আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

থাউজেন্ডস মাইলস টু গো -৩


ইউটাতে আমি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে ২ দিনের মধ্যে একটা গাড়ী কিনলাম। গাড়ী কেনার ২ দিনপর জানতে পারলাম আমাকে মুভ করতে হবে নিউ ইয়র্কে। নতুন ড্রাইভার আমি, এখনও ইজি হতে পারিনি। কি করি এখন? সিদ্বান্ত নিলাম ২২০০ মাইল ড্রাইভ করেই যাব। শীতের কাপড়,কম্বল, কিছু খাবার ও পানীয়, ইমারজেনসি কিট ও জিপিএস নিলাম।

তারপর ম্যাপ-স্টাডি, রুট আর স্টপেজ প্ল্যান করে আল্লার নামে ড্রাইভ শুরু করলাম ভোর ৫:৩০ এ। তো সে ড্রাইভের কাহিনী বলছি। প্রথম পর্ব ২য় পর্ব ৫. ২২০০ মাইল যাত্রা পথে এমন অনেক ঝুঁকির মধ্যে পরেছিলাম যেখানে একটু এদিক ওদিক হলেই অন্য কাহিনী হয়ে যেত। বিশেষ করে সবচেয়ে ঘাম ঝরানো অবস্থা ছিলো ওয়াইয়োমিং এর তুষার আর পেনসিলভেনিয়ার পাহাড়ী প্যাচানো রাস্তা। তাছাড়া সন্ধ্যার সময় গাড়ী চালানো খুবই ডিফিকাল্ট, সব কেমন যেন এলোমেলো লাগে।

ওয়াইয়োমিং এর শায়ান শহরে থেমেছিলাম প্রথমদিন লান্চ করার জন্য। হাইওয়ে থেকে এক্সিট নিয়ে শহর এলাকায় ঢুকে তো আমি মহাফ্যাসাদে পড়ে গেছিলাম, কারন পুরো শহর ১০ ইন্চি তুষার এ ঢাকা ছিলো তাই কিছুই চিনতে পারছিলাম না যে কোথায় যাব কি খাব। যাই হোক একটা গ্যাস স্টেশনের ফুড কোর্টেই খাওয়া সারলাম। তারপর তিনদিন টানা চালিয়েছি গাড়ী। ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা ৭/৮ টা পর্যন্ত।

মাঝে শুধু খাবার আর গ্যাস নেওয়ার জন্য থামতাম ২০-৩০ মিনিট। রাস্তার পাশে সুন্দর সুন্দর সার্ভিস সেন্টার, লজিং সব আছে। ৬. দুইদিন রাত কাটাতে হয়েছে পথে, একদিন নেব্রাস্কার ছোট শহর গুথেনবার্গে একটা ছোট মোটেলে। আরেকরাত ছিলাম শিকাগো শহরে। শিকাগো যদিও হইওয়ে থেকে ২০-২৫ মাইল ভিতরে তবুও গেলাম যে ওবামার টাউনটা একটু দেখে যাই।

ওখানে নাকি ডেভন স্ট্রিটে অনেক বাংগালী আর ইন্ডিয়ান খাবার দোকান আছে। ওখানে একটা রোড আছে শেখ মুজিবের নামে। যদিও এই লং জার্নিতে আমি ঘুরাঘুরির মুডে ছিলাম না তাই কোন মজা পাইনি। শিকাগো থেকে পরের দিন রওনা দিলাম। পেনসিলভেনিয়ার ওপর যখন ছিলাম সন্ধ্যার সময় পাহাড়ী আঁকা বাঁকা পথে খুবই কষ্ট হচ্ছিলো ড্রাইভ করতে।

তার উপর আবার কিছুক্ষন পর পর টানেল যেখানে ঢুকলেই আলোতে চোখ ধাধিয়ে যেত, মনে পড়তো ডায়ানার দুর্ঘটনার কথা। যাইহোক সেদিন রাতে আমি পৌছলাম ফিলাডেলফিয়াতে, আমার এক আফ্রিকান বন্ধুর বাসায় রাত কাটালাম। পরেরদিন দুইজান মিলে নিউইয়র্ক চলে গেলাম। এভাবে আমার সে যাত্রার সমাপ্তি ঘটেছিলো কোন রকম সমস্যা ছাড়াই। আমি সত্যই কৃতজ্ঞ আমার ছোট হোন্ডা সিভিক ( পথে কোন ঝামেলা না করার জন্য) আর জিপিএস ( বিরামহীন পথ প্রদর্শনের জন্য) এর প্রতি।

আমি এই যাত্রা শুরু করেছিলাম ইউটা থেকে এবং শেষ করেছি নিউইয়র্ক স্টেটে, পথে আতিক্রম করেছি ওয়াইওমিং, নেব্রাসকা, ইলিনয়, ইন্ডিয়ানা, ওহাইও, পেনসিনভেনিয়া, নিউজার্সি। সমাপ্ত।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।