আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওবামা আর আমার কন্যা রোজাবেল-ছুটির দিনের বিশেষ প্রতিবেদন

এই পৃথিবীতে শুধুমাত্র দুই রকমের মানুষ আছে। ভালো মানুষ যারা ভালো কাজ করে। আর খারাপ মানুষ যারা খারাপ কাজ করে। এটাই মানুষদের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য। আর কোন পার্থক্য নেই... আমি ভাল মানুষ...☺☺☺

লেখাটা আজকে প্রথম আলোর ম্যাগাজিন ছুটির দিনে প্রকাশিত হয়েছে।

লেখাটি পড়ে একটা সম্মান তৈরী হলো আমেরিকার সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপর। তার প্রতি সম্মান জানিয়েই লেখাটিকে ব্লগে দিয়ে দিলাম। বাংলাদেশের ছোট্ট মেয়ে রোজাবেল জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক। কীভাবে ছোট্ট রোজাবেলের সঙ্গে যোগাযোগ হলো নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার? আর সেই যোগাযোগ গড়াল "বন্ধুত্ব" অবধি? বাদল সৈয়দ জানাচ্ছেন আদ্যোপান্ত। অনেকটা দুষ্টুমি করতে করতেই বারাক ওবামার সঙ্গে আমার কন্যা রোজাবেলের যোগাযোগ।

শোনা যাচ্ছিল বারাক যদি প্রেসিডেন্ট হন, তবে শুধু প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন প্রেসিডেন্টই হবেন না, প্রথম "ইন্টারনেট প্রেসিডেন্ট"ও হবেন তিনি। কারণ, তাঁর হাতের মুঠোয় থাকা "ব্ল্যাকবেরি" ফোনের মাধ্যমে তিনি যোগাযোগ রাখছিলেন হাজার হাজার সমর্থকের সঙ্গে। তিনি তখন সদ্য ডেমোক্রেটিক দলের চুড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন। আমি ইন্টারনেটে বারাকের ছবি দেখছিলাম, পাশে সাড়ে তিন বছরের রোজাবেল। সারাক্ষণ কথা বলে।

বারাকের ছবি দেখে সে বলল, "বাবা উনি কে?" হাসতে হাসতে বললাম, "উনি তোমার বারাক আঙ্কেল। " আমার বুদ্ধিমতী মেয়ে বলল, "তাহলে বাসায় আসে না কেন?" বললাম, "ঠিক আছে, ওকে আমাদের বাসায় আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। " সেই শুরু। বারাককে আমার মেয়ের পক্ষে আমন্ত্রণ জানিয়ে মেইল পাঠালাম। আর কী আশ্চর্য! পরদিনই বারাকের জনসংযোগ দলের পক্ষ থেকে ছোট্ট রোজাবেলকে ধন্যবাদ জানিয়ে উত্তর দেওয়া হলো।

সাড়ে তিন বছর বয়সী বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক রোজাবেলকে (রোজাবেলের জন্ম নিউইয়র্কের সেন্ট জন্স কুইন্স হাসপাতালে, জন্মের পরও তার জীবনের বড় একটা অংশ কেটেছে নিউইয়র্কে) বলা হলো বারাক তাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য লড়াই করছেন। তারপর প্রায় প্রতিদিন মেইল আসতে থাকে বারাক এবং তাঁর দলের পক্ষ থেকে। জানানো হয় তাদের পরিকল্পনার কথা। এর মধ্যে একসময় বারাক নিজেই মেইল পাঠাতে শুরু করেন। তাঁর মেইলগুলো দেখে মনে হয় ছোট্ট রোজাবেল, যার ভোট দেওয়ার অধিকার জন্ন নেবে আরও ১৫ বছর পর, তার গুরুত্ব বারাকের নির্বাচনী প্রচারণায় একটুও কম নয়।

একসময় বারাক ও আমার কন্যার গল্পের মধ্যে ঢুকে পড়ে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা, চলমান অর্থনৈতিক মন্দা আর অনর্থক ইরাকযুদ্ধের কথা। আমার শিশুকন্যা এগুলোর কিছুই বোঝে না। সে শুধু বোঝে তার একজন নতুন বন্ধু হয়েছে। নাম বারাক ওবামা। যিনি তারই মতো দো-আঁশলা মার্কিন নাগরিক।

এরপর বারাকের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছাড়িয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে তাঁর স্ত্রী মিশেল ওবামার সঙ্গেও। ২৪ সেপ্টেম্বর তিনি লিখলেন, "রোজাবেল, ২৬ তারিখের প্রথম টেলিভিশন বিতর্ক দেখতে ভুলো না যেন। " এভাবেই পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দম্পতির সঙ্গে বাংলাদেশের এক প্রান্তের এক শিশুর ইন্টারনেট বন্ধুত্ব দিন দিন নিবিড় হতে থাকে। আর ছোট্ট রোজাবেল প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই আমাকে নিয়ে কম্পিউটারের সামনে বসে তার নতুন বন্ধু কী লিখলেন তা শোনার জন্য। ২৭ সেপ্টেম্বর জন ম্যাককেইনের সঙ্গে বিতর্ক শেষেই বারাক তাঁর ছোট্ট বন্ধুকে লিখলেন, "রোজাবেল, জন ম্যাককেইনের সঙ্গে বিতর্ক শেষ করেই লিখছি−তারপর বিতর্কে তিনি কী বলেছেন তার ছোটখাটো বর্ণনা।

