আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেন বিদ্রোহী?

এই পথ যদি না শেষ হয় . . .

অলোক কাপালি। শারিরিক ভাবে খেলার জন্য উপযুক্ত নয়। বাংলাদেশ জাতীয় দলের বাইরে বসে আছে। কবে সে খেলার উপযুক্ত হবে সেই আশায়। বা আদোও কি সে কখনও খেলতে পারবে? অজানা ভবিষ্যত তাকে হাত ছানি দিয়ে ডাকছে।

এমন অবস্থায় তার কাছে একটা সুযোগ আসলো। সে আবার খেলতে পারবে। যে খেলার স্বপ্ন দেখে প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠে সেই ক্রিকেট। তার চোখের সামনে ভেসে উঠল কল্পনার ভবিষ্যত। তার ব্যাটিং এর সামনে অসহায় হয়ে দাড়িয়ে আছে প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়ারা।

তাদের প্রতিটি প্রচেষ্টায় তার ব্যাটিং এর সামনে মুখ থুবরে পড়ছে। গেলারিতে হাজার হাজার দর্শক। উচ্ছাস্বে মেতে আছে। তাদের মুখে শুধু একটি নাম, অলোক কাপালি। ব্যাট হাতে ভীরু পায়ে মাঠে গিয়ে দাড়ালো সে।

তার কাধে আজ অনেক দায়িত্ব । তাকে প্রমান করতে হবে, না সে খেলার জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত । তাকে মুক্ত হতেই হবে। আর তার ফলাফল আমরা সকলেই তো জানি। আই,সি,এল এর বর্তমান আসোরের সর্বাধিক রানের মালিক ও।

প্রথম ১০০ রান করার কৃত্তিত্বও তারই। যে খেলোয়ার খেলার মত অবস্থায় নেই সে কিভাবে এসব করতে পারে? নিশ্চয় আমাদের কোন ভুল হচ্ছে। আমাদের ক্রিক্রেট বোর্ডের সন্মানিত কর্মকর্তারা তো কোন ভুল করতেই পারেন না। এটা নিশ্চয় আমাদের দৃষ্টিভ্রম। বাংলাদেশ সরকার একটি শিক্ষিত জাতি গঠন করতে চায়।

তার জন্য কতই না চেষ্টা। একজন শিশুকে শিক্ষিত করে তুলতে কতই না আয়োজন। শিশুকে শিক্ষিত সমাজে প্রতিষ্টিত করতে বাংলাদেশ সরকারের কমপক্ষে ১২ লাখ টাকা খরচ হয়। হ্যা আপনি ঠিকই শুনছেন। ১২ লাখ।

সেই শিশু যখন নিজের পায়ে দাড়াতে শেখে তখন সে সব ভুলে যায়। ভুলে যায় তার অতীত। ভুলে যায় তার কর্তব্য। আমাদের দেশ গরিব । এ দেশের কোন ভবিষ্যত নেই।

এদেশে আমার কিছু হবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। বিদেশের রঙ্গিন স্বপ্ন তাকে দেশ ছাড়া করে। টাকা, টাকা দরকার। যে দেশ আমাদেরকে এটি ভাবার যোগ্য করে তুলল সেই দেশের প্রতি কি আমাদের কোন কর্তব্য নেই। অনেকে বলবেন, আসলে তেমনটি নয়।

আমরা প্রবাসে বাংলাদেশের মুখ উজ্জল করছি। বা বিদেশ থেকে ভালোমত কাজ শিখে এসে মাতৃভুমির জন্য কিছু না কিছু করব। কিন্তু এসব পরিহাস ছাড়া আর কি। কতজন আছেন যারা শৌখিন জীবনধারাকে বিদায় জানিয়ে আমাদের কষ্টের অংশিদার হবেন। আমাদের দেশের কিছু খেলোয়ার আজ তাদেরকে টাকার বিনিময়ে বিকিয়ে দিয়েছে।

