আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সে শক্ত করে আমাকে জাপটে ধরে কানের কাছে মুখটি নিয়ে একটি কথাই বললো তাকে বিদায় করো না হলে তোমার সর্বনাশ হবে!!! (২)

www.nahidlink.com

প্রথম পর্ব ঘন জঙ্গলটির মধ্যে একা পথ খুজতে লাগলাম। নিজকে দোষারোপ করতে করতে হেটে চলেছি। হঠাৎ কোত্থকে একটা বিকট গন্ধ ভক করে এসে নাকে লাগলো। নাক চেপে হাটছি, একটু সামনে যেতেই ব্যাপারটা পরিস্কার হলো। একটা গরু মরে পড়ে আছে।

গরু না, গাভী। এতোক্ষন ওই মরা গাভীটার গন্ধ লেগেছে নাকে । তাড়াতাড়ি সেখান থেকে কিছু দুরে সরে গেলাম। এখন কোনদিকে যাই? পথ তো কখন হারিয়ে ফেলেছি। হায় খোদা! ঠিক তখনই কোথকে যেন ছুটে এলো একটি পনেরো-ষোল বছরের মেয়ে।

তার গায়ের রঙ্গটা কুচকুচে কালো। তবে মুখটা দেখতো মায়াবী। দেহে যৌবনের আগমনী আভাস। আমার কাছে এসে বললো, ভাইজান, আপনি কি পথ হারিয়ে ফেলেছেণ? আমার সঙ্গে চলেন । আপনাকে পথ দেখিয়ে দেবো।

বক্সিমকচন্দ্রের কপালকুন্ডলা উপন্যাসেও প্রায় একই ডায়ালগ ছিল। নবকুমারকে জিজ্ঞাসা করেছিল কপালকুন্ডলা, পথিক, তুমি কি পথ হারাইয়াছ? ওই নতুন কপালকন্ডুলা-র হঠাৎ আবিভার্বে স্বস্তি পেলাম। ভাবছিলাম এ গভীর জঙ্গলে মেয়েটি কিভাবে কোথেকে এরঅ? এতো বড় সাতাশ বছরের একটা গাধা জঙ্গলের মধ্যে পথ হারিয়ে বসে আসি আর এতোটুকুন একটা পুচকে মেয়ে আমাকে পথ দেখাবে? তবুও দ্বিধা না করে তার পেছন পেছন হাটা দিলাম। মেয়েটি যেখাবে হাচছে তাতে বোঝা গেল পুরো জঙ্গলটাই তার খুব চেনা। তার সঙ্গে হাটতে হাটতে ানেক প্রশ্নের মাধ্যমে জানতে পারলাম এই বিরাট পৃথিবীতে তার আপন বলতে কেউ নেই।

জন্মের পর থেকে বাবা-মাকে দেখেনি সে। জঙ্গলের পাশে রেলাইনের ধারে সে এক বস্তিতে থাকে এক বিধবার সঙ্গে । সকাল হলেই মহিলাটি শুকনো কাঠ-পাতা কুড়ানোর জন্য তাকে ওই নির্জন জঙ্গলে পঠিয়ে দেয়। এতো কষ্ট করেও ঠিক মতো কোনদিন নাকি পেট পুরে খেতে পারেনি সে। মহিলাটি কারনে- অকারণে তাকে মারধর করে।

এসব বলতে বলতে মেয়েটির চোখে জল এসে যায়। দেখে আমার মায়া হলো। একটুও দ্বিধা না করে তাকে বললাম, তুমি কি আমর সঙ্গে যাবে? এমনতি আমি একা মানুষ। মাঝে মাধ্যে খাওয়া দাওয়া করতে পারি না বাসায়। নিজের রান্না আর কতো রাধতে ইচ্ছা করে? এ ধরনের একটি মেয়ে পেলে আমার রান্না বাড়ার কাজগুলো তো হবে, পাশাপাশি অনাথ মেয়েটিকেও আশ্রয় দেয়া যাবে।

ভেবেছিলাম আমার প্রস্তাবে মেয়েটি রাজি হবে না। কিন্তু একটি আশ্রয় আর পেট পুরে খাওয়ার লোভ কে সামলাতে পারে? অন্তত এমন একটি অনাথ মেয়ে তো নয়ই। মনে হলো আমার বলার অপেক্ষাতেই সে ছিল. এক কথাতে রাজি! শেষ পর্যন্ত পথ খুজে পেলাম! মেয়েটিই খুজে বের করলো। তখন থেকেই সেই কালো মেয়েটিই আমার বাসার যাবতীয় কাজের ভার নিল। তার নাম দিলাম কণা।

ভাইজান, আমাদের বাসার সামনে পানের দোকানদার রমিজ আলী আমারে আজ খারাপ একটা কথা বলছে। আরেকবার বললে ব্যাটাকে ছাড়বো না, আপনাকে এখনই বলে রাখলাম। রাতে ফিরতেই কণার নালিশ। শুনে বললাম , আচ্ছা ঠিক আছে, আমি তাকে শাসিয়ে দিবো। যা, এখন টেবিলে ভাত দে।

