবৃষ্টি হলে কী ঘটবে তা বলাই বাহুল্য । যাক সেসব ঘটনাকে কে কীভাবে মোকাবেলা করবে সেটা জানা যাবে । কিন্তু কেউ যদি জানতে চায় এঘটনা কেন ঘটে? তার উত্তর বড় নির্মম । তুলনা করলে এ শহর ভেনিসের চেয়েও ভৌগলিকভাবে অগ্রসর ছিলো। এ শহরের চারপাশে ১১০কি.মি. বিস্তৃত নদী ছিলো ।

ভেতরে ছিলো খাল ঝুরি খাল ওঅজস্র পুকুর । কিন্তু মাত্র ৪০০ বছরে অযত্ন- অবহেলায় বুড়ি হয়ে গেল ঢাকা শহর । এখন ঢাকা মানে ময়লা -আবর্জনার স্তুপ । ঢাকা মানে সামান্য বৃষ্টিতে ফুঁসে ওঠা এদো -পচা এক রাজধানী শহর। কিন্তু যে শহর ভেনিস হতে পারতো সে শহর এমন কেন হলো ? সে সম্বন্ধে বলতে গেলে যে কেউই এক কথায় বলবে- অপরিকল্পিত ভাবে ঢাকা শহরের অভ্যন্তরের ও আশপাশের নিম্নাঞ্চল ভরাট হয়ে যাওয়াই এর মূল কারন।

অথচ ঢাকা শহরের উন্নয়ন ও পরিকল্পনার সাথে সংশ্লিষ্ট মূল দুটি সংস্থার মনোভাব দেখে মনে হয় নিম্নাঞ্চল ভরাট করা যেন কোন সমস্যাই নয়। এ দুটি সংস্থার একটি হচ্ছে রাজউক ও অন্যটি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। তাইতো এ দুটি সংস্থার যোগশাজসে চলছে ঢাকা শহরের মিরপুর বেড়ীবাঁধ সংলগ্ন মূল বন্যা প্রবাহ (গধরহ ভষড়ড়ফ ভষড় িতড়হব) অঞ্চল ভরাট করার অশূভ পরিকল্পনা। অর্থাৎ জল যেখান দিয়ে বের হবে সেখানেই বিভিন্ন কায়দায় আটকে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন নামে। ফলে সংকট রয়েছে মূল জায়গায়।

অথচ এটুকু সংস্কার করা হলে এ শহর ভেনিস না হোক মানুষজনকে সহজেই নিমজ্জিত হতে হতোনা । মুখোমুখি হতে হতোনা অজস্র রোগ-বালাইয়ের । কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টাটা বাধবে কে? ঢাকার জলাবদ্ধতার চিত্র নতুন করে দেখতে হলে সরেজমিনে ঘুরে আসলে বিষয়টা আরও স্পষ্ট হবে---------- মিরপুর বেড়ীবাধ সংলগ্ন পশ্চিমাংশে গোড়ান চটবাড়ী মৌজাকে ঢাকা শহরের জন্য প্রনীত ডিএমডিপি মাস্টার প্ল্যানে গধরহ ঋষড়ড়ফ ঋষড় িতড়হব অথবা মূল বন্যা প্রবাহ অঞ্চল হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। এলাকাটি বর্ষা মৌসুমে সম্পূর্ণ পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এছাড়া বছরের অন্যান্য সময় এমনকি ভরা শুকনা মৌসুমেও এ অঞ্চলের অনেকাংশ পানিতে নিমজ্জিত থাকে এবং বছরের একটি সময় এখানে চাষাবাদ কাজ চলে।

বাস্তবিক অর্থেই অঞ্চলটি একটি পরিপূর্ণ জলাধার। আর ঢাকা শহরের উন্নয়নের অভিভাবক ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এমন একটি স্থানকেই বেছে নিয়েছে তাদের প্রস্তাবিত মিরপুর কবরস্থান নির্মানের সাইট হিসেবে। আর এতে অনাপত্তি দিয়েছে ঢাকা শহরের মহাপরিকল্পনা প্রনয়নকারী প্রতিষ্ঠান অন্য অভিভাবক রাজউক। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক প্রস্তাবিত "ঢাকা মহানগরীর মিরপুর ও আফতাবনগরে দুটি কবরস্থান নির্মাণ"- শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মিরপুর বেড়ীবাঁধ সংলগ্ন এলাকায় নিম্নাঞ্চল ভরাট করে কবরস্থান নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে আলোচ্য প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের প্রকল্প অনুমোদনের সর্বোচ্চ কতর্ৃপক্ষ একনেক কতর্ৃক অনুমোদনের অপেক্ষায় একনেক অনুবিভাগে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

