আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গন্ধহীন, বর্ণহীন, শব্দহীন ও অদৃশ্য তড়িৎ দূষণ বা ইলেক্ট্রো দূষণ মানব দেহ ও জীবজগতের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর



গন্ধহীন, বর্ণহীন, শব্দহীন ও অদৃশ্য তড়িৎ দূষণ বা ইলেক্ট্রো দূষণ মানব দেহ ও জীবজগতের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণ, আলোকদূষণ ইত্যাদির মধ্যে আরও একটি দূষণ যুক্ত হয়েছে যাকে তড়িৎ দূষণ বা ইলেক্ট্রো দূষণ বলে। অন্যান্য দূষণের তুলনায় মানব শরীরের জন্য এটা অধিক ভয়ঙ্কর। গন্ধহীন, বর্ণহীন, শব্দহীন ও অদৃশ্য এ দূষণের ফলে বেইজ এন্টিনা থেকে নির্গত বিকিরণ মানব দেহের ক্ষতি সাধন ছাড়াও জমির ফসল ও ফল-ফলাদি নষ্ট করে অর্থনৈতিকভাবেও আমাদের ক্ষতি করছে। বিল্ডিং এর উপর এন্টিনা স্থাপন করা হয়েছে এর আশে পাশের আম ও নারিকেল গাছে ফল ধরার পরিমাণ কমে গেছে অথবা একবারেই ধরছে না। ফুল অবস্থায়ই ঝড়ে পড়ছে।

আজ ৩০ নভেম্বর/০৮ রবিবার সকাল ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্তি্বক পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর যৌথ উদ্যোগে মোকাররম হোসেন বিল্ডিং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে "তড়িৎ দূষণের ভয়াবহতা ও বাংলাদেশ" শীর্ষক এক সেমিনারে আলোচকগণ এ অভিমত ব্যক্ত করেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্তি্বক পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. গোলাম মোহাম্মদ ভূঁঞা ও প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আখতারুন্নেছা চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট উদ্ভীদ বিজ্ঞানী দ্বীজেন শর্মা, বিএমএ এর সাবেক সভাপতি ডাঃ রশিদ ই মাহবুব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীমা করিম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আমজাদ হোসেন ও পবা এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান প্রমুখ। আজকের সেমিনারে দুই প্রবন্ধ উপস্থাপক তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরনের ক্ষতিকর নানান দিক উল্লেখ করে বলেন- তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরনকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় ঃ (ক) আয়নাইজিং (খ) নন-আয়নাইজিং। আয়নাইজিং বিকিরণ মানব দেহের ভিতর দিয়ে গমন করলে রক্ত কণা সহ দেহ কোষের অনু সমূহকে আয়োনিত করে।

কোষের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হয় ও কর্মকান্ড ব্যহত হয় এবং তাৎক্ষনিক মৃত্য বা পরবর্তীতে লিউকোমিয়া ও ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যধির সৃষ্টি হয়। অপেক্ষাকৃত কম শক্তি সম্পন্ন তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ যাহা রক্ত কনা বা দেহ কোষের অনুকে ভাঙ্গেতে পারেনা তাদেরকে নন-আয়নাইজিং বিকিরণ বলে। তাপ অনুৎপাদকারী নন-আয়নাইজিং তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ যেমন লিউকেনিয়া, ব্রেইন ক্যান্সার, স্মৃতি শক্তির হ্রাস ও অন্যান্য মারাত্বক রোগের জন্য বহুলাংশে দায়ী। পেশাগত দায়িত্ব পালন করার জন্য যারা শক্তিশালী তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণে বেশিক্ষণ অবস্থান করছে তারা অধিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। যেমন-পাওয়ার লাইনম্যান, ইলেকট্রিক রেলওয়ে অপারেটর, ইলেকট্রিসিয়ান, ইলেকট্রিকেল ইঞ্জিনিয়ার প্রভুতি।

অন্য পেশাজীবির তুলনায় এরা ব্রেইন কেনসার, লিউকেমিয়া এবং লিমফোম্মিয়ায় অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা যায় তড়িৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে বেশি সময় অবস্থানকারী লোকদের মধ্যে ব্রেইন কেনসারে মারা যাওয়ার সংখ্যা কম তড়িৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে অবস্থানকারীর তুলনায় আড়াই গুণ বেশি। শিশু কিশোর ও তরুণ ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ্য তড়িৎ দূষণে বেশি ঝুঁকিপুর্ণ। তাদের দেহ সমূহ এখনও বর্ধনশীল এবং তরলে পূর্ণ। ফলে তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ খুব দ্রুত কোষের ভিতরে ঢুকে পড়ে এবং কোষের মারাত্বক ক্ষতি করে।

আরেকটি গবেষণায় দেখা যায় মোবাইল ফোন ব্যবহারের পূর্বে ১৯৭০ সালে ১০,০০০ শিশুর ম্যধ্য অঁঃরংস (গবহঃধষ ফরংড়ৎফবৎ) এ আক্রান্তের সংখ্যা পাওয়া যেত একজন। ২০০৩ সালে এর হার হয়েছে ১৬৬ জন শিশুর মধ্যে একজন। বর্তমানে অনেক বিজ্ঞানী ও ডাক্তার এই ইঙ্গিত পাচ্ছেন যে, চৌম্বকীয় বিকিরণের আঘাতে শিশুদের দেহ কোষ ক্রমেই দূর্বল হচ্ছে এবং ফলে জেনেটিক উধসধমব সংঘটিত হচ্ছে যা অঁংঃরংস থেকেও বেশি মারাত্বক। এ সকল সমস্যায় বর্তমানে আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে বাড়ী, হাসপাতাল, স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদে বিশেষ করে লোকালয়ে নির্মিত স্বল্প উচ্চ বেইজ স্টেশন বা টাওয়ার এন্টিনা। বর্তমানে অনেক জায়গা থেকে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যে বেইজ এন্টিনা থেকে নির্গত বিকিরণ মানব দেহের ক্ষতি সাধন ছাড়াও জমির ফসল ও ফল-ফলাদি মোবাইলের জন্য ব্যবহৃত টাওয়ারের কারণে ফলন কম এবং নষ্ট হচ্ছে।

যা অর্থনৈতিকভাবেও আমাদের ক্ষতি করছে। যেমন যে বিল্ডিং এর উপর এন্টিনা স্থাপন করা হয়েছে এর আশে পাশের আম ও নারিকেল গাছে ফল ধরার পরিমাণ কমে গেছে অথবা একবারেই ধরছে না। ফুল অবস্থায়ই ঝড়ে পড়ছে। কিন্তু এন্টিনা স্থাপনের পূর্বে নিয়মিতভাবে আম গাছে আম ও নারিকেল গাছে নারিকেল ধরত। তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরনের ফলে পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতিকর দিকগুলি যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে একসময় তা আমাদের জন্য মহামারি আকারে ক্ষতি হিসেবে দেখা দিবে।

এখন থেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, পাশাপাশি মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের ক্ষেত্রে পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে সরকারীভাবে নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকগন ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও সুধীবর্গ জনেরা উপস্থিত ছিলেন । বি: দ্র: এটি পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলনের একটি প্রেস রিলিজ থেকে....

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।