আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবশেষে যৌবনযাত্রায় ঢুঁ মারিলাম(উৎসর্গ আরিফ জেবতিক, নাস্তিকের ধর্মকথা, সামী মিয়াদাদ)

ফ্রম দ্যা হার্ট অফ ডার্কনেস

তিন তিনজন হেভিওয়েট ব্লগারকে উৎসর্গ করে কোন পোষ্ট লেখা এক ধরণের ধৃষ্টতা বটে, সেই সংগে দৃষ্টি আকর্ষনের এক সস্তা নাটকীয় কায়দা। তবু সেই সস্তা কায়দার আশ্রয় নিলাম। অমি রহমানের পিয়ালের ব্লগ তোলপাড় এক পদক্ষেপের সমর্থনে লেখা এই তিনজনের পোষ্টের প্রত্যেকটিতে আমি মাইনাস দিয়েছি এবং সেটা ভিন্ন ভিন্ন পারস্পেকটিভ থেকেই এবং সেটা আমার নিজস্ব বোধ-বিশ্বাস কিংবা যৌক্তিক অবস্থান থেকে। আমি তখন পর্যন্ত ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু সেই "যৌবনযাত্রা" সাইট ভিজিট না করেই "অনেকটা চিলে কান নিয়ে বলেই সেই চিলের পিছনেই ছুটে"। কিন্তু আমার এক কমেন্টের জবাবে যখন নাস্তিকের ধর্মকথা এমন রিপ্লাই দেয় "আর পিয়ালের ভূমিকাকে সামনে আনছি এ কারণে যে, এই লোক একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে সেখানে কাজ করেছে, সেখানে ভালো করে মিশেছে- এবং সেই সাইট টিতে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে।

একটা পর্ণো ঘোষিত সাইটের নাম পাল্টিয়ে ফেলা (যৌবন জ্বালা থেকে যৌবন যাত্রা) সহজ কাজ মনে হয় না, সেই সাইটে ফ্যামিলি ফিল্টার যুক্ত করাও সহজ মনে হয় না, সেখানে যুদ্ধের বিভিন্ন লেখা- ছবি- ভিডিও যুক্ত করা, সেগুলোর পাঠক তৈরী করা, সেসব নিয়ে আলোচনা চালানো এমনটি শুরু করা...... সব কিছুই আমার খুব অসাধারণ মনে হয়েছে (এখনও ঢুকিনি, পিয়াল ও অন্যদের ব্লগ পড়েই যে ধারণা পেয়েছি)"। তখন জিভে কিরে কেটে দৌড় লাগায় সেই যৌবনযাত্রা'য়। আগেই বলে রাখি যৌবনযাত্রা সাইটটি আমার কাছে একেবারেই অপরিচিত। এক কি দুই বছর পুর্বে কোন এক লিংকের সুত্র ধরে যৌবনজ্বালা(পরে জেনেছি, যৌবনজ্বালা এখন যৌবনযাত্রা) নামের একসাইটে আমি ঢুঁ দিয়েছিলাম বটে। কিন্তু কোন কিছু ব্রাউজ করার পুর্বেই সেখান নাম-রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক" এমনতর আবদারে আমি পিছু হটে ছিলাম।

এক্ষেত্রে ধরাপড়ার ভয়,ভীতি কিংবা নৈতিকতা মুখ্য নয়,আমার আলস্যই মুখ্য। তো এইবার ঢুকতেই যুদ্ধাপরাধীদের দাবী সংবলিতে ব্যানার চোখে পড়ল। কিন্তু অন্যকিছু দেখতে চাইলেই সেই নাম-নিবন্ধনের ফ্যাকড়া। নামনিবন্ধন করে ফেল্লাম। সাহোইন-এর ব্যবহৃত আইডি আর ইমেইল ব্যবহার করেই।

রেজিষ্টার্ড ইউজার হিসেবে যথেচ্ছ অধিকার আমার। এদিক-ওদিক ক্লিক মারতেই নজরে এলো অ্যাডাল্ট সেকশন। সেখানে আবার দেশি,বিদেশি নামের আলাদা সেকশন। দেশি সেকশনে মাউসের লেফট বাটন চাপতেই দেখা গেলো অনেক ভিডিও ক্লিপিং। প্রথম ক্লিপিংটির থাম্বনেইল ভিউয়ে এক দেশি পুরুষের উত্থিত লিংগ।

এই উত্থিত লিংগের দর্শনের নেতিয়ে পড়ল প্রথমে পড়া যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবীর আমার উথিত চেতনা। অডিও-ভিজুয়্যাল মিডিয়াম ইজ ফার স্ট্রংগার দ্যান টেক্ট অনলি। আমার মস্তিকের বামেপাশে এখনও সেই উত্থিত লিংগের ছবির আর ডানপাশে সেই যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবী সংবলিত ব্যানার। আমি এমনিতেই ছিচকাদুনের স্বভাবের লোক, খুব অল্পতেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি পড়তে পড়তে অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠি, ২য় বিশ্বযুদ্ধের পটভুমিকায় নির্মিত "ব্যালাড অফ অ্যা সোলজার" ছবিটি যতবারই দেখি, ততবারই প্রথম এবং শেষদৃশ্যে চোখে জল চলে আসে।