তাদের কাছে টাকা এতই বড় হল? যে দেশ তাদেরকে খেলতে শিখালো । যে দেশ তাদেরকে বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দিল। সেই দেশের হয়ে না খেলে তারা কিনা আজ টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেল। আমরা সবাই তাদের পিঠে একটি ছাপ্পা মেরে দিয়েছি। এরা দেশদ্রোহী।

এদের হতে সাবধান। তাই আমার মনে আজ শুধু একটি প্রশ্ন বারবার উকি দিচ্ছে। বিদ্রোহী বা দেশদ্রোহী শব্দের অর্থটা আসলে কি? এরা যদি দেশদ্রোহী হন তাহলে যারা প্রবাশে থেকে দেশের উন্নতির নামে বড় বড় লেকচার দেন তারা কি? তারা কি ধুয়া তুলসি পাতা। আমরা আসলে দেশে তেমন সুযোগ পাচ্ছিলাম না। আমাদের যোগ্যতা অনুযায়ি সঠিক কাজ পাচ্ছিলাম না।

এরকম অনেক অনেক অযুহাত আছে এবং থাকবেও। কিন্তু তারা কি এটা জানে না তাদের উপস্থিতি আমাদের দেশের জন্য কতটা জরুরি। আমরা তাদেরকে দেশদ্রোহী বলি না। বরং তারা যখন দেশের বর্তমান অবস্থায় হা হুতাশ করার জন্য দেশের মাটিতে আসেন তখন আমরা ফুলের মালা দিয়ে তাদেরকে বরন করে নিই। তাদের সন্মানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান দিই।

তাদের লোক দেখানো হা হুতাশ শেষ হলে তাদের যথাস্থানে গমন। আমি জানি আমার লেখাটি যারা পরবেন তাদের প্রায় সবাই প্রবাসি। আপনাদের কাছে আমার শুধু একটি প্রশ্ন, আপনারা কি দেশদ্রোহী নন? অন্তর থেকে জবাব দিন তো। আমি জানি আপনারা অনেক বড় বড় কথা বলবেন। বিভিন্ন যুক্তি দাড় করাবেন।

তবে আমি এটিও জানি এর উত্তর দিতে আপনারা সাহস পাবেন না। সত্য বড়ই বেদনাকর। যদি আপনারা মনে করে থাকেন না প্রবাসীরা বিদ্রোহী বা দেশদ্রোহী নই। তাহলে যারা আই,সি,এল এ খেলতে গেল তাদেরকে কেন দেশদ্রোহী বলে গালাগালি দিচ্ছেন। তারাও তো দেশের মুখ উজ্জল করছে।

কেন তাদেরকে দূরে ঠেলে রাখছেন। আমি এটা শুধু প্রবাসীদেরকে বলছি না। আমরা যারা দেশে পড়ে আছি তাদেরকে উদ্দেশ্য করেও বলছি। আমি একটি গল্প বলেই শেষ করে দিতে চাই। দুই বন্ধু ফুটপাত দিয়ে হেটে যেতে যেতে গল্প করছিল।

কথাপ্রসঙ্গে তারা ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা শুরু করে। বাংলাদেশের দক্ষিন আফ্রিকার কাছে হারের প্রসঙ্গে একজন বলল," বাংলাদেশ জাতীয় দল কি খেলতে পারে? ওদের বদলে ঢাকা ওরিঅর কে নামিয়ে দিলে দেখতি। আমাদের জয় একেবারে নিশ্চিত ছিল"। দ্বিতীয় বন্ধুটি জবাব দিল," দেখ ওদের কথা বলবি না। ওরা দেশদ্রোহী।

আমাদের উচিত এক এক করে ওদের গুলি করে মারা"। প্রথম বন্ধুটি তখন হেসে বলল," এমন কথা বলিস নারে। তাহলে তুই আগে মরবি। তোর বাবা তো শুনেছি বিদেশে থাকে"।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।