আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার কলেজের দিনগুলি.......

সত্য অথবা মিথ্যা দুটোই হতে পারে। বিশ্বাস করা আর না করা আপনার ব্যপার। ঢাকা কমার্স কলেজের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী যারা আছেন তারা জলদি আসেন এইদিকে। কারন আজ আমরা আবার একবার সেই দিন গুলোতে ফেরে যেতে চেষ্টা করবো। আশা করব আপনারাও নিজেদের দিনগুলির কথা বলবেন।

লাকি ইয়ার: আমি ছিলাম লাকি ইয়ারের ছাত্রী। মানে সেই বছরই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে ছেলে ও মেয়েদের আলাদা ক্লাস নেয়া হবে। তাই করা হয়। পরের বছর থেকে আবার একসাথে ক্লাস শুরু হয়। তাই এ বছরটাকে আমরা লাকি ইয়ার মনে করতাম।

প্রথম ক্লাস: প্রথম ক্লাস ছিল বাংলার শাহজাহান স্যারের সাথে। স্যার আমাদের বলছিলেন সব ছেলে- মেয়ে পরষ্পরকে ভাই-বোন ভাববা। কিন্তু আমরা ভাই বাদে অন্য সব কিছুই ভাবতে রাজিপ্রথম ক্লাসে স্যারদের সাথে পরিচয় হলো। অনেক মজার মজার কথা বললেন। পড়া না পারলে কি করবেন তাও বললেন।

আমরা ভাবলাম এমনেই বলতেছে। পরে বুঝছি কমই বলছিলো। স্যার-ম্যাডাম: স্যার-ম্যাডামদের নিয়ে প্রথমে একটা কথা না বললেই না। সেটা হল তাদের পড়ানোর ধরন, তাদের শাস্তি, তাদের আন্তরিকতার কারনেই ছাত্র-ছাত্রীরা ভাল করতে পারে। অনেকেই বলে বেশি নিয়ম কানুন।

একসময় আমিও বলছি। তবে এখন মনে হয় যেই ধরনের বান্দর আমরা ছিলাম তাতে কঠোর না হয়ে উপায় নাই। তবে আদর অথবা ভালবাসারও কোন কমতি ছিল না। রেজা স্যার,মিনা ম্যাডাম,নজরুল স্যার,ইউনুস স্যার,মশা (মশিউর) স্যার, ওয়ালি উল্লাহ স্যার, মেহেদি স্যার, তৃষ্ঞা ম্যাম এবং আরও কয়েকজন আছেন যাদের কথা ভুলা সম্ভব না। একবার এক নতুন ম্যাম ম্যাথ করাতে গিয়ে মিলাতে পারছিলেন না।

তখন খুন মজা পাচ্ছিলাম। কিন্তু এখন যতবার সেটা মনে পরে ঠিক ততবার মনে মনে ম্যামকে সরি বলি। রেজা স্যার ছিলেন মেয়েদের জন্য নায়ক। কারন তখন একদম ইয়ং ছিলেন আর পড়াতেন বাংলা। তবে দুঃখের বিষয় হলো স্যার আগেই বিয়ে করে ফেলেছিলেন।

স্যারের বাসায় ঘুরতে গেছিলাম। শাস্তি আজকে স্বীকার করেই ফেলি। কেউ কিন্তু হাসবেন না। মাত্র একদিনই বই না আনার অপরাধে কানে ধরে দাড়ায় ছিলাম। তাও আবার ক্লাসের সামনে।

হাতে ছিল ক্যাপ্টেনের ব্যাজ। দুইজন ছিলাম। মজাই লাগছিল সমস্যা হলো একটু পর দেখি ইনচার্জ আসতেছে। ম্যামের হাতে পায়ে ধরে সেদিনের মতো ক্ষমা পাই। ইনচার্জ দেখে নাই।

