আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সনাতন ধর্ম (হিন্দু ) ও ইসলাম এর মধ্যে যোগ সম্পর্ক-২ (কাবা শরীফ)

"A little knowledge of science makes man an atheist, but an in-depth study of science makes him a believer in God." Francis Bacon.
হিন্দু সম্প্রদায়ের কা'বার সাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে , তাদের ভ্ন্নি ভিন্ন পূজা-অর্চনা এবং চিহ্নসমূহ এরই প্রমান বহন করে । তাদের প্রাচীন মন্দিরসমূহকে কা'বা অভিমুখী করে রাখাও এর বড় প্রমাণ । বেদ এবং পূরাণ শাস্ত্রে কা'বা শরীফের একাধিক নাম উল্লেখ করা হয়েছে যা বিশেষ বিশেষ হিন্দুরা অবগত আছে । বেদে কা'বা সংক্রান্ত মন্ত্র ও শ্লোকগুলি অনুবাদ করে প্রকৃত তথ্য উদঘাটন করা প্রায় অসম্ভব । বেদ ও পূরাণ শাস্ত্রে কা'বার জন্য ব্যবহৃত শব্দসমূহ ১. ইলাষ্পদ ২. ইলায়াষ্পদ ৩. নাভা পৃথিবীয়া ৪. নাভী কমল ৫. আদি পুষ্কর তীর্থ ৬. দারুকাবন ৭. মুক্তিশ্বর এ সমস্ত নাম বেদ এবং পূরাণ শাস্ত্রে যে মহান তীর্থ পবিত্রভূমির জন্য ব্যবহৃত হয়েছে তা আমাদের একেবারে অজ্ঞাত ।

ধর্মীয় গোড়ামী ও আবেগের বশবর্তী হয়ে হিন্দু ধর্মগ্রন্হে বর্ণিত পবিত্র তীর্থসমূহকে ধর্মীয় হিন্দুসমাজ ভারতের সাথে সম্পৃক্ত মনে করলেও তার ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই । আসুন আমরা ঐই নামগুলোর দিকে নজর দেই । ইলাষ্পদ বেদসমূহে সংষ্কৃত ভাষায় ইল, ইলিয়া, ইলা, ইলিয়া ইত্যাদি শব্দ মা'বুদ অর্থে এবং 'পদ' স্হান অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে । তাহলে ইলাষ্পদ অর্থ মা'বুদের স্হান (স্রষ্টার ঘর) । ইলায়াষ্পদ এ শব্দটি ইলাষ্পদ শব্দের সমার্থবোধক ।

পন্ডিত শ্রীরাম শর্মা আচার্য বেদের হিন্দি অনুবাদে শব্দটির অর্থ লিখেছেন- 'পৃথিবীর পবিত্র স্হান । ' নাভা পৃথিবীয়া নাভা অর্থ নাভী আর পৃথিবীয়া অর্থ ভূ-পৃষ্ঠ । এভাবে এর অর্থ দাঁড়ায় ভূ-পৃষ্ঠের নাভী । সমস্ত মুসলমান ভাল করে জানে যে, কা'বা শরীফকে পৃথিবীর নাভীমূল বলা হয় । বেদের একটি মন্ত্রও সাক্ষ্য দেয়, " আমাদের ইলাষ্পদ পৃথিবীর নাভিমূলে ।

" বেদের এই সংজ্ঞার পর কা'বা ঘরই যে ইলাষ্পদ তা অনুমান করতে কোন অসুবিধা আছে বলে মনে হয় না । ঋকবেদের তৃতীয় খন্ডের ২০ শ্লোকের চতুর্থ মন্ত্র । নাভী কমল পদ্ম পূরাণে উল্লেখ করা হয়েছে, 'নাভী কমল' একটি তীর্থের নামঃ সেখান থেকে সৃষ্টির সূচনা হয়েছে । কুরআন শরীফেও বলা হয়েছে, ভূ-পৃষ্ঠে মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে সেটা মক্কায় অবস্হিত । নাভী কমল এবং নাভা পৃথিবীয়া শব্দদ্বয়ের অর্থ অনুধাবন করা হলে বুঝা যাবে যে, সেটা কা'বা শরীফ ছাড়া অন্য কিছু নয় ।

