আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদ্ধস্ত নীলিমা

জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখতে চাই। গতানুগতিকতার গন্ডি থেকে মুক্তি চাই। এতে হয়তো শুনতে হবে অনেক অপমানের বাণী। ভয় করি না।

অনেকদিন ধরে ভাবছি যে কোথাও ঘুরতে যাব।

এই চার দেয়ালে বন্দী থেকে মনে হচ্ছে যে শরীর পচে গিয়েছে আর সেই গন্ধে নাড়ি-ভূরী উল্টে আসছে। আমি আর আমার দুই বন্ধু পাপ্পু এবং মুরাদ তিন জন মিলে ঠিক করলাম অনেক দূরে চলে যাব। ঠিক হল কক্সবাজার যাব। কিন্তু সমস্যা হল আব্বাকে নিয়ে। আমি দূরে কোথাও যাব এইটা আব্বা সহজ ভাবে নিতে পারে না।

দূরে কোথাও গেলে তার চিন্তা হয় প্রচুর। কিছুতেই আমাকে একা ছাড়তে চায় না। কিন্তু এবার আমি একেবারে নাছোড়বান্দা । যেতে আমাকে হবেই,ঘুরতে হবে অনেক। আমার আব্বাকে নিয়ে একটা কথা বলি,যদি আমি বলি আব্বা কুমিল্লা যাব তাহলে আব্বা বলেন যে ঢাকার সাইড থেকে বেড়িয়ে আস।

এত দূরে যাওয়া ঠিক না। আবার যদি বলি ঢাকার সাইডে বেড়াব তাহলে আব্বা বলে যে ওখানে গিয়ে করবা ?যাও তোমার বড় চাচার বাসায় বেড়িয়ে আস। সো আমিও আব্বার সাথে একটু খেলা খেললাম। প্রথমে আব্বা কিছুতেই কক্সবাজার যেতে দেবে না। তাই আমি বললাম যে আমি সেন্ট মারটিন দ্বীপে যাব।

তখন আব্বা বলল যে আমাকে ২ দিন চিন্তা করতে দাও। ২ দিন পর আব্বা বললেন বাবা ইমির তুমি সেন্ট মারটিন গিয়ে কি করবে?এর চেয়ে কক্সবাজারের বেড়িয়ে আস। আমি মনে মহা খুশী চেপে রেখে আনন্দ চেপে রাখলাম। ভাব দেখালাম যে আসল মজাটাই বাতিল, চোখ ,মুখ কাল করে বললাম আচ্ছা তুমি যা চাও তাই হবে। ঠিক হল ১৫ তারিখ যাব।

যাত্রা হবে গ্রীন লাইনের স্ক্যানিয়ায়। সোজা কক্সবাজার চলে যাব। আমি আর আমার ২ বন্ধু গেলাম বাস স্ট্যান্ডে। ৩ টা টিকেট কাটা হয়েছে। ২ টা সীট পাশাপাশি আর ১ টা সীট একটু পাশে পড়েছে মানে আমরা যেকোন ২ ফ্রেণ্ড এক সাথে পাশাপাশি বসতে পারব।

আরেক জনকে আপরিচিত কারও সাথে বসতে হবে আর সেই হতভাগাটাই হলাম আমি। যাই হোক বাস ছাড়ল কলাবাগান থেকে। পাপ্পু আর মুরাদ বেশ গল্প করছে আর আমি একলা কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছি "যখন পড়বেনা মোর পায়ের চিহ্ন..............."হাতে রবার্ট ফ্রস্টের একটা কবিতার বই। মালিবাগ আসলাম আর আমার পাশের সীটে একজন অল্প বয়সী তরুণী উঠল। এখন তো আমার ২ বন্ধু চোখ ছানাবড়া করে আফসোশ করতে লাগল কেন তারা এই সীটে আগে বসল না।

আমি এর মাঝে বেশ ভাব জমিয়ে ফেল্লাম মেয়েটার সাথে। পথে ফ্রেন্ডদের সাথে খুব বেশি কথা বললাম না। মাঝে কুমিল্লায় বাস থামল কিছুক্ষণের জন্যে। মেয়েটি আমাকে চা খাওয়ালো। এই কান্ড দেখে ওরা হা হুতাশ করতে লাগল,তা দেখার মত।

আচ্ছা মেয়েটির গল্প পরে আরেক পর্বে করা যেতে পারে। এখন বলি আমার ভ্রমণ কাহিনী। ২ কক্সবাজারে আমরা উঠলাম সার্কিট হাউজে। সেখানে পাহাড়ের উপর মনোরম দৃশ্যে মন আসলেই ভরে গেল। এদিকে আব্বু আবার একটা লেজ মানে আব্বুর এক অফিসারকে আমাদের সাথে জুড়ে দেয়েছে।

নাম কবির। যদিও আমরা তাকে কোবরা বলেই ডাকি। অবশ্য আড়ালে। তিনি নাকি আমাদের গাইড। বিশাল টেকো এক লোক,চেহারায় অনেকটা আলিফ লায়লার দৈত্যের সাথে মিল আছে।

আমি শিওর উনার মাথায় একটা টিকি জুড়ে দিলেই আর একটা লুংগি পাড়ালে তাকে দৈত্য বলে কেউ ভুল করবে না। পরদিন সকালে আমরা সৈকতে গেলাম। কোবরা আমাদের উপর খবরদারি করছেন। "এই ছেলেরা পানিতে যেও না। "এইসব নীতি বাক্য শুনাচ্ছেন।