তবু আমি আন্তরিক মনেপ্রানে বিশ্বাস করি ইতিহাসের পাঠ নির্মোহ হওয়া উচিত। সেই ইতিহাসের নির্মোহ পাঠে আমি বাংগালী জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধকে আহমেদ শরীফের ভাষায় "বাংগালী মধ্যবিত্তের অধিকার প্রতিস্ঠার সংগ্রাম হিসেবেই দেখি। বংগবন্ধু শেখ মুজিবের মতো জাতীয়তাবাদী নেতার ক্যারিশমা ছিলো, সেই "মধ্যবিত্তের অধিকার প্রতিষ্ঠা"র সংগ্রামকে আপামর গণমানুষের মুক্তির আখাংকায় পরিণত করার। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সবচে সুফলভোগী হিসেবে পাই বাংলাদেশি মধ্যবিত্ত শ্রেণীকেই। সুবিধাভোগী মধ্যবিত্তের একজন হয়েও মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক অধিকারবশত যে আবেগ সেইটা আমার নাই।

আমার বাপ-চাচার কেউ মুক্তিযু্দ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। এমনকি অনিবার্য যে বাংলাদেশের অভুদ্যয়, সেইটা যদি কোন দৈবশক্তি বলে প্রতিহত হতো, বাপ-চাচার মতোই হয়তোবা আমিও ইউনাইটেড পাকিস্তানের সুবিধাভোগী মধ্যবিত্ত হিসেবেই এক স্বাধীনতা প্রত্যাশী কিন্তু শৃংখলাবদ্ধ জীবনযাপন করতাম। বগুড়া শহরের এক পরিবারের কথা আমি জানি। যে পরিবারে আছে মুক্তিযুদ্ধে এক পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ এক তরুণ এবং তাঁর এক বীরাংগনা বোন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সেই বীরাংগনার সন্তান সহ পুরোপরিবার যুদ্ধাপরাধী দলের সাথে সংশ্লিষ্ট।

আবগের দৃষ্টিতে দেখলে মুক্তিযুদ্ধের অধিকার সেই পরিবারের অনেক বেশি। তারা যুদ্ধাপরাধের বিচার চায়না কিন্তু আমি চাই এবং সেটা আবেগ হীন ভাবেই আমার নৈতিক অবস্থান থেকে। এবং আমি জানি আমার এই নৈতিক অবস্থানে আমি সঠিক, তারা ভুল। যুদ্ধাপরাধকে আমি দেখি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে। তাই সচলায়তনে জনৈক ব্লগার যখন যুদ্ধাপরাধীদের খুনি ভাড়া করে মারতে যায়, তাঁর সমস্ত আবেগ বুঝেও সেটাকে আমার হটকারী মনে হয়।

তেমনিভাবে অমি রহমান পিয়ালের আবেগ, তাঁর দৃঢ় অবস্থান এবং প্রবল আশাবাদী মনোভাব সত্তেও যৌবনযাত্রার মতো পর্নোসাইটে যুদ্ধাপরাধের বিচারে সংবলিত বাণীকে আমার বালখিল্য শো-অফ মনে হয়। নৈতিকতার সুনির্দিষ্ট সীমারেখা নেই। তবে আপাতভাবে দেশকাল, সমাজভিত্তিক এক অলিখিত সীমারেখা আমরাই গড়ে তুলি। সামোইন-এ বিকিনি পরিহিত কোন নারীর ছবি দেওয়ার কিছুক্ষন পড়েই মডারেটর'রা সরিয়ে ফেলে এবং সেটা ব্লগারদের আপত্তির কারনেই। কেন? ব্লগাররা কি এতো অবুঝ যে তারা জানেনা মজিলাতে সামোইন-এর পাশে একটা নতুন ট্যাব খুলে সেখানে যে কোন হলিউডি কিংবা বলিউডি নায়িকার নাম টাইপ করলেও বিকিনি পরিহিত হাজারো ফটোগ্রাফ চলে আসবে।

তবু তারা আপত্তি করে?কারন এইটাই এখানকার অলিখিত নৈতিকতার সীমারেখা। কিছুদিন আগে ব্লগে ঢাবি'র "টি,এস,সি" কে রেনোভেট করার কাজে গ্রামীন ফোনের সংশ্লিষ্টতায় আমাদের সবার গাত্রদাহ হয়েছিল। কেন? গ্রামীনফোনের এক ঝুলানো সাইনবোর্ডের বিনিময়ে এক অপরিস্কার, নোংরা টি,এস,সি পরিবর্তে আমরা এক ঝকঝকে, তকতকে টি,এস,সি পেতাম। তবু আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। কারণ সেটা হতো পাবলিক এক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্পোরেট প্রতিস্ঠানের অর্থের কাছে ক্ষুদ্র পরাজয়।

তেমনি যুদ্ধাপরাধের বিচারে ব্যানার ঝুলিয়ে এক পর্ণো সাইট চাইছে আমাদের কাছে এক প্রাতিষ্ঠানিক গ্রহনযোগ্যতা। কি হবে বা হওয়া উচিত আমাদের করণীয়?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।