আদি পুষ্কর তীর্থ এর শাব্দিক অর্থ হল, পালনকর্তার প্রাচীনতম তীর্থ । এটাও পদ্মপূরাণে নাভী কমলের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে । বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি পুষ্কর তীর্থের সেবা করার জন্য ইচ্ছা করে তার সমস্ত পাপ ধুয়ে যায় , যে পুষ্কর-তীর্থ যাত্রা করে সে অসীম পূণ্যের অধিকারী হয় । ইসলামে হজ্ব এর সওয়াব এর অনুরুপ । দারুকাবন সংষ্কৃত ভাষায় 'দার' অর্থ হচ্ছে স্ত্রী এবং 'বন' অর্থ জঙ্গল ।

বাইবেল মুকাশিফাতে ইউহানা গ্রন্হের দ্বাদশ অধ্যায়ে কাবাকে বলা হয়েছে নারী, আর মক্কাকে আল-কুরআনে মধ্যে উম্মুল কুরা অর্থাৎ 'জনপদের মা' বলা হয়েছে । অভিধানে এই শব্দটির যে অর্থ লেখা হয়েছে তা হচ্ছে : একটি বন বা জঙ্গলের নাম যাকে তীর্থস্হান মনে করা হয় । এই শব্দটি যে বেদমন্ত্রের মধ্যে ব্যবহৃত হয়েছে তার তর্জমা হল- 'হে পূজারীগণ ! দূর দেশে সমুদ্রপোকূলোবর্তী এলাকায় যে দারুকাবন রয়েছে তা মানুষের তৈরী নয় । সেখানে ইবাদত করে, তার ওসীলায় জান্নাতে পৌছে যাও । ' (ঋকবেদ ১০-১৫৫-৩) মুক্তিশ্বর স্যার উইলিয়াম মূর-এর ইংরেজী -সংষ্কৃত অভিধানে এ শব্দটির অর্থ এভাবে করা হয়েছে - The city of mecca-yagya অর্থাৎ মক্কা নগরী কুরবানীর স্হান ।

ঈশ্বর অর্থ আল্লাহ , মুক্তি অর্থ মক্কা । অতএব মুক্তিশ্বর হল আল্লাহর মক্কা অথবা আল্লাহর জন্য কুরবানীর স্হান । হযরত আদম (আঃ) পৃথিবীতে অবতরণের পূর্বেই ফেরেশ্তাদের দ্বারা কাবা গৃহের ভিত্তি স্হাপন করা হয়েছিলো । আদম এবং আদম সন্তানদের জন্য সর্বপ্রথম কেবলা কাবা গৃহকে সাব্যাস্ত করা হয়েছিলো । আল-কুরআনে আল্লাহপাক বলেন, -মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ নির্মিত হয়, তা মক্কায় অবস্হিত এবং এ গৃহ বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়াত ও বরকতের উৎস ।

নূহ (আঃ) পর্যন্ত সবার কেবলা ছিলো কাবাগৃহ । নূহের আমেলে সংঘটিত মহাপ্লাবনের সময় সমগ্র দুনিয়া নিমজ্জিত হয়ে যায় এবং কাবা গৃহের দেয়াল বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে । তারপর হযরত ইবাহীম ও ইসমাঈল (আঃ) এর আল্লাহর নির্দেশে কাবা গৃহ পনঃনির্মণ করেন । কাবা গৃহ ই ছিলো তার এবং তার উম্মতের কেবলা । (মারেফুল কুরআন) আমি আমার আগের লেখায় উল্লেখ করেছি যে, সনাতন ধর্মীগণ হযরত ইবরাহীম ও নুহ (আঃ) এর উম্মাত , সুতরাং তাদের গ্রন্হসমূহে কাবা'র উল্লেখ থাকা স্বাভাবিক ।

শিখ ধর্মের প্রচারক গুরু নানক কাবা'কে শিবের মন্দির হিসেবে উল্লেখ করেছেণ । একটা লিংক নিচে দেওয়া হল--- দেখতে পারেন এখানে চলবে........... তথ্য সূত্র---জগদগুরু মুহাম্মদ (সাঃ) , শায়খুল উবুদিয়া ইমাম সাইয়েদ মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ ইবনে আবদুহু আল-হোসাইনী । রেনেসাঁ পাবলিকেশন্স । ---মারেফূল কুরআন ।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.