যেকোন সময় প্রকল্পটি একনেক সভায় উপস্থাপন করে চুড়ান্তভাবে অনুমোদন করা হবে। ঢাকা মহানগরীর জন্য ২০ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনা প্রনয়ন করা হয় ১৯৯৫ সালে। উক্ত মহাপরিকল্পনায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানকে গধরহ ঋষড়ড়ফ ঋষড় িতড়হব, ঝঁন ঋষড়ড়ফ ঋষড় ি তড়হব ও জবঃবহঃরড়হ চড়হফ অৎবধ হিসেবে ঘোষনা করা হয়। এতে বলা হয় যে, বর্ষা মৌসুমে ঢাকা মহানগরীর বৃষ্টির পানি বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাল ও পয়ঃনিস্কাশন লাইনের মাধ্যমে উক্ত ঋষড়ড়ফ ঋষড় িতড়হব ও জবঃবহঃরড়হ চড়হফ এলাকায় জমা হবে। ফলে বর্ষা মৌসুমে ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা সমস্যা সৃষ্টি হবে না।

যে সরকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন স্থান সংরক্ষনের পরিকল্পনা করেছে তারই কিভাবে আবার ঐ সকল স্থান ভরাটে অনাপত্তি দিচ্ছে তা কারো কাছে বোধগম্য নয়। ঢাকা মহানগরীর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কথা বিবেচনা করে ঢাকায় নতুন কবরস্থান নির্মান করার প্রয়োজন রয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তা কেন নিম্নাঞ্চল ভরাট করেই করতে হবে? ঢাকা শহরে সরকারের অসংখ্য খাস জমি রয়েছে যেখানে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। কোন অবস্থাতেই ঢাকা মহানগরীর আশপাশের নিম্নাঞ্চল ভরাট করে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সমীচীন হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। রাজউক তার মহাপরিকল্পনার নির্দেশনা উপেক্ষা করে কেন ডিসিসিকে মূল বন্যা প্রবাহ অঞ্চলে মাটি ভরাট করে কবরস্থান নির্মানের অনাপত্তি প্রদান করল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের একজন কর্মকর্তা বলেন যে, মিরপুর বেড়ীবাঁধের পূর্ব পাশ্বর্ে ঠিক বেড়ীবাঁধের সীমানা পর্যন্ত রাজউক তার উত্তরা মডেল টাউন প্রকল্প গড়ে তুলেছে। বেড়ীবাঁধের পশ্চিম পাশ্বর্ে অনেক বেসরকারী হাউজিং কোম্পানী মাটি ভরাটের কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংস্থার সময় উপযোগী যথাযথ কর্মকান্ডের ফলে ঐ সকল নিম্নাঞ্চল ভরাট করতে পারেনি। এখন রাজউক ও ডিসিসির কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগীতায় তারা আবার নিম্নাঞ্চল ভরাটের পায়তারা করছে। কবরস্থান মানুষের ধমর্ীয় চেতনার একটি দূর্বল স্থান।

কবরস্থান নির্মাণ কাজে অনেক পরিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান হয়তো বাধা দিবে না বা বাধা দিলেও জনসাধারনের সমর্থন পাবে না বলে রাজউক ও ডিসিসির অসাধূ কর্মকর্তারা মনে করেন। ফলে মানুষের সরলতার সূযোগ নিয়ে একবার এ নিম্নাঞ্চল ভরাট কাজ শুরু করা গেলে বেসরকারী হাউজিং কোম্পানীর জন্য মিরপুর বেড়ীবাঁধ ও আশুলিয়া সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল ভরাটের কাজ সহজতর হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। কেননা তখন বেসরকারী হাউজিং কোম্পানী কর্তৃপক্ষ তাদের স্বপক্ষে যুক্তি দিতে পারবে যে, একটি সরকারী সংস্থা যেহেতু এ অঞ্চলে মাটি ভরাট করে কবরস্থান নির্মাণ করতে পেরেছে সেহেতু এ অঞ্চলে মাটি ভরাট করলে তা পরিবেশের কোন ক্ষতি করবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে ঢাকা শহরের চারদিকের নিম্নাঞ্চলগুলো ভরাট করা হলে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যা স্থায়ী রূপ নিতে পারে। ঢাকা শহরকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বর্তমান সরকার "বেগুনবাড়িসহ হাতিরঝিল এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প" শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

অথচ তারাই আবার রাজউক ও ডিসিসির দূষ্টচক্রে আবদ্ধ হয়ে ঢাকা শহরে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করার মতো একটি প্রকল্প কেন গ্রহণ করতে যাচ্ছে তা কারো বোধগম্য নয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.