আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাধানাথ শিকদার, যিনি মাউন্ট এভারেস্টের নামকরন করেন।

::::: দেখবো এবার জগতটাকে :::::
১৮৫৩ সালের এক সকাল বেলা। কলকাতার ব্রিটিশ সার্ভে ডিপার্টমেন্ট প্রচন্ড ব্যাস্ত। রাজ্যের ম্যাপ আর চার্ট নিয়ে ত্রিকোনমিতির জটিল সব হিসাব। ইস্ট ইন্ডীয়া কোম্পানীর শাষনামল। কর্নেল ওয়াহ নেতৃত্বে সবাই কাজ করে চলছে।

কিছুদিন পর পর সরকারী খরচে অসীমসাহসী ট্রেকার আর মাউন্টেনিয়ারেরা হিমালয়ের বিভিন্ন অংশে জরীপ করছেন। শোনা যাচ্ছে হিমালয়ে পেরিয়ে রুশরা নাকি আক্রমন করবে। অবশ্য স্থানীয়রা বলছে, হিমালয় দেবতার রাজ্য। তা নাকি অতিক্রম করা অসম্ভব। হিন্দুকুশ থেকে ব্রম্মপুত্র হিমালয়ের ৪টা রেঞ্জ।

সর্বোচ্চ চুড়া কাঞ্চন জঙ্ঘা। কিন্তু হিমালয়ের কোন ম্যাপ নেই। সেটা নিয়েই গবেষনা। রাধা নাথ শিকদার। ভারত জয়ের প্রায় ১০০ বছর পরে উইলিয়াম ল্যাম্বটন আর স্যার জর্জ এভারেস্ট (সার্ভেয়ার জেনারেল) শুরু করেন দি গ্রেট ট্রিগোনমেট্রিক সার্ভে।

তাতে ভারত বর্ষের খুটি নটি ম্যাপ তৈরি করতে হবে। স্যার এভারেস্টের অনেক প্রিয় পাত্র একজন বাঙ্গালী ক্লার্ক রাধানাথ শিকদার। ১৮১৩ সালে কলকাতার বিখ্যাত জোড়াসাকো তে জন্ম নেন। মাইকেল মধুসুদন দত্তের সমসাময়িক এই গনিত বীদ একই হেয়ার কলেজের ছাত্র। গনিত তার ধ্যান জ্ঞ্যান, গনিতের প্রেমে বিয়ে পর্যন্ত করে ওঠা হয়নি।

প্রচুর সরকারী অর্থে অসম সাহসী মাউন্টেনিয়াররা এমন জায়গায় যাচ্ছেন যেটা মানুষের কল্পনারো বাইরে। সাথে নিতে হচ্ছে থীওডোলাইট যন্ত্র যেটা একটা ক্যারি করতে ১২ জন শেরপার দরকার হয়। অসম্ভব আবহাওয়ায় বছরে মাত্র কয়েকমাস হিমালয় অঞ্চলে কাজ করা সম্ভব। ১৮৪৯ সালে জেমস নিকলসন হিমালয়ের তেরাই ট্রেক করে ফিরলেন। তার প্রাপ্ত ডাটা গুলো কর্নেল ওয়াহ (স্যার এভারেস্ট রিটায়ার্ড করে লন্ডনে ফিরে গেছেন) হাতে দিয়ে গেলেন।

এগুলো নিয়েই গবেষনা। প্রায় ৪ বছর পরে রাধানাথ একদিন অবাক হয়ে টের পেলেন উনি বড় কিছু একটা করেছেন। ৪ বছর ধরে অপ্রয়োজনীয় কিছু ডাটা পরে আছে, সামরিক বা ব্যাবসায়ীক গুরুত্ব নেই দেখে কেউ তেমন ভাবে ঘেটে দেখেনি। হিমালয়ের অনেকগুলো শিখর আছে যেগুলোর কোন নামই নেই। কৌতুহলী রাধানাথ নামহীন এই ৮৯টা শৃঙ্গ নিয়ে হিসাব করতে গিয়ে ১৫ নাম্বার পিকের ফাইনাল হিসাবটা বার বার দেখলেন।

২৯০০২ ফুট। ভুল হয়নি তো। কাঞ্চনজঙ্ঘাতো দুরের কথা পৃথীবীর বুকে এত উচু একটা জায়গা কারো কল্পনায় আসে নি। এত উচু হতে পারবে। রাধানাথ শিকদার ছুটে গেলেন রয়েল রয়েল জিওগ্রাফিক সোসাইটিতে তার বস কর্নেল এন্ড্রু ওয়াহর কাছে।