তাঁর জবাবগুলো পড়ে আমি অবাক হয়ে যাই। কী অসাধারণ মানবিক এবং মানুষের গুরুত্বে বিশ্বাসী হলে তাঁর মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ বিশ্বব্যাপী ভক্তদের সঙ্গে এমন নিবিড় যোগাযোগ রাখতে পারেন। আমি নিশ্চিত হয়ে যাই, বারাক জানেন কীভাবে মানুষের হূদয়ের অতল সাগরে ডুব দিতে হয়। আরও মুগ্ধ হই তিনি যখন ছোট্ট রোজাবেলকে লিখলেন, "আমি প্রতিদিন তোমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য লড়াই করব। আমি হব তোমাদের প্রেসিডেন্ট, ধনীদের নয়।

" এভাবেই দ্রুত এগিয়ে আসতে থাকে আমেরিকান নির্বাচন। ১৬ অক্টোবর শেষ হয় বারাক ও ম্যাককেইনের মধ্যে শেষ বিতর্ক। বিতর্ক শেষ করেই বারাক লিখলেন, "এই মাত্র শেষ বিতর্কটি শেষ করলাম। আমাদের দীর্ঘ নির্বাচনী প্রচারণার জোয়াল এখন তোমাদেরই বইতে হবে। " আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকি বারাক ওবামার জয়ের জন্য।

নির্বাচনের মাত্র ছয় দিন আগে বারাক ওবামা লিখলেন, "রোজাবেল, সামনের ছয় দিন আমাদের জন্য সবচেয়ে কঠিন দিন। দয়া করে তোমার পরিচিত সবাইকে আমাকে ভোট দিতে বলো। " অক্টোবরের ৩১ তারিখে বারাক ছোট্ট রোজাবেলকে শিকাগোর গ্রান্ট পার্কের নির্বাচনী রাতের আনন্দ উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। এরপর আমার কন্যার অধীর অপেক্ষা তার বারাক আঙ্কেলের জয়ের জন্য। সে নির্বাচন বোঝে না, শুধু এটুকু বোঝে, তার এই নতুন বন্ধুটির জিততে হবে।

তার উত্তেজনা সঞ্চারিত হয় আমার মধ্যেও। নভেম্বরের ৪ তারিখ সে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে আমাদের চট্টগ্রামের বাসায়, আমাদের পরিবারের মধ্যে। আমরা এই কালো মানুষটির জন্য প্রার্থনা করতে থাকি আর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি তাঁর বিজয়ের জন্য। আর এ অপেক্ষা শেষ হয় আমার মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে যখন তাঁর বন্ধুটির প্রথম কালো মার্কিন রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ২৭৩টি ইলেকটোরাল ভোট পাওয়ার খবর টিভির পর্দায় ভেসে ওঠে। আমার মেয়েটি কিছু না বুঝেই ঘরময় ছুটে বেড়াতে থাকে।

বয়সের তুলনায় পরিষ্ককার উচ্চারণে ঘুরে ঘুরে বলতে থাকে, "আঙ্কেল জিতেছে, বারাক জিতেছে", কিন্তু সে নিজেও জানে না একটু আগে এই পৃথিবীতে কত বড় ইতিহাস রচিত হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম নির্বাচনে জেতার সঙ্গে সঙ্গে বারাক তাঁর বন্ধুদের ভুলে যাবেন, কিন্তু তা মিথ্যা প্রমাণ করে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রোজাবেলকে যা লিখলেন তার বাংলা তরজমা মোটামুটি এ রকম− "রোজাবেল, আমি এখন গ্রান্ট পার্কে ভাষণ দিতে যাচ্ছি। কিন্তু সবার আগে আমি তোমাকে লিখতে চাই, আমরা ইতিহাস তৈরি করেছি এবং আমি চাই আমরা কত কষ্ট করে এই ইতিহাস রচনা করেছি তুমি যেন তা ভুলে না যাও। আমাদের এই দেশটিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য একসঙ্গে চেষ্টা করতে হবে। তোমার সঙ্গে আমি সবসময়ই যোগাযোগের মধ্যে থাকব।

আরও একটি জিনিস পরিষ্ককার করে জেনো, একদিনে যা কিছু ঘটে গেল, তুমিও তার অংশ ছিলে। ধন্যবাদ "বারাক" মেইলটি পড়তে পড়তে আমার চোখ ভিজে আসে। কী অসাধারণ মহত্ত্বের আকাশছোঁয়া দীর্ঘ হলে হাজার হাজার সমর্থকের সঙ্গে একজন মানুষ এত নিবিড় যোগাযোগ রাখতে পারেন আমি কল্পনাও করতে পারি না। এমনকি সাড়ে তিন বছরের একটি শিশুও তার বাইরে নয়। রোজাবেল শেষ মেইলে তার বন্ধু বারাককে তার ছোট্ট পুতুলঘরে খেলতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

আমি জানি, ওবামার পক্ষে এ আমন্ত্রণ রক্ষা করা কখনো সম্ভব নয়। কিন্তু আমি এও জানি, এই মহৎ হূদয়ের কালো ভদ্রলোকটি অবশ্যই ছোট্ট রোজাবেলের মনিটরে অবশ্যই আমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ জানাতে হাজির হবেন। সম্ভবত এখানেই মানুষ হিসেবে তাঁর আকাশছোঁয়া দীর্ঘতা। লেখাটি প্রথম আলোর ওয়েবসাইটের এই লিংক থেকে নিয়েছি বংশী থেকে ইউনিকোডে কনভার্ট করতে ব্যবহার করেছি এই কনভার্টার


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।