এই একবার মাত্র শাস্তি পাইছিলাম। এবার বুঝেন আমি কত ভালা ছিলাম ক্লাসমেট ও ক্লাসরুম আমার ক্লাসমেট রা ছিল বেস্ট ভাল এবং বেস্ট বদমাশ। অনেক ভাল কিছুও তাদের কাছে শিখেছি তেমনি অনেক খারাপ কিছুও। হাবিবা, লামিয়া, জেরিন, বাধন, রীমা, আদীতা, বাবলি, মৌ এরা ছিল আমার সবচেয়ে কাছের। বি.দ্র. সেদিন আমি আর হাবিবা একসাথে কান ধরছিলাম আমাদের সিট নির্দিষ্ট থাকতো।

যেখানে সেখানে বসতে পারতাম না। জানালার পাশে বসে বাইরে তাকায়ে ভাবতাম কবে এই জেল থেকে মুক্তি পাব?সময়ের দাবি। আমার করার কিছু ছিল না....না গো.....। মোবাইল কলেজে মোবাইল আনা নিষিদ্ধ ছিল। কারন বেশ ভালোই মোবাইলের অপব্যবহার হতো।

যারা আনতো তারা যে কতভাবে সেটা লুকায় রাখতো সেটা দেখলে বুঝা যায় যে কত প্রতিভা লুকায় আছে এখানে সেখানে। মোবাইল ধরা পরলে আর দেয়া হবে না তাই এই অবস্থা। আমার তখন মোবাইল ছিল না সায়মা ম্যাডাম ও মোল্লা আজাদ স্যার সায়মা ম্যামের কথা আলাদা ভাবে না বল্লেই নয়। কারন ইনাকে জমের মত ভয় পেতাম। আমাদের ক্লাসে একমাত্র আমিই ছিলাম যার মাথায় হাত দিয়ে ম্যাম আদর করেছিলেন।

সামনে অনেক ভদ্র হয়ে যেতাম তাই বুঝতেন না। মোল্লা স্যারের কথা আলাদা বলব কারন একমাত্র এই স্যারের সাথেই আমার কখন ও কথা মিলতনা। শুধুমাত্র এই স্যারের সাথেই আমার কয়েকবার ঝগড়া হয়েছে। উনার কোনও কথা আমার সহ্য হতো না। আর আমার সাথেই কেনযেন স্যার একটু তেরা ভাবে কথা বলতেন পড়াতেন ভালই।

তবে ঐ যে বললাম কথা মিলত না সেখানেই সমস্যা হতো। টিফিন টিফিন টাইমে বাইরে যাউয়া যেত না। ভিতরেই টিফিন পাওয়া যেত। সেখানেই ছেলে মেয়েদের দেখা হতো। কথা বলা যেত না তবে চোখাচোখি হতো সেটা কে ঠেকাবে? ক্যাপ্টেন আমি প্রায় ৬মাস ক্যাপ্টেন ছিলাম।

যারা ক্যাপ্টেন হয় তারা বেশি ছুটি নিতে পারতো না। আর আমি যেদিন ক্যাপ্টেন হইছি তার পরের দিনই স্যারের কাছে ৩দিনের ছুটি নেই। চরম বকা খাইছি সেদিন। ক্যাপ্টেন হউয়াতে যেই কষ্টটা সবচেয়ে বেশি ছিল তা হচ্ছে বেশি কথা বলতে পারতাম না। কথা বললেই বকা।

ফুড কর্নার ও গাঙচিল কলেজের ঠিক বাইরেই ছিল ২টা ফার্স্টফুডের দোকান। একটার নাম ফুড কর্নার আরেকটার নাম গাঙচিল। ফুড কর্নারে গেলেই কফি খেতাম। আর গাঙচিলের সিঙারা। আড্ডা দেয়ার জায়গা এই দুইটাই ছিল।

বার্ষিক ভোজ প্রতি বছর একবার করে হতো বার্ষিক ভোজ অনুষ্ঠান। মানে সেদিন সব ছাত্র-ছাত্রীদের খাওয়াদাওয়া করানো হতো, কনসার্ট হতো। পুরাই ধুমধারাক্কা অবস্থা। অনেক মজা করতাম সেদিন। সিনিয়র ভাইয়ারা এইটা নিয়ে একটু বলি।