চার পাঁচ দিন পর কাজ শেষে ফেরার পথে শুনলাম, আমাদের বাসার পাশের পানের দোকানদার রমিজ আলী বিষাক্ত এক সাপের কামড়ে মারা গেছে। কথাটা কণাকে এসে বলার পরই সে এমন ভাব করলো যেন সে জানতো রমিজ আলীর মতো একটি বাজে লোকের এমনই পরিণতি হবে। হ্যালো, তুমি কোথায়? ফোন করেও পচ্ছি না, ব্যাপার কি? খুব ঝাঝালো স্বরে কথাটা বললো সিমলা। প্রত্রিকার মাধ্যমেই তার সঙ্গে আমার পরিচয়। পরিচয়ের পর সরাসরি দেখাদেখি।

ব্যস তাকে ভালোবেসি ফেললাম। তেমনি সেও আমাকে। তাকে নিয়ে বেশ মজায় আছি এই কয়দিন। বাউন্ডেলে আমি এতোদিন বুঝতে পারিনি ভালোবাসা কারে কয়? শেষ পর্যন্ত তার কাছে নতি স্বীকার করেছি। আমি বাসায়।

একটা উপন্যাস লিখছি। সামনে তো একুশে ফেব্র“য়ারী বই মেলা আর মোবইলে চার্জ ছিল না তাই. . .। ঠিক আছে মিস্টার আর বকবক করতে হবে না। আমি এখনই আসছি তোমার এখানে। বলে লাইনটা কেটে দিল।

বলতে না বলতেই আধাঘন্টার মধ্যেই এসে উপস্থিত হলো সে। আসলে সে এমনই। যা বলবে তা করেই ছাড়বে। কণাকে হাক দিলাম। কণা ,তোর আপার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আয় তো।

কণা? কণাটা আবার কে? সিমলার সন্দেহমিশ্রিত প্রশ্ন। তাকে এর আগে কণার সম্পর্কে বলাই হয়নি? সব কিছু খুলে বললাম। বলার পর সে যা বললো এর সারমর্ম হলো, কণাকে কয়েকদিনের মধ্যেই যেন বিদায় করে দিই। না হলে আমার খবর আছে। সিমলার কথাটা শেষ হতে না হতেই হাতে দুই কাপ চা নিয়ে ভেতরে ঢুকলো কণা।

তার কথাটা শুনতে পেয়েছিল কিনা কে জানে। কণার আপাদমস্তক পরখ করলো সিমলা। তাকে বললো রান্নাঘরে যেতে। স্পষ্ট দেখলাম, কণার চোখ দুটো যেন জ্বলছে! সে একদৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়েছিল সিমলার দিকে। কণা রুম থেকে চলে যাওয়ার পরই বিদ্যুতের গতিতে সিমলা কাছে এসে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আমাকে।

কণাকে দেখে এত ভয় পাওয়ার কারণটা কি ধরতে পারলাম না। সে শক্ত করে আমাকে জাপটে ধরে কানের কাছে মুখটি নিয়ে একটি কথাই বললো তাকে বিদায় করো না হলে তোমার সর্বনাশ হবে। কথাটা বলার পর আর এক মুহূর্তও দাড়াল না সিমলা। চলে গেল। সে কি তাহলে আমাকে অবিশ্বাস করতে শুরু করলো? ভালোবাসায় যদি বিশ্বাস না থাকে তাহলে একে কি ভালোবাসা বলে? এরপর থেকে আর কোনদিন আমার বাসায় আসেনি সিমলা।

শুধু বার বার ফোনে বলেছে কণাকে বিদায় করতে। কণাকে নাকি তার খুব ভয় লেগেছে । পাত্তা দিইনি। হেসেই উড়িয়ে দিয়েছি। ব্যস্ততার কারণে অনেকদিন সিমলার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।

আমি জানি, বেচারী ছটফট করছে আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য। কিন্তু আমি যে বই প্রকাশ নিয়ে ভীষন ঝামেলায় ছিলাম। সে আমার ওপর অভিমান করে বসে ছিল। ফোন তো করেই না, আমি করলেও রিসিভ করে না। অভিমানী মেয়েটিকে নিয়ে ভীষন বিপদে ছিলাম।

তার কথা ভাবছিলাম, ঠিক তখনই মোবাইল ফোনটি বেজে উঠলো। ডিসপ্লেতে ভেসে উঠলো আমার অভিমানী প্রিয়তমার নামটি। দ্রুত রিসিভ করলাম। হ্যালো সিমা, কেমন আছ তুমি? ওই পাশ থেকে শোনা গেল সিমলার নয়, অন্য এক মেয়ের কন্ঠ, রাশেদ ভাই, আমি পিংকি। সিমলা বান্দবী।

সিমলা এখন চট্রগ্রাম মেডিকাল...। আর কিছু শোনার ধৈর্য ছিল না আমার। ছুট দিলাম চট্রগ্রাম মেডিক্যালের উদ্দ্যেশে। সিমলা মারা গেছে আজ সাত দিন হতে চললো। বিষাক্ত একটি সাপের কামড়ে মারা গেছে সে।

কেউ বলতে পারলো না না কোন জায়গায় তাকে সাপটা কামড়েছিল। নিজকে সামলাতে পারছিলাম না কোনভাবেই। তার স্মৃতিগুলি বার বার ভেসে উঠছিল। আমাকে ঠেলে দিচ্ছিল কান্নার সাগরে। ভাইজান, ভাত দেবো? কয়েকদিন থেকে তো ঠিকমতো খাচ্ছেন না।

শরীর খারাপ হয়ে যাবে তো। কণার দিকে তাকালাম। তাকে বেশ খুশি লাগছিল কিছুক্ষন ধরে। মনে হচ্ছিল, সিমলার মৃতুত্যে সে মোটেই দুঃখ পায়নি। চলবে...


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.