স্যার, পিক নাম্বার ১৫ পৃথিবীর উচ্চতম স্থান। জেমস নিকলসন একবারো বুঝতে পারেনি নেপালের তেরাই (তৃন ছাওয়া একধরনের ভ্যালি) থেকে বাইনোকুলার দিয়ে উনি যেই চুড়াটা দেখেছেন সেটা পৃথিবীর সব রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষের ভবিষ্যতে স্বপ্নের তীর্থ। রাতারাতি হৈ হুল্লুর লেগে গেল। কর্নেল ওয়াহ বিদগ্ধ এই গনিতবীদকে হিমালয় রাজের নামকরনের দায়িত্ব দিলেন। পুরো মিশনের মুল পরিশ্রম কারী স্যার এভারেস্টের নামে উনি এর নাম দিলেন মাউন্ট এভারেস্ট।

যদিও তার কয়েক শতাব্দী পড়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রি অটল বিহারী বাজপাই দাবী তুলেছিলেন এভারেস্ট শৃঙ্গের নাম পরিবর্তন করে রাধানাথ শিকদারের নামে নামকরন করার। হাজার হাজার বছর থেকে পৃথিবীর চুড়া ডাক দিচ্ছে রোমাঞ্চপ্রিয় দের। ১৮৭০ সালে নিখুত ভাবে এভারেস্টের উচ্চতা মাপা এবং পৃথীবীর সকল ট্রেকার, মাউন্টেনিয়ারদের তীর্থভুমী মাউন্ট এভারেস্টের নামকরন করা এই মহান বাঙ্গালী ত্রিকোনমিতিবীদ দেহত্যাগ করেন। নামকরনের আগে কর্নেল ওয়াহ রাধানাথকে জিজ্ঞেস করেছিলেন পিক নাম্বার ১৫ এর কোন স্থানীয় নাম আছে নাকি। বাংলায় না থাকলেও তিব্বতী ভাষায় এর নাম ছিল কমুলুংমা, যার অর্থ পৃথীবীর জননী।

এভারেস্ট চুড়ার নামকরন একজন বাঙ্গালী করলেও এখন পর্যন্ত কোন বাঙ্গালী বা বাংলাদেশি এভারেস্ট জয় করতে পারেননি। আবিষ্কারের ১০০ বছর পর ১৯৫৭ সালে স্যার হিলারী আর শেরপা তেনজিং এভারেস্ট জয় করেন। দুর্গমতা, চরম ভাবাপন্ন হাই অল্টিচিউড ওয়েদার এবং অনেক ব্যায়বহুলতা (অভিযানের জন্যে নেপাল সরকারকে প্রত্যেক অভিযাত্রি ২৫০০০ ইউ এস ডলার ট্যাক্স দিতে হয়)। এছাড়া প্রতি বছর অসংখ্য অভিযাত্রি প্রান হারায়। সাম্প্রতিক বছর গুলোতে আমাদের দেশের অনেক পটেনশিয়াল ট্রেকার হিমালয়ান ইন্সটিটিউট থেকে মাউন্টেনিয়ারিং এর কোর্স করছে।

ইবিসি করা পুরুষ এবং মহিলা অভিযাত্রিকের সংখাও আশা ব্যাঞ্জক। কিছুদিন আগে মাউন্টেন ডিও কোম্পানির স্পনসরে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প ঘুরে এসেছিল একটা দল। খুব বেশি দিন হয়তো নয় আমরা প্রথম এভারেস্ট জয়ী বাংলাদেশির চেহারা দেখবো। লিঙ্কঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Radhanath_Sikdar http://en.wikipedia.org/wiki/Mount_Everest এছাড়া সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই সময় বইটাতেও রাধানাথ শিকদারের কথা আছে। বিঃদ্রঃ আগামী পরশু দিন ১২ নভেম্বরে নর্থ আল্পাইন ক্লাব এবং বাংলাভাষার প্রথম এডভেঞ্চার ম্যাগাজিন অভিযাত্রিকের সম্পাদক মুসা ইব্রাহিম এবং উনার দল ২০০৯ এর মধ্যে এভারেস্ট জয়ের অভিযানের অংশ হিসাবে নেপালের রাঙ্গসিসা রি চুড়ায় অভিযানে বের হবে, উইশ হিম গুড লাক মাউন্ট এভারেস্টের চুড়ায় গ্লেসিয়ারের গায়ে সুর্যাস্ত।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।