ক্লাসমেটদের সাথে আমার খুব কম কথা হতো। ছেলেদের মদ্ধে সিনিয়রদের সাথেই বেশি কথা হতো। তাও বেশিরভাগই কলেজ রিলেটেড। বিভিন্ন কলেজ প্রোগ্রাম নিয়ে। তাই আমার বান্ধবীরা অনেকেই আমার কাছে এসে বলত "ঐ ভাইয়ার নাম কি?আমার সাথে একটু কথা বলায় দিবা?" আমি কথা বলায় দিতাম তারপরের কথা ওরা জানে।

আমি জানিনা টিসি একটা ভয় ঢুকায় দেয়া হইছিলো প্রঠমেই। সেটা হলো টিসির ভয়। এখন টিসি মানে টেক কেয়ার। আর কলেজের টিসি মানে হলো ট্রান্সফার সার্টিফিকেট। ভয়াবহ ব্যাপার।

যদিও খুব একটা জটিল ব্যাপার না হলে টিসি দিত না তবুও ভয় লাগতো। আল্লাহ বাচায় আনছে টিসি খাই নাই। টেক কেয়ারের উপরেই আছিলাম লাইব্রেরি আমাদের ছিল একটা বিশাল লাইব্রেরি। কার্ড দিয়ে বই পড়তে হতো। পড়ার বই, গল্পের বই সবই ছিল।

অবিশাশ্য হলেও সত্যি আমি ছিলাম কার্ড ছাড়া একমাত্র পাবলিক যে রেগুলার গল্পের বই পড়তাম। এখন ভাববেন কেমনে?আরে ভাই আমার পাশের মেয়েটার কার্ড দিয়ে পড়তাম। আমদের ২জনেই ছবিতে ছিল স্কার্ফ বাধা। তাই কেউ তেমন একটা খেয়াল করতো না। অনেক বই পড়েছি কলেজের সেই লাইব্রেরিতে বসে।

মনে পরলে ফিরে যেতে ইচ্ছা করে সেই দিন গুলোতে। প্রথম প্রেম "একটা গোপন কথা ছিল বলবার বন্ধু সময় হবে কি তোমার?" এবার একটা গোপন কথা বলে দেই। আমি প্রথম প্রেমে পরি এই কলেজে উঠেই। প্রেমে পরা না বলে ভাললাগা বললেই ভাল শুনায়। কারন এটা শুরুর আগেই শেষ।

শুরুটা হয় এক বৃষ্টির দিন। ফুড কর্নারের সামনে দাড়ায় ছিলাম। বাসায় যেতে পারছিলাম না। তখন চোখ পরে রাস্তার অন্য পাশে। সেখানে ফটোকপির দোকানের সামনে একটা ছেলে দাড়ানো ছিলো।

আশে পাশে কেউ ছিলো কিনা মনে নাই। ছেলেটার হাসিটা দেখে প্রথম চোখে পরে। তারপর থেকে যতবার দেখতাম আমি চোখ সরাতে পারতাম না। তবে কখনোই বেহায়ার মত তাকায়ও থাকতাম না। ছেলেটার হাসিটা খুব সুন্দর।

তার ব্যপারে খোজ নিয়েছিলাম তবে ২বছরে একবারও কথা বলার মতো সাহস করে উঠতে পারি নাই। অন্যদের সাথে কথা বলতে সমস্যা হতো না। শুধু ওর সামনে গেলে আমি কথা বলতে পারতাম না। একবারও তার সাথে আমার কথা হয় নাই। এই ছিল আমার কলেজ জীবন।

অনেক কিছুই বলা হয়নি। আবার অনেক কিছু বলা যায়ও না। তবে আমার জীবনে স্কুল অথবা ভার্সিটি থেকে কলেজ লাইফটা অনেক অনেক বেশি ভাল কেটেছে। অনেক কিছু পেয়েছি। অনেক কিছু হারিয়েছি।

তবুও এটাই বেষ্ট। আমার ঢাকা কমার্স কলেজ আমার কাছে সবসময় বেস্ট। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.