মেজাজ খারাপ হচ্ছে "আমরা কি আর কচি খোকা?"যে সব মানতে হবে?আমরা বুজতে পারলাম উনার সাথে থাকলে আমাদের ঘুরা পুরা মাটি হয়ে যাবে। বলে উনাকে বললাম আংকেল গাড়ির চাবিটা আমাকে একটু দেন তো আমি রুমে মানি ব্যাগ রেখে এসেছি। বললেন "না, তোমরা একা যেও না আমিও আসছি। "বলি "না", "আপনি কস্ট করবেন কেন"?এখানে কত আন্টিরা আছে দেখতে থাকেন। দেখি আংকেল চোখ কটমট করে তাকিয়ে আছেন।

আমাদের বললেন যে তোমরা ১৫ মিনিটেই আবার এখানে মানিব্যাগ নিয়ে চলে আসবে। গাড়ি আর চাবি যখন পেয়েছি তখন কি আবার দৈত্যের কাছে যাওয়া যায়?আমরা ঠিক করলাম মহেশখালি দ্বীপে যাব। ভাগ্য ভাল ড্রাইভিংটা জানা ছিল আর না হলে তার খপ্পর থেকে যে কিভাবে উদ্ধার হতে পারতাম আল্লাহ মালুম। ৩ মহেশখালি দ্বীপে যেতে হলে প্রথমে ৬ নম্বর জেটিতে স্পিড বোট ঘাটে যেতে হয়। আমরা ঘাটে গেলাম তারপর স্পীড বোট ভাড়া করলাম।

মহেশখালী দ্বীপে নেমে যা অবস্থা দেখলাম তার জন্যে আমরা ৩ জন মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। দ্বীপে নামা মাত্রই এক ঝাক রিকশা ওয়ালা আমাদের ঘিরে এক প্রাচীর তৈরি করে ফেলল। সবাই তাদের রিকশায় আমাদের তুলতে চায়। কারণ এখানে প্যাসেঞ্জার পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। বহু কষ্টে হাপাতে হাপাতে সেই ভীড় ঠেলে বের হলাম।

মহেশখালি বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ। কি অপরূপ নৈসর্গিক দৃশ্য। ঠিক যেন পাহাড় আর সমুদ্র এক হয়ে মিশে গেছে। পাহাড় যেন সমুদ্রকে আলিংগন করতে চাইছে। আর সমুদ্র কেবলই দূরে চলে যেতে চাইছে।

আমরা ভুমি থেকে প্রায় ৩০০ ফুট উচচতায় আদিনাথ মন্দিরে গেলাম। মন্দিরটি অনেক প্রাচীন। মন্দিরে আছে জায়গায় জায়গায় খাটি সোনার সুচারু কাজ। রাখাইন তরুণীরা মন্দিরে পূজো দিচ্ছে। ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেল।

স্পীড বোটের জন্যে লাইন ধরতে হচ্ছে এখন। স্পীড বোট এখন অনেক ক্ষন পরে একটা করে আসছে। রাত বাড়তে লাগল আর আমদের চিন্তা ভাবনাও এলোমেলো হতে লাগল। এই নির্জন দ্বীপে যদি আজ স্পীড বোট না পাই?যদি কেউ আমাদের এখানে মেরে যায় তাহলে তো কেউ লাশটিও খুঁজে পাবে না। এদিকে আবার বোটের মালিককে হাত করে কেউ কেউ আগে চলে যাচ্ছে।

আর একটা বোট যায় আরেকটা আসে প্রায় ১ ঘন্টা পরে। ১ বোটে ১০ জন করে ধরে। আর এই এক ঘন্টা সময় গুলা যেন এক যুগ মনে হচ্ছিল। এদিকে আমাদের মেজাজও খারাপ হওয়ার পথে আমরা বোটের মালিকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালাম যে সে কেন লাইনের পিছনের লোককে আগে নিচ্ছে?এর মধ্যে এক লোক এসে বলল সে সবার আগে আসবে?জিজ্ঞাসা করলাম," সবার পিছনে এসে সবার আগে সে কেন যাবে?"উত্তরে সে বলল সে ভোটের লোক?তার দাবি আমরা বিদেশি, আমরা কেন আগে যাব?সেখানে নাকি ভোটের লোকদের অনেক পাওয়ার। আমি আর উত্তেজনা চেপে রাখতে পারলাম না।

লোকটা কে বললাম যে "আপনি যদি আগে যেতে চান আপনাকে পানিতে ফেলে দেয়া হবে। "একটা বিরাট হৈ চৈ পরে গেল চারদিকে। সবাই আমার সাথে সহমত প্রকাশ করল। এর ঠিক পরের ট্রিপেই আমরা বোট ধরলাম। ঠিক যেন বুকের ভেতর থেকে একটা ভাড়ি পাথর নেমে গেল।

বোটে উঠে সবাই যেন কেমন চুপ করে থাকল কেউ কোন কথা বলছেনা। শুধু পাপ্পু আস্তে আস্তে বলছে "আমি ক্লান্ত প্রাণ এক,চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন"......... এদিকে কোবরা আমাদের হন্য হয়ে খুজে বেড়াচ্ছে। তার অবস্থা খুবই করুণ। তার কাহিনী আরেকদিন বলতে হবে। সে এক কথা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।