আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মনের এক বিন্দু কষ্ট পড়ে দেখার চেষ্টা করবেন। ঢাকায় মানুষের ঢাকা জীবন।



আসলে আমরা হলাম বাঙ্গালী তাই আমাদের সুন্দর একটা শিরোনাম আছে সেটা হল যে বাঙ্গালীরা ততক্ষণ পর্যন্ত নড়ে না যতক্ষণ পর্যন্ত না ওদের গাড়ে কিছু এসে পড়ে। সম্ভবত বাঙ্গালীয়ানা নিয়ে এক বিদেশী লেখকের লেখায় এমন কিছু পড়ে ছিলাম। অনেক ভেবে দেখেছি ঐ কথা আসলেই সত্য। উদাহরণ দিচ্ছি, মনে আছে আপনাদের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতি মন্ত্রী সোহেল তাজের ভাগ্নেকে যখন পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল গুলশান থেকে তারপর দিন তার বোন বলেছিল যে,বিনা অপরাধে আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে তবু ছাড়ানোর জন্য আমার কত যে কষ্ট করতে হয়েছে, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে হয়েও আমি সবার কাছে তুচ্ছ হয়েছি। এখন বুঝতে পারছি যাদের আমাদের মতো কেউ নেই, তাদের এমন বিপদে কি অবস্থা হচ্ছে, কত কষ্ট করতে হচ্ছে।

দেখুন, যদি তিনি এমন বিপদে না পড়তেন তবে কি বুঝতে পারতেন এই অবস্থার কষ্ট বেদনা ? তারপরেও নিশ্চয়ই তিনি সাধারণ মানুষের মতো খারাপ আচরণের স্বীকার হন নি,হননি ঘুষের ঝামেলায়ও, যদি সে অবস্থার স্বীকার হতো তাহলে আসলটা ব্যপারটা আরো ভাল বুঝতে পারত। আজকের দিনে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ, তার বউ-ছেলে মেয়েরা বুঝতে পারতেছে সে কি বেদনা, তাই তারা রাজনীতির কোল ঘেঁষার অন্তত সাহস করবে না। এমনি ভাবে আরো যারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে এমনি করে বিষাক্ত রাজনীতির বিষের বেদনা অনুভব করতে পেরেছে তারা আর ভুলবে না, এই সব দিকে আর ভুলেও পা বাড়ানোর চেষ্টা করবে না, যদি না লোভ ওদের লোভী করে। যদি সুষ্ঠু রাজনীতি হয় সেটা আলাদা কথা। আসল কথা হচ্ছে, আমরা নিজেরা সরাসরি কোন কিছুর আঘাত না পাওয়ার আগ পর্যন্ত সেটা নিয়ে মাথা ঘামাই না।

অন্যের খারাপ অবস্থা দেখেই যদি মাথা ঘামাতাম, তবে নিজেও বাঁচতে পারতাম, অন্যদেরও সে আঘাত থেকে বাঁচাতে পারতাম। আমি এই গ্রুপে "দেশকে উন্নত করার সুপারিশ সমূহ" নামে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম, সবাইকে তাদের নিজ চিন্তা ভাবনা গুলো সেই পোষ্টে মন্তব্য করে দিতে অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু কেউ দেয় নি। এই বার বুঝেন ভাই, আমরা আসলে কতটা সচেতন। এই দেশ যেমন আমার-আপনার তাই একে বাঁচানো আমার-আপনারই দায়িত্ব, তাই সময় থাকতেই কাজে লেগে পড়ি। অন্তত চেষ্টা করে দেখি, চেষ্টা করে দেখতে তো কোন সমস্যা নেই।

আসুন, নিজে আঘাত পাওয়ার আগেই চেষ্টা করি এই আঘাত থেকে বাঁচার জন্যে। আজকের ঢাকা শহরের কথাই এক বার চিন্তা করে দেখুন! একটা সময় ছিল মানুষ গ্রাম ছেড়ে দলে দলে শহরে আসত জীবিকার প্রয়োজনে, আর আজকে যেখানে এই ঢাকার নামের ঢাকা পড়ে গেছে মানুষের মমতা,স্নেহ,আদব-কায়দা,জীবন জীবিকা তাই খুব কম সংখ্যক মানুষই ঢাকা থাকতে চায়। কেউই আর লোকাল গাড়ীতে পিষ্ট হয়ে চড়তে চায় না, তবু সবার নিরান্ত্রর প্রয়াস কাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে কে আগে বাসে উঠবে, এই ঢাকা শহরে ধুলাবালিতে দম বন্ধ হয়ে মরতে চায় না কেউ। বাঁধা গ্রস্থ করতে চায় না তার আদরের ছোট্ট সোনা মণির এবং তার ব্রেনের। চারদিকে শুধুই হাহাকার, ছোট একটা রুমে ১০-১৫ জনের জড় পাকিয়ে পড়ে থেকে রাত কাটানো, মশারি টানানোর জায়গা নেই তাই মশার কামড়ই একমাত্র কাম্য কেননা, এই ছোট্ট রুমে কেউ কয়েল জ্বালিয়ে দম বদ্ধ হয়ে মরতে চায় না, ময়লা-পানি ফুটানোর সময় না পেলে সেটাই ডক ডক করে খেয়ে যাওয়া, নেই পানি নেই গ্যাস-বিদ্যুৎ,নেই কোন আলো-বাতাস,পায়খানার করার পর পানি আসার গভীর অপেক্ষায় বসে থাকা, জিবীকার প্রয়োজনে মানুষের ছুটে চলা, কেউ কাউকে এক মুহূর্তের জন্য ছাড় দিতে চায় না, প্রত্যকে অন্যকে পাঁশ কাটিয়ে চলে যেতে যায়, এইটাই হচ্ছে ঢাকায় মানুষের ঢাকা জীবন।

তবু আগুনে পুড়ে কয়লা হওয়া,চলন্ত গাড়ীর নিচে পড়ে পিষ্ট হওয়া, ধসে যাওয়া ভবনের নিচে পড়ে মরে যাওয়া এই সব আমাদের নিত্য ঘটনা। এর দায় কাঁদের?? আপনি অস্বীকার করতে পারেন এর দাঁয়, নিশ্চয়ই পারেন না। পুরোনো ইতিহাস না বললাম, কিন্তু এত টুকূ বলতে হয়, আমরা যদি এখনও একে ঢেলে সাজাতে পারি তবে এখনও বাঁচাতে পারি এই ঢাকাকে, ঠিক তেমনি ভাবে বাঁচাতে পারি এই দেশকে। শুধু প্রয়োজন সবার নিঃস্বার্থ ঐক্যমত্য আর নির্লোভ প্রচেষ্টা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.